‘জুলাই অভ্যুত্থানে প্রবাসীদের অবস্থান ছিল স্পষ্ট। কিন্তু তাদের কেউ সেই অবদানের কথা মনে রাখেনি। বর্তমান সরকারের উপদেষ্টাদেরও প্রবাসীদের নিয়ে কোনো মাথা ব্যথা নাই।’ ১ জুলাই মঙ্গলবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফেসবুকে এভাবেই নিজেদের হতাশার কথা জানিয়েছে প্রবাসী বাংলাদেশিদের একটি গ্রুপ। সেখানে শতাধিক ফেসবুক ব্যবহারকারী মন্তব্য করেছেন, যাদের সবাই অন্তর্বর্তী সরকারের ভূমিকার সমালোচনা করেছেন।
আবুল কাশেম লিখেছেন- ‘যে জাতি একাত্তরের মুক্তিযোদ্ধাদের ভুলে যেতে পারে। তাদের অবদান অস্বীকার করে। সেখানে জুলাই বিপ্লব আর কয়দিন মনে রাখবে।’
শাদাত শাহ নামে আরেকজন লিখেছেন- ‘যেই আসুক প্রবাসীদের কথা ভুলে যায়। রেমিট্যান্স যোদ্ধা কাগজে কলমে। বাস্তবে এরা আমাদের কামলা মনে করে। তাই আমাদেরও আর মাথা ব্যথাথা নেই, যেই আসুক।’
আবুল কাশেম এবং শাদাত শাহ’র মত কোটি প্রবাসীর একই কথা - বাংলাদেশের যে কোনো গণতান্ত্রিক আন্দোলনে প্রবাসীদের অবদান অনস্বীকার্য। তারা দেশের স্বার্থে প্রবাসের রাজপথ উত্তপ্ত রাখেন। তারা অনেকে গ্রেপ্তার হন। জেল খাটেন। আর্থিক ক্ষতির শিকার হন। কিন্তু প্রবাসীদের অবদান বা ত্যাগ কেউ স্বীকার করেন না। জুলাই গণঅভ্যুত্থানের এক বছর পূর্তি সন্নিকটে। বিগত একটি বছর সবাই আখের গুছিয়েছেন। দেশে কেউ উপদেষ্টা হয়েছেন। বড় বড় পদে আসীন হয়েছেন। কিন্তু প্রবাসীদের কথা কেউ মনে রাখেনি। কেউ স্মৃতিচারণ করে বলছে না- প্রবাসীদের অবদানের কথা।
নিউইয়র্ক প্রবাসী রাহাত সুমন বলেন, জুলাই মাস জুড়ে কত আন্দোলন করলাম। পড়ালেখা ব্যাহত করে ঘণ্টার পর ঘণ্টা রাজপথে থেকেছি। পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয়েছি। কিন্তু আমাদের এই ত্যাগের কথা সবাই সহজেই ভুলে গেল। আমরা উপদেষ্টা হতে চাই না। কোনো সুবিধাও চাই না। আমরা শুধু স্বীকৃতি চাই। সেটুকুও কেউ দিতে চায় না।
এখানে উল্লেখ্য, জুলাই মাসে নিউইয়র্কের ব্যস্ততম টাইমস স্কয়ারে প্রবাসীরা সরকারবিরোধী আন্দোলন করেছেন। শুধু সেখানে নয়, নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দপ্তর, ওয়াশিংটনে স্টেট ডিপার্টমেন্ট ও হোয়াইট হাউজের সামনে প্রতিবাদ বিক্ষোভ করেছেন। বিশ্ববাসীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। কিন্তু প্রবাসীরা সারা বছরের মতই অবহেলিত থেকে গেছেন। আন্দোলনে প্রথম সারির নেতাদের সরকারিভাবে কোনো স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি। অথচ দেশে জুলাই যোদ্ধাদের কতভাবে কৃতিত্ব নিতে দেখি।
প্রবাসী শহীদ খান, যিনি আন্দোলনে প্রথম সারিতে ছিলেন, তিনি আক্ষেপ করে বলেন, ‘এটাই বাস্তবতা, সবার ধান্দা সবাই করছে, আমরা যত লাফালাফি করি, কোন লাভ হবে না। কারণ আমরা প্রবাসী।’
এম সোহেল শিকদার বলেন, ১০০% সঠিক। প্রবাসীরা সব সময় ভোগান্তি নেন। পরে কেউ প্রবাসীদের কথা চিন্তা করে না।
এন আল মাহমুদ বলেন, মনে রাখুক আর না রাখুক আমরা প্রবাসী। আমাদের কষ্ট হলেও সমস্যা নাই। তবে আমাদের মাতৃভূমি-জন্মভূমি আমরা সবাই মিলে রক্ষা করব ইনশাআল্লাহ। বাংলাদেশ ১৮ কোটি মানুষের। আমরা প্রবাসীরা কোন প্রতিদান চাই না। জন্মভূমি রক্ষার জন্য লড়াই হবে। লড়াই চলবে।
মোহন খান বলেন, রেমিট্যান্স বন্ধ করে দাও। সবাই ধরনা দিবে প্রবাসীদের কাছে।
শাহাব উদ্দীন বলেন, সবাই আবার এক কাতারে এসে দাঁড়াও। রেমিট্যান্স শাটডাউন করে দেব। দেখি রাজনৈতিক দলগুলো তাদের কোন ক্ষমতায় দেশ পরিচালনা করে।
মেরাজ হোসেন গাজী নামে একজন ফেসবুকে লিখেছেন- জুলাই অভ্যুত্থানে দেশে আন্দোলনকারীদের সমর্থনে বিদেশে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করা প্রবাসীদের অনেকে এখনো কারাগারে। তাদের মুক্ত করতে সরকারের কাছে লিখিতভাবে দাবি জানিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা। কিন্তু সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, বিশেষ করে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় থেকে দৃশ্যমান কোনো তৎপরতা নেই। এতে করে ক্ষুব্ধ প্রবাসী পরিবারগুলো রাস্তায় নামতে বাধ্য হয়েছে।