Thikana News
১৯ অক্টোবর ২০২৪
  1. ই-পেপার
  2. চলতি সংখ্যা
  3. বিশেষ সংখ্যা
  4. প্রধান সংবাদ
  5. আমেরিকার অন্দরে
  6. বিশ্বচরাচর
আমেরিকা শনিবার, ১৯ অক্টোবর ২০২৪


 
কী পেল বাংলাদেশ

জি-২০ সম্মেলন শেষে  উচ্ছ্বসিত আ’লীগ

জি-২০ সম্মেলন শেষে  উচ্ছ্বসিত আ’লীগ


ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিতে জি-২০ সম্মেলন শেষে দেশে ফিরেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বাংলাদেশ জি-২০ নামের আন্তর্জাতিক ক্লাবের সদস্য না হলেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এতে আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে অংশ নেন। জি-২০ বা গ্রুপ অব টোয়েন্টি হচ্ছে কতগুলো দেশের একটি ক্লাব, যারা বিশ্ব-অর্থনীতির বিষয়ে পরিকল্পনার জন্য আলোচনা করতে বৈঠক করে। জি-২০-ভুক্ত দেশগুলোর আওতায় বিশ্ব-অর্থনীতির ৮৫ শতাংশ এবং বিশ্ব-বাণিজ্যের ৭৫ শতাংশ। বিশ্বের দুই-তৃতীয়াংশ জনগণও রয়েছে এসব দেশে। এর সদস্যরাষ্ট্রগুলো হচ্ছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং আরও ১৯টি দেশ। এসব দেশ হচ্ছে আর্জেন্টিনা, অস্ট্রেলিয়া, ব্রাজিল, কানাডা, চীন, ফ্রান্স, জার্মানি, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, ইতালি, জাপান, মেক্সিকো, রাশিয়া, সৌদি আরব, দক্ষিণ আফ্রিকা, দক্ষিণ কোরিয়া, তুরস্ক, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্র। স্পেন সব সময়ই অতিথিরাষ্ট্র হিসেবে আমন্ত্রণ পায়। জি-২০-ভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে কয়েকটি দেশ মিলে আবার জি-৭ গঠন করেছে। জি-২০-ভুক্ত কয়েকটি দেশ, যেমন ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত, চীন ও দক্ষিণ আফ্রিকা মিলে ‘ব্রিকস’ নামে আরেকটি সংগঠন তৈরি করেছে। এ সংগঠনটি আরও সম্প্রসারিত হওয়ার কথা রয়েছে। সর্বশেষ সম্মেলনে তারা নতুন ছয়টি দেশকে আহ্বান জানিয়েছে। এগুলো হচ্ছে আর্জেন্টিনা, মিসর, ইরান, ইথিওপিয়া, সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাত। জি-২০ সম্মেলনে অংশ নিয়ে বাংলাদেশ কী পেল ঘুরেফিরে আসছে এমন প্রশ্ন। অনেকের মতে, এই সম্মেলনে দুই অধিবেশনে বিশ্বদরবারে নিজেকে তুলে ধরার সুযোগ পেয়েছে বাংলাদেশ। একই সঙ্গে বিশ্বনেতাদের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ ও কুশল বিনিময়ে বাংলাদেশের অবস্থান তুলে ধরেছেন প্রধানমন্ত্রী। এ ছাড়া সাইডলাইনে দক্ষিণ কোরিয়া, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্টের সঙ্গেও বৈঠক করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির উপস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গেও কথা হয়েছে তার। ১০ সেপ্টেম্বর রোববার সকালে নাশতার টেবিলে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাকের সঙ্গেও আলাপ হয় শেখ হাসিনার। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হওয়া একটি ছবিতে দেখা যায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চেয়ারের পাশে হাঁটু গেড়ে বসে কথা বলছেন ঋষি সুনাক।
তবে আলোচনায় রয়েছে শেখ হাসিনা-নরেন্দ্র মোদি, জো বাইডেন-নরেন্দ্র মোদির বৈঠক দুটি। সম্মেলনের আগের দিন সন্ধ্যায় ও রাতে ওই বৈঠক দুটি অনুষ্ঠিত হয়। ওই বৈঠকের পরদিন জি-২০ সম্মেলনস্থলে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সৌজন্য সাক্ষাৎ হয়। এ সময় তাদের মধ্যে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলাপ হয়। প্রধানমন্ত্রীর মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুলও এ সময় উপস্থিত ছিলেন। বাইডেন তখন মোবাইল ফোন হাতে নিয়ে শেখ হাসিনা ও সায়মা ওয়াজেদের সঙ্গে সেলফিও তোলেন। ওই সেলফি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে চর্চা চলছে। রাজনৈতিক অঙ্গনেও চলছে আলোচনা-সমালোচনা। বাইডেনের সঙ্গে শেখ হাসিনার সেলফি নিয়ে আওয়ামী লীগের শীর্ষ থেকে তৃণমূল নেতাদের মধ্যে ভীষণ উচ্ছ্বাস দেখা যাচ্ছে। একই দিন রাতে ভারতের রাষ্ট্রপতির দেওয়া নৈশভোজেও জো বাইডেনের সঙ্গে আলাপ হয় শেখ হাসিনার। ছবিতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে শেখ হাসিনা ও বাইডেনের মাঝখানে দেখা যায়। শেখ রেহানাকে এ সময় বাইডেনের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন শেখ হাসিনা। নৈশভোজের ফাঁকে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গেও কুশল বিনিময় হয় প্রধানমন্ত্রীর। আগামী নির্বাচন নিয়ে সরকারের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের অব্যাহত চাপের মধ্যে বাইডেনের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর দুই দফার কুশল বিনিময়ের যে চিত্র দেখা গেল, তাতে অনেকের ধারণা, যুক্তরাষ্ট্র হয়তো বাংলাদেশের ব্যাপারে আগের অবস্থান থেকে সরে আসবে।
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষকেরা বলছেন, জি-২০ সম্মেলনে সরকার ছাড়াও দল হিসেবে আওয়ামী লীগ উপকৃত হয়েছে। জাতীয় নির্বাচনের আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ্বনেতাদের সঙ্গে একান্তভাবে বৈঠক করার সুযোগ পেয়েছেন। যেসব দেশের সঙ্গে আওয়ামী লীগ ও সরকারের সম্পর্ক ভালো নয়Ñএমন দৃষ্টিভঙ্গিও কাটিয়ে উঠেছে সরকার।
কূটনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, জি-২০ সম্মেলনের আগের দিন যেভাবে পরপর দুটি বৈঠক হলো, তাতে এক ধরনের বার্তা পাওয়া যায়। অর্থাৎ ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশলসহ অন্যান্য বিষয় নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের যে দূরত্ব তৈরি হয়েছে, তাতে ভারতের মধ্যস্থতার ভূমিকা স্পষ্ট হয়েছে। আবার সম্মেলনের দিন সম্মেলনস্থলে ও নৈশভোজেও বাইডেনের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর কুশল বিনিময় ও আলাপ হয়। নৈশভোজের আলাপে মোদির উপস্থিতি বেশ তাৎপর্যপূর্ণ। এর পরও যুক্তরাষ্ট্র ও ভারত নির্বাচন নিয়ে কী ভূমিকা নেয়, তা জানার জন্য আরও কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে। জি-২০ সম্মেলনে বাংলাদেশের অর্জন বা সফলতার বিষয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের অত্যন্ত উষ্ণ ও সৌহার্দ্যপূর্ণ চ্যাট ঢাকা ও ওয়াশিংটনের মধ্যে গভীর সুসম্পর্ককে চিহ্নিত করেছে।
আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য লে. কর্নেল (অব.) ফারুক খান বলেন, বাংলাদেশ যে দেশ হিসেবে খুবই গুরুত্বপূর্ণ, এ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যোগদানের মাধ্যমে এ বার্তাই উঠে এসেছে ও স্বীকৃত হয়েছে। তিনি আরও বলেন, বিশেষভাবে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের সেলফি তোলাও তাৎপর্যপূর্ণ। প্রধানমন্ত্রীর কন্যার সঙ্গেও কথা বলেছেন বাইডেন। আর ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী যেভাবে কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে, এটা সারা বিশ্বের জন্য একটা শুভ বার্তা।
সাবেক রাষ্ট্রদূত ও কূটনৈতিক বিশ্লেষক এম হুমায়ুন কবীর বলেন, জি-২০ সম্মেলনের মঞ্চকে কাজে লাগিয়ে সরকার বিশ্বদরবারে বাংলাদেশকে তুলে ধরতে পেরেছে। এটি একটি বড় পাওয়া। সম্মেলনস্থলে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বিশ্বের বড় বড় নেতাদের কুশল বিনিময় ও আলাপ হয়েছে। এ ছাড়া উন্নয়ন সহযোগী কয়েকটি দেশের সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধানের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক হয়েছে। সবচেয়ে বড় বিষয় হলো যুক্তরাষ্ট্রের অব্যাহত চাপের পর সে দেশের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর দুই দফায় কুশল বিনিময় ও আলাপ। আগের দিন শেখ হাসিনা-নরেন্দ্র মোদি এবং জো বাইডেন-নরেন্দ্র মোদির বৈঠকের পর নৈশভোজে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির উপস্থিতিতে শেখ হাসিনা ও বাইডেনের মধ্যে আলাপচারিতা অনেকাংশে তাৎপর্যপূর্ণ।

কমেন্ট বক্স