বদলি নেমে শেষ সময়ে দারুণ গোল করলেন আর্জেন্টাইন মহাতারকা, মেজর লিগ সকারে ১১ ম্যাচ পর জয়ের স্বাদ পেল ইন্টার মায়ামি।
একদম গোলমুখে ফাঁকা জায়গায় দাঁড়িয়ে আলতো ছোঁয়ায় বল জালে। স্রেফ গোলের মুহূর্তটি দেখলে মনে হবে সাধারণ এক ‘ট্যাপ-ইন’ গোল। কিন্তু লিওনেল মেসির গোলটি আসলে অসাধারণ জাদুকরি এক ছোঁয়ায় গোলের প্রেক্ষাপট তৈরির কারণে। মেজর লিগ সকারে (এমএলএস) অভিষেকে বদলি নেমে ম্যাচের শেষ দিকে মোহনীয় সেই স্পর্শ হয়ে গোল করলেন মেসি। জয়ের দেখা পেল তার দল ইন্টার মায়ামি।
বাংলাদেশ সময় রোববার সকালে এই ম্যাচে নিউ ইউর্ক রেড বুলসকে তাদের মাঠেই ২-০ গোলে হারায় ইন্টার মায়ামি।
মেসির আগেই অবশ্য এ দিন লিগ অভিষেকে গোল করেন দিয়েগো গোমেস। প্যারাগুয়ের এই মিডফিল্ডার ৩৭তম মিনিটে এগিয়ে দেন মায়ামিকে। এরপর ৮৯তম মিনিটে মেসির ওই নান্দনিক গোল।
সের্হিও বুসকেতসের ক্রস থেকে জর্দি আলবা লাফিয়ে দারুণভাবে আলতো ভলিতে বক্সের ভেতর বল দেন মেসিকে। তিনি বল পায়ে নিয়ে এক ডিফেন্ডারকে কাটান। পরমুহূর্তেই তাকে ঘিরে ধরেন প্রতিপক্ষের চার জন।
মেসি এক মুহূর্ত থেমে বুঝে নেন নিজের করণীয়। ওই চার জনের মাঝ দিয়ে এবং একটু দূরে থাকা আরেক ডিফেন্ডারের নাগালের বাইরে দিয়ে অবিশ্বাস্য এক অ্যাঙ্গেলে বল বাড়িয়ে দেন বেঞ্জামিন ক্রেমাসকিকে। এই মিডফিল্ডার তখন এক ডিফেন্ডার ও গোলকিপারকে ফাঁকি দিয়ে আবার পাস দেন মেসিকে। এরপর তার কাজ স্রেফ টোকা দিয়ে বল জালে পাঠানো।
গোলকিপারের বিস্ফোরিত দৃষ্টি বলে দিচ্ছিল, তিনি কিছু বুঝে উঠতে পারছেন না!
এই ম্যাচের লিগে মায়ামির সবশেষ জয়টি ছিল সেই গত ১৩ মে! মেসি আসার আগে লিগে ১১ ম্যাচ জয়বিহীন ছিল তারা, এর মধ্যে পরাজয়ই ছিল ৮টিতে।
সেই দলই মেসিকে নিয়ে এবং আলবা, বুসকেতসরা আসার পর হয়ে উঠেছে অপ্রতিরোধ্য। আর্জেন্টাইন জাদুকরের দুর্দান্ত পারফরম্যান্সে লিগস কাপ জিতে তারা দেখা পেয়েছে প্রথম বড় কোনো ট্রফির। এরপর উঠেছে ইউএস কাপের ফাইনালে। এবার লিগেও তারা পেল ভুলে যাওয়া জয়ের স্বাদ।
এই ম্যাচে মেসির খেলা নিয়ে অনিশ্চয়তা ছিল অনেকটাই। ম্যাচের আগে কোচ জেরার্দো মার্তিনো বলেছিলেন, টানা খেলার ক্লান্তি-শ্রান্তির কারণে বিশ্রাম দেওয়া হতে পারে এই তারকাকে। সেই ভাবনা অনুযায়ীই তাকে শুরুর একাদশে রাখেননি কোচ।
তবে ম্যাচের প্রথম মিনিট থেকেই মেসির নামের গর্জন ওঠে গ্যালারিতে। বোঝার উপায়ই ছিল না, এটা প্রতিপক্ষের মাঠ! পরেও নানা সময়ে থেমে থেমে মেসির নামে চিৎকার শোনা যায় ঠাসা গ্যালারিতে। ৩৫ মিনিটে এরকমই এক দফায় চারপাশে কাঁপন ওঠে দর্শকদের কণ্ঠের জোরে। সেটির রেশ থাকতে থাকতেই বক্সের ভেতর থেকে কোনাকুনি গড়ানো শটে গোল করেন মেসির পাঁচদিন পর মায়ামিতে যোগ দেওয়া গোমেস।
ম্যাচের শুরু থেকে যদিও দাপট বেশি ছিল রেড বুলসেরই। প্রথম ৩০ মিনিটে তো গোলে কোনো শটই নিতে পারেনি মায়ামি। তবে রেড বুলসও পারেনি সুযোগ কাজে লাগাতে।
দর্শকদের ‘মেসি, মেসি’ চিৎকারের মাঝে শেষ পর্যন্ত ৬০তম মিনিটে লিওনার্দো কাম্পানার বদলে তাকে মাঠে নামান কোচ। তিনি নামার পর দারুণ কিছু করতে পারেনি। তবে তিনি তো মেসি, একটি বিস্ময়কর মুহূর্তেই বদলে দিতে পারেন সবকিছু! ক্যারিয়ারে অসংখ্যবার যেমন দেখিয়েছেন, তা দেখালেন আরও একবার।
মায়ামির হয়ে ৮ ম্যাচে তার গোল হয়ে গেল ১১টি। ঘরের মাঠের দল গোল হজম করার পরও গ্যালারিতে বয়ে যায় উল্লাসের জোয়ার।
মায়ামির জয়ের কৃতিত্ব দিতে হবে ড্রেক ক্যালেন্ডারকেও। গত কয়েক দিনে দুটি টাইব্রেকারে মায়ামির জয়ের নায়ক এই গোলকিপার এই ম্যাচেও দারুণ চারটি সেভ করেন।
ঠিকানা/এসআর