হামলা-ভাংচুর ও মেরেধরে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে লালমনিরহাটের কালীগঞ্জে নর্দান ইলেকট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানি- নেসকো অফিসের নির্বাহী প্রকৌশলী রকিচন্দ্র দাসকে। কারণ, ব্যাটা আস্ত জামায়াত-শিবির! এরপর জান হাতে নিয়ে ভাগলেন। সমাজকল্যাণমন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদের ছেলে রাকিবুজ্জামান এই প্রকৌশলী রকিচন্দ্র দাসকে তার ব্যক্তিগত চেম্বারে দেখা করতে বলেছিলেন। কিন্তু রকিচন্দ্র তা করেননি। কত্তো সাহস তার! যেনোতেনো বা খুচরা জামায়াত-শিবির সে? জামায়াত-শিবিরের খাস ক্যাডার না হলে রকিচন্দ্র দাস এমন দুঃসাহস দেখান?
অতএব উচিৎ শিক্ষা তার জন্য অবধারিত। যথারীতি লালমনিরহাট কালীগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগ সভাপতি শরিফ ও সহ-সভাপতি নুরনবীর নেতৃত্বে ১০-১২ জন ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগ কর্মী নেসকো অফিসে হামলা চালায়। বেদম মার দেয় প্রকৌশলী রকিচন্দ্র দাস ও বিদ্যুৎ কর্মচারীদের। রকিচন্দ্র দাস অভিযোগ করে বলেন, ‘প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে বলা হয়, জামায়াত-শিবির করিস। রাজাকার। এতবড় সাহস মন্ত্রীজাদার ডাকে সাড়া দিস নাই?
লাত্থি-উষ্ঠা, কিল-ঘুষিসহ হালকা-পাতলা মারধর। রকিচন্দ্র দাস ঘটনার দিনই জান হাতে নিয়ে কালীগঞ্জ ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে গেছেন। মোটামুটি ভাগ্যবান তিনি। বুয়েটের শিবির আবরার বা পুরাণ ঢাকার বিশ্বজিৎ দাসের মতো মেরে ফেলা হয়নি। চাকরিটাও একেবারে খেয়ে ফেলা হয়নি। করা হয়েছে সাময়িক বরখাস্ত। একদম বরখাস্ত করে ফেললেই বা কী হতো? মেরে ফেললেই বা কী হতো?
মুসলমানরাই জামায়াত-শিবির করে, এ ধারণা শেষ করে দেয়া হয়েছে আরো আগেই। হিন্দু লোকও করেÑ এটা জামায়াত-শিবিরঅলাদের জন্য খুশিতে বগল বাজিয়ে মজা করার মতো! বিশ্বজিৎ দাসকে যখন শিবির বলে কোপানো হ”িছল, তখন সে বার বার নিজের নাম বলে চীৎকার করছিল। কাজ হয়নি। রকিচন্দ্র দাস সেখানে সবারই চেনাজানা। নুরুজ্জামানের ছেলে রকিবুজ্জামান লালমনিরহাট জেলা আওয়ামী লীগ নেতাও। তিনিও ভালো মতো রকিচন্দ্র দাশের জাত-ধর্ম জানেন। এর আগে, অনুমোদনহীন বিদ্যুৎ লাইন নির্মাণে বাধা দেওয়ায় নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার বসুরহাট পৌরসভায় বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড- বিউবোর প্রকৌশলী সাইফুল ইসলামকে মারধর ও মাথা ন্যাঁড়া করে দেওয়া হয়েছিল। ওই ঘটনার সঙ্গে জড়িত ছিলেন দেশসেরা আরেক মন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের ছোট ভাই শাহদাত। সাইফুলের নামের সঙ্গে ইসলাম আছে। কাজেই তার জামায়াত-শিবির প্রমাণের আর বাকি থাকে?
পছন্দ না হলেই জামায়াত-শিবির লেবেল সেঁটে জয় বাংলাকে ঘাঁয়েল করে দেয়া হচ্ছে কিনা- প্রশ্ন আছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এ ধরনের কয়েকটি ঘটনা ঘটেছে। ছাত্রলীগ নেতাদের কথা না শুনলে শিবির ট্যাগ লাগিয়ে পিটিয়ে থানায় সোপর্দ করে আসার মতো ঘটনায় পুলিশকেও বাড়তি ঝামেলা নিতে হয়েছে। এ সংস্কৃতি দেশে দীর্ঘমেয়াদী সহিংসতা বা ক্ষতিকে আমন্ত্রণ করছে নাতো? তবে আওয়ামী লীগ সন্দেহে নিরাপরাধ কাউকে ধোলাই দেয়ার রাস্তা বানানো হচ্ছে না তো?
লেখক : সাংবাদিক-কলামিস্ট; ডেপুটি হেড অব নিউজ, বাংলাভিশন, ঢাকা।