ভাসানী ফাউন্ডেশনের ৪র্থ আন্তর্জাতিক সম্মেলন গত ১০ সেপ্টেম্বর রোববার নিউইয়র্কের উডসাইডের কুইন্স প্লেসে অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও রাজনীতি বিশেষজ্ঞ ড. আসিফ নজরুল বলেছেন, আগের রাতে ভোট মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নয়। বিনা বিচারে মানুষ হত্যা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নয়। মওলানা ভাসানী ছিলেন মুক্তিযুদ্ধের বিশুদ্ধ চেতনার মানুষ। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা হচ্ছে ভাসানীর লংমার্চ। আজকে ক্ষমতায় থাকার জন্য দেশকে বিকিয়ে দেওয়া হচ্ছে। অন্য দেশকে স্বামী বলা হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশে সেক্যুলারিজমের নামে ইসলামের বিরুদ্ধে কাজ করছে একদল মানুষ। ধর্মীয় রাজনীতিকদের দমন করা হচ্ছে।
সম্মেলনে বক্তারা বাংলাদেশে গণতন্ত্র, আইনের শাসন, মানবাধিকার, মৌলিক অধিকার এবং মানুষের ভোটের অধিকার ফিরিয়ে দেওয়ার আহ্বান জানান। সম্মেলনে স্বাধীনতার স্বপ্নদ্রষ্টা মজলুম জননেতা মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর স্মৃতিরক্ষা ও নতুন প্রজন্মকে ভাসানীর আদর্শের সঙ্গে পরিচিত করে দেওয়ার ওপর গুরুত্ব আরোপসহ ১৯ দফা ঘোষণাপত্র গ্রহণ করা হয়।
অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক বিশিষ্ট সাংবাদিক মঈনুদ্দিন নাসের। ভাসানী ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান আলী ইমাম সিকদারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সম্মেলনের আলোচনা পর্বে অন্যান্যের মাঝে অংশ নেন লন্ডন থেকে আগত ভাসানী গবেষক লাইলী উদ্দিন, কানাডা থেকে আগত ভাসানী গবেষক অধ্যাপক ড. আবিদ বাহার, কলকাতার ভাসানী মঞ্চের সৌমিত্র দস্তিদার ও আসিফ রহমান, বাংলাদেশ সোসাইটি নিউইয়র্কের সাবেক সভাপতি ডা. ওয়াদুদ ভূইয়া, আন্তর্জাতিক ফারাক্কা কমিটির মহাসচিব সৈয়দ টিপু সুলতান, সোসাইটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ হোসেন খান ও ফখরুল আলম, সাবেক সহসভাপতি আজহারুল হক মিলন, সিনিয়র সাংবাদিক ও লেখক সাঈদ তারেক, নিউইয়র্ক বাংলাদেশ প্রেসক্লাবের সভাপতি এবং সাপ্তাহিক বাংলা পত্রিকার সম্পাদক ও টাইম টিভির সিইও আবু তাহের, সাপ্তাহিক বাংলাদেশ সম্পাদক ডা. ওয়াজেদ খান, সাপ্তাহিক জন্মভূমি সম্পাদক রতন তালুকদার, সাপ্তাহিক প্রবাস সম্পাদক মোহাম্মদ সাঈদ, বিশিষ্ট লেখক মাহমুদ রেজা চৌধুরী, ফোবানার একাংশের চেয়ারম্যান গিয়াস আহমেদ, অধ্যাপক ড. শান্তলী হক (অ্যাটর্নি), ফোবানার অপরাংশের এক্সিকিউটিভ সেক্রেটারি কাজী আযম, মওলানা ভাসানীর ভাতিজা আব্দুর রশীদ খান, জর্জিয়া রাজ্যের কমিউনিটি নেতা নাহিদ এইচ খান, কমিউনিটি অ্যাক্টিভিস্ট কাজী ফৌজিয়া, হাজী আনোয়ার হোসেন প্রমুখ। স্বাগত বক্তব্য দেন সংগঠনের সহ-সাধারণ সম্পাদক ইমরান আনসারী।
সম্মেলনে প্রধান অতিথি ড. আসিফ নজরুল মওলানা ভাসানীর প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন ও তাঁর কর্মময় জীবনের বিভিন্ন দিক তুলে ধরে বলেন, বাংলাদেশে মওলানা ভাসানীই একমাত্র নেতা, যিনি সকল দল-মত, ধর্ম-বর্ণের মানুষকে এক পতাকার তলে এক মঞ্চে সমবেত করতে পারতেন। তাঁর আদর্শই হচ্ছে দেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত চেতনা। সত্যিকারার্থেই তিনি ছিলেন গণমানুষের নেতা, মেহনতি মানুষের নেতা, ক্ষমতার লোভমুক্ত রাজনৈতিক নেতা; যা তিনি তাঁর জীপনযাপনে, কর্মকাণ্ডে প্রমাণ করে গেছেন। ড. নজরুল বলেন, আজকের বাংলাদেশের সার্বিক প্রেক্ষাপটে মওলানা ভাসানীর মতো নেতা প্রয়োজন, নতুন প্রজন্মের কাছে তাঁকে তুলে ধরা প্রয়োজন। মওলানা ভাসানী কে, কী ছিলেন; তাঁর দর্শন কী ছিল, তা দেশ ও প্রবাসের নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরা অত্যন্ত প্রয়োজন। কেন তিনি ফারাক্কা মিছিল করেছিলেন, আওয়ামী মুসলিম লীগ থেকে ‘মুসলিম’ শব্দ উঠিয়েছিলেন, তাও সবার মাঝে তুলে ধরা প্রয়োজন। তিনি বলেন, দেশে গণতন্ত্র, আইনের শাসন, গণমানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হলে মওলানা ভাসানীর সামগ্রিক জীবন থেকে আমাদের শিক্ষা নিতে হবে।
বাংলাদেশের বর্তমান দুরবস্থাকালে মওলানা ভাসানীর মতো নেতার প্রয়োজন বলে বক্তারা অভিমত ব্যক্ত করেন। বাংলাদেশে তাঁর মতো ত্যাগী, ভোগবিলাসহীন সুফি পুরুষ আর দ্বিতীয়টি নেই। তিনি একাধারে সামাজিক, রাজনৈতিক ও ধর্মীয় নেতা ছিলেন। তাঁর তুলনা তিনি নিজেই। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, আজ জাতির ইতিহাস থেকে তাঁকে মুছে ফেলা হচ্ছে। অনুষ্ঠানে সৌমিত্র দস্তিদার নির্মিত মওলানা ভাসানীর ওপর একটি দীর্ঘ তথ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়। সম্মেলন উপলক্ষে ‘ভাসানী’ শীর্ষক একটি স্মরণিকা প্রকাশ করা হয়।
সম্মেলনের অতিথিদের ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানানো হয়। সবশেষে ছিল সংগীতানুষ্ঠান। এতে বাংলাদেশের জনপ্রিয় শিল্পী রিজিয়া পারভীনসহ স্থানীয় শিল্পীরা সংগীত পরিবেশন করেন। এই পর্ব উপস্থাপনায় ছিলেন প্রবাসী শিল্পী শামীম সিদ্দিকী। অনুষ্ঠানে সর্বস্তরের বিপুলসংখ্যক ভাসানীপ্রেমী দর্শক-শ্রোতা উপস্থিত ছিলেন।