Thikana News
৩১ অক্টোবর ২০২৫
  1. ই-পেপার
  2. চলতি সংখ্যা
  3. বিশেষ সংখ্যা
  4. প্রধান সংবাদ
  5. আমেরিকার অন্দরে
  6. বিশ্বচরাচর
আমেরিকা শুক্রবার, ৩১ অক্টোবর ২০২৫


রপ্তানি আয় বাড়াতে পারে এআই ও ডিজিটাল কমার্স

প্রযুক্তিবিদ দিদারুল আলম 
রপ্তানি আয় বাড়াতে পারে এআই ও ডিজিটাল কমার্স



 
আব্দুল্লাহ আল ফারুক : বাংলাদেশের অর্থনীতি এখন এক পরিবর্তনশীল ধাপে দাঁড়িয়ে। তৈরি পোশাকের ওপর নির্ভরশীল রপ্তানিকে বহুমুখী করতে হলে সামনে এগোতে হবে ডিজিটাল কমার্স ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই)- এর সমন্বিত ব্যবহারে। সঠিক নীতি, প্রযুক্তি ও প্রস্তুতি থাকলে এর মাধ্যমে শুধু রপ্তানি নয়, কর্মসংস্থান ও জিডিপি, সব ক্ষেত্রেই ব্যাপক ইতিবাচক প্রভাব তৈরি করা সম্ভব। এই প্রেক্ষাপট নিয়ে সম্প্রতি ঠিকানার মুখোমুখি হয়েছিলেন তথ্যপ্রযুক্তি উদ্যোক্তা ও কৌশলগত টেকনোলজি কনসালট্যান্ট দিদারুল আলম। 
দীর্ঘদিন ধরে তথ্যপ্রযুক্তি খাতে কাজ করছেন দিদারুল আলম। নিজের অভিজ্ঞতা তুলে ধরতে গিয়ে তিনি বলেন, আমি সবসময় চেষ্টা করেছি প্রযুক্তিকে অর্থনীতির সাথে যুক্ত করতে। ২০১৮ সালে জাতীয় ডিজিটাল কমার্স নীতি প্রণয়নে আমি সরাসরি কাজ করেছি। এর ফলে বাংলাদেশ প্রথমবারের মতই ট্রেডের জন্য একটি জাতীয় কাঠামো পেয়েছে। এরপর বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে মার্কেট ইন্টেলিজেন্স প্ল্যাটফর্ম (এমআইপি)-এ স্ট্র্যাটেজিক টেকনোলজি লিড হিসেবে কাজ করেছি। এই প্ল্যাটফর্মে আমরা এসকেইউ লেভেল কস্টিং, এআই কন্টেন্ট জেনারেশন ও বায়ার-সেলার অ্যানালিটিক্স যুক্ত করেছি, যা ইতিমধ্যেই রপ্তানিকারকদের নতুন বাজার ধরতে সহায়তা করছে।
এআই ও ডিজিটাল কমার্স কীভাবে রপ্তানি বাড়াতে সাহায্য করবে জানতে চাইলে দিদারুল আলম বলেন, বাংলাদেশ বছরে প্রায় ৫৫ বিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানি করে, যার ৮০% পোশাক। কিন্তু এআই চালিত ডিজিটাল কমার্স ব্যবহারে চামড়া, জুতা, প্লাস্টিক ও লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং খাতে ২৫-৩০% রপ্তানি প্রবৃদ্ধি সম্ভব। এর মানে অতিরিক্ত ১২-১৫ বিলিয়ন ডলার রপ্তানি। এটি শুধু রপ্তানিই নয়, বরং বছরে অতিরিক্ত ১.৫-২ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি এনে দেবে।
কর্মসংস্থান ও অর্থনীতিতে কেমন ইতিবাচক প্রভাব পড়বে, জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রতি ১ বিলিয়ন ডলার রপ্তানিতে প্রায় ১.৫-২ লাখ নতুন কর্মসংস্থান হয়। তাই ২০৩০ সালের মধ্যে ডিজিটাল কমার্সের মাধ্যমে ২০-৩০ লাখ নতুন কর্মসংস্থান তৈরি হতে পারে। তাছাড়া, ডিজিটাল ক্রেডিট, এলসি ও ডিফার্ড এলসি এসএমই উদ্যোক্তাদের জন্য অর্থায়ন সহজ করবে। ফলে হাজারো ছোট উদ্যোক্তা ব্যাংকিং সাপোর্ট পাবেন। অন্যদিকে, অন্তত ৫ লক্ষ তরুণ-তরুণী ডিজিটাল কমার্স, এআই ও ট্রেড টেকনোলজির নতুন চাকরিতে যুক্ত হতে পারবেন।
এআই এজেন্টদের ভূমিকা সম্পর্কে দিদারুল আলম বলেন, এআই এজেন্ট ভবিষ্যতের ট্রেড অ্যাসিস্ট্যান্ট। তারা ক্রেতা-বিক্রেতার ম্যাচমেকিং করবে, প্রোডাক্ট এসকিইউ ম্যাপিং করবে আন্তর্জাতিক মানে, নতুন ক্রেতা খুঁজে দিতে অটো বায়ার হান্ট চালাবে, মুহূর্তেই কাস্টম অফার তৈরি করবে এবং প্রেডাক্টিভ অ্যানালিটিক্স দিয়ে কোন পণ্যের চাহিদা বাড়বে তা আগে থেকেই জানিয়ে দেবে। তিনি বলেন, প্রত্যেক এসএমই উদ্যোক্তার হাতে যদি ২৪/৭ এমন একটি এআই সহকারী থাকে, তারা বিশ্ববাজারে আলাদা প্রতিযোগিতামূলক শক্তি অর্জন করবে।
বাংলাদেশের ই-ট্রেড রেডিনেস কতটা? তরুণ উদ্যোক্তা দিদারুল আলমের মতে- আমরা এগোচ্ছি, তবে ঘাটতিও আছে। এগুলো হলো- ডিজিটাল অবকাঠামো: শহরে ভালো, কিন্তু গ্রামে সীমিত, লজিস্টিকস: পোর্ট জটও পরিবহন বিলম্ব এখনও সমস্যা, নীতি ও সমন্বয়: কাঠামো আছে, কিন্তু বাস্তবায়নে আরও গতি প্রয়োজন, 
এবং দক্ষতা: এসএমই উদ্যোক্তারা এখনো পুরো সম্ভাবনা ব্যবহার করতে পারছেন না। তবে ইতিবাচক দিক হলো তরুণদের আগ্রহ, সরকারি সহায়তা ও আন্তর্জাতিক অংশীদারদের বিনিয়োগ। সঠিক পদক্ষেপ নিলে আগামী ৫-৭ বছরের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি ই-ট্রেড রেডি দেশ হিসেবে উপস্থাপন করা সম্ভব।
‘ডিজিটাল ট্রেড বাংলাদেশ ২০৩০’-এর ভবিষ্যত নিয়ে আশাবাদী দিদারুল ইসলাম। তিনি মনে করেন- এসএমই প্রতিদিন সকালে এআই-কিউরেটেড লিডস পাবে, এসকেইউ ও কমপ্লায়েন্স মিলিয়ে দেবে এআই এজেন্ট, ডিজিটাল অর্ডারের সাথে সাথে ডিজিটাল এলসি-এর মাধ্যমে অর্থায়ন হবে, শিপমেন্ট হবে এআই ফ্লিট অপ্টিমাইজেশনে, কনটেইনার ট্র্যাক হবে ই-ম্যাপিংয়ের মাধ্যমে এবং আন্তর্জাতিক বাজারে দৃশ্যমানতা আসবে এআই মার্কেটিং থেকে। এভাবে ২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশ অতিরিক্ত ২০-২৫ বিলিয়ন ডলার রপ্তানি, ২% জিডিপি প্রবৃদ্ধি ও কয়েক মিলিয়ন কর্মসংস্থান যোগ করতে পারবে। উল্লেখ্য, দিদারুল আলম একজন তথ্যপ্রযুক্তি উদ্যোক্তা ও কৌশলগত টেকনোলজি কনসালট্যান্ট। তিনি শুটিং স্টার লিমিটেড-এর প্রতিষ্ঠাতা ও সিইও এবং বিট বাইট টেকনোলজি লিমিডেটের চেয়ারম্যান। তিনি জাতীয় ডিজিটাল কমার্স নীতি ২০১৮ প্রণয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন এবং বিশ্বব্যাংক অর্থায়নে মার্কেট ইন্টেলিজেন্স প্ল্যাটফর্ম (এমআইপি)-এর স্ট্র্যাটেজিক টেকনোলজি লিড হিসেবে কাজ করেছেন। তার নেতৃত্বে ডিজিটাল কমার্স, এআই ও দক্ষতা উন্নয়ন কার্যক্রমে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে। 

কমেন্ট বক্স