জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক মো. নাহিদ ইসলাম বলেছেন, ‘গণ-অভ্যুত্থানে যারা রক্ত দিয়েছেন, তাদের স্বপ্নের দুর্নীতিমুক্ত ও বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়ার দায়িত্ব আজ আমাদের কাঁধে। বিচার, সংস্কার এবং নতুন সংবিধান প্রতিষ্ঠার জন্য আমরা রাজপথে নেমেছি।’
শুক্রবার (২৫ জুলাই) সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আয়োজিত এক পথসভায় তিনি এ কথা বলেন। সভার আগে এনসিপি আয়োজিত একটি পদযাত্রা শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে শহীদ মিনারে এসে মিলিত হয়।
নাহিদ ইসলাম জানান, আগামী ৩ আগস্ট সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ ও ‘জুলাই সনদ’ বাস্তবায়নের দাবিতে জাতীয় নাগরিক পার্টি বৃহৎ জমায়েতের আয়োজন করেছে। তিনি বলেন, ‘ইনশা আল্লাহ, আমরা শহীদ মিনার থেকেই দাবি আদায় করব।’
তিনি বলেন, ‘সিলেট শুধুই একটি অঞ্চল নয়—এটি বাংলাদেশের ইতিহাস ও সংগ্রামের কেন্দ্রভূমি। ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন, স্বাধীনতাসংগ্রাম থেকে শুরু করে সাম্প্রতিক জুলাই গণ-অভ্যুত্থানেও সিলেট বুক চিতিয়ে লড়েছে। কিন্তু ব্রিটিশ আমল থেকে আজ পর্যন্ত সিলেটকে নিয়মিতভাবে অবহেলা করা হয়েছে—হোক তা পাকিস্তান সরকার কিংবা আজকের আওয়ামী লীগ সরকার।’
নাহিদ স্মরণ করিয়ে দেন, ‘১৯৪৭ সালে মওলানা ভাসানীর নেতৃত্বে গণভোটে সিলেট পূর্ববঙ্গের সঙ্গে থাকার সিদ্ধান্ত নিলেও করিমগঞ্জসহ কিছু এলাকা আসামের অংশ করে নেওয়া হয়। গ্যাস, বালু, পাথরসহ বিপুল প্রাকৃতিক সম্পদ থাকা সত্ত্বেও সিলেটবাসী এখনো বঞ্চিত।’
নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘জুলাই অভ্যুত্থানে সিলেট সাহসিকতার এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। এই অঞ্চলে শাবিপ্রবির শিক্ষার্থী রুদ্র সেন, সাংবাদিক এ টি এম তুরাবসহ ১৭ জন শহীদ হয়েছেন। আমরা তাদের উত্তরসূরি, আমরা তাদের রক্তের শপথ নিয়েই এসেছি নতুন বাংলাদেশ গড়তে।’
প্রবাসী সিলেটিদের অবদান স্মরণ করে তিনি বলেন, ‘লন্ডনের সড়কে সিলেটিদের রক্ত-ঘামে বাংলাদেশের অর্থনীতির চাকা ঘোরে। আমরা চাই—প্রবাসীরা, বিশেষ করে প্রবাসী সিলেটিরা বাংলাদেশের নীতিনির্ধারণে ভূমিকা রাখুক। তাদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে এনসিপি কাজ করছে।’
সিলেটকে ঘিরে উন্নয়ন পরিকল্পনা তুলে ধরে এনসিপির আহ্বায়ক বলেন, ‘সিলেট একটি খনিজ সম্পদের অভয়ারণ্য। আমাদের লক্ষ্য সিলেটকে একটি আধুনিক শিল্পোন্নত শহরে রূপান্তর করা। এখানে স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও কর্মসংস্থানের উন্নয়ন ঘটাতে জাতীয় নাগরিক পার্টি দৃঢ়ভাবে কাজ করবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘সিলেট একটি বহু জাতি ও বহু সংস্কৃতির প্রতীক। এখানকার ভাষা, সংস্কৃতি, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়, নারী ও আলেম সমাজ—সবার মর্যাদা ও অধিকার রক্ষা করা হবে। সিলেটি ভাষাকে সাংবিধানিক স্বীকৃতি দেওয়ার দাবি আমরা জোরালোভাবে তুলব।’
ঠিকানা/এনআই