Thikana News
৩১ অক্টোবর ২০২৫
  1. ই-পেপার
  2. চলতি সংখ্যা
  3. বিশেষ সংখ্যা
  4. প্রধান সংবাদ
  5. আমেরিকার অন্দরে
  6. বিশ্বচরাচর
আমেরিকা শুক্রবার, ৩১ অক্টোবর ২০২৫


মিথ্যা প্রলোভনে বাড়ি ক্রয় ♦ ভালো নেই বহু পরিবার♦ ফুড স্ট্যাম্পই ভরসা

বাফেলো-নায়াগ্রায় ‘ভুল’ বসতি

বাফেলো-নায়াগ্রায় ‘ভুল’ বসতি



 
ইবিটি বা ফুডস্ট্যাম্প দিয়ে বাজার-সদায় কিনবেন। সপ্তাহে দুই দিন কাজ করবেন। প্রয়োজনে উবার বা লিফট চালাবেন। এরপর পায়ের ওপর পা তুলে খাবেন। আরাম আর আরাম। নিউইয়র্ক সিটির কুইন্সের বাসিন্দা ফজলুর রহমান শিমুলকে এসব প্রলোভন দিয়ে বাফেলো নিয়ে গিয়েছিলেন তার একসময়ের ঘনিষ্ঠ বন্ধু আশরাফ মৃধা। পেশায় রিয়েলটর এই বন্ধু নিউইয়র্ক সিটিতে একসময় পেশায় ক্যাবি ছিলেন। তিনিও এমন প্রলোভনে পড়ে সিটি ছেড়ে বসতি গড়েছিলেন বাফেলোতে। এমন এখনই প্রলোভন দিয়ে ‘মানুষ বাগিয়ে’ তিনি বাফেলোতে বসতি গড়ান। 
আশরাফ মৃধা হোক, আর বসতি গড়া ফজলুর রহমান শিমুল হোক, আসলে তারা কেউই ভালো নেই। ব্যয়বহুল হলেও নিউইয়র্ক সিটিতে তারা ভালো ছিলেন। গত ২৯-৩১ আগস্ট এই প্রতিবেদক নিউইয়র্ক সিটি থেকে প্রায় ৪০০ মাইল দূরের নায়াগ্রা ও বাফেলো শহরে গিয়েছিলেন সেখানে অনুষ্ঠিত ফোবানা সম্মেলনে। সেখানে কথা হয় অনেকের সাথে। তার মধ্যে ছিলেন আশরাফ মৃধা ও ফজলুর রহমান শিমুল। এছাড়াও কথা হয় বাফেলো শহরের এলমহার্স্টের বাসিন্দা নূরুল ইসলাম এবং নায়াগ্রা শহরের বাসিন্দা জসিম উদ্দিনের সাথে। সবাই শুনিয়েছেন আক্ষেপের কথা। আবার যারা প্রলোভন দিয়ে নিউইয়র্ক সিটি ও অন্যান্য স্টেট দিয়ে মানুষ বাগিয়ে আনছেন, তারা বলছেন- খুব ভালো আছি। বাফেলো ও নায়াগ্রায় সুখ আর সুখ। আর সুখের অন্বেষণে বাফেলো ও নায়াগ্রায় বসতি গড়েছেন গত এক দশকে প্রায় ৭০ হাজার বাংলাদেশি। কিন্তু তাদের অনেকেই ভালো নেই। যারা ফেডারেল, স্টেট ও সিটি এবং করপোরেট অফিসে চাকরি করছেন তারা ভালো আছেন। আর ভালো আছেন যারা ব্যবসা করছেন। তবে সব ব্যবসায়ী যে ভালো আছেন তা নয়। বাফেলো ও নায়াগ্রার ব্যবসা পর্যটকনির্ভর। আর কিছু লোকের ব্যবসা রিয়েল এস্টেট। কিন্তু অনেক রিয়েলটরের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে, একটি অংশ বাড়ি বিক্রির স্ক্যামে জড়িত। তারা উন্নত জীবনযাপনের কথা বলে স্বল্পদামে বাড়ি কেনার প্রলোভন দিয়ে অনেক প্রবাসীকে বাফেলো নিয়ে যাচ্ছেন। তাদের স্বল্পদামে বাড়ি ও উন্নত জীবনযাপনের ভিডিও ভøগ দেখিয়ে প্রভাবিত করছেন। ব্লগ তৈরির জন্য কিছু রিয়েল এস্টেট হাতে রাখছেন ইউটিউবার ও কতিপয় সাংবাদিককে। এসব ভøগার ও সাংবাদিকরা প্রতিনিয়ত বাফেলো ও নায়াগ্রায় সস্তায় বিভিন্ন বাড়ি বিক্রি তুলে ধরছেন। মানুষের সাক্ষাতকার নিচ্ছেন। যারা সাক্ষাতকার দিচ্ছেন, তারাও স্ক্যামের অংশ বলে অভিযোগ রয়েছে। 
নিউইয়র্ক সিটির জ্যাকসন হাইটসে দীর্ঘদিন বসবাস করা আহমেদ আলী তিন বছর আগে সপরিবারে বাফেলো চলে গিয়েছিলেন। দেরীতে হলেও ভুল বুঝতে পেরে আবার নিউইয়র্কে ফিরে এসেছেন। তিনি এ প্রতিবেদককে বলেন, বাফেলোতে কাজের খুব সংকট। সেখানকার বহু পরিবার ভালো নেই। তারা ফুডস্ট্যাম্পের ওপর নির্ভরশীল। ইবিটি বা ফুডস্ট্যাম্পের ওপর নির্ভর করে তো জীবন চলে না। তিনি বলেন, নিউইয়র্ক সিটি ছেড়ে বাফেলোতে মুভ হওয়াটা ভুল সিদ্ধান্ত ছিল। 
এখন কী করছেন জানতে চাইলে আহমেদ আলী বলেন, আগেও উবার চালাতাম। এখনো চালাই। এখানে যেমন ব্যয়, তেমনি আয়ও। কিন্তু মানসিক চাপ নেই। তিনি মন্তব্য করেন, বাফেলোতে ভুল বসতি গড়েছিলাম। মানুষের ভালো আয় না থাকলে মনের ওপর চাপ বাড়ে। মনমানসিকতাও ছোট হয়ে যায়। 
নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক বাফেলো মেইন স্ট্রিটের বাসিন্দা বলেন, বাফেলো সিটি জেগে উঠতে আরো ৫০ বছর লাগবে। তাও উঠবে কীনা সন্দেহ আছে। মানুষ অভাবের সাথে যুদ্ধ করে টিকে আছে। কেউ স্বীকার করবেন, আবার করবেন না। তাই বাফেলো শহর ছেড়ে দেবেন বলে জানান তিনি। 
বাফেলো শহরে সবাই যে খারাপ আছে তা নয়। অনেকেই ভালো আছেন। আবাসন ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা গড়ে উঠলেও এখনো কাক্সিক্ষত কর্মসংস্থান গড়ে ওঠেনি। হালাল মার্কেট, হালাল রেস্তোরাঁ, অনেক মসজিদ রয়েছে সেখানে। অপরাধ প্রবণতাও ৭০ শতাংশ থেকে নেমে ৩০ শতাংশে এসেছে। কিন্তু ভালো কর্মসংস্থান না থাকায় মানুষের মনে শান্তি নেই। 
বাফেলো ও নায়াগ্রা পর্যটকনির্ভর হওয়ায় নিত্যপণ্যের দাম নিউইয়র্ক সিটির চেয়ে বেশি। নিউইয়র্ক সিটি থেকে সদ্য বাফেলোতে মুভ হওয়া জ্যাকসন হাইটসের একজন ব্যবসায়ী জানান, বাজার খরচ প্রায় ২৫ শতাংশ বেশী। বিভিন্ন রেস্টুরেন্টে খাবারের দাম দ্বিগুণ, কোথাও কোথাও তিনগুণ বেশী। বাফেলোর জনপ্রিয় একটি রেস্টুরেন্টে গিয়ে দেখা গেছে, সেখানে একজন কাস্টমারও নেই। তবে দু-একজনকে দেখা গেল খাবার টু-গো করতে। 
ফোবানায় অংশ নিতে নিউইয়র্ক থেকে যাওয়া একজন ব্যবসায়ী জানান, তিনি রাতে সপরিবারে একটি রেস্টুরেন্ট খেয়েছেন। তাকে বিল পরিশোধ করতে হয়েছে ৩২০ ডলার। নায়াগ্রা ফলসের কাছে একটি ফাস্টফুডের দোকানে এক প্লেট পানিপুড়ি কিনেছেন ২৮ ডলারে। দুটি সিঙ্গারা ও একটি জিনজার অ্যাল নিয়েছে প্রায় ১১ ডলার। তিনি বলেন, এখানকার ব্যবসায়ীরা কম বিক্রি করে বেশী লাভ করেন। এভাবে একটা শহর বেশীদিন চলতে পারে না। 
বাফেলোর গোড়াপত্তন হয় ১৭৮৯ সালে। ১৮২৫ সালের দিকে ইরি ক্যানেল নামে নদীপথ চালু হওয়ার পর এ শহর জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। ১৯০০ সালের মধ্যে বাফেলো আমেরিকার অষ্টম বৃহৎ শহরে পরিণত হয়। আটলান্টিক মহাসাগরে যাওয়ার নতুন একটি সমুদ্রপথ চালুর পর থেকে বাফেলো বাণিজ্যিকভাবে গুরুত্বহীন হয়ে পড়ে। ১৯৯০ সালের দিকে মানুষ কর্মসংস্থানের অভাবে বাফেলো ছাড়তে শুরু করে। ফলে অনেক পরিত্যক্ত বাড়ি কম দামে বিক্রি শুরু হয়। এই সুযোগে বাঙালি অভিবাসীরা বাফেলো শহরে আসতে শুরু করে। নিউইয়র্কের কয়েক মাসের বাড়ি ভাড়া দিয়ে একসময় বাফেলো শহরে একটি বাড়ি কেনা যেত। কম খরচে সেরা আবাসনের কারণে অনেকের কাছে বাফেলো জাদুর শহর হিসেবে পরিচিতি পায়। বাফেলোতে অনেকের একাধিক বাড়ি রয়েছে। এমনকি কারও কারও ৫০টিরও বেশি বাড়ি রয়েছে। প্রতিবছরই বাড়ির দাম বাড়ছে। আর লাভ বুঝে বিক্রি করছেন তারা। তবে প্রলোভনের বিষয়টিও প্রাধান্য পায় এই বেঁচা-বিক্রিতে। 
 

কমেন্ট বক্স