গেজেট আকারে নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা করার পরও নির্বাচন কমিশন ঘোষিত ফলাফল বাতিল করতে পারবে। কেবল জাতীয় সংসদ নির্বাচন নয়, সংসদের কোনো আসনের উপনির্বাচনেও কমিশন এ ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারবে। জেলা পরিষদ, উপজেলা পরিষদ, পৌরসভা, ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণার পরও নির্বাচন কমিশন তা বাতিল করে নতুন নির্বাচন ঘোষণা করতে পারবে। এ জন্য প্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) সংশোধন করা হচ্ছে। নির্বাচন কমিশনের এই ক্ষমতা দেশের কোনো আদালতে চ্যালেঞ্জ করা যাবে না।
নির্বাচন কমিশন এবং আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয় সূত্রে আরো জানা গেছে, বিদ্যমান আরপিওতে গেজেট আকারে ফলাফল প্রকাশের পর নির্বাচন কমিশনের করণীয় থাকে না। গেজেটে প্রকাশিত ব্যক্তিই নির্বাচিত প্রতিনিধি হিসেবে গণ্য হন। ঘোষিত ফলাফল নিয়ে প্রতিপক্ষের প্রার্থী ও অন্যান্যের নানা অভিযোগ থাকে। সংসদ নির্বাচন, সংসদের কোনো আসনের উপনির্বাচন এবং স্থানীয় সরকারের সংস্থাসমূহের নির্বাচনে ব্যাপক কারচুপি, ভোট জালিয়াতি, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড, স্থানীয় প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন ও নির্বাচন কর্মকর্তাদের প্রভাবিত করে ও ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের আদেশ ও ইচ্ছা অনুযায়ী ফলাফল পাল্টে দেওয়া এবং অবৈধ প্রভাব বিস্তারের মাধ্যমে নির্বাচন প্রভাবিত করে ফলাফল প্রার্থীবিশেষের পক্ষে নেওয়ার অনেক অভিযোগ পাওয়া যায়। বিদ্যমান আইনে নির্বাচন কমিশনের কিছু করণীয় থাকে না, বিশেষ করে ফলাফল গেজেট আকারে প্রকাশিত হয়ে যাওয়ার পর। এতেকরে নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা ও নির্বাচন কমিশনের ভূমিকাও প্রশ্নবিদ্ধ হয়। নির্বাচন নিয়ে মানুষের অনাগ্রহী হয়ে ওঠার এটাও অন্যতম কারণ। বর্তমান নির্বাচন কমিশন এ ব্যবস্থার অবসান চান। তারা মনে করে, গেজেট আকারে ফলাফল প্রকাশিত হওয়ার পরও যুক্তিসংগত কারণে সেই ফলাফল বাতিল করার ক্ষমতা নির্বাচন কমিশনের হাতে গেলে সংশ্লিষ্ট প্রার্থীদের মধ্যে বড় ধরনের ভীতি কাজ করবে। ভোটে চুরি, জালিয়াতি, ভোট ডাকাতি বন্ধে তা কার্যকর ভূমিকা রাখবে।
গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের সংশোধনী চেয়ে নির্বাচন কমিশনের প্রস্তাব আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয় হয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে গেছে। শিগগিরই তা কেবিনেটে অনুমোদন পাবে বলে সংশ্লিষ্টরা আশা করছেন। মন্ত্রিসভায় অনুমোদনের পর সংসদে যাবে। সংসদীয় কমিটিতে যাচাই-বাছাইয়ের পর সংসদে উত্থাপন ও পাস হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ঈদুল ফিতরের পর গোটা প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করেন।
সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী প্রার্থীর নাম গেজেট আকারে প্রকাশিত ও তিনি শপথ নেওয়ার পরও নির্বাচন কমিশন সেই গেজেট অর্থাৎ ঘোষিত ফলাফল বাতিল করতে পারবে। গেজেট প্রকাশের ও শপথ নেওয়ার পর নির্বাচিত ব্যক্তি সংসদ সদস্য হয়ে যান। কমিশনের প্রস্তাব অনুযায়ী শপথ নেওয়ার পরও কমিশন সংশ্লিষ্ট সংসদ সদস্যের সদস্যপদ খারিজ করে ওই আসন শূন্য ঘোষণা করতে পারবে। সংশ্লিষ্ট মহল মনে করেন, নির্বাচন কমিশন শতভাগ সততা, নিরপেক্ষতা বজায় রাখতে প্রয়াসী হলেও উল্লিখিত বিষয়টি বড় ধরনের সমস্যা ও বিতর্ক সৃষ্টি করতে পারে।বিশেষ করে, স্পিকারের কাছে শপথ নেওয়ার পর নির্বাচিত সদস্যের নির্বাচন বাতিল করার ব্যাপারে নির্বাচন কমিশনের এখতিয়ার প্রশ্নবিদ্ধ হবে। সংসদ তা বাতিল করতে পারে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করেন।