স্মরণাতীতকালের প্রবাদ-প্রবচন : রোম ওয়াজ নট বিল্ট ইন এ ডে। অথচ সময়ের অগ্রযাত্রায় সেই রোমান সাম্রাজ্য ও সভ্যতা বিস্মৃতির অতল গর্ভে হারিয়ে গেছে। আর সাম্প্রতিক কালে প্রযুক্তি-প্রাচুর্য-সমৃদ্ধি, কৃষ্টি-সংস্কৃতি, পারমাণবিক শক্তিমত্তা ও প্রতিপত্তির বিচারে যুক্তরাষ্ট্রকে বলা হয় বিশ্বের অপ্রতিদ্বন্দ্বী পরাশক্তি ও তিলোত্তমা। এর ভবিষ্যৎ গতিপথ ও পরিণতি সময়ই নির্ধারণ করবে নিজস্ব নিয়মে। যাহোক, সারা বিশ্বের অসংখ্য ভাগ্যান্বেষী জনগোষ্ঠীর দুই শতাধিক বছরের নিরবচ্ছিন্ন ত্যাগ এবং বিন্দু বিন্দু ঘাম ও শ্রমে গড়ে উঠেছে আমেরিকার প্রাচুর্য ও সমৃদ্ধি। অনবদ্য কারণে দুনিয়াজুড়ে আমেরিকার পরিচিতি বিশ্ব অভিবাসীর দেশ হিসেবে।
ঐতিহাসিক তথ্য-উপাত্ত অনুসারে, ১৭৭৬ সালের ২ জুলাই দ্য কন্টিনেন্টাল কংগ্রেস আমেরিকার স্বাধীনতার পক্ষে ভোট প্রদান করে এবং ওই তারিখে ডিক্লারেশন অব ইন্ডিপেন্ডেন্স (স্বাধীনতার ঘোষণা) আনুষ্ঠানিকভাবে গৃহীত হয়। আর ৪ জুলাই ডিক্লারেশন অব ইন্ডিপেন্ডেন্স কংগ্রেসে পাস হয়। এরই পটভূমিতে জন অ্যাডামস ২ জুলাই স্বাধীনতা দিবস উদ্্যাপনের প্রস্তাব করলেও গোটা জাতি তা নাকচ করে দেয় এবং ৪ জুলাই আনুষ্ঠানিকভাবে মহা সাড়ম্বরে স্বাধীনতা দিবস উদ্্যাপনের সূত্রপাত করে। সেই ধারাবাহিকতায় প্রতিবছরের মতো এবারও ৩৮ লাখ বর্গমাইল বা ৯৮ লাখ ৪১ হাজার ৪৫৫ বর্গকিলোমিটার আয়তনবিশিষ্ট ৩৪ কোটি জনসংখ্যা অধ্যুষিত যুক্তরাষ্ট্রের বাসিন্দারা স্বদেশে ও বিদেশে বর্ণাঢ্য আয়োজনে ২৪৯তম স্বাধীনতা দিবস উদ্্যাপনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। যুক্তরাষ্ট্রের এই স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে আমেরিকানসহ সারা বিশ্বের কল্যাণকামী জনতার আনন্দ-উচ্ছ্বাস ও প্রত্যাশা উথলে উঠছে। তবে অধিকৃত গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর বর্বর হামলা, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, ইসরায়েল-ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলা-পাল্টা হামলায় শত শত লোকের প্রাণহানি এবং সহায়-সম্পদের অবর্ণনীয় ক্ষয়ক্ষতি, সর্বোপরি পারমাণবিক যুদ্ধের আশঙ্কায় গোটা বিশ্ব তটস্থ। এই ভয়াবহ ও নৈরাজ্যকর পরিস্থিতির চটজলদি অবসানই সমগ্র বিশ্ববাসীর বর্তমান মুহূর্তের সর্বাধিক আরাধ্য।
সীমানা : আলাস্কা ও হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জ নিয়ে গঠিত দুটি স্টেটসহ ছোট-বড় ৫০টি ফেডারেল রিপাবলিক স্টেট নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র গঠিত। এর উত্তরে রয়েছে কানাডা, পূর্বে আটলান্টিক মহাসাগর, দক্ষিণে মেক্সিকো উপসাগর ও মেক্সিকো এবং পশ্চিমে প্রশান্ত মহাসাগর। আকার-আয়তনের বিচারে সমগ্র বিশ্বে রাশিয়া, কানাডা ও চীনের পর চতুর্থ বৃহত্তম রাষ্ট্রের স্থান দখল করেছে যুক্তরাষ্ট্র। ১৭৯০ সালের ডিস্ট্রিক্ট কলম্বিয়ার সম্প্রসারিত অংশসহ ফেডারেল ক্যাপিটল অঞ্চল ওয়াশিংটনে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় রাজধানী অবস্থিত।
ভূ-প্রকৃতি : সুমেরু বা উত্তর মেরু থেকে প্রায় গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অঞ্চল, আর্দ্র বনভূমি থেকে শুষ্ক-ঊষর মরুভূমি অঞ্চল, সুউচ্চ পর্বতচূড়া থেকে সুউচ্চ মালভূমি অঞ্চল নিয়ে অনন্য বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত যুক্তরাষ্ট্রের ভূপ্রকৃতি গঠিত। বিচিত্র বর্ণ-ধর্ম-সংস্কৃতি-গাত্রবর্ণ-ভাষা-কৃষ্টি আমেরিকার জনগোষ্ঠীর অতুলনীয় বৈশিষ্ট্য। মূলত ন্যাটিভ আমেরিকানস (আমেরিকান ইন্ডিয়ানস, এলিউটস ও এস্কিমো) ছাড়াও বিশ্বের সকল নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠী, ভাষাভাষী, ধর্মাবলম্বী, সংস্কৃতির অনুসারী এবং গাত্রবর্ণবিচিত্র জনগোষ্ঠী নিয়ে আমেরিকা বিশ্ব অভিবাসীর দেশ হিসেবে স্বীকৃত। আমেরিকার মোট জনসংখ্যার বৃহত্তর অংশ শ্বেতাঙ্গ হলেও আফ্রিকান আমেরিকান, হিস্পানিক, এশিয়ান আমেরিকানসহ বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা অভিবাসী-আমেরিকানের সংখ্যা বর্তমানে উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে। নিকট ভবিষ্যতে শ্বেতাঙ্গ সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারানোর আশঙ্কায় উগ্রবাদী আমেরিকানরা মনে মনে শঙ্কিত। যাহোক, আকার-আয়তনের তুলনায় সামগ্রিকভাবে অদ্যাবধি আমেরিকার জনসংখ্যা অত্যন্ত কম এবং সমগ্র আমেরিকায় জনবসতিশূন্য অসংখ্য বিস্তীর্ণ ভূখণ্ড রয়েছে। এমনকি কোনো কোনো জনবসতিশূন্য ঘন জঙ্গলাকীর্ণ ভূখণ্ডের আয়তন বাংলাদেশের আকার-আয়তনের চেয়ে ঢের বেশি।
সম্পদ ও প্রাচুর্য : অভ্যন্তরীণ স্থূল উৎপাদনের (গ্রস ডমেস্টিক প্রডাক্ট) বিচারে আমেরিকা বিশ্বের সেরা অর্থনৈতিক শক্তি হিসেবে স্বীকৃত। অঢেল প্রাকৃতিক সম্পদ, রাশি রাশি কৃষিজাত পণ্য এবং শিল্প-কারখানায় সমৃদ্ধ যুক্তরাষ্ট্রকে বিশ্বের অন্যতম অর্থনৈতিক নিয়ামক শক্তি হিসেবে স্বীকার করা হয়। বিশ্বজনীন নানাবিধ উন্নয়ন ও জনকল্যাণমূলক এবং বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মূলধন তহবিলে আমেরিকার উল্লেখযোগ্য বিনিয়োগ যুক্তরাষ্ট্রকে মোড়লের মর্যাদা দিয়েছে। বস্তুত, ইউরোপীয় কলোনিগুলোর মধ্যে সর্বপ্রথম আমেরিকাই নিজস্ব মাতৃভূমিকে পরাধীনতার লৌহশৃঙ্খল সাফল্যের সঙ্গে ছিন্ন করেছে। আবার সরকার নয়, বরং নাগরিকদের ওপরই দেশের সার্বভৌমত্ব নির্ভর করে নীতিমালার ভিত্তিতে নিজ ভূখণ্ডে প্রথম স্বাধীন ন্যাশন গঠন করেছে।
যুদ্ধবিগ্রহ ও সিভিল ওয়ার : স্বাধীনতা অর্জনের কয়েক দশক পরও আমেরিকা একাধিক দফা বহিঃশত্রুর সশস্ত্র হামলার শিকার হয়েছিল। আমেরিকান রেভল্যুশনারি ওয়ারের সময় ব্রিটিশ বাহিনী ঝটিকা হামলা চালিয়ে নামমাত্র প্রতিরোধের মুখে একবার ফিলাডেলফিয়ার রাজধানী দখল করে নিয়েছিল এবং মূল্যবান স্থাপনাগুলো নিশ্চিহ্ন ও সহায়-সম্পদের বর্ণনাতীত ক্ষতিসাধন করেছিল। পরে ১৮১২ সালে মেক্সিকান-আমেরিকান যুদ্ধ চলাকালে ব্রিটিশ বাহিনী প্রথম এবং একমাত্র যুদ্ধে ১৮১৪ সালে আমেরিকার রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসি দখল করে নিয়ে সবকিছু পুড়িয়ে ভস্মীভূত করে দিয়েছিল। এদিকে স্বাধীনতার অব্যবহিত পর থেকেই একশ্রেণির উগ্র বর্ণবাদী সম্প্রদায় আফ্রিকান-আমেরিকান, ল্যাটিনো, এশিয়ান-আমেরিকানসহ তাবৎ জনগোষ্ঠীকে নিম্নশ্রেণির আমেরিকান জ্ঞানে তাদেরকে দাসত্বের শৃঙ্খলে আবদ্ধ রাখার পাঁয়তারা শুরু করেছিল। ফলে সর্বশ্রেণির আমেরিকানের শ্রমে-ঘামে গড়ে ওঠা আমেরিকায় রাতারাতি বর্ণবাদ মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছিল এবং সমগ্র আমেরিকা রেড স্টেট ও ব্লু স্টেটÑএ দুটি বলয়ে বিভক্ত হয়ে পড়েছিল। আমেরিকাকে সেই ভয়াবহ বর্ণবাদ ও দাসত্বের শৃঙ্খল থেকে মুক্তিদানের লক্ষ্যে ষোড়শ প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিঙ্কনের নেতৃত্বে ১৮৬০ সালে সংঘটিত হয়েছিল সিভিল ওয়ার বা গৃহযুদ্ধ। সেই গৃহযুদ্ধকালে কনফেডারেট ও ইউনিয়ন আর্মিরা একাধিক দফা পারস্পরিক যুদ্ধে লিপ্ত হয় এবং সহায়-সম্পদের অবর্ণনীয় ক্ষতি সাধিত হয়। অবশ্য গৃহযুদ্ধের অবসানে দাসমুক্তি সনদ প্রণীত হয় এবং ১৮৬৫ সালের ১৯ জুন তা আনুষ্ঠানিকভাবে কার্যকর হওয়ায় আফ্রিকান-আমেরিকানরা দাসত্বের অভিশাপমুক্ত হন। তাই প্রতিবছর ১৯ জুনকে আফ্রিকান-আমেরিকানরা প্রকৃত স্বাধীনতা দিবস হিসেবে পালন করে থাকেন।
বিশ্বের অপ্রতিদ্বন্দ্বী ও অদ্বিতীয় পরাশক্তি : বেশ কয়েকটি অভ্যন্তরীণ ও বহিঃশত্রুর হামলা সার্থকভাবে মোকাবিলা করার মধ্য দিয়ে স্বাধীনতা লাভের প্রথম দেড় শ বছরের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র যুদ্ধবিগ্রহে বিশ্বে শীর্ষ স্থান দখল করে। অতঃপর বিশ্বজুড়ে একচ্ছত্র প্রাধান্য প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সামরিক অভিযান পরিচালনা করে। আবার বিশ শতকে আমেরিকা বিশ্বের অন্যতম পরাশক্তি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করায় প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জাপান-জার্মানি ও হিটলারের নাৎসি বাহিনীর সাঁড়াশি আক্রমণের লক্ষ্যস্থলে পরিণত হয়। এদিকে ১৯৪১ সালের ৭ ডিসেম্বর ৩৫৩টি ইমপেরিয়াল জাপানিজ এয়ারক্রাফট হাওয়াই এবং অপারেশন ওয়ান ও অপারেশন জেডের আওতায় হনলুলুতে আঘাত হানে। পার্ল হারবার নামে সমধিক খ্যাত ওই হামলায় আমেরিকার ব্যাপক ক্ষতি হয়। পরবর্তী সময়ে প্রতিশোধমূলক ব্যবস্থা হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র ১৯৪৫ সালের আগস্টের প্রথম সপ্তাহে জাপানের হিরোশিমা ও নাগাসাকিতে পারমাণবিক বোমার বিস্ফোরণ ঘটিয়ে চোখের নিমেষে কয়েক লাখ লোককে খুন করে এবং পারমাণবিক যুদ্ধাস্ত্র-সমৃদ্ধ বিশ্বের অপ্রতিদ্বন্দ্বী ক্ষমতাধর রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। এরই ধারাবাহিকতায় যুক্তরাষ্ট্র বিজ্ঞান-প্রযুক্তি-মহাকাশ অভিযান ইত্যাদির উন্নয়ন ও উৎকর্ষ সাধনের মুখরোচক বুলির আড়ালে সমরাস্ত্র তৈরির পেছনে রাশি রাশি অর্থ ব্যয় শুরু করে। স্নায়ুযুদ্ধ পর্যন্ত সোভিয়েত রাশিয়া যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিপক্ষ থাকলেও বর্তমানে বিভক্ত রাশিয়া, চীন, ভারত কিংবা পারমাণবিক অস্ত্রসমৃদ্ধ রাষ্ট্রগুলোর তুলনায় যুক্তরাষ্ট্র বহুলাংশে অপ্রতিদ্বন্দ্বী।
নানাবিধ অসংগতি ও অসামঞ্জস্য : ইরানে পারমাণবিক হামলার ব্যাপারে ইসরায়েলের পক্ষাবলম্বন, বাস্তুহারা ফিলিস্তিনিদের প্রতি বিমাতাসুলভ আচরণ, ইরানে হামলার পরিকল্পনা ইত্যাদি যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকাকে চরমভাবে প্রশ্নবিদ্ধ করছে। ধনতান্ত্রিক আমেরিকা স্বদেশের জনগণকে ব্যক্তিগত অগ্রগতি ও আর্থিক সমৃদ্ধি অর্জনের ক্ষেত্রে বর্ণনাতীত সুযোগ-সুবিধা প্রদান করে। তাই আমেরিকায় ধনী-দরিদ্রের ব্যবধান হু হু করে বেড়েছে এবং বর্তমানে রাষ্ট্রীয় মোট সম্পদের ৯৯ শতাংশই উচ্চবিত্তশালীদের কুক্ষিগত রয়েছে। দেশের আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ প্রশ্নেও ২৪৮ বছর বয়সী যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা তীব্র সমালোচনার দাবি রাখে। অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র লাখ লাখ নিরীহ আমেরিকানের প্রাণবায়ু ছিনিয়ে নিলেও প্রকৃত প্রস্তাবে প্রভাবশালী রাইফেলস অ্যাসোসিয়েশনের লবিংয়ের মুখে অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ন্ত্রণে অদ্যাবধি কোনো কঠোর আইন প্রণয়ন ও কার্যকর সম্ভব হয়নি। ফলে অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্রের ঝনঝনানি এবং নিরীহ আমেরিকানের প্রাণহানিও বন্ধ হচ্ছে না। আবার কর্মক্ষেত্র-অফিস-আদালতে পুরুষ ও মহিলা এবং বৈধ ও অবৈধ শ্রমিকদের মজুরি-বৈষম্য যুক্তরাষ্ট্রের মূল নীতিমালাকে প্রশ্নবিধ করেছে। বিভিন্ন ক্ষেত্রে নিয়োগ, আগ্নেয়াস্ত্রসহ বিভিন্ন সন্দেহজনক অপরাধীকে গ্রেপ্তার, পুলিশের গুলিতে প্রাণহানি ইত্যাদি ক্ষেত্রে আইনের সুষম প্রয়োগের অভাব সামগ্রিকভাবে বিচার-ব্যবস্থাকেও মাঝে মাঝে প্রশ্নবিদ্ধ করে। তার ওপর উগ্র জাতীয়তাবাদের দোহাই এবং বৈধ-অবৈধর মৌলিক বৈষম্য ছাড়াও বিভিন্ন ধরনের হয়রানি, হামলা, গ্রেপ্তার ইত্যাদি প্রসঙ্গে সর্বত্র বর্ণবৈষম্যের তাপ এখনো কম-বেশি আঁচ করা যায়।
বিশ্ববাসীর কামনা : ইসরায়েল-ইরান সংঘাত পারমাণবিক বিশ্বযুদ্ধে মোড় নেওয়ার আশঙ্কা, বিশ্বজুড়ে পরিবেশের ভারসাম্যহীনতা, বায়ুমণ্ডলের উষ্ণতা বৃদ্ধি, মাত্রাতিরিক্ত কার্বন নির্গমন, মেরু অঞ্চলে বরফগলার পরিমাণ বৃদ্ধি, সর্বোপরি জগৎজুড়ে নিত্যনতুন যুদ্ধের দামামা মানব সমাজ ও সভ্যতাকে অত্যাসন্ন ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিচ্ছে। আবহাওয়া বিশেষজ্ঞদের বর্ণনানুসারে, মেরু অঞ্চলে বরফগলার বর্তমান হার অব্যাহত থাকলে ২০৫০ সাল নাগাদ এশিয়া মহাদেশের মতো ভূখণ্ড পানির নিচে তলিয়ে যাবে। আবার করোনার বর্ণনাতীত ধ্বংসযজ্ঞের ভয়াবহতা কাটিয়ে ওঠার আগেই নতুনভাবে করোনা সংক্রমণের সংবাদে বিশ্ববাসীর কম্প দিয়ে জ্বর শুরু হয়েছে। তাই ধরাপৃষ্ঠে মানুষের অস্তিত্ব বজায় রাখার বৃহত্তর স্বার্থেই অবিলম্বে বিশ্বজুড়ে অভিনব পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি ও বিক্রি বন্ধ করতে হবে। এ ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রকে অবশ্যই মধ্যস্থতাকারীর বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করতে হবে।
স্মর্তব্য, টাইম ইউ ওল্ড জিপসিম্যান কবিতার শাশ্বত বাণী অনুসারে, প্রাচুর্য-শৌর্যবীর্য-প্রভাব-প্রতিপত্তি বস্তুত ভবঘুরে যাযাবর তুল্য। সদা পরিভ্রমণরত শকটে চেপে সমৃদ্ধি-সভ্যতা ও শৌর্যবীর্য দেশ থেকে দেশান্তরে চষে বেড়ায়। ফলে রাজ্য-সাম্রাজ্যের উত্থান-পতন; রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার হাতবদল মূলত সময়ের চিরায়ত নিয়মেই সংঘটিত হয়। তাই ২৪৯তম স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে আমেরিকার গতিশীল নেতৃত্বে বিশ্বজুড়ে মানবীয় শক্তির উত্থান ও দানবীয় শক্তির পতনই সর্বমহলের কাম্য।
লেখক : সহযোগী সম্পাদক, ঠিকানা, নিউইয়র্ক।