অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, শেখ হাসিনা ও তার সহযোগীদের বিচার তার সরকারের শীর্ষ অগ্রাধিকার। একই সঙ্গে তিনি বলেছেন, বিচার আন্তর্জাতিক আইনের মানদণ্ড অনুযায়ী পরিচালিত হচ্ছে।
নিউ ইয়র্কের স্থানীয় সময় বুধবার জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের সাইডলাইনে ফিনল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট আলেকজান্ডার স্টাব্বের সঙ্গে বৈঠককালে প্রধান উপদেষ্টা এ কথা বলেন। একই দিন প্রধান উপদেষ্টা পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ, ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি এবং কসোভোর প্রেসিডেন্ট ভিওসা ওসমানির সঙ্গে বৈঠক করেন। এদিকে আজ শুক্রবার জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে ভাষণ দেবেন প্রধান উপদেষ্টা।
ফিনল্যান্ডের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, বাংলাদেশে রাজনৈতিক ও প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার প্রক্রিয়া চলছে। রাজনৈতিক দলগুলো জুলাই সনদ স্বাক্ষরের পথে রয়েছে, যা গভীর রাজনৈতিক সংস্কারের রূপরেখা হিসেবে গণ্য হবে। তিনি বলেন, শেখ হাসিনা ও তার সহযোগীদের বিচার অন্তর্বতী সরকারের শীর্ষ অগ্রাধিকার। বিচারের মুখোমুখি থাকা সত্ত্বেও তিনি (শেখ হাসিনা) উসকানিমূলক ও অস্থিতিশীল বক্তব্য দিয়ে চলেছেন। অন্তর্বর্তী সরকার তাকে ন্যায়বিচারের জন্য প্রত্যর্পণের দাবি জানিয়েছে। তিনি বলেন, দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থা (সার্ক)-এর পুনরুজ্জীবন এবং আসিয়ানের সদস্যপদ পেতে বাংলাদেশ সক্রিয়ভাবে কাজ করে যাচ্ছে। এ সময় ফিনল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট অন্তর্বর্তী সরকারের পররাষ্ট্রনীতি সম্পর্কে জানতে চান।
বৈঠকে দুই নেতা বাংলাদেশের আসন্ন সাধারণ নির্বাচন, জাতিসংঘ সংস্কার, রোহিঙ্গা সংকট, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, আসিয়ান সদস্যপদ প্রক্রিয়া, শেখ হাসিনা ও তার সহযোগীদের বিচার এবং নেপাল ও ভুটান থেকে জলবিদ্যুত্ ব্যবহারসংক্রান্ত পদক্ষেপসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন। প্রধান উপদেষ্টা আগামী ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশের ১২ কোটি ভোটারের জন্য অবাধ, সুষ্ঠু ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন আয়োজনের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন।
ফিনল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন এবং জাতিসংঘ সংস্কারের জরুরি প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন। উভয় নেতা দীর্ঘমেয়াদি রোহিঙ্গা সংকট ও বাংলাদেশে আশ্রয়প্রাপ্ত এক মিলিয়নেরও বেশি রোহিঙ্গার জন্য আন্তর্জাতিক সহায়তা বাড়ানোর প্রয়োজনীয়তা নিয়ে আলোচনা করেন। বৈঠকে বাংলাদেশের জ্বালানি উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান ও এসডিজি বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক লামিয়া মোরশেদ উপস্থিত ছিলেন।
পাকিস্তান সফরের আমন্ত্রণ শাহবাজ শরিফের
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক করেছেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ। জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের ফাঁকে সংস্থার সদর দপ্তরে বুধবার এ বৈঠক হয়। বৈঠকে দুই নেতা বাংলাদেশের আসন্ন সাধারণ নির্বাচন, অন্তর্বর্তী সরকারের গৃহীত সংস্কার কার্যক্রম, পাকিস্তানে সম্প্রতি ঘটে যাওয়া বিধ্বংসী বন্যা, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ এবং আঞ্চলিক সহযোগিতার সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করেন। প্রধানমন্ত্রী শরিফ ড. ইউনূসকে অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে পাকিস্তান সফরের আমন্ত্রণ জানান। বৈঠকে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ড. খালিলুর রহমান, প্রধান উপদেষ্টার মুখ্যসচিব সিরাজ উদ্দিন মিয়া এবং এসডিজি সমন্বয়ক লামিয়া মোরশেদ উপস্থিত ছিলেন।
ইতালি-বাংলাদেশ বিজনেস ফোরাম গঠনের প্রস্তাব মেলোনির
ইতালি-বাংলাদেশ বিজনেস ফোরাম গঠনের প্রস্তাব দিয়েছেন ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি। বুধবার নিউ ইয়র্কে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে তিনি এ প্রস্তাব করেন। যার উদ্দেশ্য বাংলাদেশে ইতালিয়ান বিনিয়োগ সম্প্রসারণ করা। প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূস এ প্রস্তাবকে স্বাগত জানান এবং বলেন দুই দেশের দীর্ঘদিনের সম্পর্ক থাকা সত্ত্বেও বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সহযোগিতা বিস্তারের বড় সম্ভাবনা রয়ে গেছে। উভয় নেতা বৈঠকে বাংলাদেশের আসন্ন সাধারণ নির্বাচন, অভিবাসন চ্যালেঞ্জ, রোহিঙ্গা শরণার্থীসংকট এবং আগামী ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী মেলোনির বাংলাদেশে সম্ভাব্য সফর নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন। প্রধানমন্ত্রী মেলোনি অধ্যাপক ইউনূসের গত ১৪ মাসের অন্তর্বর্তী সরকারের নেতৃত্বের প্রশংসা এবং নিশ্চিত করেন যে ইতালি ইউরোপীয় ইউনিয়নের অন্যতম দেশ, যারা বাংলাদেশে সুষ্ঠু ও স্বচ্ছ নির্বাচনের জন্য সমর্থন জানাবে। দুই নেতা রোহিঙ্গা সংকট নিয়েও গঠনমূলক আলোচনা করেন। অধ্যাপক ইউনূস বাংলাদেশে আশ্রয়প্রাপ্ত ১০ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গার জন্য আন্তর্জাতিক সহায়তা বাড়ানোর আহ্বান জানান। প্রধানমন্ত্রী মেলোনি আগামী সপ্তাহে জাতিসংঘ সদর দপ্তরে অনুষ্ঠিত রোহিঙ্গা সংকট বিষয়ক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে একটি উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিদল পাঠানোর অঙ্গীকার করেন।
কসোভোর সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক জোরদারের প্রস্তাব
কসোভোর প্রেসিডেন্ট ভিওসা ওসমানি বুধবার নিউ ইয়র্কে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক করেছেন। নিউ ইয়র্কের একটি হোটেলে অনুষ্ঠিত এ বৈঠকে অভিবাসন, বাণিজ্য এবং পারস্পরিক বাণিজ্যিক সহযোগিতা বৃদ্ধি এবং উভয় দেশের জনগণের মধ্যে যোগাযোগ বাড়ানোর বিষয়ে আলোচনা হয়। দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আরো জোরদার করতে প্রেসিডেন্ট ওসমানি বাংলাদেশ ও কসোভোর মধ্যে কয়েকটি বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক চুক্তি স্বাক্ষরের প্রস্তাব দেন। বিশেষভাবে তিনি বস্ত্র খাতে দ্বিপাক্ষিক চুক্তির সুপারিশ করেন এবং এ খাতে সহযোগিতা ও পারস্পরিক সুফলের ব্যাপক সম্ভাবনার কথা উল্লেখ করেন। অধ্যাপক ইউনূস প্রেসিডেন্ট ওসমানিকে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানান এবং ঢাকায় একটি কসোভো বাণিজ্য প্রতিনিধিদল পাঠানোর আহ্বান জানান । বৈঠকে উপস্থিত আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল বাংলাদেশি কর্মীদের নিয়োগ বিষয়ে একটি আনুষ্ঠানিক সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) স্বাক্ষরের গুরুত্ব তুলে ধরেন।
মার্কিন কোম্পানিকে বাংলাদেশে আরো বিনিয়োগের আহ্বান
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূস যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানিগুলোকে বাংলাদেশে আরো বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়েছেন। বুধবার নিউ ইয়র্কে অনুষ্ঠিত যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ এক্সিকিউটিভ বিজনেস গোলটেবিল আলোচনায় দেওয়া বক্তব্যে তিনি এ আহ্বান জানান। ‘অ্যাডভান্সিং রিফর্ম, রেজিলিয়েন্স অ্যান্ড গ্রোথ’ শীর্ষক এ আলোচনার আয়োজন করে ইউএস-বাংলাদেশ বিজনেস কাউন্সিল (ইউএসবিবিসি)। প্রধান উপদেষ্টা অনুষ্ঠানে মেটলাইফ, শেভরন এবং এক্সেলেরেটসহ শীর্ষ মার্কিন কোম্পানিগুলোকে বাংলাদেশে নতুন বিনিয়োগের সুযোগ কাজে লাগানোর আহ্বান জানান। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম পরে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান
ক্লাব ডি মাদ্রিদে যোগদানের প্রস্তাব পেলেন প্রধান উপদেষ্টা
ক্লাব ডি মাদ্রিদের সভাপতি ও স্লোভেনিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট দানিলো তুর্ক বুধবার যুক্তরাষ্ট্রে একটি হোটেলে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। বৈঠকে দানিলো তুর্ক অধ্যাপক ইউনূসকে সংগঠনের সদস্য হতে আমন্ত্রণ জানান।
ঠিকানা/এসআর


ঠিকানা অনলাইন


