যুক্তরাষ্ট্রে নতুন প্রজন্মের রাফিদ শাহীন বিশ্বকাপ ক্রিকেট নিয়ে দারুণ উচ্ছ্বসিত। কারণ তার মাতৃভূমি বাংলাদেশ খেলবে এই বিশ্বকাপে। ২৬ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার বাংলাদেশ দল ঘোষণা নিয়ে তার মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া রয়েছে। তামিম ইকবাল বিশ্বকাপ স্কোয়াডে না থাকায় কিছুটা হতাশ হয়েছেন তিনি। তারপরও রাফিদের আত্মবিশ্বাস- বাংলাদেশ এবারের বিশ্বকাপে ভালো করবে।
যত ব্যস্ততা থাকুক না কেন বিশ্বকাপের প্রতিটি ম্যাচ উপভোগ করবেন রাফিদ। ইতিমধ্যে নিজের, পরিবারের এবং সহকর্মীদের জন্য বিভিন্ন মাপের বাংলাদেশের জার্সি অর্ডার করেছেন। বললেন- খেলার দিন সবাই জার্সি পরে খেলা দেখবো।
রাফিদের মত লাখো তরুণ প্রবাসে বাংলাদেশের বিশ্বকাপ নিয়ে উচ্ছ্বসিত। শুধু তরুণ প্রজন্ম নয়, সব বয়সের প্রবাসীরাই দুচোখে দারুণ স্বপ্ন নিয়ে অপেক্ষা করছেন বিশ্বকাপ ক্রিকেট খেলা দেখার। বাংলাদেশকে তারা চ্যাম্পিয়ন দেখতে চান। এই স্বপ্ন বুকে ধারণ করে বিশ্বকাপ খেলা দেখার জন্য প্রবাসে নানা ধরনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন তারা। কাজের ক্ষতি না তরে কীভাবে খেলা দেখার সময় বের করা যায় সেই পরিকল্পনা করছেন অনেকে। আবার অনেকে খেলা দেখার জন্য বাসার পুরনো টিভি বদল করছেন।
নিউইয়র্কের উডসাইডের বাসিন্দা আলমগীর হোসেন জানান, তার বাসার টিভি ৩২ ইঞ্চি। বিশ্বকাপ খেলা দেখার জন্য তিনি ৫৫ ইঞ্চি এলইডি টিভি কিনেছেন। যে কয়দিন খেলা চলবে তিনি ওই সময়ে কাজে যাবেন না। ইতিমধ্যে কাজের সময়সূচিতেও পরিবর্তন এনেছেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশের খেলা বলে কথা। কাজ গোল্লায় যাক। তবে খুশী হব- যদি বাংলাদেশ ভালো করে।
নিউইয়র্কের জ্যামাইকার বাসিন্দা শিফাত খন্দকার তুহিন জানান, বিশ্বকাপে আমার ফেবারিট আরো দল আছে। তবে বাংলাদেশ সবার আগে। আমি খুব এক্সাইটেড এবারের বিশ্বকাপ নিয়ে। তার বিশ্বাস- বাংলাদেশ এবারের বিশ্বকাপে ভালো করবে। এজন্য খেলার সময় সবকিছু শিকেয় তুলে রাখবো। তিনি বলেন, মাঠে বসে খেলা দেখতে পারলে ভালো লাগতো। যেহেতু সেই সুযোগ নেই, তাই নিউইয়র্কে অনেকেই বড় স্ক্রিনে খেলা দেখাবে। পারলে সেসব জায়গায় গিয়ে হলেও সবার সাথে বাংলাদেশের খেলা উপভোগ করবেন বলে জানান তুহিন।
এদিকে বিশ্বকাপ ক্রিকেট খেলা উপলক্ষে নিউইয়র্কের বাংলাদেশি মালিকানাধীন রেস্টুরেন্টগুলো তাদের টিভিগুলো সচল রাখতে চাইছেন। অনেক রেস্টুরেন্ট টিভির আকারে পরিবর্তন আনছেন। যদিও নিউইয়র্ক সময় ভোরে বেশিরভাগ খেলা। যারা ক্যাবি তাদের অনেকেই রেস্টুরেন্টে বসে খেলা উপভোগ করেন। তাই রেস্টুরেন্ট মালিকেরা খেলার দেখানোর বিশেষ ব্যবস্থা রাখবে তাদের রেস্টুরেন্টে।
উল্লেখ্য, ২০২৩ সালে ওয়ানডে বিশ্বকাপের ১৩তম আসর শুরু হতে যাচ্ছে ৫ অক্টোবর। এক মাসের বেশি সময় ধরে চলা টুর্নামেন্টের ফাইনালের সম্ভাব্য তারিখ ১৯ নভেম্বর। ফাইনাল হবে বিশ্বের সবচেয়ে বড় ক্রিকেট স্টেডিয়াম আহমেদাবাদে।
ক্রিকেট ওয়েবসাইট ইএসপিএন ক্রিকইনফো জানায়, ১০ দলকে নিয়ে ৫০ ওভারের শ্রেষ্ঠত্বের আসর ৪৬ দিনব্যাপী চলবে ভারতের ১২ শহরে। খেলা হবে আহমেদাবাদ, বেঙ্গালুরু, চেন্নাই, দিল্লি, ধর্মশালা, গৌহাটি, হায়দ্রাবাদ, কলকাতা, লক্ষণৌ, ইন্দোর, রাজকোট ও মুম্বাইতে। এই শহরগুলো ছাড়াও মূল টুর্নামেন্টের আগে ওয়ার্মআপ ম্যাচের জন্য বেছে নেওয়া হতে পারে আরও কিছু ভেন্যু। ভেন্যুর তালিকা করলেও ওয়ার্মআপ ম্যাচের ভেন্যুও এখনো চূড়ান্ত করেনি আয়োজকরা। ভারতের একেক অঞ্চলে বৃষ্টিপাতের সময় মাথায় রাখা হচ্ছে।
সাধারণত বিশ্বকাপের এক বছর আগেই সূচি জানিয়ে দেয় আইসিসি। কিন্তু এবার নিরাপত্তা ও অন্যান্য কারণে ভারত সরকারের ছাড়পত্রের জন্য তাদের থাকতে হচ্ছে অপেক্ষায়। ইস্যু আছে পাকিস্তান ক্রিকেট দলের ভিসা নিয়েও। গত সপ্তাহে দুবাইতে আইসিসির একটি সভায় বিসিসিআই থেকে নিশ্চিত করা হয়েছে যে, পাকিস্তানের বহরকে যথা সময়েই ভিসা দেবে ভারত সরকার।
জটিলতা আছে আরেকটি বিষয়েও। বিশ্বকাপের আয়ের ওপর ভারত সরকারের কর মওকুফের জন্য বিসিসিআই ভারত সরকারের অবস্থান সম্পর্কে শিগগিরই আইসিসিকে আপডেট জানাবে বলে আশা করা হচ্ছে। ২০১৪ সালে আইসিসি ইভেন্টের আয়োজনের ভার পেয়ে কর মওকুফের ব্যাপারে সাহায্য করতে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল বিসিসিআই।
গত বছর আইসিসি জানতে পারে, ভারতের কর বিভাগ বিশ্বকাপের ব্রডকাস্টিং আয় থেকে ২০ শতাংশ কর ধার্য করে। এই খাতে ৫৩৩ দশমিক ২৯ মিলিয়ন ডলার সম্ভাব্য আয় চিন্তা করা হয়েছে। সেক্ষেত্রে করই দিতে হবে ১১৬ দশমিক ৪৭ মিলিয়ন ডলার।