প্রবাসে উপজেলাভিত্তিক, অথচ অন্যতম বড় আঞ্চলিক সংগঠন সদ্বীপ সোসাইটির নির্বাচন প্রক্রিয়ার প্রাথমিক প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। গঠিত হয়েছে নির্বাচন কমিশন। ভোটার তালিকার প্রাথমিক কাজ শেষ হয়েছে। চলতি মাসেই ঘোষণা করা হবে নির্বাচনের তফসিল। আর গঠনতন্ত্রের বাধ্যবাধকতায় নির্বাচনের ভোটগ্রহণ হবে অক্টোবরের শেষ সপ্তাহে। গত ২৬ আগস্ট শনিবার ছিল সদস্য বা ভোটার হবার শেষ দিন। এদিন কার্যক্রম শেষে সংগঠনের সদস্য বা ভোটার সংখ্যা দাঁড়ায় ৫ হাজার ৩৩৭ জন। এরপর গত ৮ সেপ্টেম্বর শুক্রবার ব্রুকলিনে সংগঠনের কার্যালয়ে সর্বস্তরের উপস্থিতিতে কার্যকরী পরিষদ গঠন করে নির্বাচন কমিশন। পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট নির্বাচন কমিশনের প্রধান করা হয়েছে মোস্তাক হায়দারকে। নির্বাচন কমিশনের অন্য সদস্যরা হলেন- জাফর ইসলাম, মোহাম্মদ হেলাল, সানাউল্লাহ মাস্টার ও মোহাম্মদ মহসীন।
জানা গেছে, ২-১ দিনের মধ্যে চূড়ান্ত সদস্য বা ভোটার তালিকা নির্বাচন কমিশনের কাছে হস্তান্তর করা হবে। তবে তার আগে আরো একবার ভোটার তালিকা বাছাই করা হবে, যাতে কারো নাম ডবল না হয়। তবে ভোটার সংখ্যা কোনোভাবেই ৫ হাজার ৩৩৭ জনের বেশী হবে না। প্রয়োজনে এই সংখ্যা কমতে পারে। চূড়ান্ত ভোটার তালিকা হাতে পাবার পর এরপর চলতি মাসেই নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করবে নির্বাচন কমিশন।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার মোস্তাক হায়দার সদ্বীপবাসীকে একটি সুষ্ঠু ও সুন্দর নির্বাচন উপহার দেওয়ার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেছেন। এ প্রসঙ্গে তিনি ঠিকানাকে বলেন, প্রবাসে সদ্বীপ সোসাইটির দীর্ঘ ঐতিহ্য আছে। তাই সদ্বীপ সোসাইটির নির্বাচন প্রবাসে একটি সুন্দর উদাহরণ হয়ে থাকবে।
কবে নাগাদ তফসিল হতে পারে জানতে চাইলে প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, চলতি মাসেই আমরা তফসিল ঘোষণার ব্যাপারে আশাবাদী। তবে এটি নির্ভর করছে ভোটকেন্দ্র এবং ভোটিং মেশিন কনফার্ম হলেই।
তিনি জানান, নির্বাচন কমিশনের সদস্যরা অত্যন্ত সম্মানিত ও গ্রহণযোগ্য ব্যক্তি। তাদের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় সুষ্ঠু ও সুন্দর নির্বাচন উপহার দেওয়ার ব্যাপারে তিনি সদ্বীপবাসীসহ সংশ্লিষ্ট সকলের সহযোগিতা কামনা করেছেন।
এদিকে সদ্বীপ সোসাইটির নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে দুটি প্যানেল প্রায় চূড়ান্ত হয়েছে। এর একটি ফিরোজ-আলমগীর প্যানেল, অন্যটি ফয়সাল-আমজাদ প্যানেল। তারা জোরেশোরে নির্বাচনী প্রচার চালাচ্ছেন।
বঙ্গোপসাগরের দ্বীপ সন্দ্বীপ চট্টগ্রাম জেলার একটি উপজেলা হলেও যুক্তরাষ্ট্রে এ এলাকার অভিবাসীদের সংখ্যাটা অনেক জেলার চেয়েও বেশি। কেউ বলেন- অন্তত ২০ হাজার, কারোর দাবি এ সংখ্যা ৩০ হাজারের কম নয়। নিউইয়র্কের ব্রুকলিনে সন্দ্বীপীদের বেশিরভাগেরই বসবাস। সেখানেই গড়ে উঠেছে ‘সন্দ্বীপ সোসাইটি ইউএসএ’। সদস্যদের জন্য বিভিন্ন ধরনের কর্মকাণ্ডে এ সংগঠনের খ্যাতি আছে বেশ। এ কারণে, এর নেতৃত্বে আসতে পারাটা ভীষণ প্রতিযোগিতামূলক, সেইসাথে মর্যাদারও। কমবেশি চার হাজার সক্রিয় সদস্যের ভোটাভুটিতে সন্দ্বীপ সোসাইটি ইউএসএ’র সরাসরি নির্বাচন হতে যাচ্ছে অক্টোবরের শেষে।
এদিকে আসন্ন নির্বাচনে সম্ভাব্য দুটি প্যানেল প্রকাশ্যে লিফলেট ও পোস্টার বিতরণ শুরু করেছে। সোস্যাল মিডিয়াতেও তাদের রঙ-বেরঙয়ের পোস্টারে সয়লাব। একটি প্যানেলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন সভাপতি পদপ্রার্থী কমিউনিটির অতি পরিচিত মুখ, মূলধারার রাজনীতিক ও ফোবানার কেন্দ্রীয় নেতা ফিরোজ আহমেদ। ফিরোজ আহমেদ অতীতে সন্দ্বীপ সোসাইটির প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি বাংলাদেশ সোসাইটির নির্বাচন কমিশনারও ছিলেন। তার প্যানেলে সাধারণ সম্পাদক পদে প্রার্থিতা ঘোষণা করেছেন আলমগীর হোসাইন।
অন্যদিকে আরেকটি প্যানেলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন এমলাক হোসেন ফয়সল। এর আগে তিনি সন্দ্বীপ সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক, প্রধান নির্বাচন কমিশনার, সন্দ্বীপ স্পোর্টিং ক্লাব ও সন্দ্বীপ এডুকেশন সোসাইটির সভাপতি হিসাবে কাজ করেছেন। সোসাইটি বর্তমান কমিটির সভাপতি আব্দুল হান্নান পান্না ও এসএম আলাউদ্দীনের আশীর্বাদ রয়েছে তার প্যানেলের ওপর। এই প্যানেলে সাধারণ সম্পাদক পদে লড়বেন আমজাদ হোসেন। ২০১৯ সালের পর সন্দ্বীপ সোসাইটির আর কোন নির্বাচন হয়নি।
জানা গেছে, গত ১০ বছর বর্তমান সভাপতি আব্দুল হান্নান পান্না ও ৪ বছর ধরে এসএম আলাউদ্দীন সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন। নতুন নেতৃত্ব দেখার জন্য সন্দ্বীপবাসী আগ্রহের সঙ্গে অপেক্ষা করছে।