Thikana News
০১ নভেম্বর ২০২৫
  1. ই-পেপার
  2. চলতি সংখ্যা
  3. বিশেষ সংখ্যা
  4. প্রধান সংবাদ
  5. আমেরিকার অন্দরে
  6. বিশ্বচরাচর
আমেরিকা শনিবার, ০১ নভেম্বর ২০২৫





 

অযাচিত যুদ্ধে ক্ষতির পাল্লা বরাবরই ভারী হয়

অযাচিত যুদ্ধে ক্ষতির পাল্লা বরাবরই ভারী হয়





 
ঐতিহাসিক তথ্য-উপাত্ত অনুসারে, যুক্তরাষ্ট্রে ইতিহাসে সর্বাপেক্ষা কনিষ্ঠ প্রেসিডেন্ট ছিলেন জন এফ কেনেডি। মাত্র ৪৩ বছর বয়সে ৩৫তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর পারমাণবিক পরীক্ষা-নিষিদ্ধ (নিউক্লিয়ার টেস্ট-ব্যান) এবং প্রগতির স্বার্থে বন্ধুত্ব (অ্যালায়েন্স ফর প্রগ্রেস) চুক্তির জন্য এফ কেনেডি যুক্তরাষ্ট্রসহ সারা বিশ্বে ব্যাপক প্রশংসা কুড়িয়েছিলেন। সৃজনশীল প্রতিভা, গতিশীল নেতৃত্ব এবং উদ্ভাবনী শক্তিবলে (১৯৬১ সালের ২০ জানুয়ারি থেকে ১৯৬৩ সালের ২২ নভেম্বর কার্যকালে) কেনেডি যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসের অন্যতম সর্বাপেক্ষা করিতকর্মা এবং দূরদর্শী রাষ্ট্রনায়কের মর্যাদায় অভিষিক্ত হন।

এদিকে ১৯৬০ এর দশকে সোভিয়েত ইউনিয়নও বিশ্বের অন্যতম পরাশক্তির মর্যাদায় অভিষিক্ত হয় এবং সর্বক্ষেত্রে আমেরিকার সমকক্ষতার ভাগীদার হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। অনেক যুদ্ধ-বিশ্লেষকের ভাষায়, স্নায়ুযুদ্ধের সেই চরম যুগসন্ধিক্ষণে আমেরিকার সামরিক শ্রেষ্ঠত্ব বজায় রাখা অনিবার্য ও অপরিহার্য হয়ে ওঠে। তাই যুক্তরাষ্ট্রকে রীতিমতো অপ্রতিদ্বন্দ্বী ও অবিসংবাদিত রাজাধিরাজ হিসেবে জাহির করার স্বার্থেই অভ্যন্তরীণ চাপের মুখে প্রেসিডেন্ট কেনেডি ভিয়েতনামে আমেরিকার সামরিক অভিযানে সম্মতি দিয়েছিলেন। অতঃপর আকাশ থেকে হাজার হাজার টন বোমা বর্ষণে আঙ্কেল হে তথা হোচিমিনের নেতৃত্বাধীন ভিয়েতনামের শস্যক্ষেত্র, মাঠ-ঘাট, পথ-প্রান্তর বড় বড় দিঘি-নালা-খালে পরিণত করা হয়। ১৯৬৩ সালের ২২ নভেম্বর টেক্সাসের ডালাসে গুপ্তঘাতকের গুলিতে প্রেসিডেন্ট এফ কেনেডির জীবনাবসান ঘটলেও প্রায় দুই দশক ভিয়েতনামে আমেরিকার বর্বরোচিত অভিযান অব্যাহত থাকে। যাহোক, বহুসংখ্যক প্রাণহানি, রাশি রাশি সম্পদের অপচয় শেষে কলঙ্কের কালিমাযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের শূন্য হাতে ভিয়েতনাম ত্যাগের কাহিনি বিশ্ববাসীর অজানা নয়।

ইরানের নির্বাসিত ধর্মীয় নেতা খোমেনির নেতৃত্বে দোর্দণ্ড প্রতাপশালী শাহ বংশের কয়েক শতকের শৌর্যবীর্য ও রাজত্বের অবসান যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে নতুন অধ্যায়ের জন্ম দিয়েছিল। রেজা শাহ পাহলভির পলায়নের পর ইরানের মার্কিন দূতাবাসের সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীকে দীর্ঘকাল আটক করে রেখেছিল খোমেনির নির্দেশিত ইরানের বিপ্লবী সরকার। সারা বিশ্বের অনুরোধ-উপরোধ, আন্তজার্তিক নীতিমালা এবং গির্জায় প্রার্থনা খোমেনি এবং ইরানের বিপ্লবী সরকারের হঠকারী সিদ্ধান্তের নিকট হার মেনেছিল। সেই বর্ণনাতীত ভীতি-বিহ্বল এবং শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতি আমেরিকানদের অন্তরে দীর্ঘস্থায়ী দগদগে ক্ষত সৃষ্টি করেছিল। জর্জ ওয়াকার বুশ (সিনিয়র বুশ) যুক্তরাষ্ট্রের ৪০তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর ইরানের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ গ্রহণের তৎপরতা চালান বলে সর্বসাধারণের বিশ্বাস। ওয়াকার বুশ তার ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিতি ইরাকের বার্থ পার্টির প্রধান ও প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসেনকে ইরানের বিরুদ্ধে অযাচিত যুদ্ধে লেলিয়ে দেন বলে জনশ্রুতি রয়েছে। ইরানকে আর্থিকভাবে দুর্বল করার লক্ষ্যে আমেরিকার সক্রিয় পৃষ্ঠপোষকতা ও সহায়তায় সাদ্দাম প্রায় এক দশক যুদ্ধ করেও ইরানের এক ইঞ্চি জায়গা দখল করতে পারেননি। উল্টো সর্বস্ব খোয়ানোর পর ইরাক একতরফা যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করে। ফলে ওয়াকার বুশের সঙ্গে সাদ্দামের সম্পর্কের চরম অবনতি ঘটে এবং সিনিয়র বুশ মধ্যপ্রাচ্য সফরকালে প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম তাকে হত্যার ষড়যন্ত্র করেছিলেন বলে খবর পাওয়া যায়। পরবর্তী সময়ে বুশ পরিবার সাদ্দামের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ গ্রহণ এবং তাকে গদিচ্যুত করার পরিকল্পনায় আদাজল খেয়ে লাগে।

যাহোক, ২০০০ সালের নির্বাচনে ওয়াকার বুশের জ্যেষ্ঠ পুত্র জর্জ বুশ (প্রচলিত কানাঘুষা মোতাবেক কনিষ্ঠ পুত্র ফ্লোরিডার গভর্নর জেব বুশ এবং যান্ত্রিক ত্রুটির সুবাদে) রিপাবলিকান দলীয় প্রার্থী হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের ৪২তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। এদিকে মুসলিম বিশ্বের কলঙ্ক ওসামা বিন লাদেনের নেতৃত্বাধীন আল-কায়েদার কিছুসংখ্যক সদস্য ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার, পেন্টাগন ও পেনসিলভানিয়ায় বিমান হামলা চালালে গণরোষ উথলে ওঠে। ফলে সাদ্দামের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ গ্রহণের সুবর্ণ সুযোগ পেয়ে যান প্রেসিডেন্ট বুশ। তাই হাউস ও কংগ্রেসকে পাশ কাটিয়ে একক ক্ষমতাবলে প্রেসিডেন্ট বুশ ইরাক ও আফগানিস্তানে সশস্ত্র অভিযান পরিচালনার নির্দেশ দেন। খোঁড়া যুক্তি হিসেবে প্রেসিডেন্ট বুশ ইরাকের বিরুদ্ধে বিপুল পরিমাণ ইউরেনিয়াম মজুদের দাবি উত্থাপন করেন। পক্ষান্তরে জাতিসংঘ তদন্ত কমিটির অনুসন্ধানে প্রেসিডেন্ট বুশের দাবি সর্বৈব মিথ্যা প্রতিপন্ন হয়। ফলে দেশের অভ্যন্তরে এবং বহির্বিশ্বে বুশের কর্মকাণ্ডের সমালোচনার ঝড় ওঠে। এ ছাড়া বুশ প্রশাসনের অবহেলায় প্রাণঘাতী ক্যাটরিনা ঘূর্ণিঝড়ে একটি বৃদ্ধাশ্রমে ৪ শতাধিক পঙ্গু আমেরিকানের ভবলীলা সাঙ্গ হওয়ার পর বুশের জনপ্রিয়তা তলানিতে নেমে আসে।

হৃদয়বিদারক ১১ সেপ্টেম্বর : প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ এবং পার্ল হার্বার হামলার পর ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্র সর্বাপেক্ষা ভয়াবহ হামলার শিকার হয়েছিল। সৌদি আরবের ধনকুবের ওসামা বিন লাদেনকে যুক্তরাষ্ট্র নিজের স্বার্থেই বিশেষভাবে প্রশিক্ষণ দান করেছিল এবং স্বার্থ হাসিলের পর উচ্ছিষ্টজ্ঞানে ছুড়ে ফেলে দিয়েছিল বলে পত্রিকান্তরে প্রকাশ। ফলে প্রতিশোধপরায়ণ বিন লাদেন কোটি কোটি অর্থ ব্যয়ে ইসলামের মৌলিক আদর্শচ্যুত কিছুসংখ্যক বিপথগামী ও অনটনক্লিষ্ট জনগোষ্ঠীকে উন্নতমানের সামরিক প্রশিক্ষণ এবং আধুনিক আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে আল-কায়েদা বাহিনী গঠন করেছিলেন। ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার সকাল পৌনে নয়টায় আল-কায়েদার ১৯ জন সদস্য আমেরিকান এয়ারলাইন্সের ২০ হাজার গ্যালন জেট জ্বালানি ভর্তি চারটি বাণিজ্য বিমান ও একটি বোয়িং ৭৬৭ ছিনতাই করে নিউইয়র্ক সিটির ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার এবং ওয়াশিংটন ডিসি ও পেনসিলভানিয়ায় হামলা চালিয়েছিল। ওই হামলায় নিউইয়র্ক, পেন্টাগন ও পেনসিলভানিয়ায় ৩ সহস্রাধিক লোকের প্রাণহানি ছাড়াও সহায়-সম্পদের অবর্ণনীয় ক্ষতি সাধিত হয়েছিল। ১১০ তলাবিশিষ্ট ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার ধূলিসাৎ হওয়ায় লোয়ার ম্যানহাটনের বিস্তীর্ণ এলাকা ছাই-ভস্ম ও ধ্বংসাবশেষে ঢাকা পড়েছিল, জনদুর্ভোগ তুঙ্গে উঠেছিল এবং পরিবেশের ভারসাম্য চরমভাবে ব্যাহত হয়েছিল। আবার আমেরিকান এয়ারলাইন্স ফ্লাইট ৭৭ বিমানটি ওয়াশিংটন ডিসির সামান্য দূরবর্তী ভার্জিনিয়ার আর্লিংটনস্থ পেন্টাগন সামরিক সদর দপ্তরের প্রতিরক্ষা ভবনে আঘাত হানায় ভবনটি ছাইভস্মে পরিণত হলো। অধিকন্তু সামরিক বাহিনীর ১২৫ সদস্য ও বেসামরিক জনগণ এবং আমেরিকান এয়ারলাইন্স ফ্লাইট ৭৭ এর ৬৪ জন আরোহী সকলেরই ভবলীলা সাঙ্গ হলো। নিউজার্সির নিউ আর্ক লিবার্টি ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট থেকে ক্যালিফোর্নিয়ার অভিমুখে ছেড়ে যাওয়া ইউনাইটেড ফ্লাইট ৯৩-কে নামক চতুর্থ বিমানটি সকাল ১০টা ১০ মিনিটে ওয়েস্টার্ন পেনসিলভানিয়ার সানকসভিলের নিকট একটি গ্রামীণ মাঠে ভূপাতিত হয় এবং ফ্লাইট ৯৩ এর ৪৪ জন আরোহীর জীবনলীলার অবসান ঘটে।

ইরাক ও আফগানিস্তানে সামরিক অভিযান : হামলার পর রাত নয়টায় ওভাল অফিস থেকে জাতির উদ্দেশে প্রদত্ত ভাষণে প্রেসিডেন্ট বুশ তাৎক্ষণিকভাবে হোমল্যান্ড সিকিউরিটি ডিপার্টমেন্ট গঠন এবং আফগানিস্তান ও ইরাকের সাদ্দাম হোসেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ পরিচালনা ও সন্ত্রাস নির্মূলের ঘোষণা দেন। তালেবান শাসন ও ওসামা বিন লাদেনের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের মূলোচ্ছেদের খাতিরে অপারেশন এনডিউরিং ফ্রিডমের আওতায় ৭ অক্টোবর আফগানিস্তানে ও ইরাকে সামরিক অভিযান শুরু করা হয়। অভিযানের দুই মাসের মধ্যে আফগানিস্তানে মোল্লা ওমর সরকারের পতন ঘটলেও কার্যত তালেবানদের বিরুদ্ধে কোয়ালিশন বাহিনীর লড়াই ২০১৬ সাল পর্যন্ত অব্যাহত থাকে। আর আমেরিকার এই ব্যর্থ অভিযানের বিষক্রিয়ায় আফগানিস্তানের পরিবেশগত ভারসাম্য চরমভাবে ব্যাহত হয়েছে। অনবদ্য কারণে অভিযান-পরবর্তী হরহামেশা ভূমিকম্পসহ নানাবিধ প্রাকৃতিক দুর্যোগে অদ্যাবধি হাজার হাজার নিরীহ আফগানকে অনাকাক্সিক্ষত মৃত্যুকে আলিঙ্গন করতে হচ্ছে।

এদিকে মোটা অঙ্কের উৎকোচ এবং মিথ্যা প্রতিশ্রুতির জালে জড়িয়ে সাদ্দামের অনুগত বাহিনীর পদস্থ সেনা কর্মকর্তারা বিশ্বাসঘাতকতা করে। ফলে দীর্ঘ লড়াইয়ের পর সাদ্দাম আটক হন এবং আমেরিকার আশীর্বাদপুষ্ট ইরাক সরকার সাদ্দামকে ফাঁসিকাষ্ঠে ঝুলিয়ে তার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করে। যাহোক, ২০০৭ সালে প্রেসিডেন্ট বুশ সদম্ভে ইরাক যুদ্ধের সমাপ্তি ঘোষণা করেন এবং ১০০% সাফল্য দাবি করেন, যা ছিল সর্বৈব ভিত্তিহীন। প্রকৃত প্রস্তাবে মোল্লা ওমরের শাসনের পর আফগানিস্তানে চোরাগোপ্তা হামলা এবং ভ্রাতৃঘাতী সংঘর্ষ ২০১৬ সাল এবং সাদ্দাম সরকারের পতনের পর ইরাকে ভ্রাতৃঘাতী সংঘর্ষ ২০২৫ সাল পর্যন্ত অব্যাহত ছিল। আর সুযোগ বুঝে তালেবান সম্প্রদায় আবারও আফগানিস্তানের মসনদ দখল করেছে। এদিকে ২০১১ সালের ২ মে পাকিস্তানের অ্যাবোটাবাদের একটি গোপন আস্তানায় আমেরিকান বাহিনী অভিযান চালিয়ে লাদেনকে হত্যা করে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের বর্ণনা অনুসারে, বুশের হঠকারী সিদ্ধান্ত এবং একগুঁয়েমি ২০০৮ সালে রিপাবলিকানদের ভরাডুবি ঘটিয়েছে এবং যুক্তরাষ্ট্রের ২৩৮ বছরের ইতিহাসে অধিকারবঞ্চিত জনগোষ্ঠীর সুযোগ্য উত্তরসূরি বারাক ওবামাকে নির্বাচনী বৈতরণি সাফল্যের সঙ্গে উতরাতে বলিষ্ঠ ভূমিকা রেখেছিল।

ভুলে গেলে চলবে না : ৪৫তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে ডোনাল্ড ট্রাম্পের কার্যকালের সিংহভাগ কেটেছে ২০১৬ সালের নির্বাচনে রাশিয়ার অযাচিত হস্তক্ষেপ, যৌন কেলেঙ্কারির অভিযোগ উত্থাপনকারী পর্ন তারকা স্টর্মি ড্যানিয়েলকে মুখ বন্ধ রাখার শর্তে ব্যক্তিগত আইনজীবী কোহেনের মাধ্যমে গোপনে অর্থ প্রদান এবং করপোরেট কর ফাঁকিসহ বিভিন্ন অভিযোগের ঠেলা সামলাতে। ২০২১ থেকে ২০২৪ সালের বৃহত্তর অংশ ৪৫তম প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কেটেছে আদালতের কাঠগড়ায় ২০২১ সালের ৬ জানুয়ারির ক্যাপিটাল দাঙ্গাসহ একাধিক ফৌজদারি মামলার আসামি হিসেবে। ড্যানিয়েল স্টর্মি হাশ মানি মামলায় ট্রাম্পের ব্যক্তিগত আইনজীবী কোহেনকে আইনি সনদ খোয়ানো ছাড়াও তিন বছরের কারাদণ্ড ভোগ করতে হয়েছে। আর স্বয়ং ট্রাম্পও ফৌজদারি মামলায় ৪৪ কাউন্টে দোষী সাব্যস্ত হয়ে শাস্তি ভোগের জন্য প্রহর গুনছিলেন। ২০২৪ সালের নির্বাচনে ভাগ্য সুপ্রসন্ন না হলে ট্রাম্পের বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে কারও অজানা থাকার কথা নয়।

যাহোক, আমেরিকার নেতৃত্বে বিশ্বের পরাশক্তিগুলো পারমাণবিক বোমার আবিষ্কারক ইহুদি বিজ্ঞানী আইনস্টাইনের ঋণ কড়ায়-গন্ডায় পরিশোধ করে। মিত্র শক্তির অধীশ্বররা ১৯৪৭ সাল থেকে পশ্চিম উপকূল ও গাজা উপত্যকাসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিস্তীর্ণ এলাকার স্থায়ী মুসলিম বাসিন্দা বা ফিলিস্তিনিদের রাতারাতি বাস্তুভিটা থেকে উৎখাত করে এবং গোটা বিশ্বের আনাচ-কানাচ থেকে কুড়িয়ে আনা ইহুদিদের সেখানে পুনর্বাসন-পূর্বক ইসরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করে। ইসরায়েলকে রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার লগ্ন থেকে পরাশক্তিগুলো একে সর্বাধুনিক অস্ত্রশস্ত্রে মিনি ক্যান্টনমেন্টে সুসজ্জিত করে এবং তামাম মধ্যপ্রাচ্যের ওপর ছড়ি ঘোরাতে থাকে। পরাশক্তিগুলোর সশস্ত্র সহযোগিতায় ও আমেরিকার নেতৃত্বে ইসরায়েল অধিকৃত গাজা উপত্যকা এবং পশ্চিম উপকূলীয় মুক্তিকামী ফিলিস্তিনি জনতা এবং মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে একাধিকবার আকস্মিক হামলা চালিয়েছে। তবে এবারের মতো ইসরায়েলের যুদ্ধবাজ নেতানিয়াহুর সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধে ট্রাম্পের ইরান আক্রমণের দ্বিতীয় নজির মধ্যপ্রাচ্যের বিষফোড়া ইসরায়েলের বিগত ৭০ বছরের ইতিহাসে খুঁজে পাওয়া যাবে না।

হে রাজাধিরাজ! ভারতীয় ইতিহাসের অশ্বমেধযজ্ঞ প্রথার বিলুপ্তি ঘটেছে সহস্র বছর আগে। আর ১৯৪৫ সালের আগস্টে হিরোশিমা ও নাগাসাকিতে নিক্ষিপ্ত পারমাণবিক বোমার তেজস্ক্রিয়ায় মুহূর্তে লাখ লাখ লোকের প্রাণহানি ছাড়াও কোটি কোটি নারী-পুরুষ চিরতরে প্রজনন-ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছে। এমনকি অদ্যাবধি হিরোশিমা, নাগাসাকি এবং পার্শ্ববর্তী এলাকায় লাখ লাখ বিকলাঙ্গ, শারীরিক ও মানসিক সমস্যাগ্রস্ত শিশু জন্ম নেওয়ার সংবাদ মিলছে প্রচারমাধ্যমে। সবিশেষ প্রণিধানযোগ্য, ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র পাখির ঠোঁট থেকে নিক্ষিপ্ত অতি সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম কণিকার আঘাতে ৫৭০ খ্রিষ্টাব্দে পবিত্র কাবাঘর ধ্বংসের উদ্দেশ্যে পরিচালিত বাদশাহ আবরাহার বিশাল হস্তীবাহিনী খড়কুটোয় পরিণত হয়েছিল। মুসলমান ছাড়া বিশ্বের অন্য ধর্মাবলম্বীদের নিকট ওই ঘটনা ছিল নেহাত কল্পকাহিনি বা উদ্ভট উদ্ভাবন বা পুরোপুরি অবিশ্বাস্য। অথচ বিগত বছরগুলোতে করোনাভাইরাসে সারা বিশ্বে ২০০ কোটি লোক আক্রান্ত এবং সাড়ে ৭ কোটি লোকের প্রাণহানির পর বিশ্ববাসী আবরাহার হস্তীবাহিনীর ধ্বংসের কাহিনি বিনা বাক্য ব্যয়ে গিলতে বাধ্য হয়েছে। আবার বিশ্ব পরাশক্তির অদ্বিতীয় অধীশ্বর যুুক্তরাষ্ট্রে প্রাণঘাতী করোনায় কয়েক কোটি আমেরিকান আক্রান্ত এবং প্রায় দেড় কোটি মারা যাওয়ার পর গোটা চিকিৎসাব্যবস্থার অসহায়ত্ব আমেরিকানরা সহজে ভুলবে না। তাই নিত্য-নতুন যুদ্ধের উন্মাদনায় পরিবেশের ভারসাম্য অধিকতর বিনষ্ট এবং বাতাসে তেজস্ক্রিয়তার পরিমাণ আরও বাড়ানো হলে নতুন প্রাণসংহারী মহামারির আবির্ভাব ঠেকাবে কে? সেই অনাকাক্সিক্ষত ও ভয়াবহ মহামারিতে কোটি কোটি মানুষ মারা গেলে তার দায়ভার কার ঘাড়ে বর্তাবে। যাহোক, প্রবাদ-প্রবচন অনুসারে, নিঃস্বর হারানোর কিছু নেই। পক্ষান্তরে বিত্তশালীর যথাসর্বস্ব খোয়া যাওয়ার আশঙ্কা সর্বদা থাকে। তাই সাধু সাবধান!
লেখক : সহযোগী সম্পাদক, ঠিকানা, নিউইয়র্ক।
 

কমেন্ট বক্স