টানা প্রায় ১৬ বছর মাতৃভূমির বাইরে থাকার পর তারেক রহমান দেশে ফিরছেন। ফেরার দিন-তারিখ চূড়ান্ত হয়নি এখনো। তবে আগামী মাসখানেকের মধ্যেই আসবেন তিনি। বিএনপির নেতৃস্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ডাকসু-জাকসুসহ বিভিন্ন ছাত্র সংসদ নির্বাচনে জামায়াতের ছাত্রসংগঠন ইসলামী ছাত্রশিবিরের বিপুল জয়লাভ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল তথা বিএনপিকে অভাবনীয় নাজুক পরিস্থিতিতে ফেলেছে। সামনে জাতীয় নির্বাচন বড় রকমের চ্যালেঞ্জ হয়ে আসছে, যা সফলভাবে মোকাবিলা ও বিজয় নিশ্চিত করার ওপরই নির্ভর করবে তারেক রহমানের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ। তারেক রহমানের পরিচয়- তিনি স্বাধীনতার ঘোষক মরহুম রাষ্ট্রপতি ও বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী, দেশের প্রখ্যাত রাজনীতিবিদ বেগম খালেদা জিয়ার জ্যেষ্ঠ পুত্র। ১/১১-এর সেনা সমর্থিত সরকার তারেক রহমানের ওপর নিষ্ঠুর নির্যাতন চালিয়ে তাকে দেশত্যাগে বাধ্য করে। সেই থেকে তিনি লাগাতার দেশের বাইরে। শীর্ষ পর্যায় থেকে তৃণমূল পর্যন্ত বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা-সংগঠকদের সঙ্গে মোবাইলে তারেক রহমান যোগাযোগ রক্ষা করলেও সশরীরে তার যোগাযোগ, সাক্ষাৎ নেই।
দেশের বৃহত্তম রাজনৈতিক দল বিএনপি। শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান প্রতিষ্ঠিত দলটির নেতৃত্ব দিয়েছেন তার স্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া। সুদীর্ঘ দিন রাজনৈতিক ময়দানে জনগণের পাশে থেকে অত্যন্ত প্রিয় নেত্রী হিসেবে নিজের স্থান করে নেন। আশি বছর বয়সী খালেদা জিয়ার পক্ষে দল ও দেশের নেতৃত্ব দেওয়া শারীরিকভাবে কঠিন হয়ে পড়ায় জ্যেষ্ঠ পুত্র তারেক রহমানকে সামনে আনতে হয়। জাতীয় পার্টি, আওয়ামী লীগ, তাদের জোট সরকার, ১/১১-এর সেনা সমর্থিত সরকার কেউই বিএনপি, খালেদা জিয়া, তারেক রহমানসহ বিএনপির কোনো পর্যায়ের নেতাকর্মীর প্রতি রাজনৈতিক শিষ্টাচারপূর্ণ আচরণ করেনি।
বর্তমান সময়টাও যে তারেক রহমানের জন্য শুভকর বা সামনে শুভ বার্তাবাহী, তা-ও নয়। একের পর এক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করেই তারেক রহমানকে পথ চলতে হবে বলে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহল মনে করেন। দলের ভেতর থেকে যেমনি, বাইরে থেকেও নানা প্রশ্ন, সমস্যা-সংকটের মুখোমুখি হতে হচ্ছে তাকে। তারেক রহমানের নেতৃত্ব সরাসরি চ্যালেঞ্জ করার মতো কেউ দৃশ্যমান নন। তবে গোপনে শীর্ষস্থানীয় কেন্দ্রীয় উল্লেখযাগ্যসংখ্যক নেতাই তারেক রহমানকে শীর্ষ নেতৃত্বে দেখতে চান না। ক্ষমতা ব্যক্তিবিশেষ বা গোষ্ঠীর কাছে সীমাবদ্ধ রাখার বিপক্ষে তারা। নির্বাচন সামনে রেখে বিরোধ প্রকাশ্য করতে না চাইলেও মনোনয়ন প্রশ্নে নেতৃত্বের দ্বন্দ্ব প্রকট আকারে দেখা দিতেও পারে। অনেকে লন্ডনে তারেক রহমানের সঙ্গে দেখা করেন। অনেকের সঙ্গে ব্যক্তিগত সম্পর্কের বাইরে ব্যবসায়িক-রাজনৈতিক যোগাযোগ, সম্পর্ক রক্ষা করা হয়। বিগত সময়ে নির্বাচনে বিশাল মনোনয়ন-বাণিজ্যে এদেরই ছিল মুখ্য ভূমিকা। এসব চক্রের সঙ্গে সম্পর্ক বহাল থাকার ও তা আরও উন্নততর পর্যায়ে উন্নীত হওয়ায় দলটির রাজনৈতিক মহল গভীরভাবে শঙ্কিত। রাজনৈতিক ময়দানে আসন্ন নির্বাচনে বিএনপির প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী জামায়াত। বিএনপির নেতৃত্ব, তারেক রহমানের বিভিন্নমুখী যোগাযোগ, তারেক রহমান কর্তৃক যাদের মনোনয়ন দেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে তাদের ব্যাপারে সব রকম খোঁজ রাখছে জামায়াত। কোনো কারণে শেষ পর্যন্ত ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন না হলে সম্ভাব্য রাজনৈতিক পরিস্থিতি মোকাবিলা, সমমনা ইসলামি দলগুলোর সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ এবং পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে সমন্বিত, সম্মিলিত সিদ্ধান্ত গ্রহণসহ প্রাসঙ্গিক বিষয়াদি নিয়ে অভিন্ন অবস্থানে রয়েছে। উদ্ভূত পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটেই তারা সিদ্ধান্ত নেবেন, যা বিএনপি ও তারেক রহমানের জন্য সহজ না-ও হতে পারে। বিএনপির প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে জামায়াত রাজনৈতিক ময়দানে তারেক রহমানের নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠার বিপক্ষে কখনো অপ্রকাশ্যে, কখনো প্রকাশ্যেই অবস্থান নিতে পারে। এ ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ তাদের নানাভাবে নানা কৌশলে সহযোগিতা করে চলছে।