যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্টে ‘প্যালেস্টাইন অ্যাকশন’ আন্দোলন সংগঠনকে সন্ত্রাসী হিসেবে নিষিদ্ধ করার পক্ষে ভোট দিয়েছেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ এমপি ও বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাগনি টিউলিপ সিদ্দিকসহ অন্যান্য এমপিরা।
গত ২ জুলাই (বুধবার) অনুষ্ঠিত এই ভোটাভুটিতে ৩৮৫ জন এমপি নিষেধাজ্ঞার পক্ষে ভোট দেন, বিপক্ষে ভোট পড়ে মাত্র ২৬টি। গাজায় ইসরায়েলি সামরিক আগ্রাসনের বিরুদ্ধে যুক্তরাজ্যে সংগঠিত প্রতিবাদ কর্মসূচি ও সামরিক ঘাঁটিতে হামলার মতো পদক্ষেপকে কেন্দ্র করেই সংগঠনটিকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়।
এর আগে গত মাসে ‘প্যালেস্টাইন অ্যাকশন’-এর কয়েকজন কর্মী ব্রিটেনের একটি সামরিক ঘাঁটিতে ঢুকে দুটি সামরিক বিমানে লাল রঙ ছিটিয়ে প্রতীকী প্রতিবাদ জানান। এ ঘটনার পর সংগঠনটির বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপের প্রস্তুতি নেয় ব্রিটিশ সরকার।
এই নিষেধাজ্ঞার ফলে যুক্তরাজ্য ও এর আওতাভুক্ত অঞ্চলে ‘প্যালেস্টাইন অ্যাকশন’ এখন এমন আইনি ঝুঁকি বা পদক্ষেপের সম্মুখীন, যা সাধারণত আল-কায়েদা বা আইএসের মতো সশস্ত্র সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোর ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা হয়। অর্থাৎ, সন্ত্রাসী সংগঠনে যুক্ত হওয়ার প্রতি যে ধরনের আইনি বাধা আছে— এখন থেকে আন্দোলনকারী গোষ্ঠী প্যালেস্টাইন অ্যাকশনের সাথে যুক্ত হওয়া বা সমর্থন করাও একই রকমভাবে বেআইনি হবে।
যুক্তরাষ্ট্রের স্বতন্ত্র আইনপ্রণেতা জারা সুলতানা এই সিদ্ধান্তের তীব্র সমালোচনা করে বলেন, ‘একটি স্প্রে ক্যান আর আত্মঘাতী বোমার মধ্যে তুলনা টানা শুধু হাস্যকর নয়, এটি নৈতিকভাবে বিকৃত। এটি মতপ্রকাশের স্বাধীনতা দমনে, (নৈতিক) সংহতিকে অপরাধ হিসেবে দেখাতে এবং সত্যকে ধামাচাপা দিতে আইনের অপব্যবহার।’
মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল যুক্তরাজ্যের প্রধান নির্বাহী সাশা দেশমুখ এই নিষেধাজ্ঞাকে ‘অতিরিক্ত আইনি ক্ষমতার নজিরবিহীন উদাহরণ’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন, এই সিদ্ধান্ত সরকারের হাতে এমন ক্ষমতা দিচ্ছে যার মাধ্যমে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা দমন, নজরদারি বৃদ্ধি এবং মানুষকে আটক করা সহজ হবে।
উল্লেখ্য, গাজায় ইসরায়েলি অভিযানে হাজার হাজার ফিলিস্তিনি নিহত হওয়ার পর বিশ্বজুড়ে প্রতিবাদ চলছে। যুক্তরাজ্যে ইসরায়েলের সমর্থনের বিরুদ্ধে একাধিক সংগঠন আন্দোলন করছে, যার মধ্যে অন্যতম ‘প্যালেস্টাইন অ্যাকশন’। তবে এই সংগঠনের পদক্ষেপগুলো নিয়ে বিভক্তি রয়েছে— কেউ এটিকে শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ বলছেন, কেউ আবার তাদের বিরুদ্ধে আইন লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলছেন।
বিশ্লেষকদের মতে, এমন সিদ্ধান্ত ব্রিটেনের রাজনৈতিক পরিসরে মতভেদ আরও বাড়াবে এবং গাজা সংকট নিয়ে সরকারের অবস্থানকে আরও বিতর্কিত করে তুলবে।
ঠিকানা/এসআর