আওয়ামী লীগ ভাবছে বিএনপি নির্বাচন বয়কট করবে। আওয়ামী লীগ চায় বিএনপি নির্বাচন বয়কট করুক। তাহলে আওয়ামী লীগ একটি অবাধ ও সুষ্ঠূ নির্বাচন করে পুনরায় ক্ষমতায় আসতে পারবে। বিএনপি যদি নির্বাচনে আসে তাহলে কি হবে? এ প্রশ্নের আপাতত: তেমন কোন সদুত্তর নেই। বিএনপি কি নির্বাচনে আসবে? বিএনপি জানে এবার নির্বাচনে না এলে ভেতর থেকেই এই দলের অস্তিত্ব বিলীন হয়ে যাবে। তাই ধারণা করি, বিএনপি নির্বাচনে আসবে।
দেশের স্বার্থে এবার নির্বাচনটি অবাধ ও সুষ্ঠূ হতে হবে। নইলে দেশ সমস্যায় জর্জরিত হয়ে পড়বে, যা সামাল দেয়া কঠিন হবে। জরিপ বলছে সুষ্ঠূ নির্বাচন হলে আওয়ামী লীগ ৬৭টি আসন পাবে? অর্থাৎ আওয়ামী লীগ ক্ষমতা হারাবে? আওয়ামী লীগ হারতে রাজি আছে, কিন্তু ক্ষমতা বিএনপিকে দিতে চাইবে না! তাদের মনোভাবে হচ্ছে, বিএনপি ক্ষমতায় ফিরে আসলে নির্বাচনের দরকার কি?
আওয়ামী লীগ ও বিএনপি একে অপরকে ক্ষমতায় দেখতে চায়না। তাই আওয়ামী লীগ চাইবে আপাতত: নির্বাচন না হোক। এ অবস্থা কি হতে পারে? বাংলাদেশে কি কিছু অসম্ভব? তবে আওয়ামী লীগ সংবিধানের বাইরে যাবে না! এও সত্য যে, এমন সমাধান চাই, যাতে বিদেশিরা মোটামুটি সন্তুষ্ট থাকে। বিএনপি মনে করে, ক্ষমতায় না গেলেও আওয়ামী লীগ হটাতে হবে।
ব্রিক্স সম্মেলনে মোদী-শিং জিনপিং সীমান্তে উত্তেজনা কমাতে সৈন্য প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বাংলাদেশে নির্বাচন নিয়ে আওয়ামী লীগ-বিএনপি’র এমত একটি ঐক্যমত কি আশা করা যায়? না, যদিও এটি হওয়া দরকার, কিন্তু কার্যতঃ সেটি অসম্ভব। তাহলে? তাহলে তো অনেক কিছুই হতে পারে, এ বছরের বাকি ক’টি মাস ঝঞ্ঝা-বিক্ষুদ্ব হবার আশংকা ভয়ংকর। কি হতে পারে, এমন কিছু সম্ভবনা খতিয়ে দেখা যাক?
প্রথম আশংকা হচ্ছে, দেশে জরুরী অবস্থা জারী করা। রাষ্ট্রপতি’র হাতে ক্ষমতা ন্যস্ত করা। রাষ্ট্রপতি সবার সাথে আলোচনা করে একটি ‘অন্তর্র্বতী’ সরকার গঠন করবেন, যেটি নির্বাচনী লেভেল ফিল্ড তৈরী করবে, এবং এরপর দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন। এতে বিএনপি’র লাভ, তাঁদের মূল দাবি শেখ হাসিনা’র নেতৃত্বে নির্বাচনে না যাওয়ার শর্ত দাবি পূরণ হবে। বিএনপি অন্তর্র্বতী সরকারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখার সুযোগ পাবে। এসব কিছুই ‘হাইপোথেটিক’, আলোচনা সাপেক্ষ। দুই/এক বছর পর নির্বাচনে ফলাফল যাই হোক, তাতে আওয়ামী লীগের ক্ষতি নেই? ইতিমধ্যে বৈদেশিক চাপ কমবে, ২০০৮-র মত একটি স্বচ্ছ নির্বাচন হবে?
দ্বিতীয় সম্ভবনা হচ্ছে, বর্তমান সরকার সবার অংশগ্রহণে একটি সুন্দর নির্বাচন করবে, এবং ফলাফল মেনে নেবে। এক্ষেত্রে নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতা না হতে ঐক্যমত্য হতে হবে। কারণ: ওবায়দুল কাদের বলেছেন, বিএনপি ক্ষমতায় এলে এক রাতের মধ্যে আওয়ামী লীগ শেষ করে দেবে। আইনমন্ত্রী বলেছেন, বিএনপি-জামাত ক্ষমতায় গেলে বাংলাদেশ থাকবে না, আমিও থাকবো না? বিদেশমন্ত্রী বলেছেন, মনে হচ্ছে খুব একটা কঠিন সময় আসছে। -এদের আশ্বস্থ করতে হবে।
তৃতীয়ত: সরকার ডেকে সামরিক বাহিনীকে ক্ষমতা দিয়ে যাবে? তবে এক্ষেত্রে সংবিধান সংশোধন দরকার হতে পারে? তাই আপাতত: সংসদ বাতিল হচ্ছেনা। দলের ভেতর ক্যু হবার কোন সম্ভবনা নাই, তাই শেখ হাসিনা যা চাইবেন, তাই হবে?
চতুর্থতঃ ডঃ ইউনুস? শেখ হাসিনা স্বয়ং ইউনূসের বিরুদ্ধে কথা বলছেন। হয়তো আওয়ামী লীগ ভাবছে বিএনপি ড: ইউনুসকে তাদের ‘প্রধানমন্ত্রীর মুখ’ ঘোষণা দিয়ে নির্বাচনে নামবে। এতে বৈদেশিক সমর্থন যেমন মিলবে, তেমনি খালেদা-তারেক ইস্যু পিছে পড়বে। এই সম্ভবনা খুব কম, কারণ বিএনপি বাইরের কাউকে বিশ্বাস করেনা।
পঞ্চমত: বা চূড়ান্ত কথা হচ্ছে, এবারকার নির্বাচন সুষ্ঠ হতেই হবে, নইলে দেশ বিপাকে পড়বে, অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আসতে পারে। মোদ্দা কথা হচ্ছে, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকুক বা না থাকুক, বিএনপি ক্ষমতায় আসছে না? আওয়ামী লীগের বিকল্প বিএনপি নয়, শেখ হাসিনা’র বিকল্প খালেদা জিয়া নন। তারেক জিয়া’র কোন প্রশ্নই ওঠেনা। খালেদা-তারেক নেতৃত্বে থাকা অবস্থায় বিএনপি’র ক্ষমতায় আসার সম্ভবনা শূন্য, জিরো।