রেভারেন্ড ফাদার স্ট্যানলী গমেজ
২ সেপ্টেম্বর ছিল ঢাকার প্রয়াত আর্চবিশপ সর্বজনশ্রদ্ধেয় থিওটনিয়াস অমল (টি এ) গাঙ্গুলী সিএসসির ৪৬তম মৃত্যুবার্ষিকী। বিশপ পদে অধিষ্ঠিত হওয়ার আগে ১৯৬০ সালে তিনি ছিলেন ঢাকার ঐতিহ্যবাহী নটর ডেম কলেজের প্রথম বাঙালি অধ্যক্ষ। অত্যন্ত প্রার্থনাশীল, মেধাবী, ভদ্র, নম্র, শান্তিপ্রিয়, কণ্ঠশিল্পী, অর্গানবাদক, জনপ্রিয় ল্যাটিন ও ইংরেজি শিক্ষক, যুক্তিবিদ্যার অধ্যাপক, অধ্যক্ষ ও ধর্মযাজক রেভারেন্ড ফাদার টি এ গাঙ্গুলী ছিলেন বাংলাদেশের রোমান ক্যাথলিক খ্রিষ্টানসমাজের একজন ‘দিবালোকের উজ্জ্বল নক্ষত্র,’ যার জ্যোতি এখনো ছড়াচ্ছে দিকে দিকে। তাঁর মহা তিরোধানের দিনে সকল নটরডেমিয়ান ও তাঁর অনুরাগীদের পক্ষ থেকে তাঁর স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা অর্পণ করি এবং পরম মঙ্গলময় স্রষ্টার কাছে তাঁর আত্মার চিরশান্তি কামনায় প্রার্থনা জানাই।
থিওটনিয়াস অমল গাঙ্গুলী ১৯২০ খ্রিষ্টাব্দের ১৮ ফেব্রুয়ারি ঢাকা জেলার নবাবগঞ্জ থানার অন্তর্গত ইছামতী নদী-তীরবর্তী হাসনাবাদ গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতামাতার নাম ছিল নিকোলাস কমল গমেজ ও রোমানা কমলা কস্তা। তাঁর বড় ভাই ডা. জেভিয়ার ও ছোট ভাই নাট্যশ্রী বিমল গাঙ্গুলী। বাবা কমল গমেজ কলকাতায় কাজ করতেন। ওনাদের শেষ নাম (surname) বা পদবি ছিল পর্তুগিজ মিশনারিদের দেওয়া নাম ‘গমেজ’। কিন্তু বড় ছেলে জেভিয়ার মেডিকেল কলেজে পড়ার সময় তাঁর ইউরোপীয় শেষ নাম পরিবর্তন করে বাংলা নাম ‘গাঙ্গুলী’ নিতে চাইলেন এবং কলকাতার প্রধান প্রেসিডেন্সি ম্যাজিস্ট্রেটে আবেদন করেন এবং ১৯ ফেব্রুয়ারি ১৯৩৮ সালে তা মঞ্জুর হয়। পরবর্তীকালে থিওটনিয়াসসহ পরিবারের অন্যরা এই বাংলা পদবি ব্যবহার করা শুরু করেন।
থিওটনিয়াসের পড়াশোনা শুরু হয় হাসনাবাদ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। সেখানে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত পড়ে বান্দুরা হলি ক্রস হাই স্কুলে ভর্তি হন। প্রখর ছিল তাঁর মেধা এবং প্রতি ক্লাসেই প্রথম স্থান অধিকার করতেন। সে সময়ে তিনি সহপাঠীদের কথাও ভাবতেন এবং তাদের পড়াশোনায় সহায়তা করতেন। তাঁর মধ্যে পুরোহিত হওয়ার বাসনা দিন দিন গভীর হতে থাকে।
এ কারণে তাঁর চেহারায় ও ব্যবহারে কেমন একটা পবিত্রতার ভাব জেগে ওঠে। ৮ম শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হয়ে ১৯৩৭ সালের জানুয়ারি মাসে হলি ক্রস হাইস্কুলের সংশ্লিষ্ট ক্ষুদ্র পুষ্প সাধ্বী তেরেজা সেমিনারিতে প্রবেশ করেন। ১৯৪০ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে অতুলনীয় কৃতিত্বের সঙ্গে ম্যাট্রিকুলেশন পরীক্ষা পাস করেন এবং তৃতীয় স্থান অধিকার করে ব্রিটিশ সরকারের বিশেষ বৃত্তি লাভ করেন। সেই বছরই জুলাই মাসে বিহার রাজ্যের রাঁচিতে অবস্থিত সাধু আটবার্ট সেমিনারিতে দর্শনশাস্ত্র (Philosophy) এবং ঐশতত্ত্ব (Theology) পড়ার জন্য তাঁকে পাঠানো হয়। সেখানে ছয় বছর ক্যাথলিক পুরোহিত হওয়ার জন্য অত্যাবশ্যক পড়াশোনা, আধ্যাত্মিক সাধনা ও অন্যান্য প্রশিক্ষণের পর অত্যন্ত মেধাবী, পবিত্র ও ধার্মিক থিওটনিয়াস অমল গাঙ্গুলী ১৯৪৬ খ্রিষ্টাব্দের ৬ জুন মাত্র ২৬ বছর বয়সে শ্রদ্ধেয় বিশপ অস্কার সেভরিন, এস জে কর্তৃক যাজক পদে অভিষিক্ত হন রাঁচির সেইন্ট মেরি’স ক্যাথিড্রালে।
দীর্ঘ ছয় বছর পরে রেভারেন্ড ফাদার থিওটনিয়াস অমল গাঙ্গুলী ঢাকায় প্রত্যাবর্তন করলে ঢাকা ধর্মপ্রদেশের বিশপ লরেন্স লিও গ্রেইনার সিএসসি. তাঁর প্রথম যাজকীয় দায়িত্ব দেন বান্দুরা ক্ষুদ্র পুষ্প সেমিনারিতে সহকারী পরিচালক হিসেবে। দুই বছর অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে এই দায়িত্ব পালনের পর তাঁর অসাধারণ মেধা ও জ্ঞানচর্চার দিকে প্রচুর ঝোঁক দেখে ধর্মীয় কর্তৃপক্ষ তাঁকে উচ্চশিক্ষার জন্য মনোনীত করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইন্ডিয়ানা অঙ্গরাজ্যে অবস্থিত নটর ডেম বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রেরণ করে। ফাদার থিওটনিয়াস গাঙ্গুলী সেখানে পৌঁছান ১৯৪৭ সালের ২৮ জুলাই। সেখানে তিনি দর্শনশাস্ত্রের ওপর পড়াশোনা করে বিএ ডিগ্রি লাভ করার পর ১৯৪৯ সালের ৩১ জানুয়ারি এমএ ডিগ্রি অর্জন করেন। অতঃপর দর্শনশাস্ত্র বিভাগ থেকে ১৯৫১ সালের ১০ আগস্ট পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন। তাঁর ডক্টরেট থিসিসের শিরোনাম ছিল ‘পুরুষ ও প্রকৃতি’, যা পতঞ্জলীর যোগশাস্ত্র এবং হিন্দু শাঙ্খ দর্শনের ওপর পাণ্ডিত্যপূর্ণ গবেষণার ফল। বাংলাদেশ ভূখণ্ডের খ্রিষ্টানদের মধ্যে তিনিই প্রথম ডক্টরেট ডিগ্রিধারী। এই পড়াশোনার সময়েই তাঁর সঙ্গে পরিচয় হয় ফাদার রিচার্ড উইলিয়াম টিম সিএসসির। তিনি মিশনারি হিসেবে পূর্ব পাকিস্তানে কাজ করার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। তিনি ঢাকায় এসে নটর ডেম কলেজে বিজ্ঞান শাখা চালু করবেন এবং জীববিজ্ঞান পড়াবেন। তিনি ডক্টরেট করেন ওয়াশিংটন ডিসিতে অবস্থিত ক্যাথলিক ইউনিভার্সিটি অব আমেরিকা থেকে। পড়াশোনা শেষ করে পূর্ব পাকিস্তানে আসার পূর্বে মিশনারিদের জন্য ওই বছর যে বিদায় অনুষ্ঠান করা হয়েছিল, তাতে ফাদার গাঙ্গুলী ও ফাদার টিমকে একত্রে বিদায় সংবর্ধনা জানানো হয়েছিল।
সেন্ট গ্রেগরিজ কলেজ, পরে যা নটর ডেম কলেজে নামান্তরিত হয়, সেখানে তাঁরা বহু বছর শিক্ষকতা করেছেন এবং কলেজের বিভিন্ন কাজে জড়িত ছিলেন। ফাদার গাঙ্গুলী ডক্টরেট ডিগ্রির জন্য পড়াশোনা করতে করতে জীবন নিয়ে অনেক কথাই চিন্তা করতেন। এর মধ্যে ছিল মিশনারি হওয়ার বিশেষ আগ্রহ। তিনি উপলব্ধি করেছিলেন, বিগত বছরগুলোতে ফ্রান্স, কানাডা ও যুক্তরাষ্ট্র থেকে পবিত্র ক্রুশ ধর্ম সংঘের কত মিশনারি পুরোহিত, ব্রাদার ও সিস্টার পূর্ববঙ্গে ও পরবর্তী সময়ে পূর্ব পাকিস্তানে এসেছিলেন। তিনিও ছোটবেলা থেকেই তাঁদের কাছ থেকে বিভিন্ন বিষয়ে শিক্ষালাভ করেছেন।
এই বিষয়ে ভাবতে ভাবতে তিনি সিদ্ধান্ত নিলেন পবিত্র ক্রুশ সম্প্রদায়ে যোগদানের। আর্চবিশপ গ্রেইনারের অনুমোদন নিয়ে ১৯৫১ সালের ১৫ আগস্ট তিনি মিনেসোটার জর্ডনে অবস্থিত পবিত্র ক্রুশ নভিশিয়েটে প্রবেশ করেন এবং এক বছর কঠোর ধ্যান-সাধনার পর ১৯৫২ সালের ১৬ আগস্ট ফাদার গাঙ্গুলী পবিত্র ক্রুশ সংঘের সংবিধান অনুযায়ী দরিদ্রতা, বাধ্যতা, কৌমার্য এবং স্বদেশের বাইরে বাণী প্রচারের ব্রত নিয়ে পবিত্র ক্রুশ সংঘের সদস্য হলেন এবং তাঁর নামের শেষে যুক্ত হলো CSC, যা ল্যাটিন ভাষায় Congregratio a Sancta Cruce বা ইংরেজিতে Congregation of Holy Cross. তাঁর মনের গভীর কোণে বহু বছরের জমিয়ে রাখা স্বপ্ন পূর্ণ হলো।
১৯৫২ খ্রিষ্টাব্দের ২১ অক্টোবর ফাদার থিওটনিয়াস গাঙ্গুলী দেশে এসে পৌঁছালেন এবং সেদিন সন্ধ্যাবেলায় লক্ষ্মীবাজারে অবস্থিত সেন্ট গ্রেগরিজ কলেজে অর্থাৎ তাঁর নতুন কর্মস্থলে উপস্থিত হলেন। তিনি কলেজে পৌঁছামাত্রই হোস্টেলের ছেলেরা হাতে ফুলের মালা আর কণ্ঠে গানের মেলা নিয়ে তাঁকে সুস্বাগত জানায়। তাদের সঙ্গে যোগ দেন বেশ কয়েকজন অধ্যাপক, যারা প্রায় সবাই ছিলেন বিদেশি মিশনারি পুরোহিত। তাঁদের মাঝে একজন স্বদেশি অধ্যাপক হিসেবে ফাদার গাঙ্গুলীর উপস্থিতি ছিল কলেজের জন্য এক নতুন দিনের সূচনা। অধ্যক্ষ ফাদার হ্যারিংটন ঘোষণা দিলেন, ফাদার গাঙ্গুলী থাকবেন সেন্ট লরেন্স হোস্টেলে এবং তিনি কলেজে ফাদার ম্যাকমোহনের স্থলাভিষিক্ত হয়ে যুক্তিবিদ্যা পড়াবেন।
ফাদার গাঙ্গুলী তাঁর ওপর অর্পিত নতুন দায়িত্ব অত্যন্ত নম্রতা ও কৃতজ্ঞতাসহকারে গ্রহণ করলেন। ক্লাসে পড়ানোর মাঝে তিনি সহ-শিক্ষা কার্যক্রম নিয়েও ব্যস্ত থাকতেন। ছাত্রদের তিনি বিভিন্ন সহ-শিক্ষা কার্যক্রমে জড়িত করতেন, যেন তারা জ্ঞানার্জনের পাশাপাশি অন্যান্য গুণেও গুণান্বিত হতে পারে। মাঝে মাঝে তিনি ছাত্রদের নিয়ে নাটক মঞ্চায়িত করতেন। ল্যাটিন ভাষায় ফাদার গাঙ্গুলী ছিলেন খুবই পটু। সারা দেশে কলেজ পর্যায়ে যারা ল্যাটিন পড়ত, তাদের ফাইনাল পরীক্ষার সময় প্রশ্নপত্র প্রণয়ন করার জন্য ফাদার গাঙ্গুলীর ওপর দায়িত্ব ন্যস্ত হলো ১৯৫৩ সালের ২১ সেপ্টেম্বর। তিনি সানন্দে ও অতিশয় দক্ষতার সঙ্গে সেই দায়িত্ব পালন করেন।
১৯৫৫ সালের মে মাসে জনাকীর্ণ পুরান ঢাকার লক্ষ্মীবাজার ত্যাগ করে সেন্ট গ্রেগরিজ কলেজ মতিঝিল এলাকায় স্থানান্তরিত হলো এবং আত্মপ্রকাশ করল নটর ডেম কলেজ নাম দিয়ে। ৮ জুলাই থেকে নতুন ভবনে নতুন নামে কলেজের ক্লাস শুরু হয়। ১৯৫৬ সালের ১২ জানুয়ারি ফাদার গাঙ্গুলীকে প্রিফেক্ট অব স্টাডিজের দায়িত্ব দেওয়া হয়। এর মাধ্যমে তিনি ছাত্রদের পড়াশোনার সুবিধা-অসুবিধাগুলো বিবেচনা করে অসুবিধাগুলো দূর করার জন্য পরামর্শকের দায়িত্ব পান। ফাদার রিচার্ড টিম নটর ডেম কলেজে ডিবেটিং ক্লাব শুরু করেছিলেন ১৯৫৩ খ্রিষ্টাব্দে। এই ক্লাব মাঝে মাঝে বিতর্ক প্রতিযোগিতার আয়োজন করত। ফাদার গাঙ্গুলীরও বিতর্ক প্রতিযোগিতায় বেশ আগ্রহ ছিল বলে তিনি বিভিন্নভাবে বিতার্কিকদের সহায়তা করতেন। বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় তিনি বিচারকের দায়িত্ব পালন করতেন। একে একে তিনি বিভিন্ন প্রশাসনিক কাজে জড়িত হতে লাগলেন। ১৯৫৬ সালের ২৬ অক্টোবর তিনি অ্যাসিস্ট্যান্ট ডিরেক্টর অব স্টাডিজের দায়িত্ব লাভ করেন। খেলাধুলায়ও ফাদার গাঙ্গুলী খুব উৎসাহী ছিলেন।
সে জন্য ‘স্পোর্টস ডে’ এলে তিনিও যেমন আগ্রহ প্রকাশ করতেন, তেমনি দায়িত্বও পেতেন সহায়তা করার জন্য। ১৯৫৬ সালের ২২ ডিসেম্বর কলেজের ক্রীড়া দিবসে তিনি সার্বিক সহায়তার দায়িত্বে ছিলেন। ১৯৫৮ খ্রিষ্টাব্দের ৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত তাঁর ওপর বেশ কয়েকটি দায়িত্ব দেওয়া ছিল। এর মধ্যে প্রধানগুলো হলো তিনি ছিলেন ডিরেক্টর অব স্টাডিজ, প্রিফেক্ট অব রিলিজিয়ন, লিজিয়ন অব মেরি’র আধ্যাত্মিক পরিচালক, বাংলায় প্রকাশিত ধর্মীয় বুলেটিন ‘মুকুর’-এর সম্পাদক ও প্রকাশক এবং কলেজে কর্মরত ফাদারদের হাউস কাউন্সিলের সদস্য। ১৯৫৮ সালের ২৭ জানুয়ারি ফাদার গ্রাহামের সঙ্গে তিনি কলেজের বিজ্ঞান ক্লাবের সদস্যদের নিয়ে তেজগাঁও শিল্প এলাকা পরিদর্শনে গিয়েছিলেন। সে বছরের ১ নভেম্বর তাঁকে কলেজের অস্থায়ী ভাইস প্রিন্সিপাল নিযুক্ত করা হয়। একই মাসের ১৪ তারিখে তাঁকে প্রধান নিয়মশৃঙ্খলা রক্ষাকারীর দায়িত্বও দেওয়া হয়।
১৯৫৯ খ্রিষ্টাব্দের ২৯ মে ফাদার গাঙ্গুলী নটর ডেম কলেজের ভাইস প্রিন্সিপালের দায়িত্ব পান। ১৯৬০ খ্রিষ্টাব্দের ফেব্রুয়ারি মাসে অধ্যক্ষ ফাদার মার্টিন টাইফয়েড জ্বরে আক্রান্ত হয়ে পড়েন। তাঁর স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটতে থাকে ক্রমাগত। ২২ ফেব্রুয়ারি ওনাকে হলি ফ্যামিলি হাসপাতালে ভর্তি করা হয় এবং ২১ মার্চ তিনি মৃত্যুবরণ করেন। ২২ মার্চ তাঁকে তেজগাঁও গির্জার কবরস্থানে সমাধিস্থ করা হয়। অধ্যক্ষের মৃত্যুর পর কলেজের দায়িত্বভার কার ওপর পড়বে, তা নিয়ে কিছু জল্পনা-কল্পনা থাকলেও এটা পরিষ্কার ছিল, ভাইস প্রিন্সিপালকেই সেই গুরুদায়িত্ব নিতে হবে। বিভিন্ন প্রশাসনিক কাজে জড়িত থেকে অভিজ্ঞতা অর্জনের পর তিনি ছিলেন প্রস্তুত।
১৯৬০ খ্রিষ্টাব্দের ১২ এপ্রিল ফাদার থিওটনিয়াস অমল গাঙ্গুলী সিএসসি অস্থায়ী অধ্যক্ষ এবং ৩০ আগস্ট পুরোপুরিভাবে নটর ডেম কলেজের অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তিনিই হলেন এই কলেজের প্রথম বাঙালি অধ্যক্ষ। তাঁর পূর্বসূরি অধ্যক্ষবৃন্দ ছিলেন বিদেশে জন্মগ্রহণকারী মিশনারি। অধ্যক্ষ হিসেবে কলেজের দেশি-বিদেশি শিক্ষকবৃন্দ, কর্মচারী, ছাত্রগোষ্ঠী, তাদের পিতা-মাতা, সমাজের ও ঢাকা শহরের নেতৃবৃন্দÑসবার সঙ্গেই তাঁর সম্পর্ক ছিল অমায়িক। তবে এই পদে বেশি দিন তাঁর থাকা হলো না, আরও উচ্চতর দায়িত্বের জন্য। ১৯৬০ সালের ৩ সেপ্টেম্বর পোপ ত্রয়োবিংশ যোহন তাঁকে ঢাকা মহাধর্মপ্রদেশের সহকারী বিশপ পদে মনোনীত করেন, যা সকল বাঙালি খ্রিষ্টানের জন্য এক ঐতিহাসিক ঘটনা। তিনিই হলেন প্রথম বাঙালি রোমান ক্যাথলিক বিশপ। তিনি ৭ অক্টোবর ১৯৬০ খ্রিষ্টাব্দে ঢাকার রমনায় অবস্থিত সেন্ট মেরি’স ক্যাথেড্রালে ভাটিকান থেকে আগত কার্ডিনাল গ্রেগরি আগাজিনিয়ান কর্তৃক বিশপ পদে অভিষিক্ত হন। যদিও তিনি আমাদের মাঝে এখন নেই, তবুও তাঁর শিক্ষা, গুণাগুণ এবং ধার্মিকতার মাঝে চিরজীবী হয়ে আছেন। আমাদের প্রার্থনা ও ঐকান্তিক ইচ্ছা, যেন তিনি ভবিষ্যতে ক্যাথলিকমণ্ডলী দ্বারা একজন সাধু হিসেবে ঘোষিত হন ॥
তথ্যসূত্র :
ফাদার আদম এস পেরেরা সিএসসি, ‘দিবালোকের উজ্জ্বল নক্ষত্র’, প্রকাশক : পবিত্র ক্রুশ সংঘ, বাংলাদেশ-বনশ্রী, রামপুরা, ঢাকা ১২১৯
Professor S. M. Tanveer Ahmed, ‘Christian Missions in East Bengal - The Life And Times Of Archbishop Theotonius Amal Ganguly, C.S.C. (1920-1977)’, Publisher: Resource Publications, Eugene, Oregon, USA
লেখক : একজন রোমান ক্যাথলিক যাজক, ঢাকায় জন্মগ্রহণকারী, নটরডেমিয়ান, নিউজার্সিবাসী এবং ধর্মবিষয়ক কলামিস্ট।