Thikana News
১৯ অক্টোবর ২০২৪
  1. ই-পেপার
  2. চলতি সংখ্যা
  3. বিশেষ সংখ্যা
  4. প্রধান সংবাদ
  5. আমেরিকার অন্দরে
  6. বিশ্বচরাচর
আমেরিকা শনিবার, ১৯ অক্টোবর ২০২৪


 

হারুন কাণ্ডে মুখ খুলেছেন এডিসি সানজিদা

হারুন কাণ্ডে মুখ খুলেছেন এডিসি সানজিদা


ছাত্রলীগের দুই নেতাকে থানায় নিয়ে মারধর এবং পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এডিসি) হারুনকে বরখাস্ত কেন্দ্র করে আলোচনা ডালপালা ছড়ানোর পর সেই ঘটনা নিয়ে মুখ খুলেছেন এডিসি সানজিদা আফরিন নিপা। সেদিনের ঘটনা প্রসঙ্গে সানজিদা বলেন, গত শনিবার রাতে রাজধানীর বারডেম হাসপাতালে তিনি চিকিৎসা নিতে গিয়েছিলেন। সেখানে ছিলেন সদ্য সাময়িক বরখাস্ত আলোচিত এডিসি হারুন। এসময় হাসপাতালে গিয়ে সানজিদার স্বামী রাষ্ট্রপতির এপিএস আজিজুল হক মামুনই প্রথমে হারুনের ওপর হামলা চালান। সানজিদা বলেন, শনিবার রাতে বারডেম হাসপাতালে আমি চিকিৎসা নিতে যাই, সেখানে তাকে (হারুন) পেটানো হয়। আমি ইসিজি রুমে থাকাকালীন এ হামলার ঘটনা ঘটায় দেখতে পাইনি। এডিসি হারুনকে কে হাসপাতালে ডেকেছিল, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি ডাক্তারের সিরিয়ালের জন্য এডিসি হারুনের শুধু সহযোগিতা নিয়েছিলাম। হারুন সেখানে এসে আমাকে ডাক্তারের সিরিয়ালের ব্যবস্থা করে দিয়েছিল। এছাড়া আর কিছুই জানি না। এডিসি হারুনের সঙ্গে ব্যক্তিগত কোনো সম্পর্ক আছে কি-না জানতে চাইলে তিনি বলেন, হারুনের সাথে আমার কোনো ব্যক্তিগত সম্পর্ক নেই। সে শুধু আমার কলিগ। গতকাল মঙ্গলবার ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) কম্পাউন্ডে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ডিবিপ্রধান হারুন অর রশিদও হাসপাতালে এডিসি হারুনের ওপর আগে হামলা হয়েছে বলে জানান।

এর আগে, গত শনিবার রাতে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় বিজ্ঞানবিষয়ক সম্পাদক ও ঢাবির শহীদুল্লাহ হলের সাধারণ সম্পাদক শরীফ আহমেদ মুনিম এবং কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও ফজলুল হক হলের সভাপতি আনোয়ার হোসেন নাঈমকে শাহবাগ থানায় ধরে নিয়ে বেধড়ক মারধর করেন পুলিশের রমনা বিভাগের এডিসি হারুন অর রশিদ।

বারডেমের ঘটনায় তদন্ত হওয়া উচিত : ডিবি প্রধান
ডিএমপির রমনা বিভাগের সাময়িক বরখাস্ত হওয়া এডিসি হারুন অর রশিদের ওপর প্রথমে হামলা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার ও ডিবিপ্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ। এ হামলার নেতৃত্বে ছিলেন রাষ্ট্রপতির সহকারী একান্ত সচিব (এপিএস) আজিজুল হক। গতকাল মঙ্গলবার নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের করা এক প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন ডিবিপ্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ। তিনি বলেন, এ ঘটনার সূত্রপাত যে কারণে হয়েছে, যিনি সূত্রপাত করেছেন, তিনিও (রাষ্ট্রপতির এপিএস আজিজুল হক) একজন সরকারি কর্মকর্তা। উনি আমাদের পুলিশের ওপর হামলাটি করেছেন। তিনি তো ইচ্ছা করলে আমাদের (পুলিশ) ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাতে পারতেন, অবহিত করতে পারতেন। অথবা তার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাতে পারতেন। সেটি না করে হাসপাতালের ভেতরে অসংখ্য মানুষের সামনে একজন পুলিশ কর্মকর্তাকে ধাওয়া করা, তার চশমা ভেঙে ফেলা, তার ওপর আঘাত করা এটা সঠিক করেছেন কি না, আমি জানি না। তবে এটা তদন্ত হওয়া উচিত। ডিবি প্রধান মনে করেন, ঘটনার নেপথ্যের কারণ খুঁজে বের করা দরকার। ঘটনার সূত্রপাত বারডেম হাসপাতালে। সেখানে ঠিক কী ঘটেছিল তার তদন্ত হওয়া দরকার।

পুলিশ কখনোই কোনো কর্মকর্তার ব্যক্তিগত দায় নেয় না উল্লেখ করে অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ হারন অর রশীদ বলেন, পুলিশ বাংলাদেশে একমাত্র প্রতিষ্ঠান, যেখানে যারা যে অপরাধ করছেন, সেই অপরাধে তাদের বিরুদ্ধে সুষ্ঠু তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। আমি মনে করি, এ ঘটনায় তদন্তকারী কর্মকর্তারা স্বাধীনভাবে তদন্ত করছেন এবং করবেন। তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। তারা যখন প্রতিবেদন দেবেন, তখনই বুঝতে পারবেন প্রকৃত পক্ষে কী ঘটেছে। গত শনিবার রাতে রাজধানীর শাহবাগ থানায় ছাত্রলীগের দুই কেন্দ্রীয় নেতাকে নির্মমভাবে পিটিয়ে আহত করার অভিযোগ উঠে পুলিশের রমনা বিভাগের এডিসি হারুন অর রশিদের বিরুদ্ধে।

আহতরা হলেনÑ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও ফজলুল হক হলের সভাপতি আনোয়ার হোসেন নাঈম এবং ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় বিজ্ঞানবিষয়ক সম্পাদক ও ঢাবির শহীদুল্লাহ হলের সাধারণ সম্পাদক শরীফ আহমেদ মুনিম। ভুক্তভোগী ও তাদের সহপাঠীদের অভিযোগ, পুলিশের রমনা বিভাগের এডিসি হারুন অর রশিদ তাদের থানায় নিয়ে বেদমভাবে পিটিয়েছেন। ছাত্রলীগের নেতা পরিচয় দেয়ার পরেও হারুনের সঙ্গে ১০-১৫ জন পুলিশ সদস্য মিলে তাদের পেটান। এর মধ্যে নাঈমের অবস্থা আশঙ্কাজনক। তার মুখমণ্ডল মারত্মকভাবে আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছে। ঘটনার সূত্রপাত বর্ণনায় ছাত্রলীগ নেতারা জানান, পুলিশের ৩১ ব্যাচের ক্যাডার এডিসি হারুন শনিবার রাতে ৩৩ ব্যাচের আরেক নারী পুলিশ কর্মকর্তার সঙ্গে বারডেম হাসপাতালে আড্ডা দিচ্ছিলেন। ওই সময় নারী কর্মকর্তার স্বামী কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের দুই নেতাকে সঙ্গে নিয়ে সেখানে যান। নারী কর্মকর্তার স্বামীও একজন ক্যাডার কর্মকর্তা। তার সঙ্গে এডিসি হারুনের বাক-বিতণ্ডা হয়। একপর্যায়ে সেটি হাতাহাতিতে রূপ নেয়। এরই জেরে পুলিশ ডেকে এনে তাদের থানায় নিয়ে নির্মম নির্যাতন করে।

তদন্তের পর বিভাগীয় ব্যবস্থা
ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় তিন নেতাকে এডিসি হারুন অর রশিদের মারধরের ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করেছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক। রাজধানীর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) চিকিৎসাধীন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আনোয়ার হোসেন নাঈমকে গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে দেখতে গিয়ে ডিএমপি কমিশনার এই দুঃখ প্রকাশ করেন। নাঈমের শারীরিক খোঁজখবর নেয়ার পর সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে ডিএমপি কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক বলেন, শাহবাগ থানার ঘটনায় ছাত্রলীগ নেতা নাঈম আহত হয়েছেন। আমি মূলত তার শারীরিক অবস্থা ও চিকিৎসার খবর নেয়ার জন্য আমার সহকর্মীদের নিয়ে তাকে হাসপাতালে দেখতে এসেছি। তার চিকিৎসার খোঁজখবর নিয়েছি, তিনি এখনও অসুস্থ। তার আরও কয়েক দিন সময় লাগবে সুস্থ হতে।

তিনি বলেন, এ ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটির কাজ শেষ হওয়ার পূর্বে দুজন অফিসারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। এডিসি হারুনকে সরকার সাময়িক বরখাস্ত করেছে। শাহবাগ থানার পরিদর্শককেও (অপারেশন) থানা থেকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন পাওয়ার পর আমরা তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয়সহ অন্যান্য ব্যবস্থা গ্রহণ করব। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তদন্ত কমিটি ঘটনার সার্বিক বিষয়ে তদন্ত করে দেখবে কে কে দোষী এবং প্রকৃত ঘটনা কী, কেন ঘটনাটি ঘটল। এসব বিষয়ে তদন্ত কমিটি আমাদের প্রতিবেদন দেবে। সেই প্রতিবেদন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়ার জন্য আমরা সরকারের কাছে সুপারিশ পাঠাব। ঘটনার সময় এডিসি হারুনও মারধরের শিকার হয়েছিলেন বলে শোনা যাচ্ছে, এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডিএমপি কমিশনার বলেন, তদন্ত কমিটিকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। কমিটি তদন্ত করে সার্বিক বিষয়ে প্রতিবেদন দেবে, তখন সার্বিক চিত্রটা আমাদের সামনে আসবে। আমরা প্রাথমিকভাবে দেখেছি একজন ছাত্রকে থানার ভেতরে নিয়ে মারধর করার বিষয়টি বেআইনি। সেটির ওপর ভিত্তি করে আমরা প্রাথমিক ব্যবস্থা নিয়েছি।

উল্লেখ্য, গত শনিবার রাতে ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও ঢাবির ফজলুল হক হলের সভাপতি আনোয়ার হোসেন নাঈম এবং বিজ্ঞানবিষয়ক সম্পাদক ও ঢাবির শহীদুল্লাহ হলের সাধারণ সম্পাদক শরীফ আহমেদ মুনিমকে শাহবাগ থানায় নিয়ে বেধড়ক মারধর করেন এডিসি হারুন অর রশিদ। নারীঘটিত একটি ঘটনার জেরে এই মারধরের ঘটনা ঘটে বলে জানা গেছে। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে উত্তপ্ত হয়ে উঠে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয় ক্যাম্পাস। ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেন। শাহবাগ থানায় নিয়ে দুই নেতাকে নির্যাতনের পর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এ ঘটনার জেরে রাতেই শাহবাগ থানার সামনে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা ভিড় করেন। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ও পুলিশের কর্মকর্তারা থানায় গিয়ে মধ্যরাতে ঘটনা মীমাংসা করেন। এ ঘটনায় এডিসি হারুনকে প্রথমে এপিবিএনে বদলি ও পরে বরখাস্ত করা হয়। কিন্তু ছাত্রলীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের দাবি, হারুনকে গ্রেফতার করা হোক।

রংপুরে পাঠানো হলো বরখাস্ত এডিসি হারুনকে : কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের তিন নেতাকে মারধরের ঘটনায় সাময়িক বরখাস্ত পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এডিসি) হারুন অর রশিদকে রংপুর রেঞ্জের ডিআইজির কার্যালয়ে যুক্ত করা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের পুলিশ শাখা-১ এর সিনিয়র সহকারী সচিব মো. মাহবুবর রহমানের স্বাক্ষরিত এক আদেশে বলা হয়, এডিসি হারুনকে রংপুর রেঞ্জের ডিআইজির কার্যালয়ে যুক্ত করা হয়েছে।

ঠিকানা/এসআর
 

কমেন্ট বক্স