Thikana News
১৯ অক্টোবর ২০২৪
  1. ই-পেপার
  2. চলতি সংখ্যা
  3. বিশেষ সংখ্যা
  4. প্রধান সংবাদ
  5. আমেরিকার অন্দরে
  6. বিশ্বচরাচর
আমেরিকা শনিবার, ১৯ অক্টোবর ২০২৪


 

বিদেশিদের সমঝোতা প্রস্তাব

বিদেশিদের সমঝোতা প্রস্তাব


সরকারি দল আওয়ামী লীগ ও রাজপথের প্রধান বিরোধী দল বিএনপির মধ্যে দৃশ্যত সমঝোতার সুযোগ নেই। দুই পক্ষের মধ্যে দূরত্বের রেখা এতটাই প্রসারিত যে এর মধ্যে সেতু রচনার অবকাশ নেই। এর মধ্যেও সমঝোতার কোনো ক্ষেত্র বের করা যায় কি না, তা নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশসমূহ নানাভাবে প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। শীর্ষ পর্যায়ের রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক সূত্রে আভাস পাওয়া গেছে, সরকার সমঝোতার বিপক্ষে  নয়। কিছু ছাড় দিয়ে হলেও একটা সম্মানজনক সুরাহার পক্ষে তারা। তবে তা অবশ্যই সাংবিধানিক ব্যবস্থার মধ্যে হতে হবে। বিএনপির দাবি অনুযায়ী তাদের নির্বাচনে আনার জন্য সাংবিধানিক বিধিব্যবস্থায় সংশোধনী আনার কথা ভাবছে না সরকার। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাজ্যের বাংলাদেশস্থ রাষ্ট্রদূত এবং ঢাকাস্থ জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারীকে সরকার স্পষ্টভাবেই জানিয়ে দিয়েছে, সাংবিধানিক সংশোধনী আনার অবকাশ নেই, প্রয়োজনও নেই। বিদ্যমান সাংবিধানিক ব্যবস্থায়ই সমঝোতা সম্ভব। বিদেশিরা সরকারের এ অবস্থানের বিরুদ্ধে কোনো কথা বলেননি। এমনকি সংবিধান সংশোধন করে বিএনপিকে নির্বাচনে আনার পদক্ষেপ নেওয়ার কথাও কোনো দেশের কোনো প্রতিনিধিই বলেননি। তবে বর্তমান সাংবিধানিক ব্যবস্থার মধ্যেই কীভাবে সমঝোতা প্রতিষ্ঠা করা যায়, তা জানতে চেয়েছেন তারা। ঢাকাস্থ কূটনীতিকেরা ছাড়াও নানা সময়ে সফরকারী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধিরা দুই পক্ষের মধ্যে সমঝোতার প্রক্রিয়া নিয়ে কথা বলেছেন। এ ব্যাপারে তারা সরকারের কাছে অভিমতও রেখেছেন। সরকারি মতামত, প্রস্তাবও শুনেছেন। বিএনপির কাছে সরকারি মতামত ও প্রস্তাব তুলে ধরেছেন। জানা যায়, বিএনপি বিষয়গুলো হালকা করে নেয়নি। বিষয়গুলো নিয়ে দলীয় ও সমমনা দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার কথা বলেছে। বিএনপির নেতৃস্থানীয় সূত্র জানায়, বিগত তিনটি নির্বাচনেই সরকারি দল নির্বাচনের নামে যে অভাবনীয় কাণ্ড করেছে, তাতে কোনোভাবেই বিশ্বাস করা যায় না যে এই সরকার সুষ্ঠু, প্রভাবমুক্ত, নিরপেক্ষ নির্বাচন করবে। অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচনের অপরিহার্য পূর্বশর্ত হচ্ছে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড করা। যদিও সরকারের দিক থেকে শতভাগ লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করা হবে বলে বিদেশিদের আশ্বস্ত করা হয়।
বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে সরকার ও বিএনপির নেতৃত্বাধীন বিরোধীদের মধ্যে কীভাবে সমঝোতা প্রতিষ্ঠা করা যায়, তা নিয়ে বিদেশিরাও উদ্বিগ্ন। বিদেশিদের ঘন ঘন বাংলাদেশ সফরের মুখ্য উদ্দেশ্য দেশের আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন। অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠানে পাশ্চাত্য দেশসমূহ, চীন, রাশিয়া, জাপান এমনকি প্রতিবেশী ভারতও আগ্রহী। চীন, ভারত, রাশিয়ার অবস্থান সরকারের জন্য অনেকটাই স্বস্তিদায়ক হলেও পশ্চিমা দেশগুলোর ক্ষেত্রে তা নয়। তবে অতি সাম্প্রতিককালে তাদের পূর্ববর্তী অবস্থানেও লক্ষণীয় পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে। চীনের দিকে বাংলাদেশের অধিকমাত্রায় ঝুঁকে যাওয়ার ঘটনা যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলোকে চিন্তিত করে রেখেছে। ভারত-প্রশাস্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্র তার একচ্ছত্র কর্তৃত্ব ও নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে চায়। এ ক্ষেত্রে চীন তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ও প্রতিবন্ধক। ভারত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে বোঝাতে সক্ষম হয়েছে যে যুক্তরাষ্ট্রের অনুদার নীতিই বাংলাদেশকে চীনঘেঁষা হতে বাধ্য করেছে। চীন বাংলাদেশের অবকাঠামোগত অর্থনৈতিক উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য সহযোগিতা করছে। তা সত্ত্বেও বাংলাদেশ স্বাধীন সত্তা নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশের এই নীতির প্রশংসা না করে অনেকটা বৈরী ভূমিকা নেওয়া সমীচীন নয় বলেও বলা হয়েছে। ভারতীয় পত্রপত্রিকায়ই বাংলাদেশ সরকারের অবস্থানের কথা তুলে ধরা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের দূরত্ব সৃষ্টির প্রধান কারণ সেন্টমার্টিন দ্বীপ এবং বঙ্গোপসাগরের ব্লকগুলো তাদেরকে দীর্ঘমেয়াদি লিজ না দেওয়া। জাতীয় স্বার্থেই সরকার এ প্রস্তাব এখনো বিবেচনায় নেয়নি। প্রশ্ন উঠেছে, বিএনপি কি মার্কিন স্বার্থরক্ষায় সম্মতি দিয়েই তাদের প্রতি মার্কিন সমর্থন, সহানুভূতি লাভের চেষ্টা করছে? বঙ্গোপসাগর ও ভারত মহাসাগরের সাতটি স্থানে মার্কিন ডুবোজাহাজ, যুদ্ধজাহাজের যাত্রাবিরতি, জ্বালানি সংগ্রহের জন্য স্বল্পকালীন অবস্থানের সুযোগ দিয়েছে ভারত। বাংলাদেশের সেন্টমার্টিনের ক্ষেত্রেও অনুরূপ ব্যবস্থা করা হবে মাত্র। প্রয়োজনে চীনও এ ধরনের সুবিধা নিতে পারে। বঙ্গোপসাগরের ব্লকগুলোর ব্যাপারে সরকার এখনো শেষ কথা বলেনি।
যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক বাংলাদেশ প্রশ্নে পূর্ববর্তী অবস্থান থেকে সরে নমনীয় নীতি নেওয়ার পেছনে ভারতের ভূমিকা রয়েছে। যে কারণে নিরপেক্ষ, তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রশ্নে যুক্তরাষ্ট্র নতুন করে কিছু বলছে না। তবে তারাও জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্য অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচন একান্তভাবেই কামনা করে। এ ব্যাপারে ভারতের অবস্থানও স্পষ্ট। প্রশ্নহীন, গ্রহণযোগ্য নির্বাচন প্রশ্নে ভারত তার প্রত্যাশার কথা বাংলাদেশ সরকারকেও জানিয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে, সমঝোতা কীভাবে হবে? বিদেশিদের মতামত ও প্রস্তাবের জবাব দিতে বিএনপি সময় নিয়েছে। লন্ডনে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের মতামত ও সিদ্ধান্তের পরই বিএনপি তার আনুষ্ঠানিক সিদ্ধান্ত জানাবে। কূটনৈতিক সূত্রে বলা হয়েছে, বিএনপিপন্থী কূটনীতিকেরা এই মর্মে বিদেশিদের কাছে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন, সরকার কিছু ছাড় দিলে বিএনপি শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে অংশ নেবে।
জানা যায়, লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডের শতভাগ নিশ্চয়তা ও নির্বাচনকালীন সরকারে বিএনপি, জাতীয় পার্টি ও ১৪ দলের শরিকদের অন্তর্ভুক্তির মাধ্যমে সর্বদলীয় অবস্থা দেখানো হতে পারে। সরকারের এ ধরনের পরিকল্পনার প্রশংসা করেছে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন। তবে এ ব্যাপারে সরকারি চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নির্ভর করছে বিরোধী দলসমূহের, বিশেষত বিএনপির ভূমিকার ওপর।
 

কমেন্ট বক্স