ইসলাম শান্তির ধর্ম। মুসলিম-অমুসলিম সবার জন্যই ইসলাম শান্তির বার্তা বহন করে। যুদ্ধসহ বিশ্বব্যাপী চলমান অশান্তি থেকে শান্তির পথে আসতে হলে ইসলামের অনুশাসন মেনে চলার কোনো বিকল্প নেই। যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভানিয়া অঙ্গরাজ্যের ফিলাডেলফিয়ায় অনুষ্ঠিত তিনদিনব্যাপী মুনা কনভেনশনের বিভিন্ন সেমিনারে বক্তারা এসব কথা বলেন।
কনভেনশনে বক্তারা গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসন বন্ধ এবং ফিলিস্তিনী জনগণের স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় কার্যকর ভূমিকা রাখার জন্যও সকল মুসলিম রাষ্ট্র ও মুসলমানদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার ওপরও গুরুত্বারাপ করেন। এছাড়াও কনভেনশনে বক্তারা সকল অভিভাবককে তাদের পরবর্তী প্রজন্মকে ইসলামের আলোকবর্তিকা হিসেবে গড়ে তোলার আহ্বান জানানোর পাশাপাশি ইসলামিক চরিত্র গঠনের মধ্য দিয়ে ইহলৌকিক ও পরলৌকিক জীবন চলার পথকে শান্তিময় করতে মুনা কনভেনশন নতুন প্রজন্মের জন্য পাথেয় হয়ে থাকবে বলে মন্তব্য করেন।
অন্যদিকে ইসলাম নিয়ে ইসলাম বিরোধীদের যেসব ভুল ধারণা, প্রচার-প্রপাগান্ডা ও কর্মকাণ্ড রয়েছে তার বিরুদ্ধে সজাগ থেকে বিশেষ করে উত্তর আমেরিকায় বসবাসকারী বাংলাদেশী মুসলিম কমিউনিটির সন্তানদের সজাগ করে তোলার জন্য মুনা’র পক্ষ থেকে আহ্বান জানানো হয় কনভেনশনের বিভিন্ন সেশনে। এছাড়াও কনভেনশনে বিশ্ব মুসলমানদের কল্যাণ কামনা করা হয়। সমাপনী অনুষ্ঠানে শিশুদের বিভিন্ন ইভেন্টে বিজয়ীদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠিত হয়।
ইসলামিক সাংস্কৃতি ঐতিহ্যে ও বর্ণাঢ্য আয়োজনে গত ৮, ৯ ও ১০ আগস্ট যথাক্রমে শুক্র, শনি ও রোববার ঐতিহাসিক ‘পেনসিলভানিয়া কনভেনশন সেন্টার’-এ তিন দিনব্যাপী মুনা কনভেনশন অনুষ্ঠিত হয়। ‘টচবিয়ার্স অব ইসলাম, স্প্রেডিং দ্যা ফেইথ গ্লোবালি’ - স্লোগানে আয়োজিত এবারের মুনা কনভেনশন-২০২৫ ১০ আগস্ট রোববার বিকাল ৫টায় আছরের নামাজ আদায়ের মধ্য দিয়ে শেষ হয়।
কনভেনশনের উল্লেখযোগ্য কর্মকাণ্ডের মধ্যে ছিলো একাধিক সেমিনার, শিশুদের বিভিন্ন রাইড, ইসলামিক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, বাজার, ইয়্যুথ প্রোগ্রাম, সিস্টার্স প্রোগ্রাম প্রভৃতি। বিশাল কনভেনশন সেন্টারের দ্বিতীয় তলায় ছিলো বিপুল সংখ্যক বিভিন্ন ধরনের পোশাক, খাবার, আইসক্রিমসহ বিভিন্ন ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান ও দাতব্য প্রতিষ্ঠানের স্টল।
কনভেনশনে শিশু-কিশোর, ইয়ুথ ও নারীদের জন্য আলাদা অনুষ্ঠান ছিলো। আরো ছিলো নতুন প্রজন্মের তরুণদের জন্য রোবোটিক্স এআই-এর মত অনুষ্ঠান। এছাড়াও তরুণী সিস্টার ও অ্যাডাল্ট পুরুষ-মহিলাদের জন্যও ছিলো বিভিন্ন অনুষ্ঠান। রোববার দিন ‘মাট্রিমনিয়াল ডে’তে তরুণ ছেলে মেয়েদের মধ্যে যারা অবিবাহিত রয়েছেন তাদের ‘ম্যাচ মেকিং’-এর জন্য কিছু স্পেশাল পর্বও ছিলো। কলেজ পড়ুয়া বা বিভিন্ন চাকরিতে যুক্ত বিবাহযোগ্য ছেলে-মেয়েরা এই পর্বে যোগ দেন। খুবই সাজানো এবং গুছানো তাৎপর্যপূর্ণ এবারের কনভেনশনটি যেন আমেরিকায় জন্মগ্রহণ ও বেড়ে ওঠা পরবর্তী প্রজন্ম এবং বর্তমান প্রজন্মের ছিলো এক মিলনমেলা। মুনা কনভেনশন ঘিরে সর্বস্তরের হাজার হাজার মুসলিম নর-নারীর উপস্থিতিতে মুখরিত হয়ে উঠেছিল ফিলাডেলফিয়া শহর।
মুনা কনভেনশনে ভার্চুয়ালি বক্তব্য দেন জনপ্রিয় আলেম ড. শায়খ মিজানুর রহমান আজাহারী। এছাড়াও নিউইয়র্কসহ যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন রাজ্য, বাংলাদেশ, যুক্তরাজ্য ও আফ্রিকার বিশিষ্ট ইসলামিক স্কলারগণ কনভেনশনে আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে বিভিন্ন দিন বিভিন্ন সেশনে গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য দেন ইমাম দেলোয়ার হোসাইন, শেখ আবদুর রহমান খান, আবুসামিহা সিরাজুল ইসলাম, শেখ আবদুস সালাম আজাদী, ড. মহসিন আনসারী, ইমাম সিরাজ ওয়াহহাজ, শেখ মোহাম্মদ এলশিনাভি, ডা. আলতাফ হোসেন, ইমাম রাগাব আবদেলমোনেইন, শেখ মিকাইল আহমেদ, সামী হামদী, মোহাম্মদ ইলসেনওয়ে, ইমাম টম ফ্যাকইন, হামজাহ আব্দুল মালিক, আসিফ হাইরানি, আব্দুল নাসির জাংদাসহ আরো অনেক আলেম-ওলামা ও বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ।
কনভেনশন সেন্টারে ৮ আগস্ট শুক্রবার জুম্মার নামাজ আদায়ের মধ্য দিয়ে তিন দিনব্যাপী কনভেনশনের কর্মসূচি শুরু হয়। জুম্মার নামাজে ইমামতি করেন ইমাম সিরাজ ওয়াহহাজ। পরবর্তীতে মূল মঞ্চে উদ্বোধনী পর্বের শুরুতে পবিত্র কোরআন থেকে তেলাওয়াত করেন ক্বারি মোহাম্মদ জুনায়েদ হোসেন। এরপর অনুষ্ঠিত বাংলা অধিবেশনে ‘ইসলামী পারিবারিক শিক্ষা ও পরিবার গঠনে স্বামী-স্ত্রীর দায়িত্ব ও কর্তব্য’ নিয়ে আলোচনা করেন ব্যারিস্টার হামিদ হোসাইন আজাদ ও ড. আবুল কালাম আজাদ বাশার।
পরবর্তীতে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন মুনার ন্যাশনাল এক্সিকিউটিভ ডাইরেক্টর আরমান চৌধুরী। এছাড়াও বক্তব্য দেন নিহাদ আওয়াদ, ইমাম মোহাম্মদ আলী, সাফা জারজুর, ড. ওসামা আবু আরশাদ, ড. আয়মান হাম্মুস, সালমান মুজাহিদ, ওসামা জামাল ও মুনার ন্যাশনাল প্রেসিডেন্ট ইমাম দেলোয়ার হোসাইন।
শুক্রবার প্রথম দিনে বিভিন্ন বিষয়ে মোট ১১টি সেশন অনুষ্ঠিত হয়। এর মধ্যে ছিল- ইসলামের বিশ্বব্যাপী প্রসার থেকে শিক্ষা, বিশ্বজুড়ে দ্বীনের আলো ছড়ানো পথ-প্রদর্শকরা, আলো ছড়িয়ে দিন, ঐক্য গড়ে তুলুন, সহনশীল মুসলিম যুবক, সিস্টার অনলি এন্টারটেইনমেন্ট সেশন, সংঘাতের ছায়া : মার্কিন ন্যায়বিচারের উপর কাশ্মীরের প্রতিফলন, সংগ্রামের প্রতিধ্বনি : আমেরিকান বিচারে কাশ্মীরের সমান্তরালতা প্রভৃতি বিষয়ে সেমিনার। এসব সেমিনারে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও ইউরোপের ইসলামিক ১০টি সংগঠনের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ অংশ নেন বলে মুনা’র ন্যাশনাল মিডিয়া ডিরেক্টর আনিসুর রহমান গাজী জানান।
কনভেনশনের দ্বিতীয় দিন ৯ আগস্ট শনিবার সকাল থেকে শুরু হওয়া অনুষ্ঠানমালা চলে রাত ১১টা পর্যন্ত। এদিন বিভিন্ন বিষয়ে ২৮টি সেশন অনুষ্ঠিত হয়। এদিনের আলোচিত সেশনের মধ্যে ছিল- ইসলামী মূল্যবোধের উন্নয়নে মুসলিম সম্প্রদায়ের ভূমিকা, আমলের পূর্ণতার জন্য বিশুদ্ধ নিয়ত অপরিহার্য, ইসলামের বিশ্বব্যাপী প্রসারে বাংলা অধিবেশন- পরিবর্তন চাই? শুরু হোক আমার থেকেই! প্রাথমিক মুসলিমদের অবদান, ইয়ুথ বয় প্রোগ্রামের মধ্যে ইসলামের মাধ্যমে হৃদয়কে সংযুক্ত করা, নৈতিক রূপান্তরের পথিকৃৎ মুসলিমরা, শক্তিশালী সম্পর্ক নির্মাণ। ইয়ুথ সিস্টার সেশনগুলোর মধ্য আলোকিত পথ বিশ্বাসকে শক্তিশালী করে, একজন মুসলিমের আধ্যাত্মিক যাত্রা, মুসলিম নারী নেত্রীদের আত্মবিশ্বাস ও করুণার সাথে নেতৃত্ব দেওয়া, যেকোনো জায়গায় অন্যায়, সর্বত্র ন্যায়বিচারের জন্য হুমকিস্বরূপ।
প্যারালাল সেশনের মধ্যে ছিল- আমেরিকান ইনস্টিটিউট অব ইন্টিগ্রেটেড থট-টুওয়ার্ডস হোলিস্টিক ডেভেলপমেন্ট (এআইআইটি) এর বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ গঠন, যত্ন এবং ঐক্যের মাধ্যমে সংকটের প্রতিক্রিয়া জানানো এবং ‘ত্রাণ প্রচেষ্টা কীভাবে জীবনকে বদলে দেয়’ নিয়ে সেমিনার করে জাকাত ফাউন্ডেশন। শনিবারের সেশনগুলোর মধ্যে বিশেষ করে ইয়ুথ সেশনে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ইসলামী জীবন যাপনের ওপর আলোচনা করেন তরুণ ইসলামিক স্কলার ক্যাথলিক (খ্রিস্টান ধর্ম) পরিবারে জন্মগ্রহণ করা আমেরিকান বংশোদ্ভূত বর্তমানে মুসলিম ধর্ম গ্রহণকারী ইমাম টম ফ্যাসিন। আল কোরআন ও হজরত মোহাম্মদ (সা.) এর জীবন বিধানের আলোকে চমৎকার রেফারেন্সের মাধ্যমে উপস্থাপন করা বক্তব্যটি আমেরিকান মুসলিম প্রজন্মের তরুণরা পিনপতন নীরবতার মধ্য দিয়ে পুরো বক্তব্যটি শ্রবণ করেন, বিশেষ করে ইয়ুথ সেশনে তরুণ-তরুণীদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। মেয়ে এবং ছেলেদের জন্য আলাদা কনফারেন্স রুমগুলো ছিল কানায় কানায় পরিপূর্ণ।
এদিন রাতে স্থানীয় সাংস্কৃতিক সংগঠন বিশেষ করে মুনা শিল্পী গোষ্ঠী ও শিশুদের ইসলামী সঙ্গীত পরিবেশনের পাশাপাশি স্ট্যান্ড আপ কমেডি ও কবিতা আবৃত্তিসহ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। এতে বাংলাদেশের জুলাই বিপ্লবের ঘটনা প্রবাহ ফুটে ওঠে। উঠে আসে আয়না ঘরের ভয়াবহ চিত্র, যা দর্শক-শ্রোতাদের আকৃষ্ট করে।
কনভেনশনের শেষ দিনে ১০ আগস্ট রোববার দিনের প্রধান অধিবেশনে বিশ্বাসের তরঙ্গায়িত প্রভাব : বিভিন্ন সমাজে ইসলামের ক্রমবর্ধমান প্রভাব, বহুসংস্কৃতির সম্প্রদায়ের মধ্যে ইসলামের রূপান্তরকারী শক্তি, ঐক্যের ঝলকে সংস্কৃতি জুড়ে ইসলামী শিক্ষা ছড়িয়ে দেয়াসহ বিভিন্ন সেশনে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয়। এদিকে বেলা ১১টা থেকে শুরু হওয়া বিভিন্ন আলোচনার পাশাপাশি মুনা শিশুদের পুরস্কার বিতরণী ও অ্যাচিভমেন্ট অ্যাওয়ার্ড প্রদান করা হয়। ইমাম দেলোয়ার হোসাইন ও আরমান চৌধুরী সহ মুনার নেতৃবৃন্দ বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় বিজয়ী শিশুদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করেন। এদিন ড. আতাউল ওসমানীর নেতৃত্বে মুনা’র সাংস্কৃতিক দল মনোজ্ঞ ইসলামিক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশন করেন।
এছাড়াও রোববার সকালে সাংবাদিকের সাথে মতবিনিময় করেন মুনা’র ন্যাশনাল প্রেসিডেন্ট ইমাম দেলোয়ার হোসাইন এবং মুনা’র ন্যাশনাল এক্সিকিউটিভ ডাইরেক্টর আরমান চৌধুরী। এই পর্বের শুরুতে পবিত্র কোরআন থেকে তেলাওয়াত করেন মাওলানা রশীদ আহমদ এবং পরিচালনা করেন মুনা’র ন্যাশনাল মিডিয়া ডিরেক্টর আনিসুর রহমান গাজী। এসময় নেতৃবৃন্দ উপস্থিত সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন এবং মুনা কনভেনশনের ভালোমন্দ দিক নিয়ে সাংবাদিকদের মতামত জানতে চান। মুনা’র অন্যান্য কর্মকর্তাদের মধ্যে সাবেক ন্যাশনাল প্রেসিডেন্ট হারুন অর রশীদসহ আবু আহমদ নূরুজ্জামান, অ্যাসিস্ট্যান্ট এক্সিকিউটিভ ডাইরেক্টর আব্দুল্লাহ আল আরিফ, ন্যাশনাল শূরা সদস্য মোশারফ মাওলা সুজন, আশরাফ আকবর, নিউইয়র্ক নর্থ জোনের সেক্রেটারি মমিনুল ইসলাম মজুমদার, নিউইয়র্ক সাউথ জোন মিডিয়া পরিচালক আমিনুর রসুল জামশেদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। এসময় সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন মুনা’র ন্যাশনাল প্রেসিডেন্ট ইমাম দেলোয়ার হোসাইন। ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন ন্যাশনাল এক্সিকিউটিভ ডাইরেক্টর আরমান চৌধুরী। এর আগে কনভেনশনের স্পন্সরদের সম্মানে মুনা নেতৃবৃন্দ প্রাতরাশের আয়োজন করেন।
সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময়কালে ইমাম দেলোয়ার হোসাইন বলেন, আমাদের অনেক সীমাবদ্ধতা রয়েছে। তারপরেও আমরা চেষ্টা করেছি ভালো কিছু করার জন্য। আমরা কোনো রাজনৈতিক আদর্শ নিয়ে কাজ করি না। আমরা শুধু আমাদের আগামী প্রজন্মকে আলোর পথ দেখাতে চাই। দ্বীন প্রচার ছাড়া আমাদের আর কোনো কাজ নেই। আগামীতে আমরা যাতে আরও ভালো করতে পারি সে জন্য আপনাদের সহযোগিতা চাই।
এক প্রশ্নের জবাবে ইমাম দেলোয়ার হোসাইন বলেন, আমেরিকায় বেড়ে ওঠা আমাদের নতুন প্রজন্ম নিয়ে আমরা চিন্তিত। বিভিন্ন অপরাধের সাথে নতুন প্রজন্ম থেকে শুরু করে অনেক বাংলাদেশি সম্পৃক্ততার ঘটনা আমাদেরকে ভাবিয়ে তুলছে। প্রশাসনের অনেকেই এসব নিয়ে আমাদের প্রশ্ন করেন। তাই বিষয়টি সবার গুরুত্বদিয়ে ভাবতে হবে।
এদিকে কনভেনশনের বিভিন্ন সেশনে বক্তব্যকালে মুনার সাবেক প্রেসিডেন্ট হারুন উর রশিদ বলেন, যারা ইসলামের জন্য জীবন দিতে রাজি, আল্লাহ তাদের হাতেই বিজয় দিবেন। জিহাদ ছাড়া আল্লাহ বিজয় দান করবেন না। এটি আল্লাহর সুন্নাহ। তিনি বলেন আমাদের প্রজম্ম আজ হারিয়ে যাচ্ছে। প্রযুক্তি আজ আমাদের জন্য অভিশাপ হয়ে দাঁড়িয়েছে। মোবাইল ইন্টারনেটের হাত থেকে আমাদের বাচতে হবে। কালচার এবং ধর্ম আমরা আলাদা করতে পারি না। মধ্যপ্রাচ্যের কালচারকে আমাদের ধর্মের অংশ মনে করি। তিনি আরও বলেন, আমরা যদি ইমানদার হই তাহলে সর্বশক্তিমান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আমাদরে বিজয় দান করবেন। এজন্য আমাদের ইমানদার হতে হবে।
ইমাম সিরাজ ওয়াহাজ বলেন, প্রতিটি মানুষকে মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে। কেউ মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা পাবে না। আমাদের সম্পদ ইসলাম প্রচারে ব্যয় করতে হবে
শেখ মিখাইল আহমেদ বলেন, আমাদের এক কালেমা এক আল্লাহর দিকে ডাকতে হবে। এটি আমাদের কাজ। কিন্তু আমরা আজ এ কাজটি করছি না। আমাদের প্রজম্ম আজ ইসলামকে বুঝতে পারছে না। এটি আমাদের জন্য চিন্তার বিষয়। তিনি আরও বলেন, আমাদের সব সময় আল্লাহর জিকিরে থাকতে হবে। আমাদের হালাল - হারাম মেনে চলতে হবে। সাহাবারা আল্লাহর বিধান মানার কারণে আল্লাহ তাদের প্রতি সন্তুষ্ট ছিলেন।
শেখ মোহাম্মদ বেলাল বলেন, আমাদের ব্যবসা বাণিজ্য সব কিছুতেই ইসলাম থাকতে হবে। আমাদের মানবিক সকল গুণাবলী অর্জন করতে হবে। এজন্য আমাদের অনেক পরীক্ষার সম্মুখীন হতে হবে। এসময় তিনি হযরত ইব্রাহিম (আ.) এর উদাহরণ দেন। তিনি আরও বলেন, আমাদের সততার গুণাবলী অর্জন করতে হবে। আমাদের মাঝে আজ সততা খুবই কম।তাহলে অমুসলিমরা কেন আমাদের প্রতি আকৃষ্ট হবে। মসজিদের সাথে আমাদের সম্পর্ক বাড়াতে হবে। তিনি বলেন, গুগল সম্পর্কে আমাদের জ্ঞান অর্জন করতে হবে। ইউরোপ আমেরিকায় ইসলাম প্রচার করতে হলে আমাদের ইংরেজি ভাষা জানতে হবে। আমাদের সন্তানরা ইংরেজি জানে তাই তাদেরকে ইসলাম শিক্ষা দিতে হবে। প্রযুক্তি জ্ঞানে তারা অনেক এগিয়ে রয়েছে। আমাদের প্রতিবেশি হলো ইহুদি খ্রিস্টান।
হামিদ হোসাইন আজাদ বলেন, আল্লাহ সমস্ত উত্তমকে পছন্দ করেন। এজন্য আল্লাহ মানুষকে পরীক্ষা করেন। পুরো জীবনই হলো পরীক্ষা। দুনিয়ার জীবনকে কাজে লাগাতে হবে। পরীক্ষা ছাড়া আল্লাহ মানুষকে জান্নাত দিবেন না। এটি তাকে অর্জন করতে হবে। সফলতা অর্জন করতে হলে পরীক্ষায় ভালো করতে হবে। তাহলেই জান্নাত পাওয়া যাবে। তিনি আরও বলেন, ভালো সময় আমরা ভালো মানুষ হওয়ার চেষ্টা করি এটি ঠিক না।
ড. আবুল কালাম আজাদ বাশার নিজেকে এবং পরিবারকে বাচানো এ বিষয়ে আলোচনা করতে গিয়ে বলেন, যে নিজেকে চিনেছে সে আল্লাহকে চিনেছে। মানুষ কখনো নাস্তিক হতে পারে না। কারণ তার ভিতরে স্রষ্টাকে চেনার অনেক কিছু রয়েছে। যে নিজেকে চেনার চেষ্টা করে সে অহংকারি হতে পারে না। এসময় তিনি মানুষ সৃষ্টির রহস্য তুলে ধরেন কুরআনের আলোকে। তিনি বলেন, মানুষ খুবই দুর্বল, সে জম্মের পর হাটতে পারে না, নিজের হাতে খেতে পারে না। ভালো মন্দ জ্ঞান তার থাকে না। তারপরেও সে অহংকার করে। তিনি আরও বলেন, মানুষকে আল্লাহর রঙে রঙ্গিন হতে হবে। আল্লাহর আদেশ নিষেধ মেনে চলতে হবে। শুধু ইবাদত করলে চলবে না, তার জমিনে তার দ্বিন প্রতিষ্ঠা করতে হবে। নিজের পরিবারকে যদি ইসলামের অনুস্মরণ না করানো যায় তাহলে হাশরে তার সন্তানরা মামলা করবে। তিনি আরও বলেন, নিজেকে অর্থ কামানোর মেশিন বানাবেন না। মনে রাখবেন দ্বিনের দাওয়াত ছাড়া অমুসলিম দেশে থাকা জায়েজ নেই। তাই দ্বিনের প্রচার করতে হবে। ড. আলতাফ হোসেন বলেন, ইসলামের প্রচার করতে হলে নতুন প্রজম্মকে আকৃষ্ট করতে হবে। আগামীর পৃথিবীতে তারাই নেতৃত্ব দিবেন। দ্বিনের জন্য যারা দায়ী তাদের সত্য কথা বলতে হবে। তাদের দেয়া ওয়াদা রক্ষা করতে হবে। কথা এবং কাজে মিল থাকতে হবে।
তিনি আরও বলেন, আমাদের উত্তম চরিত্র এবং ভালো ব্যবহার দিয়েই মানুষের মন জয় করতে হবে। আমাদের টাকার পিছনে দৌড়ালে চলবে না। আল্লাহকে দেয়া ওয়াদা আমাদের রক্ষা করতে হবে। আমরা যে দেশেরই হই না কেন, আমাদের পরিচয় মুসলিম। মুনার প্রেসিডেন্ট ইমাম দেলোয়ার হোসাইন বলেন, দায়ী হিসেবে আমাদের নিয়তের বিশুদ্ধতা দরকার। আমাদের ভাষা হতে হবে সুন্দর। থাকতে হবে প্রযুক্তির জ্ঞান। ইসলাম প্রচার করতে হলে আমাদের যোগ্যতা অর্জন করতে হবে। ইসলামকে সহজ করতে হবে। কঠিন করা যাবে না। তিনি আরও বলেন, মুনা আমেরিকার প্রতি ঘরে ঘরে দাওয়াত পৌঁছাতে চায়। দাওয়াত ছাড়া আমাদের কোন কাজ নেই। দ্বিনের কাজ আমাদের করতে হবে। বসে থাকার সময় আমাদের হাতে নেই। এসময় তিনি উম্মে শুরাই এর ইসলাম গ্রহনের উদাহরণ বর্ননা করেন। উল্লেখ্য, মুসলিম উম্মাহ অফ নর্থ আমেরিকা-মুনা একটি অলাভজনক দাওয়াহ ভিত্তিক সমাজ সেবামূলক জাতীয় সংগঠন হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রে প্রধান নগরী নিউইয়র্কে প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৯০ সালে। মুনা প্রতিষ্ঠার মূল লক্ষ্য ছিল ব্যক্তিগত, নৈতিক ও মানুষের জীবনের সামাজিক মানোন্নয়নের মাধ্যমে মহান আল্লাহ তা’য়ালার সন্তুষ্টি অর্জন। ইতোমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের ৫০টি অঙ্গ রাজ্যে মুনা’র কার্যক্রম বিস্তৃতি লাভ করেছে। মুসলমানদের সামাজিক, ধর্মীয় ও নাগরিক জীবনকে সমৃদ্ধ করার পাশাপাশি কমিউনিটির সেবায় নিয়োজিত করতে মুনা মুসলমানদের সুসংগঠিত করতে সদা সচেষ্ট। মুনা মুসলমানদেরকে তাদের ব্যক্তিগত ও সামাজিক জীবনে ইসলাম চর্চার আহবান জানিয়ে ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের কাছেও ইসলামের দাওয়াত পৌঁছাতে চেষ্টা করে। এছাড়া আমেরিকায় বিভিন্ন সমাজসেবামূলক কাজকর্মের সাথে মুনা অত্যন্ত সক্রিয়ভাবে জড়িত। বিশাল এ কনভেনশন বাস্তবায়নে ৭ সদস্য বিশিষ্ট নীতি নির্ধারণ কমিটি ছাড়াও ২১টি সাব-কমিটি করা হয়েছিল। মূল কমিটির সদস্যরা হলেন- আরমান চৌধুরী, জিয়াউল ইসলাম শামীম, আব্দুল্লাহ আল আরিফ, ড. প্রফেসর রুহুল আমিন, আহমেদ খালেদ হোসাইন, মোহাম্মদ নূরুল আনোয়ার।