Thikana News
৩১ অক্টোবর ২০২৫
  1. ই-পেপার
  2. চলতি সংখ্যা
  3. বিশেষ সংখ্যা
  4. প্রধান সংবাদ
  5. আমেরিকার অন্দরে
  6. বিশ্বচরাচর
আমেরিকা শুক্রবার, ৩১ অক্টোবর ২০২৫





 
পর্ব-৬

স্মৃতির আলপনায় আঁকা

স্মৃতির আলপনায় আঁকা





 
মনে পড়ে, ভোর রাতের দিকে যখনই ঘুম ভাঙত, দেখতাম মা পাশে নেই। হোক সেটা শীত, গ্রীষ্ম, বর্ষা বা শরৎ। প্রায়ই ঘুম ভেঙে যেত আমার। মা কখনো বিছানায় আসতেন, কখনো আসতেন না। অন্ধকার থাকতে থাকতেই সংসারের কাজে লেগে যেতেন। উঠোন ঝাড়ু দিতেন, হাঁস-মুরগিগুলোর তদারক করতেন। তারপর আমাদের খাওয়াদাওয়ার বন্দোবস্ত করতে শুরু করতেন। চুলায় ভাত বসাতেন। ধোঁয়ায় নাকের জ্বলে চোখের জ্বলে একাকার হতেন। এখনো সেই সব দৃশ্য মনে পড়ে। মা খুবই কর্মক্ষম ছিলেন। অনেক ফলফলাদি আর শাকসবজি চাষ করতেন মা। শিম, লাউ, ধুন্দল, লাল শাক, ডাঁটা, শজনে, কুঞ্জলতা ফলত অনেক। যা রোপণ করতেন, তা-ই লকলকিয়ে উঠত। মায়ের হাতে জাদু ছিল। জলপাই, আমড়া, পেয়ারা, কাঁঠাল, জাম্বুরা, জামরুল, কালোজাম, নইল, আমলকী, কামরাঙা, চালতা, লিচু, নারকেল গাছ ছিল আমাদের বাড়িতে। মা ফজরের নামাজের জন্য খুব ভোরে উঠতেন। তাহাজ্জুদ পড়তেন। একটু যখন বড় হয়েছি, আলাদা বিছানায় ঘুমাই, তখন খুব ভোরে মা এভাবেই ডাকতেন, জসিম, ওঠ ওঠ, নামাজ পড় বাবা। আমি উঠতে চাইতাম না...। চোখে রাজ্যের ঘুম। কিন্তু আমি জানতাম, ঘুমের চেয়ে নামাজ উত্তম...। স্কুলে শিখিয়েছিল...। মা নেই কিন্তু স্মৃতিগুলো আছে। স্মৃতি কখনো মুছে যায় না।

আমি ইন্টারমিডিয়েট পাস করার পর মা একদিন বললেন, এবার একটা চাকরি খোঁজো। আর পড়তে হবে না। মায়ের কথা শুনে আমি আকাশ থেকে পড়লাম! তখন আমার বয়স মাত্র আঠোরো। এই বয়সে কী চাকরি করব! আমাকে কে চাকরি দেবে!
বললাম, আমি চাকরি করতে চাই না। আমি আরও পড়তে চাই।
কেন, নুরু তো চাকরি করছে।
হ্যাঁ, এটা ঠিক, আমার মেজো ভাই ইন্টারমিডিয়েট পাস করেই চাকরি নিয়েছিলেন। বরিশাল জজ কোর্টে তার চাকরি হয়েছিল। তখন এই চাকরিটা খুব দরকার ছিল। আমার বড় ভাই তখন তার ফ্যামিলি নিয়ে আলাদা হয়ে গেছেন। আমরা আক্ষরিক অর্থে পানিতে পড়ে গেলোম। তখনই ত্রাণকর্তা হিসেবে আমাদের বাড়ির একজন মুরব্বি আমার ভাইকে চাকরিটা পাইয়ে দিলেন। আমার ভাইয়ের ইচ্ছা ছিল আরও পড়াশোনা করবেন কিন্তু পরিবারের প্রতি দায়বদ্ধতা থেকে সংসারের হাল ধরতে হলো।
মা, আমি অনার্স পড়তে চাই।

মা অনার্স কী জানেন না। মা মনে করেছেন ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার জাতীয় কিছু হবে। মা চাইতেন আমি ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার জাতীয় কিছু হই। কিন্তু কীভাবে ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার হতে হয়, মা হয়তো সেটা বুঝতে পারতেন না। আমি সবকিছু মায়ের কাছে আবদার করতাম। কিন্তু আমার মেজো ভাই চমৎকার একজন মানুষ। তার কাছে যখনই কিছু চাইতাম, না করতেন না। মাঝে মাঝে তার অফিসে যেতাম কলেজ থেকে। তিনি ঠিক বুঝতেন কেন এসেছি। মাঝে মাঝে তার মানিব্যাগ থেকেও টাকা সরিয়েছি। তিনি কি তা বুঝতেন না! ঠিকই বুঝতেন। কিন্তু কখনো কিছু বলতেন না। তখন থেকেই আমি পত্রিকা কিনে পড়ি। বিচিত্রা পত্রিকার জন্য অপেক্ষা করি। অনেক পেনফ্রেন্ড আমার। আবার টুকিটাকি লিখি। আমার তো কিছু পকেট মানি দরকার হয়, তাই না! ভাই আমাকে সেই পয়সা দেন। তার পরও আমি একটু লাজুক বলে মায়ের কাছে হাত পাতি। মা না বললে আমার তেমন খারাপ লাগবে না। আমার ভাই আমাকে বুঝতে পারতেন। আমার বোন সাজু চাইত আমি অনেক লেখাপড়া করি, নামকরা একজন লেখক হই। একটা লেখা পত্রিকায় ছাপা হলে সাজু সেটা ঘুরে ঘুরে সবাইকে দেখাত। বলত, জসিম লিখেছে। বিয়ের পরও এটা করত। শ্বশুরবাড়ির লোকদের বলত, দ্যাখো দ্যাখো, আমার ভাই লিখেছে। অনেক গর্ব ছিল আমাকে নিয়ে। কিন্তু সাজুটা চলে গেল! কোনো মানে হয় না! সংসারের টানাপোড়েনের কারণে সাজুও বেশি পড়তে পারেনি। একদিন বিয়ে হয়ে গেল শহরের এক ব্যবসায়ী পরিবারে। এক ছেলে এক মেয়ে হলো ওর। তারপর একদিন ওদেরকে ছোট্ট রেখে চলে গেল! মা যেমন নরম মনের মানুষ ছিলেন, কারও দুঃখ-কষ্ট দেখলে হাপুস নয়নে কাঁদতেন, নিজের পাতের খাবার তুলে দিতেন অন্যকে, তেমনি কখনো কখনো কঠোরও ছিলেন। আমার ব্যাপারে মা সব সময় নরম এবং কঠোরতা দুটোই দেখিয়েছেন। কিন্তু মা আমাকে আটকে রাখতে পারলেন না। একদিন আমি ঢাকায় চলে এলাম। উদ্দেশ্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হব এবং পত্রিকায় কাজ করব। দুটোই আমার জন্য অসম্ভব কল্পনা। মা কেঁদেকেটে অস্থির হলেন। মা জানেন, ঢাকা শহরে আমার কেউ নেই, আমি কাউকে চিনি না, রাস্তাঘাট চিনি না। অচেনা এক শহর। ঢাকায় আসার পর মায়ের সঙ্গে যোগাযোগ কমে গেল। মা তো আর লিখতে জানেন না। আমি চিঠি লিখলেও তার উত্তর আসে কয়েক মাস পর। কেউ হয়তো লিখে দেয়। বরিশাল যাওয়ার মতো পয়সা নেই আমার। ঠিকমতো খাওয়াই জোটে না! দেড় বছর পর একদিন বাড়িতে গেলাম। মাকে আগেই জানিয়েছি আমি আসব অমুখ তারিখে। এক সকালে লঞ্চ থেকে নেমে রিকশায় বাড়িতে পৌঁছালাম। তখনো আকাশে অন্ধকার। চারদিকে কুয়াশা আর ঠান্ডা হিম বাতাস ছড়িয়ে আছে। দেখি, মা জানালার গ্রিল ধরে দাঁড়িয়ে আছেন আমার জন্য। আমার পুরো ছাত্রজীবন কেটেছে কষ্টেসৃষ্টে। হল জীবনে অনেক রাত আমি না খেয়ে কাটিয়েছি কিন্তু কখনো কাউকে বুঝতে দিইনি। কেউ জানতে পারেনি। বিচিত্রায় কাজ করে যা পেতাম, তাতে চলত না। কিন্তু বিয়ের পর আমার জীবন বদলে গেল। দুজনই চাকরি করতাম। ভালো চাকরি। কিন্তু টাকার প্রতি তেমন আগ্রহ জন্মায়নি। অথচ টাকা খরচ করতে আমি পছন্দ করি। চ্যারিটি করতে পছন্দ করি। চায়ের টেবিলে বসলে আমার সামনে কেউ বিল দিতে পারে না সহজে, আমার অপমান লাগে। আমি স্বেচ্ছায় চাকরি ছেড়েছিলাম অন্যায়ের সঙ্গে আপস করব না বলে। বিদেশে আসার সময় আমাকে পৈতৃক জমি বিক্রি করতে হয়েছিল অথচ সে সময় আমি চাইলে অনেক টাকা আয় করতে পারতাম। ওসবকে উপেক্ষা করে আমি কানাডায় চলে আসি। আমি তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। মহসিন হলের ছয় তলায় থাকি। ৬৫৫ নম্বর রুম। সিঙ্গেল রুম। নির্জন দুপুরে এই রুম থেকে প্রায়ই বাবুপুরা রাস্তার দিকে তাকিয়ে থাকতাম। গাড়ি চলাচল দেখতাম। তখন ঢাকার রাস্তায় এত দামি দামি গাড়ি চলত না। জাপানি গাড়ির পাশাপাশি কিছু কোরিয়ান ও মালয়েশিয়ান গাড়ি চলত। প্রোটন সাগা নামের একটা মালয়েশিয়ান গাড়ি চলত তখন। কেন যেন নামটা আমার খুব পছন্দ হলো। তখন থেকেই আমি ভাবতাম, আচ্ছা আমি কি কোনো দিন গাড়ি চালাব? ওই রকম গাড়ি হবে কখনো আমার? গাড়ি ড্রাইভ করব আর আমার পাশে বসে থাকবে রূপসী কোনো মেয়ে, আমার প্রেমিকা। সে গুনগুন করে নজরুলের গান গাইবে আর আমি চলে যাব বহুদূর তাকে নিয়ে। তার হাত ধরব, চুলের ঘ্রাণ নেব বা গালে হাত ছুঁয়ে দেব। চলে যাব পাখিডাকা কোনো নির্জন জায়গায় অথবা সমুদ্রের কাছে। সমুদ্রের ফেনিল উচ্ছ্বাস দেখব আর বাতাসে তার লম্বা চুল উড়ে লুটিয়ে পড়বে চোখেমুখে। আমি মুগ্ধ হয়ে সেই দৃশ্য দেখব।

সেই স্বপ্ন আমার পূরণ হয়নি। ওই রকম আর্থসামাজিক অবস্থায় ওসব স্বপ্নই থেকে যায়। সে সময় সকালে খেলাম তো দুপুরে খাওয়া জুটবে কি না, তা নিয়েই ছিল শঙ্কা। তারপর অনেক বছর পার হয়েছে। ১৯৯৪ সাল। একবার মহাখালী বাসস্ট্যান্ডে দাঁড়িয়ে আছি। সময়টা সকাল। অফিসে যাব। আগের রাত থেকেই বৃষ্টি হচ্ছিল। তখনো ঝিরঝির বৃষ্টি পড়ছে। হাতে একটা ছাতা। রাস্তায় পানি জমে গেছে। পরনে সদ্য ইস্ত্রি করা জামা-প্যান্ট। বাসের জন্য অপেক্ষা করছি। হঠাৎ একটা প্রাইভেট কার হুস করে আমাকে ভিজিয়ে দিয়ে চলে গেল। পেছনের সিটে বসা এক তরুণী মাথা বের করে আমার করুণ অবস্থা দেখে ফিক করে হেসে ফেলল। ধনীর রূপসী কন্যার কেমন রসিকতা এটা! সেই ঘটনাটা আমি খুব মনে রেখেছি..। পরের বছরই একটা ঘটনা ঘটেছিল। সেদিন অফিসে যেতে দেরি হয়েছিল বলে বসকে কৈফিয়ত দিতে হয়েছিল। এর কয়েক মাস পর একদিন বসের পাশে বসে গাড়িতে যেতে যেতে তিনি বললেন, জসিম, তুমি ড্রাইভিং জানো? আমি বললাম, না স্যার। তিনি বললেন, ড্রাইভিংটা জানা দরকার। ভালো ড্রাইভিং জানলে কখনো না খেয়ে থাকবা না। এ কথার মানে কী! আমি ড্রাইভার হব নাকি! তবে আমি সত্যি সত্যি ড্রাইভিংটা শিখলাম। মহাখালীর বাবুল নামের একজন লক্কড়মার্কা একটা টয়োটা গাড়ি দিয়ে অতি তাচ্ছিল্যের সঙ্গে আমাকে গাড়ি চালানো শেখাল। সে বলল, ‘আফনে গাড়ি চালানো শেখেন ক্যান!’ আমি বললাম, এমনি। বিআরটিএ থেকে লাইসেন্স পেলাম। অরিজিনাল ড্রাইভিং লাইসেন্স। ড্রাইভিং টেস্টে পাস করা সত্ত্বেও ইন্সপেক্টরকে দুইশ টাকা ঘুষ দিতে হয়েছিল। এটাই রেওয়াজ। এরপর একদিন গাড়ি চালানো বা লাইসেন্সের কথা ভুলে গেলাম। ১৯৯৫ সাল। একটা সেকেন্ড হ্যান্ড টয়োটা স্টারলেট গাড়ি হলো আমার। আমার জীবনের প্রথম গাড়ি। বস আমাকে গাড়িটা কিনে দিয়েছিলেন। বস কেন সেদিন বলেছিলেন ভালো ড্রাইভিং জানলে না খেয়ে থাকতে হবে না! এর উত্তর অনেক পরে জেনেছি। তখন বস কীভাবে বুঝেছিলেন যে আমি একদিন বিদেশে চলে যাব! আমি কানাডায় এসেছি ২০০৩ সালে। আর তিনি কথাটা বলেছিলেন ১৯৯৪ সালে। কানাডায় এসে চাকরির জন্য হন্যে হয়ে ঘুরছি। সারভাইভ তো করতে হবে। এসেই এখানকার লাইসেন্স নিলাম। জি-২ লাইসেন্স। এসব দেশে গাড়ির লাইসেন্স অনেক ইম্পর্ট্যান্ট। সবচেয়ে বড় আইডি। কিছুই যখন কাজ খুঁজে পাচ্ছিলাম না, তখন একজন বন্ধু বুদ্ধি দিল, একটা গাড়ি কিনে পিৎজা ডেলিভারি করো। আমি টয়োটা ক্যামরি নামের একটা ইউজড গাড়ি কিনলাম। বেশ পুরোনো ছিল গাড়িটা। তখনই প্রায় সোয়া দুই লাখ কিলোমিটার চলেছে। মাইলেজ ব্যাপারটা তখনো বুঝি না ভালো। তার পরও আমি অনেক দিন গাড়িটা চালিয়েছিলাম। প্রায় সাড়ে তিন লাখ কিলোমিটার পর্যন্ত। মেইনটেন্যান্সের জন্য অনেক টাকা খরচ করেছি। সেই টাকা দিয়ে আরেকটা গাড়ি কিনতে পারতাম। এবং তখনই মনে পড়ল সেই অমোঘ বাণী ‘ভালো ড্রাইভিং জানলে কখনো না খেয়ে থাকতে হয় না।’ গাড়িই হয়ে উঠল আমার রুটি-রুজি।

আমি যে একদিন বিদেশে এসেছি, তার পেছনে বিশেষ কোনো কারণ ছিল না। হঠাৎই এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছি। সত্যি বলতে, আমি একটু নিরীহ ধরনের মানুষ, কারও সঙ্গে কোনো ঝগড়া-বিবাদে জড়াই না সহজে। ঝগড়া-ফ্যাসাদ করার মতো মনের জোর আমার নেই। কারও সঙ্গে কখনো কিছু ঘটলে আমি নিজেই রণেভঙ্গ দিই। সারেন্ডার করি। ভাবি, ছোট্ট এই জীবনে এসব করে কোনো লাভ নেই। আমার বিদেশ চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত ছিল আকস্মিক। হুটহাট অনেক কিছু করি আমি। পূর্বাপর পরিণতি না ভেবেই করি। সিদ্ধান্ত পাল্টানোর অনেক ঘটনা আছে আমার। আমি অনেক সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগি। এমনও হয়, কোথাও যাব বলে বের হয়েছি, ঘরের কাছে গিয়ে ফেরত আসি। কোন রেস্টুরেন্টে খাব, সিদ্ধান্ত নিতে পারি না কী খাব, তাই বের হয়ে আসি রেস্টুরেন্ট থেকে। অনেক সময় কাপড়চোপড় কিনে ফেরত দিই, নাহ্ এটা পছন্দ নয়! বরিশাল থেকে একদিন যেমন ঢাকায় এসেছিলাম, তেমনি ঢাকা থেকে কানাডা আসাটাও তা-ই। একদিন হঠাৎ মনে হলো দেশে থাকব না। চলে যাব কোথাও। প্রথম চয়েস ছিল আমেরিকা যাব। এসব চিন্তা ঢুকেছে ২০০০ সালের দিকে। সে বছর আমি আমেরিকা ঘুরতে এসে মনে মনে ভাবলাম, এই দেশটা কত সুন্দর। চমৎকার সব মানুষ। কয়েকজন বন্ধু প্ররোচনা দিল, বলল, থেকে যাও। সে সময় আমেরিকা স্বর্গ। থেকে যাওয়াও সহজ ব্যাপার ছিল। কিন্তু আমি ফিরে এলাম। ফিরে এসে ঠিক করলাম, আমেরিকা নয়, কানাডা যাব। সবাইকে নিয়ে যাব। সব ঠিক হওয়ার পর জেসমিন এবং আমার ছোট্ট অরিত্রি বেঁকে বসল বিদেশ যাবে না। তত দিনে আমি দুবার চাকরি বদল করেছি। মুন্নু ছেড়ে ইউনিট্রেন্ড নামের একটা অ্যাডভারটাইজিং এজেন্সিতে জয়েন করেছি। তখন খুব রমরমা ব্যবসা ছিল ইউনিট্রেন্ডের। জামাল ভাই চাকরিটা করে দিয়েছিলেন। নতুন চাকরিতেও সন্তষ্ট হতে পারলাম না তেমন। বেতন যা পাই, তাতে চলে না। জমানো টাকা খরচ করি। ছেলেমেয়ে দুজনই ইংলিশ মিডিয়ামে পড়ে। অনেক খরচ। তত দিনে মুন্নুর চাকরি ছেড়েছি। ইনকাম অর্ধেকে নেমে গেছে। তাই বিদেশে চলে যাব। আগেই অ্যাপ্লাই করে রেখেছি। বিদেশে না জানি কত সুখ, কত টাকা-পয়সা! জেসমিন তার চাকরি ছেড়ে যেতে ইচ্ছুক নয়। অরিত্রি বলল, সে তার স্কুলের বন্ধুদের রেখে কোথাও যেতে চায় না। তখন সে স্কলাস্টিকায় থার্ড গ্রেডে পড়ে। অর্ক চলে যাওয়ার জন্য এক পায়ে খাড়া। সে ইন্টারনেট ঘেঁটে কানাডার সবকিছু জেনে নিয়েছে। একটা সংসার উপড়ে আরেকবার নতুন করে সংসার পাতা কত কঠিন, সেটা টের পেলাম কানাডায় এসে। ভিন্ন পরিবেশ, ভিন্ন ভাষা, ভিন্ন কালচার। (চলবে)
 

কমেন্ট বক্স