ত্রয়োদশ নির্বাচনে বিপুলভাবে বিজয়ী হয়ে ক্ষমতায় যাওয়ার প্রত্যয় নিয়ে প্রার্থী বাছাইসহ নির্বাচনী কার্যক্রম গুছিয়ে নেওয়ার লক্ষ্যে প্রস্তুতিমূলক কাজ শুরু করেছে বিএনপি। প্রাথমিক ধাপের এ কাজেই দলটি বড় সমস্যায় পড়েছে। অনেক ক্ষেত্রে সমস্যা মোকাবিলা করা কঠিন চ্যালেঞ্জ হয়ে দেখা দিয়েছে। শীর্ষ নেতৃত্বের হস্তক্ষেপ জরুরি হয়ে এসেছে। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহল আশঙ্কা করছেন, বস্তুত মাঠের রাজনীতি-বর্জিত বর্তমান অবস্থায়ই যে হারে দ্বন্দ্ব-বিরোধ দেখা যাচ্ছে; সামনে দলীয় মনোনয়ন, প্রার্থিতা, নির্বাচনী কার্যক্রম শুরু হলে অনাকাক্সিক্ষত পরিবেশ-পরিস্থিতিও সৃষ্টি হতে পারে, যা রাজনৈতিকভাবে বিএনপিকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে। আসন্ন নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন লাভের জন্য বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন। সাবেক মন্ত্রী ও এমপি, দলের জেলা-উপজেলা শাখার সভাপতি, সহসভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ বিভিন্ন পদাধিকারী, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনসমূহের সভাপতি, সম্পাদকরা ছাড়াও দলের সংগঠক, প্রভাবশালীরা নানামুখী তৎপরতা চালাচ্ছেন। লন্ডনে যোগাযোগ করেছেন অধিকাংশই। অনেকেই লন্ডনে রয়েছেন অথবা সেখানে শক্ত, ভালো যোগাযোগ রয়েছে এমন নেতৃস্থানীয় বিশিষ্ট ব্যক্তিদের শরণাপন্ন হয়েছেন। বিপুল অর্থ ব্যয় করছেন। উদ্দেশ্য শীর্ষ নেতৃত্বের মন জয় করে দলীয় মনোনয়ন নিশ্চিত করা।
বিএনপি ৩০০ আসনেই দলীয় প্রার্থী দেওয়ার চিন্তা করছে। সীমিত কিছুসংখ্যক নির্বাচনী এলাকায় তারা সমঝোতায় প্রার্থী দেবে। কোনো আসনেই দলীয় একাধিক প্রার্থী দেওয়া হবে না। কেউ দলের সিদ্ধান্তের বাইরে নির্বাচন করলে তাৎক্ষণিকভাবে দল থেকে সাময়িক, এমনকি সরাসরি বহিষ্কার করার চিন্তাও করা হচ্ছে। বিএনপির একাধিক নেতৃস্থানীয় সূত্রে জানা যায়, দলের শীর্ষ নেতা লন্ডনে থেকেই তার একান্ত বিশ্বস্ত লোকদের দিয়ে গোপনে তথ্যানুসন্ধান করছেন। দলের জন্য ত্যাগী, অভিজ্ঞদের পাশাপাশি যোগ্য ও জনপ্রিয় সম্ভাবনাময়দের তালিকা করা হচ্ছে।
প্রার্থী বাছাই করা বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্ব, কেন্দ্রীয় কমিটি, নির্বাচনী কমিটির জন্য সমস্যা হয়ে এসেছে। প্রতিটি আসনে বরাবরই কয়েকজন করে প্রার্থী হন। এবার দলীয়, অঙ্গসংগঠনের সাত-আটজন করে নেতা প্রার্থী হতে চাচ্ছেন। তারা কেন্দ্র, উপজেলা কমিটি, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনসমূহের প্রভাবশালী নেতাদের কাছে তদবির করছেন। বিশিষ্টজনদের মাধ্যমে দেশে-বিদেশে জোর তদবির চালাচ্ছেন।
এদিকে সময় যত গড়াচ্ছে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে অভ্যন্তরীণ সমস্যার পাশাপাশি দলটির সামনে নিত্যনতুন ইস্যু তৈরি হচ্ছে। সবকিছু বিবেচনায় বিএনপির সামনে এখন পাঁচটি চ্যালেঞ্জ বা কঠিন পরীক্ষা এসে হাজির হয়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন। চ্যালেঞ্জগুলো হচ্ছেÑজাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের দাবি; দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দল মেটানো; পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচনের দাবি; সংস্কার নিয়ে চূড়ান্ত ঐকমত্যে না পৌঁছানো এবং ইসলামী দলগুলোর সম্ভাব্য জোট।
এসব পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে যুগপৎ আন্দোলনের মিত্রদের পাশে চায় বিএনপি। এ লক্ষ্যে ধারাবাহিকভাবে যুগপতের শরিক দল ও জোটের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন বিএনপির লিয়াজোঁ কমিটির নেতারা। প্রয়োজনে নির্বাচনে আসন ভাগাভাগির মাধ্যমে হলেও মিত্রদের আস্থায় রাখবে বিএনপি। পরিস্থিতি বুঝে অন্য দলগুলোকেও পাশে রাখার উদ্যোগ নেওয়া হবে। পাশাপাশি মূলধারার ইসলামী দলগুলোর সম্ভাব্য জোট নিয়েও পর্যবেক্ষণ করছে বিএনপির হাইকমান্ড।