দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে বিরোধীদলীয় নেতা ও প্রধান পৃষ্ঠপোষক বেগম রওশন এরশাদের নেতৃত্বে ভোটে নামার জোর প্রস্তুতি নিচ্ছে জাতীয় পার্টি (জাপা)। রওশনের পরামর্শে দলীয় এমপি পদপ্রার্থীদের একটি প্রাথমিক তালিকার খসড়া প্রস্তুত করা হয়েছে। সেখানে জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান জি এম কাদের, মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু, কো-চেয়ারম্যানসহ দলের প্রায় সব নেতাই স্থান পেয়েছেন। রওশন এরশাদ চাচ্ছেন ঐক্যবদ্ধ জাতীয় পার্টি। যদিও জাতীয় পার্টি এককভাবে না ক্ষমতাসীনদের সঙ্গেই থাকছে, তা নিয়ে এখনো ধোঁয়াশা রয়েছে।
জি এম কাদেরের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত একজন প্রেসিডিয়াম সদস্য বলেন, এখনই সিদ্ধান্ত গ্রহণের মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়নি। যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের সিদ্ধান্ত দেখেই নির্বাচনের সিদ্ধান্ত নেবে জাতীয় পার্টি। দুই দেশ একমত হলে জাতীয় পার্টি মহাজোটের অংশ হিসেবে থাকবে। তিনি বলেন, বিদ্যমান পরিস্থিতির বদল না হলে ২০১৮ সালের মতো আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোট করে নির্বাচন করবে জাতীয় পার্টি। আর বিএনপি নির্বাচন বর্জন করলে ২০১৪ সালের মতো আওয়ামী লীগের সঙ্গে সমঝোতা করে নির্বাচন করবে।
জানা গেছে, নির্বাচনের আগে দলের কাউন্সিল করা থেকেও পিছু হটছেন রওশনপন্থীরা। কারণ কাউন্সিল করার মতো সময় নেই। তা ছাড়া নির্বাচনের আগে কাউন্সিল করলে দলের মধ্যে পদ-পদবি নিয়ে নেতাদের দ্বন্দ্ব ছড়িয়ে পড়বে। পদ না পেয়ে দলীয় প্রার্থীর পক্ষে অনেকে হয়তো নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা না-ও চালাতে পারেন। সব মিলিয়ে রওশন এরশাদের নেতৃত্বে জাতীয় পার্টি নির্বাচনে যাবে। আর মহাজোটের অংশ হলেও নেতত্ব দেবেন রওশন এরশাদ।
জাপার একাধিক নেতা বলছেন, নির্বাচনে অংশ নিতে জি এম কাদেরের ওপর দলের সিনিয়র ও বর্তমান সংসদ সদস্যদের চাপ রয়েছে। দলের বর্তমান সংসদ সদস্য ২৭ জন। তারাসহ জি এম কাদেরের পাশে থাকা সবাই সরকারের পক্ষে। তারা আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোট করে নির্বাচন করতে চান। অন্যদিকে জি এম কাদেরের ওপর আস্থা রাখতে পারছেন না সরকারপ্রধান। তাই রওশন এরশাদের ওপর পূর্ণ ভরসা প্রধানমন্ত্রীর। এমন পরিস্থিতিতে তারা রওশন এরশাদের নেতৃত্বে নির্বাচনে অংশ নিতে ইচ্ছুক।
দলীয় সূত্রমতে, রওশন এরশাদের প্রাথমিক তালিকায় রয়েছেন ময়মনসিংহ-৪ আসনে বেগম রওশন এরশাদ, লালমনিরহাট-৩ গোলাম মোহাম্মদ কাদের, রংপুর-৩ রাহগীর আল মাহী সাদ এরশাদ, ঢাকা-১৭/১ কো-চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট সালমা ইসলাম, পটুয়াখালী-১ এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার, চট্টগ্রাম-৫ ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, ঢাকা-৪ সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা, ঢাকা-৬ কাজী ফিরোজ রশীদ, ঢাকা ১৭/ব্রাহ্মণবাড়িয়া কাজী মো. মামুনূর রশীদ, ঢাকা-৭ তারেক আহমেদ আদেল, ময়মনসিংহ-৬ খন্দকার রফিকুল ইসলাম, ময়মনসিংহ-৮ ফখরুল ইমাম, রংপুর-১ মশিউর রহমান রাঙ্গা/আসিফ শাহরিয়ার, কিশোরগঞ্জ-৩ মজিবুল হক চুন্নু, নারায়ণগঞ্জ-৩ লিয়াকত হোসেন খোকা/গোলাম মসীহ্, নারায়ণগঞ্জ-৫ সেলিম ওসমান/পারভীন ওসমান, বরিশাল-৬ নাসরিন জাহান রত্না, নীলফামারী-৪ আহসান আদেলুর রহমান আদেল/এন কে আলম, কুড়িগ্রাম-৩ ড. আক্কাস আলী সরকার, গাইবান্ধা-১ ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী/মোস্তফা মহসিন সর্দার, কুড়িগ্রাম-১ এ কে এম মোস্তাফিজুর রহমান, বগুড়া-২ শরিফুল ইসলাম জিন্নাহ, বগুড়া-৬ নুরুল ইসলাম ওমর, পিরোজপুর-৩ রুস্তম আলী ফরাজী, সুনামগঞ্জ-৫ পীর ফজলুর রহমান মেজবাহ, সিলেট-২ ইয়াহহিয়া চৌধুরী, সিলেট-৫ সেলিম উদ্দিন, লক্ষ্মীপুর ৪/২ আবুল কালাম আজাদ, কুমিল্লা-৮ নুরুল ইসলাম মিলন, রংপুর-২ আসাদুজ্জামান চৌধুরী (শাবলু), চট্টগ্রাম ৯ ব্যারিস্টার সানজীদ রশীদ চৌধুরী, ফেনী-৩ লে. জে. (অব.) মাসুদ উদ্দিন চৌধুরী, বরিশাল-২/ঢাকা-১৮ মাসুদ পারভেজ সোহেল রানা, হবিগঞ্জ-১ মুনিম চৌধুরী বাবু, গাইবান্ধা-৩ মনজুরুল হক সাচ্চা/ময়নুর রাব্বি চৌধুরী রুম্মন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ অ্যাড. জিয়াউল হক মৃধা, কুড়িগ্রাম-২ আসিফ শাহরিয়ার, মৌলভীবাজার-২/৪ মহিবুল কাদের চৌধুরী পিন্টু, নাটোর-১ মো. আবু তালহা, ভোলা-২ মিজানুর রহমান মিজান, কুড়িগ্রাম-৪ আশরাফ-উদ-দৌলা, ঠাকুরগাঁও ১/৩ রাজিউর রাজি চৌধুরী স্বপন, ময়মনসিংহ-৭ ইঞ্জিনিয়ার ইকরামুল খান, সাতক্ষীরা-২ আজাহার হোসেন/অ্যাডভোকেট মিজানুর রহমান, ঢাকা-১৩ সফিকুল ইসলাম সেন্টু, ঢাকা-৫ আব্দুস সবুর আসুদ।
ওই তালিকায় আরও রয়েছেন বরগুনা-২ মিজানুর রহমান, চট্টগ্রাম-১৬ মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরী, ঢাকা-১৮ এম মুহিবুর রহমান, লালমনিরহাট-১ মোস্তফা সেলিম বেঙ্গল, পার্বত্য-খাগড়াছড়ি সোলাইমান আলম শেখ, নীলফামারী-১ জাফর ইকবাল সিদ্দিকী, ঠাকুরগাঁও-৩ মো. হাফিজ উদ্দিন আহমেদ, গাইবান্ধা-৫ এইচএম গোলাম শহীদ রঞ্জু, নীলফামারী-৩ ফারুক কাদের/রানা মোহাম্মদ সোহেল, জামালপুর-৪ ইঞ্জিনিয়ার মামুনুর রশীদ, টাঙ্গাইল-৬ মামুনুর রহিম সুমন, টাঙ্গাইল সদর আবুল কাসেম/আব্দুস সালাম চাকলাদার, খুলনা-৬ মোস্তফা কামাল জাহাঙ্গীর, খুলনা-৩ আব্দুল গফফার বিশ্বাস/মোল্লা শওকত হোসেন বাবুল, গাইবান্ধা-২ সরোয়ার হোসেন শাহীন/আব্দুর রশিদ সরকার, নরসিংদী-২ আবু সাঈদ স্বপন, কুমিল্লা-৪ ইকবাল হোসেন রাজু, যশোর-৪ সাব্বির হোসেন/জহিরুল হক, রাজশাহী-২ সরদার জুয়েল হোসেন, যশোর-৩ অ্যাডভোকেট মাহবুবুল আলম বাচ্চু, খুলনা-৪ অ্যাডভোকেট এস এম মাসুদুর রহমান, হবিগঞ্জ-২ শংকর পাল, টাঙ্গাইল-৭ জহিরুল ইসলাম জহির/নুরুল হক নুরু, রংপুর-৪ মোস্তফা সেলিম বেঙ্গল, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ শাহিন আরা সুলতানা, জয়পুরহাট-২ আবুল কাশেম রিপন, কক্সবাজার-২ মফিজুর রহমান, শেরপুর-১ মো. ইলিয়াস উদ্দিন, নরসিংদী-৪ মো. নেওয়াজ উদ্দিন ভুঁইয়া, টাঙ্গাইল-৮ এনাম জয়নাল আবেদীন, সাতক্ষীরা-১ সৈয়দ দিদার বখত, নারায়ণগঞ্জ-২ আলমগীর শিকদার লোটন, রংপুর-৫ এসএম ফখর উজ জামান, জয়পুরহাট-১ আসম মোক্তাদির তিতাস, ফেনী-২ জাফর আহমেদ রাজু, গাজীপুর-২/৫ ফারহিন হাসান, চাঁদপুর-৪ সাজ্জাদ রশীদ, নাটোর-৪ আলাউদ্দিন মৃধা, মুন্সিগঞ্জ-২ শেখ মো. সিরাজুল ইসলাম, রাজশাহী-৩ শাহাবুদ্দিন বাচ্চু।
রওশন এরশাদের তালিকা আরও রয়েছেন সাতক্ষীরা-৪ আব্দুস সাত্তার মোড়ল, ঝিনাইদহ সদর মো. মিজানুর রহমান, ঝিনাইদহ-৪ বাচ্চু মন্ডল, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ শাহ জামাল রানা/পীরজাদা জুবায়ের, জামালপুর-২ মোস্তফা আল মাহমুদ, দিনাজপুর-২ জুলফিকার হোসেন, চাঁদপুর-১ এমদাদুল হক রুমন, ঢাকা-১৪ মোস্তাকুর রহমান মোস্তাক, নেত্রকোনা-৩ জসীমউদ্দিন ভুঁইয়া, ফেনী-১ মোতাহের হোসেন চৌধুরী রাশেদ, সিলেট-৩ ওসমান আলী, সাতক্ষীরা-৩ সাফিয়া খাতুন/তৌহিদ খান, নরসিংদী-৩ নাজমুন নাহার তুলি, মানিকগঞ্জ-১ গোলাম সারোয়ার মিলন/এমএ মান্নান, বরিশাল-৩ গোলাম কিবরিয়া টিপু, লক্ষ্মীপুর-১ মাহমুদুর রহমান/বেলাল হোসেন, নোয়াখালী-২ সালাহ উদ্দিন আহমেদ, কুমিল্লা-১ মাখন সরকার/ইফতেখার হাসান, কুমিল্লা-৭ লুৎফর রেজা খোকন, বগুড়া-৩ মো. নুরুল ইসলাম তালুকদার, ময়মনসিংহ-৩ সালাহ উদ্দিন মুক্তি, ফরিদপুর সদর খন্দকার মনিরুজ্জামান টিটু, বরিশাল-৫ একেএম মর্তুজা আবেদিন ও মাগুরা-১ শিকদার আলমগীর কবির।
এ বিষয়ে বিরোধীদলীয় নেতার মুখপাত্র কাজী মামুনূর রশীদ বলেন, জাতীয় পার্টি সব সময় নির্বাচনমুখী দল। রওশন এরশাদের নেতৃত্বে আগামী সংসদ নির্বাচনে অংশ নেবে জাতীয় পার্টি। ওই নির্বাচনে দলের নেতাকর্মীদের সরব উপস্থিতি থাকবে।