আগামী ফেব্রুয়ারিতে রোজা শুরুর আগে জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজনের জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি শেষ করতে নির্বাচন কমিশনকে চিঠি দিয়েছে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়। এ চিঠির মাধ্যমে নির্বাচন আয়োজনের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে নির্বাচন কমিশনকে অনুরোধের আনুষ্ঠানিকতা শেষ হলো। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং এ তথ্য জানিয়েছে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার বরাবর পাঠানো ওই চিঠিতে উল্লিখিত সময়ে প্রত্যাশিত মানের অবাধ, সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ ও উৎসবমুখর জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণের জন্য অনুরোধ করেন প্রধান উপদেষ্টার মুখ্য সচিব এম সিরাজ উদ্দিন মিয়া।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন জানিয়েছেন, আগামী বছরের ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে নির্বাচন আয়োজনে বিভিন্ন ধরনের চ্যালেঞ্জ থাকলেও ইসি তার প্রস্তুতি এগিয়ে নিচ্ছে। বুধবার (৬ আগস্ট) নির্বাচন ভবনে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা বলেন। সিইসি জানান, যেদিন ভোট গ্রহণ করা হবে, তার মাস দুয়েক আগে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হবে। সে হিসেবে বলা যায়, ডিসেম্বরে ঘোষিত হতে পারে নির্বাচনের তফসিল।
আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতেই জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। গত মঙ্গলবার জুলাই গণঅভ্যুত্থান দিবস উপলক্ষে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে তিনি বলেন, এবারের নির্বাচনে প্রবাসীদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করা হবে। ভাষণটি বাংলাদেশ টেলিভিশন, বিটিভি নিউজ ও বেতার ভাষণটি একযোগে সম্প্রচার করেছে। নির্বাচন প্রসঙ্গে ড. ইউনূস বলেন, ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ জাতীয় নির্বাচন আয়োজন করতে চায় অন্তর্বর্তী সরকার। এ জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের কাছে চিঠি পাঠানো হবে। যেন নির্বাচন কমিশন আগামী রমজানের আগে, ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, নির্বাচন যেন সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ ও উৎসবমুখরভাবে সম্পন্ন করা যায়, সে জন্য সরকারের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহযোগিতা করব। প্রধান উপদেষ্টার এ ঘোষণার পর বুধবার এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে নির্বাচন নিয়ে ইসির চলমান প্রস্তুতির অগ্রগতিও সাংবাদিকদের সামনে তুলে ধরেন নাসির উদ্দিন। তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশনের ওপর মানুষের আস্থা সৃষ্টি করা, ভোটার উপস্থিতি নিশ্চিত করা, এআইয়ের অপব্যবহার রোধ করা এগুলোকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছে নির্বাচন কমিশন। তবে তারা আশা করছেন, আগামী নির্বাচন আয়নার মতো স্বচ্ছ হবে। আরেক প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে। আরও কয়েক মাস সময় আছে। এর মধ্যে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ঠিক হয়ে যাবে বলে তারা আশা করছেন।
সিইসি নাসির উদ্দিন আরও জানান, নির্বাচনের প্রস্তুতিমূলক বড় কাজগুলোর মধ্যে ভোটার তালিকা হালনাগাদের কাজ শেষ পর্যায়ে, সংসদীয় আসনের সীমানা নির্ধারণের খসড়া প্রকাশ করা হয়েছে, নতুন রাজনৈতিক দল নিবন্ধনের কাজ চলছে, কেনাকাটাও চলছে। আগামী সেপ্টেম্বরের মধ্যে বড় প্রস্তুতিমূলক কাজগুলো শেষ হয়ে যাবে। তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশন একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন চায়, ভোটারদের ব্যাপক অংশগ্রহণ চায়।
এর আগে মঙ্গলবার রাত ৯টার দিকে ইসি আবদুর রহমানেল মাছউদ বলেন, ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য নির্বাচন কমিশন (ইসি) প্রস্তুত আছে এবং আগামী ডিসেম্বরে তফসিল ঘোষণা হতে পারে।
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে অর্থাৎ রোজার আগে নির্বাচন আয়োজনের কথা জানানোর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় ইসি রহমানেল মাছউদ বলেন, আমরা নির্বাচন করতে প্রস্তুত। ভোটের দিনের ৫০-৬০ দিন আগে আমরা তফসিল ঘোষণা করব। সে হিসেবে ডিসেম্বরে তফসিল ঘোষণা করা হতে পারে।’
ঠিকানা/এনআই