Thikana News
১৯ অক্টোবর ২০২৪
  1. ই-পেপার
  2. চলতি সংখ্যা
  3. বিশেষ সংখ্যা
  4. প্রধান সংবাদ
  5. আমেরিকার অন্দরে
  6. বিশ্বচরাচর
আমেরিকা শনিবার, ১৯ অক্টোবর ২০২৪


 

কথা দিয়েও কথা রাখেনি ভারত

কথা দিয়েও কথা রাখেনি ভারত


ভারতের অভ্যন্তরীণ রাজনীতির শিকার হয়েছে বাংলাদেশ। কেবল বাংলাদেশই নয়, এশিয়া ও আফ্রিকার বেশ কয়েকটি দেশ ভারতের সিদ্ধান্তে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। চাল রফতানির ব্যাপারে ভারত বাংলাদেশকে  সুবিধা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। বছরে ১০ লাখ মেট্রিক টন চাল সরবরাহের কথা ছিল। কিন্তু ভারত সরকার সে কথা রাখেনি। উল্টো রফতানিতে নিষেধাজ্ঞা, কঠোর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছে।
চাল ও গমের ওপর উল্লেখযোগ্য হারে শুল্ক আরোপ করেছে ভারত। তারা গত বছর ভাঙা চাল রফতানি বন্ধ করে দেয়। গত আগস্টে সেদ্ধ চাল রফতানিও নিয়ন্ত্রিত করে চাল রফতানির ওপর ২০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করে। সারা বিশ্বের রফতানি বাজারের ৪০ শতাংশ ভারত একাই রফতানি করে থাকে। চাল রফতানিতে ভারত এই কঠোর নীতি নেওয়ায় বিভিন্ন দেশে চাল ও গমের দাম বেড়ে গেছে।
ভারতের চাল রফতানি নিষিদ্ধ ও নিয়ন্ত্রণ করার প্রেক্ষাপটে ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ড, পাকিস্তান চাল ও গম রফতানি নিয়ন্ত্রণ করছে। রফতানি মূল্যও বাড়িয়েছে। রাশিয়া এরই মধ্যে গমের দাম উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়িয়েছে। ইউক্রেন থেকে গম রফতানি অনেক কমে গেছে। কৃষ্ণসাগর দিয়ে রাশিয়া ইউক্রেনের খাদ্যশস্য রফতানি কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করায় রফতানির ক্ষেত্রে ইউক্রেন সমস্যায় পড়েছে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে আফ্রিকা ও এশিয়ার বিভিন্ন দেশে খাদ্যশস্যের দামে ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা লক্ষ করা যাচ্ছে।
জানা যায়, ভারতের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ রাজ্যে নির্বাচন সামনে। নির্বাচনে ফলাফল নিয়ে দ্বিধায় আছে নয়াদিল্লি। এরই মধ্যে কয়েকটি রাজ্যে অনুষ্ঠিত বিধানসভা নির্বাচনে প্রত্যাশিত ফলাফল পায়নি বিজেপি। চাল, গমের দাম নিয়ন্ত্রণের বাইরে থাকলে বা বেড়ে গেলে তা নির্বাচনে প্রভাব ফেলবে। ভোটের আগে খাদ্যশস্যের দাম সাধারণ মানুষের নাগালের মধ্যে রাখাই বিজেপি সরকারের প্রধান উদ্দেশ্য। অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক স্বার্থেই মোদি সরকার খাদ্যশস্য রফতানি বন্ধ ও নিয়ন্ত্রিত করেছে। এর ফলে বিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশে খাদ্যশস্যের দাম বেড়েছে।
অভ্যন্তরীণভাবে বিরূপ প্রতিক্রিয়া হতে পারে এই ভয়ে পাঁচ লাখ মেট্রিক টন চালের চালান বন্ধ রেখেছে ভারত। ভাঙা চাল ও অন্যান্য ধরনের চাল, গমের দামও বেড়ে গেছে। ভাঙা সেদ্ধ চাল ভারত বিক্রি করছে টনপ্রতি ৫৪০ থেকে ৫৫০ মার্কিন ডলারে। অথচ এক মাস আগেও এই চাল প্রতি টনে ১০০ ডলার কম দামে বিক্রি হয়েছে। ভারত বছরে সোয়া দুই কোটি থেকে আড়াই কোটি মোট্রক টন চাল রফতানি করে।
এদিকে ভারতের এই নিষেধাজ্ঞা ও নিয়ন্ত্রণমূলক নীতির সুযোগে রাশিয়া, ভিয়েতনাম, মিয়ানমার, থাইল্যান্ড, পাকিস্তানও খাদ্যশস্যের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। থাইল্যান্ড টনপ্রতি চাল দুই মাস আগের চেয়ে ৬০-৬৫ মার্কিন ডলার অধিক দাম চাচ্ছে। ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়ার ক্ষেত্রেও একই অবস্থা। তারা টনপ্রতি দাম চাচ্ছে ৬০০ থেকে ৬২০ মার্কিন ডলার। বিস্ময়করভাবে উল্লিখিত দেশগুলো খুবই কাছাকাছি, প্রায় অভিন্ন রেট দাবি করছে। গমের দামও বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। দু-তিন মাস আগেও রাশিয়া প্রতি টন গম ২৮৫ মার্কিন ডলারে বিক্রি করে। এখন দাম চাওয়া হচ্ছে ৩১৫ মার্কিন ডলার। ইউক্রেন থেকে গম রফতানি বন্ধ থাকা এবং ভারতের নিষেধাজ্ঞাতার সুযোগ নিচ্ছে রাশিয়াও। গম রফতানিতে ভারত নিষেধাজ্ঞা আরোপ করার ফলে অনাকাক্সিক্ষত পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে।
চাল, গমসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় আটটি পণ্য রফতানিতে বাংলাদেশকে কোটা দিতে সম্মত হয়েছিল ভারত। দেশে চালের উৎপাদন উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়লেও ঘাটতি কিছু রয়েই গেছে। গত বছর চালের উৎপাদন হয়েছে ৩ কোটি ৮০ লাখ মেট্রিক টন। আগের বছর উৎপাদন হয়েছিল ৩ কোটি ৭০ লাখ মেট্রিক টন। দুই বছরই চালের ঘাটতি হয় যথাক্রমে ১০ লাখ ও ১২ লাখ মেট্রিক টন। এই চাল আমদানি করা হয় প্রধানত ভারত থেকে। এ ছাড়া প্রায় ৪০ লাখ মেট্রিক টন গম আমদানি করা হয়। সব মিলিয়ে প্রায় ৫০ লাখ মেট্রিক টন চাল-গমের ঘাটতি মেটানো হয় আমদানি করে। বাংলাদেশ ভারতের কাছ থেকে বছরে ১০ লাখ মেট্রিক টন চালের কোটা চেয়েছিল। অর্থাৎ প্রতিবছর সরকারি-বেসরকারি খাতে এই পরিমাণ চাল সরবরাহ করা হবে। ভারতের বাণিজ্যমন্ত্রী বাংলাদেশের প্রস্তাবে সম্মতিও দেন। কিন্তু তা কার্যকর করা হয়নি।

কমেন্ট বক্স