প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও তার নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি পূর্ণ সমর্থন ব্যক্ত করেছেন বিশ্বনেতারা। এ সময় গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে ড. ইউনূস বলেন, ‘এটা পুরোপুরি অপ্রত্যাশিত। আপনাদের এভাবে একত্রিত হয়ে আমাদের প্রতি সমর্থন জানানো- অবিশ্বাস্য। আমি সত্যিই মুগ্ধ।’
জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের ফাঁকে শুক্রবার নিউইয়র্কে হোটেল স্যুইটে ড. ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন বিশ্বের প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতারা। এ সময় তারা বাংলাদেশের প্রতি পূর্ণ সমর্থন জানান এবং পুনর্গঠন ও অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারে সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি দেন।
লাটভিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট ভাইরা ভিকে-ফ্রেইবার্গারার নেতৃত্বে প্রতিনিধিদলটি ড. ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। যিনি একই সঙ্গে ১১ শতকের কবি নিজামী গঞ্জভির নামে প্রতিষ্ঠিত নিজামী গঞ্জভি ইন্টারন্যাশনাল সেন্টারের (এনজিআইসি) সহ-সভাপতিও।
উচ্চপর্যায়ের এ প্রতিনিধিদলে ছিলেন-স্লোভেনিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট বোরুত পাহোর, সার্বিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট বোরিস তাদিচ, লাটভিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট এগিলস লেভিটস, ইউরোপীয় কাউন্সিলের সাবেক প্রেসিডেন্ট চার্লস মিশেল, গ্রিসের সাবেক প্রধানমন্ত্রী জর্জ পাপান্দ্রেউ, বুলগেরিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট রোসেন প্লেভনেলিয়েভ ও পেতার স্তোয়ানোভ, ক্রোয়েশিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট ইভো যোসিপোভিচ, বসনিয়া-হার্জেগোভিনার সাবেক প্রেসিডেন্ট এমলাদেন ইভানিচ এবং মরিশাসের সাবেক প্রেসিডেন্ট আমিনা গুরিব-ফাকিম।
এ ছাড়া উপস্থিত ছিলেন- কমনওয়েলথের সাবেক মহাসচিব, জর্জিয়ার সাবেক উপপ্রধানমন্ত্রী, জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের চারজন সাবেক সভাপতি, কয়েকজন সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী, বিশ্বব্যাংকের সাবেক সহসভাপতি ও এনজিআইসি সহ-সভাপতি ইসমাইল সেরাগেলদিন, রবার্ট এফ. কেনেডি হিউম্যান রাইটসের সভাপতি কেরি কেনেডি, আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থা (আইএইএ) এবং জর্জটাউন ইনস্টিটিউট ফর উইমেন, পিস অ্যান্ড সিকিউরিটির প্রতিনিধিরা।
বক্তারা অধ্যাপক ইউনূসের নেতৃত্ব ও দারিদ্র্য বিমোচন এবং সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় তার আজীবন নিষ্ঠার প্রশংসা করেন। এক নেতা বলেন, ‘আমরা এখানে এসেছি আপনাকে এবং বাংলাদেশের জনগণকে সমর্থন জানাতে। আমরা সম্পূর্ণভাবে আপনার পাশে আছি।’
অধ্যাপক ইউনূসের নেতৃত্বে বাংলাদেশ সাম্প্রতিক সময়ে অগ্রগতি অর্জন করেছে বলে স্বীকার করেন নেতারা। তবে তারা এ-ও উল্লেখ করেন যে দীর্ঘ ১৬ বছরের দুর্ব্যবস্থা, দুর্নীতি ও শোষণের কারণে দেশটি এখনো গুরুতর চ্যালেঞ্জের মুখে।
কয়েকজন নেতা প্রতিশ্রুতি দেন, তারা অন্তর্বর্তী সরকারের পুনর্গঠন ও অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারে তাদের অভিজ্ঞতা দিয়ে সহায়তা করবেন। আরেকজন নেতা বলেন, ‘আমরা আপনার সঙ্গে কাজ করতে প্রস্তুত। আপনার যেকোনো দিকনির্দেশনা বা সহায়তার প্রয়োজন হলে জানাবেন। অনেক কিছু করার আছে।’
সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশ সফর করা কেরি কেনেডি দেশের মানবাধিকার অগ্রগতির প্রশংসা করে বলেন, ‘মানবাধিকার খাতে আপনাদের সাফল্য সত্যিই অসাধারণ।’
জর্জটাউন ইনস্টিটিউট ফর উইমেন, পিস অ্যান্ড সিকিউরিটির নির্বাহী পরিচালক মেলান ভারভিয়ার জানান, তাদের প্রতিষ্ঠান শিগগিরই বাংলাদেশে জুলাই বিপ্লবের প্রতি আনুষ্ঠানিক সমর্থন ঘোষণা করবে।
এনজিআইসি সহ-সভাপতি ইসমাইল সেরাগেলদিন বলেন, ‘আপনারা যদি আমাদের প্রয়োজন মনে করেন, আমরা আপনাদের পাশে আছি।’
অভূতপূর্ব এ সমর্থনের জন্য গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন অধ্যাপক ইউনূস। তিনি বলেন, ‘এটা পুরোপুরি অপ্রত্যাশিত। আপনাদের এভাবে একত্রিত হয়ে আমাদের প্রতি সমর্থন জানানো- অবিশ্বাস্য। আমি সত্যিই মুগ্ধ।’
জর্জটাউন ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক মেলানি ভেরভির জানান, শিগগিরই প্রতিষ্ঠানটি বাংলাদেশের জুলাই বিপ্লবকে আনুষ্ঠানিক সমর্থন জানাবে। এনজিআইসি’র সহ-সভাপতি ইসমাইল সেরাগেলদিন বলেন, ‘আপনারা আমাদের প্রয়োজন মনে করলে আমরা আছি।’
অধ্যাপক ইউনূস তার প্রশাসনের সামনে থাকা চ্যালেঞ্জকে প্রাকৃতিক দুর্যোগের সঙ্গে তুলনা করে বলেন, ‘এই দেশটি গত ১৫ বছর ধরে একটানা ভূমিকম্পের মধ্যে ছিল। এর মাত্রা ছিল রিখটার স্কেলে ৯।’
জনসাধারণের প্রত্যাশা ব্যবস্থাপনার চ্যালেঞ্জের কথা উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘মানুষ রাতারাতি অলৌকিক পরিবর্তন আশা করছে, যদিও আমাদের সম্পদ সীমিত। তবে আমাদের তরুণ প্রজন্মের স্বপ্নও পূরণ করতে হবে-তারা একটি নতুন বাংলাদেশ খুঁজছে।’
আগামী ফেব্রুয়ারিতে নির্ধারিত সাধারণ নির্বাচন প্রসঙ্গে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহযোগিতা কামনা করেন ড. ইউনূ। তিনি বলেন, ‘আমাদের আপনাদের দিকনির্দেশনা দরকার। আপনাদের পরামর্শ, সমর্থন এবং নৈতিক শক্তি আমাদের জন্য অমূল্য হবে।’
বৈঠকে এসডিজি সমন্বয়ক লামিয়া মোরশেদও উপস্থিত ছিলেন।
ঠিকানা/এএস


ঠিকানা অনলাইন


