Thikana News
১৯ অক্টোবর ২০২৪
  1. ই-পেপার
  2. চলতি সংখ্যা
  3. বিশেষ সংখ্যা
  4. প্রধান সংবাদ
  5. আমেরিকার অন্দরে
  6. বিশ্বচরাচর
আমেরিকা শনিবার, ১৯ অক্টোবর ২০২৪


 

খালেদা জিয়াকে নিয়ে বিএনপিতে গুমোট পরিস্থিতি

খালেদা জিয়াকে নিয়ে বিএনপিতে গুমোট পরিস্থিতি


সাবেক তিনবারের প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার হঠাৎ করেই মারাত্মক অবনতি।  জটিল হচ্ছে লিভারের সমস্যা। ডায়াবেটিস, প্রেশারসহ বিভিন্ন প্যারামিটার ওঠানামা করছে। পেটে পানি চলে আসছে। শরীরে প্রোটিন কমে যাচ্ছে। পায়ের বাতের ব্যথা বাড়ছে। হার্টের সমস্যায়ও ঝুঁকিতে রয়েছেন। লিভার সমস্যার কারণে ছেড়ে ছেড়ে জ্বর আসে, বমি হচ্ছে। দিনে একাধিকবার অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য থেকেও বিশেষজ্ঞরা নিয়মিত চিকিৎসা-সংক্রান্ত খোঁজ নিচ্ছেন। তার শারীরিক জটিলতা অনুযায়ী বাংলাদেশে সব ধরনের চিকিৎসা আর সম্ভব নয়। অ্যাডভান্সড ট্রিটমেন্ট পেতে হলে দেশের বাইরে নেওয়া আবশ্যক। চিকিৎসকেরা উন্নতির কোনো লক্ষণ দেখছেন না। দিন দিন তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হচ্ছে। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, তাদের আর কিছুই করার নেই।
গত ৯ আগস্ট রাতে স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য খালেদা জিয়াকে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেই থেকে এক মাসেরও বেশি সময় ধরে তিনি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তবে দলের চেয়ারপারসনের সংকটাপন্ন অবস্থা নিয়ে বিএনপিতে তৈরি হয়েছে গুমোট পরিস্থিতি। এবার রহস্যজনকভাবে তার শারীরিক অবস্থা নিয়ে চলছে লুকোচুরি। কেউ প্রকাশ্যে কিছুই বলছেন না। খালেদা জিয়ার মেডিকেল বোর্ড, চিকিৎসকসহ হাইকমান্ডের কেউ মুখ খুলছেন না। গণমাধ্যমকেও এড়িয়ে চলছেন তারা। বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের মাধ্যমে দোয়ার আয়োজন করে অস্পষ্ট বক্তব্য দিচ্ছেন। তিনি ভালো নেইÑশুধু এটুকুর মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকছেন। এদিকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসা করানোর অনুমতি চেয়ে তার ছোট ভাই শামীম ইস্কান্দার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছেন। বিএনপিও পরিবারের ওপর সব দায় দিয়ে রাজনৈতিক ভূমিকা থেকে কৌশলী অবস্থান নিয়েছে।
যদিও বিএনপির শীর্ষস্থানীয় নেতারা অভিযোগ করেছেন, খালেদা জিয়া অসহায় অবস্থায় রয়েছেন। কারাগারে বন্দী অবস্থায় তাকে ভুল চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। এ জন্য এখন তার শরীরে অন্য ওষুধ কাজ করছে না কিংবা ওষুধ দেওয়া হলে অন্য জটিলতা বেড়ে যাচ্ছে। দ্রুত বিদেশে পাঠানো না হলে যেকোনো সময় ঘটতে পারে দুর্ঘটনা।
সরকারবিরোধী বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতারাও বলছেন, সরকার খালেদা জিয়াকে তিল তিল করে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছে। দেশের অন্যান্য ব্যক্তিরা সর্দি-কাশি হলেও দেশের বাইরে উন্নত চিকিৎসার জন্য চলে যান। কিন্তু বেগম খালেদা জিয়া একজন সাবেক রাষ্ট্রপতির স্ত্রী, সাবেক সেনাপ্রধানের স্ত্রী এবং তিনি নিজেও তিনবার প্রধানমন্ত্রী ছিলেন, একবার বিরোধীদলীয় নেত্রী ছিলেন। তাকে চিকিৎসা নিতে দেশের বাইরে যেতে না দেওয়া দেশের রাজনীতিতে খারাপ উদাহরণ হিসেবে বিবেচিত হয়ে থাকবে। মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে হলেও তাকে সরকারি খরচে বিদেশে যেতে দেওয়া আবশ্যক।
খালেদা জিয়ার অসহায় অবস্থায় বিএনপিও অসহায় পরিস্থিতিতে পড়েছে বলে মনে করছেন দলটির তৃণমূল নেতাকর্মীরা। তারা বলছেন, খালেদা জিয়া শুধু পরিবারের নন, দলেরও বড় সম্পদ। এখন পর্যন্ত খালেদা জিয়ার মুক্তি ও সুচিকিৎসা নিশ্চিতে একক বড় কোনো কর্মসূচি পালন করতে পারেনি বিএনপি। সরকার পতনে যেসব কর্মসূচি পালিত হয়েছে, সেগুলোর অন্তত কোনো একটি এককভাবে খালেদা জিয়ার ইস্যুতে করা উচিত ছিল কিন্তু বিএনপি করতে পারেনি। এই সরকারের পতন যেমন জরুরি, তেমনি খালেদা জিয়ার বিষয়েও কৃতজ্ঞ থাকা জরুরি। এখন দলের মহাসচিবসহ স্থায়ী কমিটির সদস্যরা যেমন উন্নত চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে যাচ্ছেন, তেমনি খালেদা জিয়ার চিকিৎসাও আবশ্যক। মুক্তি ও সুচিকিৎসা নিশ্চিতে সরকার পতনের এক দফা কর্মসূচির মতো খালেদা জিয়া ইস্যুতে ঢাকাসহ সারা দেশে কর্মসূচি দেওয়া আবশ্যক। দোয়া, মিলাদ মাহফিল থেকে বেরিয়ে আসা দরকার। অসুস্থ খালেদা জিয়া সুস্থ হয়ে দলীয় কর্মসূচিতে এলে দলে প্রাণসঞ্চার হবে।
এদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির নির্বাহী কমিটির দুই সদস্য জানান, দলের উচ্চ পর্যায় থেকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, যারা টেলিভিশন টকশোতে যান কিংবা প্রেসক্লাব-ডিআরইউকেন্দ্রিক নিয়মিত কর্মসূচিতে অতিথি হন, তারা যেন খালেদা জিয়ার অসুস্থতার বিষয়ে কোনো কথা না বলেন। খালেদা জিয়ার বিষয়টি এখন দলে স্পর্শকাতর হিসেবে দেখা হচ্ছে। তার পূর্ণ তথ্য যদি মাঠপর্যায়ে চলে যায়, তাহলে তৃণমূল থেকে চাপ পড়বে। খালেদা জিয়ার মুক্তি ও একক কর্মসূচির জন্য দলে চাপ তৈরি হতে পারে। নির্বাচন সামনে রেখে খালেদা জিয়ার জন্য এখন একক কর্মসূচি দেওয়া কোনোভাবেই সম্ভব নয়। নেতাকর্মীরা মাঠে নামলে পরিস্থিতি ভিন্ন দিকে মোড় নিতে পারে, তাই খালেদা জিয়ার সঙ্গে বিএনপিও এখন অসহায় অবস্থায় রয়েছে।
খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন জানিয়েছেন, লিভার ও কিডনি সমস্যা আরও জটিল হওয়ায় খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের অবস্থা নিয়ে চিকিৎসকেরা শঙ্কিত। বিদেশে নেওয়া ছাড়া এ দেশে ডাক্তারদের আর কিছুই করার নেই।
এ বিষয়ে ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েল বলেন, আপসহীন নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া খুবই অসুস্থ। আমরা বিভিন্ন মাধ্যমে অনেক আশঙ্কার খবর পাচ্ছি। আল্লাহ না করুক, যদি খালেদা জিয়ার কোনো দুর্ঘটনা ঘটে, তাহলে এর দায় সরকারকেই নিতে হবে।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, খালেদা জিয়া খুবই অসহায় অবস্থায় আছেন। তাকে তিলে তিলে হত্যার ষড়যন্ত্র হচ্ছে। কিন্তু দেশের জনগণ খালেদা জিয়াকে মুক্ত করে নিয়ে আসবে। তিনি আবারও মুক্ত বাতাসে গণতন্ত্রের কথা বলবেন, মানুষের কথা বলবেন। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা আবদুল হালিম বলেন, রাজনৈতিক দল হিসেবে খালেদা জিয়ার অসুস্থতা নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন। ওনার উন্নত চিকিৎসার সুযোগ-সুবিধা পাওয়া আবশ্যক। আমাদের আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী দুনিয়ার সফর শেষ করে চলে গেলেন। কিন্তু তার চিকিৎসায় ত্রুটি ছিল বলে প্রশ্ন রয়েছে। তাই অন্তত খালেদা জিয়ার চিকিৎসা নিয়ে মানুষ যাতে বলতে পারে, তিনি সুচিকিৎসা পেয়েছেন। এই আস্থাটা তৈরি করা সরকারের দায়িত্ব।
লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) প্রেসিডেন্ট কর্নেল (অব.) অলি আহমদ বীর বিক্রম বলেন, বেগম খালেদা জিয়ার সমস্যা জটিল থেকে জটিলতর হচ্ছে। বহুদিন যাবৎ ডাক্তাররা বলছেন, ওনাকে দেশের বাইরে নিয়ে যেতে, তার উন্নত চিকিৎসা আবশ্যক। এমন পরিস্থিতিতে সরকার তাকে তিল তিল করে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছে। আমি মনে করি, সরকারের শুভবুদ্ধির উদয় হবে। মানবিক দিকগুলো বিবেচনা করে জরুরিভিত্তিতে বেগম খালেদা জিয়াকে সরকারি খরচে লন্ডনে পাঠানো হবে। সারা দেশের মানুষ বেগম খালেদা জিয়ার অসুস্থতা নিয়ে উদ্বিগ্ন রয়েছেন। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, এই সরকার ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য অনৈতিক সব কাজ করছে। আজ দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেত্রী বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে আটক করে রেখেছে। অসহায় অবস্থায় তিনি মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন।

কমেন্ট বক্স