ইসির ওপর আস্থা ফেরানো, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ, লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি, রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যকার অনাস্থা ও সংকট নিরসন করা এবং ভোটার উপস্থিতি বাড়ানো-ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন আয়োজনে মোটাদাগে এই ৫টি চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এ ছাড়া প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের নিরপেক্ষ ও সক্রিয় ভূমিকায় রাখা, নির্বাচনে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) অপপ্রয়োগ, ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের পক্ষপাতমুক্ত রাখা এবং ভোটকেন্দ্র স্থাপনাও অন্যতম চ্যালেঞ্জ বলে মনে করছে ইসি। প্রথমবার বিপুলসংখ্যক প্রবাসী বাংলাদেশির ভোটাধিকার সুযোগ দেওয়াটাও একধরনের চ্যালেঞ্জ মনে করা হচ্ছে। সূত্র জানায়, এ মুহূর্তে নির্বাচন কমিশন ভোটের প্রস্তুতিমূলক কাজে বেশি মনোযোগী। আরপিও ও নির্বাচন আচরণ বিধিমালা সংশোধন, সীমানা নির্ধারণ, নতুন রাজনৈতিক দল নিবন্ধন এবং পর্যবেক্ষক সংস্থার নিবন্ধন দেওয়ার মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলো যেন বিতর্কিত না হয়, সেদিকে লক্ষ রাখা হচ্ছে। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় অনেক ভোটকেন্দ্র তাদের নেতাদের নিয়ন্ত্রণাধীন ভবন বা এলাকায় স্থাপন করা হয়েছে। ইসি ইতিমধ্যে নীতিমালা সংশোধন করেছে এবং ভোটকেন্দ্রের খসড়া তালিকা তৈরি করছে। জনমত যাচাইয়ের জন্য ওই তালিকা আগেভাগেই প্রকাশ করা হবে। এ ছাড়া তরুণদের নির্বাচনমুখী করতে চলতি বছর তিনবার হালনাগাদ ভোটার তালিকা প্রকাশ করতে যাচ্ছে। প্রস্তুতিমূলক কাজগুলো গুছিয়ে আনার পর কৌশলগত কাজগুলোয় হাত দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে ইসির।
ইসি কর্মকর্তারা মনে করছেন, জুলাই সনদসহ নির্বাচন ইস্যুতে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সদ্ভাব না থাকলে নির্বাচনে সহিংসতা বাড়বে এবং দেশ-বিদেশে ওই অর্থে নির্বাচন গ্রহণযোগ্য পাবে না। তাদের মতে, যেহেতু তফশিল ঘোষণা করা হবে ডিসেম্বরে, তাই এখনো অনেক সময় আছে। এর মধ্যে রাজনৈতিক অবস্থার পরিবর্তন হবে। নির্বাচন কমিশনার আব্দুর রহমানেল মাছউদ বলেন, ইসির প্রধান চ্যালেঞ্জ হচ্ছে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখা। তবে আমাদের আশা, তফশিল ঘোষণার কাছাকাছি সময়ে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবস্থা আরও উন্নতি হবে। এ ছাড়া নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী হিসেবে সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনী এবং কোস্ট গার্ডকে অন্তর্ভুক্ত করে আরপিও (গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ) সংশোধন করা হচ্ছে। সুতরাং সবাই মিলে চেষ্টা করলে ভালো পরিস্থিতিতে ভোট করতে পারব।
স্বাধীনতার পর থেকে এ পর্যন্ত ১২টি জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। কয়েকটি জাতীয় নির্বাচন নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে ব্যাপক সমালোচনা রয়েছে। সর্বশেষ আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালের জাতীয় নির্বাচনও রয়েছে। ২০১৮ সালের কারসাজির নির্বাচন এবং ২০২৪ সালের ‘আমি-ডামি’ খ্যাত নির্বাচন করার দায়ে সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার কেএম নূরুল হুদা এবং কাজী হাবিবুল আউয়াল কারাগারে রয়েছেন। কেএম নূরুল হুদাকে ‘মব’ তৈরির পর আটক করা হয়। ওই সময় তার গলায় জুতার মালাও পরানো হয়। গত ১৩ আগস্ট ইসলামী আন্দোলনের নেতারা প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এএমএম নাসির উদ্দীনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে এসব কথা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন। ইসির কর্মকর্তারা বলছেন, ওইসব ঘটনা প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তা এবং ইসির জন্য বড় শিক্ষা। এবার গ্রহণযোগ্য নির্বাচন না হলে একই ভাগ্যবরণ করতে হতে পারে। এ কারণে নির্বাচনে প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অনেকটাই নিরপেক্ষ থাকবে বলে আশা ইসির। সংশ্লিষ্ট বিষয়ে রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও গবেষক মহিউদ্দিন আহমদ বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর বাহাস একধরনের চাপ তৈরির কৌশল। দ্রুত ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজনে সরকারকে তাগাদা দেওয়া এবং সিট ভাগাভাগির কৌশল। তিনি বলেন, একটি দল (আওয়ামী লীগ) ছাড়া সবাই মাঠে আছে। জাতীয় পার্টিও রাজনীতি করছে। সব দল নির্বাচনে অংশ নিলে ভোট প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক হবে এবং ভোটার উপস্থিতি বাড়বে।
                           
                           
                            
                       
     
  
 


 ঠিকানা রিপোর্ট
 ঠিকানা রিপোর্ট  
                                
 
                                                     
                                                 
                                                     
                                                 
                                                     
                                                 
                                                     
                                                 
                                                     
                                                 
                                                     
                                                
