মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প শেষ পর্যন্ত স্বাক্ষর করলেন বহুল আলোচিত ও বিতর্কিত ‘বিগ বিউটিফুল বিল’ আইনে। করছাঁট এবং মেডিকেইড বাজেটে ব্যাপক পরিবর্তন আনার এই আইনকে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তার প্রশাসনের ‘একটি ঐতিহাসিক বিজয়’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। ৪ জুলাই যুক্তরাষ্ট্রের স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে হোয়াইট হাউসে আয়োজিত সামরিক পরিবারের জন্য এক পিকনিক অনুষ্ঠানে তিনি বিলটিতে স্বাক্ষর করেন। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ফার্স্ট লেডি মেলানিয়া ট্রাম্প, মন্ত্রিসভার একাধিক সদস্য এবং রিপাবলিকান সিনেটর ও কংগ্রেস সদস্যরা।
ট্রাম্প বলেন, ‘আমরা যা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম, তা রেখেছি। এই স্বাধীনতার দিনে এটি গণতন্ত্রের জয়।’
বিলের মূল দিকসমূহ হলো :
২০১৭ সালে ট্রাম্প প্রশাসনের চালু করা করছাঁটের মেয়াদ আরও বাড়ানো হয়েছে।
রাজ্য ও স্থানীয় কর কর্তনের সীমা বাড়ানো হয়েছে।
দেয়াল নির্মাণ ও ডিপোর্টেশনের জন্য ১৫০ বিলিয়ন ডলার।
১৫০ বিলিয়ন ডলার নতুন প্রতিরক্ষা ব্যয়ের আওতায় নৌবাহিনীর জাহাজ নির্মাণ ও ‘গোল্ডেন ডোম’ মিসাইল প্রকল্প অন্তর্ভুক্ত।
৫ ট্রিলিয়ন ডলার পর্যন্ত ঋণসীমা বাড়ানো হয়েছে।
টিপ দেওয়া আয়ের ওপর কর প্রত্যাহার।
সবুজ জ্বালানিতে কাটছাঁট, জীবাশ্ম জ্বালানির উৎপাদনে প্রসার।
এদিকে আলোচিত বিগ ওয়ান বিউটিফুল বিল পাস হওয়ায় সুবিধা পাবেন নিম্ন ও মধ্যবিত্ত আয়ের মানুষ। আর ক্ষতিগ্রস্ত হবেন বেকাররা, যারা কাজ না করেও সরকারের বিভিন্ন সুবিধা নিচ্ছিলেন। অর্থাৎ এই সুবিধা পেতে হলে প্রতিবন্ধী, অক্ষম, অসুস্থ ব্যক্তিরা ছাড়া অন্যদেরকে কাজ করতে হবে। যারা সুস্থ এবং কাজ করার উপযুক্ত, তাদের নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত কাজ করতে হবে। কাজ করার পর উপযুক্ত হলে তারাও সুবিধা পাবেন।
এ বিষয়ে সিপিএ জাকির চৌধুরী বলেন, দ্য ওয়ান বিগ বিউটিফুল বিলে মানুষের জন্য অনেক সুবিধা আছে। চাইলে এখন বিজনেস মালিকরা তাদের অফিসে কর্মরত স্টাফদের জন্য একটি বিশেষ সুবিধা দিতে পারেন। এই সুবিধাটি হলো কোনো বিজনেস মালিক যদি তার অফিসের স্টাফদের ছোট সন্তানদেরকে অফিসে নিয়ে আসার সুযোগ দেন অর্থাৎ ডে-কেয়ার সুবিধা দেন, তাহলে তারা এই খাত থেকে সর্বোচ্চ পাঁচ লাখ ডলার পর্যন্ত ট্যাক্স ক্রেডিট পাবেন। আগে এই সুবিধার বিপরীতে বিজনেসের মালিকরা দেড় লাখ ডলার নিতে পারতেন। আগে কেউ ইলেকট্রিক ভ্যাহিকেল কিনলে তিনি এ জন্য একবার সাড়ে সাত হাজার ডলার ট্যাক্স ক্রেডিট নিতে পারতেন। এটি আগামীতে থাকবে না। এর পরিবর্তে নতুন একটি সুবিধা চালু করা হয়েছে। কেউ যদি লোনে গাড়ি কেনেন এবং ১০ হাজার ডলার পর্যন্ত ইন্টারেস্ট পেমেন্ট করেন, তাহলে এর ওপর কোনো কর দিতে হবে না। যত দিন গাড়ির ক্রেতা ইন্টারেস্ট পেমেন্ট করবেন, প্রতিবছরই তিনি এই সুবিধা নিতে পারবেন।
তিনি আরও বলেন, যারা অ্যাডপশন করেন, তারা ৫ হাজার ডলার পর্যন্ত ক্রেডিট নিতে পারবেন। এই বিলের কারণে অনেকেই অ্যাডপশন করতে রাজি হবেন ও উৎসাহিত হবেন। চাইল্ড ট্যাক্স ক্রেডিট রয়েছে এখন দুই হাজার ডলার। এটি বাড়ানো হয়েছে প্রতি শিশুর জন্য ২০০ ডলার। ফলে প্রতি শিশুর জন্য আঠারো বছর হওয়ার আগ পর্যন্ত পাওয়া যাবে ২২০০ ডলার করে। আগে নিয়ম ছিল কেউ আইটেমাইজ ট্যাক্স ফাইল না করলে তিনি কোনো চ্যারিটি কন্ট্রিবিউশন করলে সে জন্য ট্যাক্স ক্রেডিট নিতে পারবেন না। এ বছর পর্যন্ত যারা ট্যাক্স ফাইল করেছেন তাদের নিয়ম হলো চ্যারিটি কন্ট্রিবিউশন নিতে হলে আইটেমাইজ ট্যাক্স ফাইল করতে হয়। এরপর তা নেওয়া যায়। কিন্তু আগামী বছর যখন ট্যাক্স ফাইল করা হবে, ওই সময়ে যারা এ বছর চ্যারিটি খাতে একক হলে দেড়শ ডলার থেকে জয়েন্ট হলে তিনশ ডলার পর্যন্ত ডোনেশন দেবেন। এ জন্য আইটেমাইজ ফাইল করতে হবে না। আইটেমাইজ ফাইল না করেও ডোনেশনের অর্থ সিঙ্গেল হলে ১৫০ ডলার আর জয়েন্ট ম্যারিড ফাইলিং হলে তিনশ ডলার পর্যন্ত নিতে পারবেন।
জাকির চৌধুরী আরও বলেন, কেউ যদি ৪০ ঘণ্টার বেশি কাজ করেন, তাহলে সেই ওভারটাইম করার কারণে তাকে একটি নির্দিষ্ট অ্যামাউন্ট পর্যন্ত কর দিতে হবে না। একজন হলে তিনি ৪০ ঘণ্টার উপরে কাজ করে যদি সেখান থেকে ১২ হাজার ৫০০ ডলার পর্যন্ত আয় করেন, তাহলে তাকে এই আয়ের ওপর কোনো কর দিতে হবে না। আর ম্যারিড ফাইলিং জয়েন্টলি হলে তারা দুজন যদি ওভারটাইম করেন ২৫ হাজার ডলার পর্যন্ত তারা ট্যাক্স মওকুফ পাবেন। ওভারটাইম থেকে এর বেশি পরিমাণ আয় করলে কেবল এর অতিরিক্ত আয়ের জন্য ট্যাক্স দিতে হবে। যারা কাজ করার কারণে বেতনের বাইরে টিপস পান, এ জন্য কর দিতে হবে না। ২৫ হাজার ডলার পর্যন্ত ট্যাক্স ছাড় রয়েছে।
অসুবিধাসমূহ :
১. গবফরপধরফ বাজেট থেকে ১ ট্রিলিয়ন ডলার কমানো।
২. নিম্ন আয়ের মানুষদের জন্য স্বাস্থ্যসেবা পাওয়া কঠিন হয়ে যাবে।
৩. ২০৩৪ সালের মধ্যে প্রায় ১ কোটি ১৮ লাখ মানুষ বিমাহীন হয়ে পড়তে পারেন।
৪. প্রবীণ নাগরিকদের জন্য ওষুধ ও চিকিৎসা খরচ বাড়বে।
৫. যারা গবফরমধঢ় বা সম্পূরক বিমা নিতে পারছেন না, তাদের ঝুঁকি বেশি।
৬. প্রায় ১.৪ মিলিয়ন অবৈধ অভিবাসী আর গবফরপধরফ সুবিধা পাবেন না।
৭. কিছু রাজ্যে অভিবাসী পরিবার ও তাদের সন্তানেরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।
বিতর্ক ও বিরোধিতা : ডেমোক্র্যাটরা এই বিলের তীব্র সমালোচনা করেছেন। হাউস মাইনরিটি লিডার হাকিম জেফরিস বলেন, ‘এই বিল আমেরিকার শ্রমজীবী মানুষ ও দরিদ্র পরিবারের জন্য ধ্বংসাত্মক হবে।’ তিনি কংগ্রেসে এ নিয়ে ইতিহাসের দীর্ঘতম একক বক্তৃতা দেন।
ডেমোক্র্যাটরা অভিযোগ করছেন, স্বাস্থ্য ও পুষ্টি সহায়তা খাতে বরাদ্দ কমিয়ে করছাঁটের ঘাটতি পূরণ করা হচ্ছে, যা লাখ লাখ মানুষকে স্বাস্থ্যসেবার বাইরে ঠেলে দিতে পারে।
তবে হোয়াইট হাউসের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ‘বিলটি নিয়ে ভুল ধারণা ছড়ানো হচ্ছে। জনগণ বুঝতে পারলে এর জনপ্রিয়তা বাড়বে।’
যেভাবে পাস হলো বিলটি : সিনেটে রিপাবলিকানদের তিনজন ‘না’ ভোট দিলেও ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্সের টাইব্রেকিং ভোটে বিলটি পাস হয়। এরপর হাউসে দীর্ঘ আলোচনা শেষে মাত্র ৪ ভোটের ব্যবধানে (২১৮-২১৪) বিলটি পাস হয়।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেন, ‘গত ছয় মাসের মধ্যে আমাদের সবচেয়ে সফল সময় এটিÑবিদেশনীতি, অর্থনীতি, সীমান্ত নিরাপত্তা- সবকিছুতেই আমরা শুধু জিতছি, জিতছি, জিতছি!’