Thikana News
০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  1. ই-পেপার
  2. চলতি সংখ্যা
  3. বিশেষ সংখ্যা
  4. প্রধান সংবাদ
  5. আমেরিকার অন্দরে
  6. বিশ্বচরাচর
আমেরিকা শুক্রবার, ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫

মুসলমানদের জীবনে ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) এর শাশ্বত আবেদন

মুসলমানদের জীবনে ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) এর শাশ্বত আবেদন
স্বার্থের ঘেরাটোপে আচ্ছাদিত একদিকে গোটা বিশ্বের শান্তিপ্রিয় ও নিরীহ জনগোষ্ঠী নিরতিশয় ক্রান্তিকাল অতিবাহিত করছে, অন্যদিকে শৌর্যবীর্য ও শ্রেষ্ঠত্ব জাহিরের প্রতিযোগিতায় নিয়োজিত পরাশক্তির অধীশ্বররা পারমাণবিক অস্ত্রের সর্বাধুনিকরণের প্রচেষ্টায় নিরবচ্ছিন্ন প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। আবার মধ্যপ্রাচ্যের বিষফোড়া ইসরায়েলি বর্বর বাহিনীর পৈশাচিক হামলায় ৬২ সহস্রাধিক ফিলিস্তিনি ও গাজাবাসীর ভবলীলা সাঙ্গ হলেও বিশ্বে সর্বাপেক্ষা ক্ষমতাধর ব্যক্তি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প শান্তিতে নোবেল পুরস্কার লাভের আশায় গোটা বিশ্ব চষে বেড়াচ্ছেন। এমনকি নিজ দুষ্কর্মের দোসর ও বিশ্বমানবতার জঘন্যতম শত্রু নেতানিয়াহুর বৃহত্তর স্বার্থে ডিসেম্বরে পুনরায় ইরানে অভিযান চালানোর নামে গোটা বিশ্বকে জুজুর ভয় দেখাচ্ছেন। প্রিয় জন্মভূমি বাংলাদেশও নিত্য-নতুন সমস্যার আবর্তে ঘুরপাক খাচ্ছে। পার্শ্ববর্তী দেশের স্বার্থপর নেতৃবৃন্দ এবং দেশের অভ্যন্তরে একটি সম্প্রদায় প্রতিনিয়ত ষড়যন্ত্রের জাল বিস্তার করে দেশকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত সমস্যায় জড়াতে প্রাণান্ত প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে দেশের মোট জনসংখ্যার সিংহভাগ আশা-নিরাশার দোলাচলে দোল খাচ্ছে। কাক্সিক্ষত সংস্কার সিংহভাগ দেশবাসীর কায়মনোবাক্যে আরাধ্য হলেও মসনদ-প্রত্যাশী উচ্চাভিলাষী রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের হঠকারী সিদ্ধান্তের নিকট তা হার মানতে বাধ্য। ব্যক্তি ও দলীয় স্বার্থে অতীতে দেশের সম্পদ লুটের দৃষ্টিগ্রাহ্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেও সম্প্রতি সারা দেশে সুখ-সমৃদ্ধি বইয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতির ফুলঝুড়ি ছুড়ছেন পঞ্চমুখে। তবে বাংলাদেশের জনগণ মূর্খ নয়। আমাদের অতিমাত্রায় দেশদরদি রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের অতীত কর্মকাণ্ড সম্পর্কে তারা কমবেশি সচেতন। আশা রাখব, সহজ-সরল-শান্তিপ্রিয় দেশবাসী মিথ্যা আশ্বাস এবং গালভরা মিথ্যা প্রতিশ্রুতিতে আশ্বস্ত হবেন না। দেশ ও জনগণের বৃহত্তর স্বার্থে তারা নির্বাচনের পূর্বে কাক্সিক্ষত সংস্কারের পক্ষে কার্যকর ভূমিকা রাখবেন। কারণ কায়েমি স্বার্থবাদীরা ব্যক্তি-গোষ্ঠী ও দলীয় স্বার্থে সব ধরনের প্রতিশ্রুতি দিতে সকল ধর্মের পবিত্র গ্রন্থগুলোকে মাথায় নিয়ে সর্বসম্মুখে ওয়াদা করতে সিদ্ধহস্ত। আবার নির্বাচনী বৈতরণি উতরে যাওয়ার পর অতীতে সবকিছুকে তুচ্ছজ্ঞানে একাধিকবার ছুড়ে ফেলার তিক্ত অভিজ্ঞতাও দেশবাসীর রয়েছে। তাই সাধু সাবধান!

যাহোক, ইসলামের মৌলিক আদর্শচ্যুত মুসলিম বিশ্বের অধিকাংশ দেশে ভ্রাতৃঘাতী সংঘর্ষ ও রক্তের জোয়ার বইছে এবং বাংলাদেশের মতো সমস্যা ঢেউ খেলে যাচ্ছে। শ্রুতিকটু শোনালেও বস্তুত, অনেক মুসলমানই ব্যক্তিস্বার্থ, গিবত, লোভ-লালসা ও পাপপঙ্কিলতার সাগরে হাবুডুবু খাচ্ছেন। ফিতনা (ভ্রান্ত মতবাদ) কাতেলের (নরহত্যার) চেয়েও জঘন্য পাপাচার-এটি প্রত্যেক ধর্মপ্রাণ মুসলমান হাড়ে হাড়ে উপলব্ধি করেন। অথচ ব্যক্তি ও দলীয় স্বার্থে আমরা প্রত্যেকেই স্বেচ্ছায় বা অনিচ্ছায় নিত্য-নতুন ফিতনায় ইন্ধন জোগাচ্ছি। এমনকি অনেক ধর্মীয় বিশারদও নিত্য-নতুন মতবাদের মাধ্যমে মুসলমানদের সৌভ্রাতৃত্বে বিভেদ-বিসংবাদ এবং ফাটল সৃষ্টিতে জ্বালানি হিসেবে কাজ করছেন। এমনতর শ্বাসরুদ্ধকর বাস্তবতায় বিশ্ব মুসলিমের জন্য আত্মশুদ্ধি ও ক্ষমার বার্তা নিয়ে বছর ঘুরে আবারও পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) আমাদের দ্বারে কড়া নাড়ছে। উত্তর আমেরিকা-কানাডাসহ অন্যান্য স্টেটের মুসলমানগণ ৪ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে ধর্মীয় ভাবগম্ভীর পরিবেশে পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) উদযাপনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। উল্লেখ্য, সৌভাগ্যমণ্ডিত ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.), ১২ই রবিউল আউয়ালের সঙ্গে সর্বশ্রেষ্ঠ নবী-রাসুল হজরত মুহাম্মদ (সা.) এর ধরাপৃষ্ঠে আগমন এবং ৬৩ বছরের পার্থিব জীবন শেষে ধরাপৃষ্ঠ থেকে বিদায় নেওয়ার সুগভীর সম্পর্ক রয়েছে। সেই আইয়ামে জাহেলিয়াত বা চরম অন্ধকারাচ্ছন্ন ও ব্যভিচারের যুগে ৫৭০ মতান্তরে ৫৭১ খ্রিষ্টাব্দের ১২ই রবিউল আউয়াল রোজ সোমবার পবিত্র মক্কা নগরীর ঐতিহ্যবাহী কুরাইশ পরিবারের হাসেমি বংশে লোকান্তরিত পিতা আবদুল্লাহ এবং মা আমিনার গৃহে অনাথ-এতিম শিশু মুহাম্মদ (সা.) এর জন্ম হয়।

ধর্মীয় বিশেষজ্ঞদের বর্ণনা অনুসারে, আখেরি নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) এর ধরাধামে আগমন ছিল বিশ্ব মুসলিমের অন্যতম পিতা হজরত ইবরাহিম (আ.) এর বিশ্ব প্রতিপালকের দরবারে করজোড়ে মিনতি; হজরত ঈসা (আ.) এর ভবিষ্যদ্বাণী এবং তাঁর জননী বিবি আমিনার স্বপ্ন। ধর্মবিশারদগণ আরও বর্ণনা করেন, বিবি আমিনার গর্ভে সঞ্চারের পর হজরত আদম (আ.) থেকে বিভিন্ন নবীগণ পর্যায়ক্রমে ১০ মাসে আমিনার পর্ণকুটিরে সশরীরে হাজির হন এবং বিবি আমিনাকে সালাম দিয়ে সর্বশ্রেষ্ঠ নবী-রাসুল (সা.) এর আগমন বার্তা ঘোষণা করেন। অনবদ্য কারণে, মুহাম্মদ (সা.) এর ধরাধামে আগমনকে চিরস্মরণীয় ও বরণীয় করে রাখার খাতিরেই বিশ্ব মুসলিম প্রতিবছর ১২ই রবিউল আউয়াল ধর্মীয় নানা আয়োজনে পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) উদযাপন করে থাকেন। অবশ্য অতি সম্প্রতি একশ্রেণির আলেম-ওলামা ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) উদযাপনকে কেন্দ্র করে নানা ধরনের বিতর্কের জন্ম দিচ্ছেন। এই আলেম সম্প্রদায় মুসলিম জনগোষ্ঠীর সৌভ্রাতৃত্বে ফাটল সৃষ্টির নিরবচ্ছিন্ন প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। হে বিশ্ব প্রতিপালক, তুমি আমাদের সঠিক পথের সন্ধান দাও, আমিন!

ইসলামের ইতিহাসের বর্ণনা অনুসারে, বিশেষ পরিস্থিতিতে মহান আল্লাহ হজরত ঈসা (রুহুল্লাহকে) সশরীরে আসমানে উঠিয়ে নেন। এর পরবর্তী প্রায় ৫০০ বছর দুনিয়াতে কোনো প্রেরিত পুরুষের অস্তিত্ব ছিল না। ইত্যবসরে আরব-অনারব নির্বিশেষে বিশ্বের সিংহভাগ আদম সন্তান আল্লাহর একত্ববাদ পরিহার করে পৌত্তলিকতা, চন্দ্র-সূর্য-অগ্নিপূজা, দেব-দেবীর পূজায় আসক্ত এবং ব্যভিচারে লিপ্ত হয়। হজরত ইবরাহিম (আ.) এর পবিত্র স্মৃতিবিজড়িত কাবাগৃহে স্থান পেয়েছিল ৩৬০টি মূর্তি। সামান্য কারণে বা নানা ছলছুতোয় যুদ্ধলিপ্সু আরব গোত্রগুলো যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ত এবং বছরের পর বছর রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ চালিয়ে যেত। আবার অভাব-অনটন এবং দায়গ্রস্ততার অজুহাতে সদ্যোজাত কন্যাসন্তানদের জীবন্ত কবর দিতে আরব বেদুইনরা বিন্দুমাত্র বিচলিত হতো না। ব্যভিচারের নগ্ন দৃষ্টান্তস্বরূপ একই নারীর নিকট একাধিক পুরুষের গমন সামাজিক প্রথাসিদ্ধ ছিল। জুয়া, মদ্যপান, চুরি-ডাকাতি-লুণ্ঠন, সামাজিক ব্যভিচার ও মাৎস্যন্যায় দশা পুরো আরবকে পূর্ণমাত্রায় গ্রাস করায় সেই যুগকে আইয়ামে জাহেলিয়া বা চরম অন্ধকারাচ্ছন্ন যুগ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছিল। আর নবুয়ত লাভের পর হজরত মুহাম্মদ (সা.) অমানুষিক ত্যাগ স্বীকার ও মরণপণ প্রচেষ্টার বিনিময়ে সেই বর্বর-রক্তলিপ্সু-পৌত্তলিক মক্কাবাসীকে ইসলামের সুশীতল ছায়াতলে আশ্রয় দান করেন। কাবাগৃহ থেকে মূর্তি অপসারণ এবং পৌত্তলিকতার সমূল উৎপাটনপূর্বক পবিত্র কাবাকে বিশ্ব মুসলিমের মিলনকেন্দ্রে পরিণত করেন। আখেরি নবী মুহাম্মদ (সা.) এর নেতৃত্বে নবদীক্ষিত মুসলমানরা সমগ্র বিশ্বের জন্য একটি সুশৃঙ্খল, পরহিতৈষী, মানবিক ও অতিমানবিক গুণাবলিসম্পন্ন আদর্শ জাতি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছিলেন। মদিনায় হিজরতের পর মহানবী (সা.) প্রবর্তিত ঐতিহাসিক মদিনা সনদ রাষ্ট্র পরিচালনা, সমর কৌশল, সাম্যবাদ-গণতন্ত্র-ন্যায়বিচার এবং জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে দিগ্্দর্শন যন্ত্র বা ম্যাগনাকাটা হিসেবে সমগ্র বিশ্বে অদ্যাবধি অনুসৃত ও অনুকরণীয়। ঐতিহাসিক হুদায়বিয়া চুক্তি সম্পাদনের মাধ্যমে মহানবী মুহাম্মদ (সা.) বিনা যুদ্ধে মক্কা বিজয়ের যে অবিস্মরণীয় প্রেক্ষাপট তৈরি করেছিলেন, তা বিশ্ববরেণ্য রাজনীতিবিদদের দূরদর্শিতাপূর্ণ যাবতীয় অর্জনকে হার মানিয়ে দেয়। বিনা রক্তপাতে অষ্টম হিজরিতে মক্কা বিজয়ের পর আজন্মের শত্রু মক্কার প্রতিষ্ঠিত পৌত্তলিকদের অকাতরে ক্ষমা করে দিয়েছিলেন। নিজ প্রাণসংহারে বদ্ধপরিকর মক্কার আজন্মের শত্রু সম্প্রদায়কে হজরত মুহাম্মদ (সা.) ক্ষমা করে দিয়ে ক্ষমা ও ঔদার্যের যে কালোত্তীর্ণ ইতিহাস রচনা করেছিলেন, তার নজির বিশ্বসভ্যতার ইতিহাসে দ্বিতীয়টি মিলবে না।

প্রায় ১৪০০ বছর আগে দশম হিজরিতে সর্বশ্রেষ্ঠ নবী-রাসুল হজরত মুহাম্মদ (সা.) পারলৌকিক জীবনের শেষ হজব্রত পালন করেন। বিদায় হজের ভাষণে হজরত মুহাম্মদ (সা.) ১ লাখ ২৫ সহস্রাধিক সমবেত মুসলিম জনতার উদ্দেশে বলেছিলেন, ‘আমি বিশ্ব মুসলিম তথা তোমাদের পার্থিব সাফল্য এবং পারলৌকিক কল্যাণের জন্য দুটি সুমহান দলিল রেখে যাচ্ছি। এর প্রথমটি হচ্ছে পরম করুণাময় আল্লাহর পক্ষ থেকে অবতীর্ণ পবিত্র আসমানি কিতাব আল কোরআন। আর দ্বিতীয়টি হচ্ছে আমার জীবনাচরণ-কর্মপদ্ধতি ও বর্ণনা-সংবলিত হাদিসগ্রন্থ। যত দিন পর্যন্ত আমার উম্মতগণ এই দুটি মহাগ্রন্থের অবিনশ্বর বাণী ও নির্দেশনা হুবহু অনুকরণ ও অনুসরণ করবে এবং বাস্তব জীবনে প্রয়োগ করবে, তত দিন পর্যন্ত বিশ্বের কোনো শক্তি তাদের বিন্দুমাত্র ক্ষতি করতে পারবে না।’ সোয়া লক্ষাধিক হজব্রত পালনকারীর উদ্দেশে হজরত মুহাম্মদ (সা.) আরও বলেছিলেন, তাঁর সেদিনের বাণী অনুপস্থিতদের নিকট পৌঁছে দিতে। বিদায় হজের অবিনশ্বর ও অদ্বিতীয় ভাষণে হজরত মুহাম্মদ (সা.) আরও বলেছিলেন, বিশ্ব মুসলমানের মধ্যে আরব-অনাব, আশরাফ-আতরাফ, ধনী-নির্ধন, সাদা-কালো ইত্যাদি শ্রেণিবৈষম্যের স্থান নেই। এমনকি একজন কাফ্রি ক্রীতদাসও নেতৃত্বদানের সক্ষমতা অর্জন করলে বিনা বাক্যব্যয়ে তার নেতৃত্ব অন্যদের মেনে নিতে হবে। আমাদের প্রাণাধিক প্রিয় নবী (সা.) আরও বলেছিলেন, পুত্রের অপরাধে পিতাকে, পিতার অপরাধে পুত্রকে, ভাইয়ের অপরাধে ভাইকে অপরাধী করা যাবে না এবং একের অপরাধের জন্য অন্যকে বেআইনিভাবে শাস্তি দেওয়া যাবে না। আরাফার সেই ময়দানেই বিশ্ব মুসলিমের শাশ্বত জীবনবিধান পবিত্র কোরআনের সর্বশেষ আয়াত : আল ইয়ামো মা আকমালতো লুকুম দ্বিনাকুম, ওয়া আতমামতো আলাইকুম নে’মাতি ওয়া রাজিতু লাকুমাল ইসলামো দ্বীনান (ইসলামকে আল্লাহর মনোনীত ধর্ম এবং কোরআনের পরিপূর্ণতা ঘোষণাকারী আয়াতটি) অবতীর্ণ হয়েছিল। অতঃপর উপস্থিত মুসলিম জনতাকে নিয়ে ঊর্ধ্বাকাশে দুই হাত তুলে ধরে আখেরি নবী মুহাম্মদ (সা.) বলেছিলেন, ‘হে রাব্বুল আলামিন, আমি হয়তো-বা আমার ওপর অর্পিত দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করতে পারিনি। তুমি দয়া করে আমার অক্ষমতাজনিত অপরাধ ও ভুলত্রুটি ক্ষমা করিয়ো।’ অশ্রুসিক্ত নয়নে ও জলদগম্ভীর কণ্ঠে সোয়া লাখ উপস্থিত হাজি গগনবিদারী কণ্ঠে বললেন, আমরা সাক্ষ্য দিচ্ছি, আপনি আপনার ওপর অর্পিত দায়িত্ব যথার্থই পালন করেছেন। প্রণিধানযোগ্য, পবিত্র কোরআনের সর্বশেষ আয়াত অবতীর্ণ হওয়ার মধ্য দিয়ে মহান আল্লাহ তায়ালা হজরত মুহাম্মদ (সা.) এর এই ধরাধাম ত্যাগের পরোক্ষ ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। বিষয়টি সর্বপ্রথম উপলব্ধি করেছিলেন নবদীক্ষিত প্রথম মুসলিম এবং প্রিয় নবী মুহাম্মদ (সা.) এর সার্বক্ষণিক সঙ্গী ও ইসলামের প্রথম খলিফা হজরত আবু বকর (রা.)। মহান আল্লাহর পরোক্ষ ইঙ্গিত হৃদয়ঙ্গম করার পর হজরত আবু বকর (রা.) নিতান্ত শিশুর মতো হাউমাউ করে কান্না জুড়িয়ে দিলে বিশাল মুসলিম জনতাও মেদিনী কাঁপিয়ে রোদন শুরু করলেন। ফলে সমগ্র মক্কা ও আশপাশের আকাশ-বাতাস ভারাক্রান্ত হয়ে উঠেছিল।
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির রথে আরোহণকারী বিজ্ঞানমনস্ক আধুনিক বিশ্বে অহর্নিশ অনবরত বিবর্তন এবং অভিনবত্বের ঢেউ খেলে যাচ্ছে। মানুষের চিন্তা-চেতনা ও জীবনাচরণের পরিবর্তনের সঙ্গে ধর্মীয় মূল্যবোধ দিন দিন কোণঠাসা হয়ে যাচ্ছে। আবার শয়তানের প্ররোচনায় কিংবা ব্যক্তিস্বার্থে ভুয়োদর্শী আলেম-ওলামার ধ্বজাধারীদের অনেকেই নিত্যনতুন ফিতনাকে ইন্ধন জোগাচ্ছেন। এমনকি একটি বিশেষ আলেম সম্প্রদায় হাদিসের তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য প্রদর্শনেও কার্পণ্য করছেন না। ফলে মুসলিম সমাজে নিত্য-নতুন বিভেদ-বৈষম্য মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে। এই ভ্রাতৃঘাতী ও অসম প্রতিযোগিতা অব্যাহত থাকলে নিকট ভবিষ্যতে বিশ্ব মুসলিম যে চরম বিভ্রান্তি-বৈষম্য, হানাহানি এবং ভ্রাতৃঘাতী লড়াইয়ে জড়িয়ে পড়বে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না।

যাহোক, সহস্র প্রতিকূলতা, বিভাজন ও সাংঘর্ষিক মতবাদের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী মুসলিম সম্প্রদায়ের ৪ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে ধর্মীয় ভাবগম্ভীর পরিবেশে পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) উদ্্যাপনের সংবাদ সন্দেহাতীতভাবে প্রশংসার্হ। এবারের পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবীর (সা.) সুমহান আদর্শ স্বার্থান্ধ ও ইসলামের মৌলিক আদর্শচ্যুত বিশ্ব মুসলিমের ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় জীবনের ভিত্তিকে সজোরে নাড়া দিকÑএই মিনতি রইল। ঈদে মিলাদুন্নবীর (সা.) মৌলিক আদর্শে উদ্দীপ্ত ও অনুপ্রাণিত হয়ে আমরা যেন ভ্রাতৃঘাতী সংঘাত এবং নিত্য-নতুন ফিতনার অভিশাপ থেকে মুক্তি লাভ করতে পারি করজোড়ে সেই প্রার্থনাও জানাচ্ছি বিশ্ব প্রতিপালকের দরবারে। সংগত কারণেই উল্লেখ করতে হচ্ছে, পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.)সহ অন্যান্য ধর্মীয় অনুষ্ঠানাদি উদযাপন বর্তমানে বিশ্ব মুসলিমের নিকট নিছক আচার ও সংস্কৃতিতে পরিণত হয়েছে। আমরা এমনতর অভিশাপ থেকে নিষ্কৃতি কামনা করছি। হে করুণাময় আল্লাহ তায়ালা, এবারের পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) উপলক্ষে তোমার প্রিয় হাবিব হজরত মুহম্মদ (সা.) এর অছিলায় আমাদের যাবতীয় অপরাধ মার্জনা করো।
লেখক : সহযোগী সম্পাদক, ঠিকানা, নিউইয়র্ক।
 

কমেন্ট বক্স