প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে টেলিফোনে আলাপ করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো ইউনূস-রুবিও ফোনালাপে দ্বিপক্ষীয় রুবিও। গত ৩০ জুন সোমবার সন্ধ্যা ৭টা ৩০ মিনিটের দিকে দুই নেতার এই ফোনালাপ হয়। আলাপে ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা জোরদারে দুই নেতা ঐকমত্য হন। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম জানান, প্রায় ১৫ মিনিট স্থায়ী ফোনালাপটি ছিল ‘উষ্ণ, সৌহার্দ্যপূর্ণ এবং গঠনমূলক’, যা দুই দেশের চমৎকার দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ককে প্রতিফলিত করে।
এদিকে ওয়াশিংটন ডিসি থেকে দেওয়া এক প্রেস নোটে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ট্যামি ব্রুস জানান, যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও আজ (সোমবার) বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে কথা বলেছেন। ফোনালাপে তারা যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশের মধ্যে অর্থনৈতিক অংশীদারত্ব আরও গভীর করার বিষয়ে আলোচনা করেন। উভয়েই ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে নিরাপত্তা, স্থিতিশীলতা এবং গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ সমুন্নত রাখার ক্ষেত্রে দুই দেশের অভিন্ন অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন।
বৈঠকে উভয় নেতা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য নিয়ে আলোচনা, চলমান সংস্কার প্রক্রিয়া, গণতান্ত্রিক উত্তরণ, আসন্ন সাধারণ নির্বাচন এবং রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য সহায়তাসহ পারস্পরিক স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করেন। রুবিও বাংলাদেশের সংস্কার অ্যাজেন্ডা এবং আগামী বছরের শুরুতে নির্বাচন অনুষ্ঠানের পদক্ষেপের প্রতি সমর্থন ব্যক্ত করেন। যুক্তরাষ্ট্রকে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় রফতানি গন্তব্য এবং রেমিট্যান্সের শীর্ষ উৎস হিসেবে উল্লেখ করে উভয় নেতা শিগগিরই শুল্ক নিয়ে আলোচনা শেষ করার আশাবাদ ব্যক্ত করেন, যা দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য বৃদ্ধির পথ প্রশস্ত করবে।
প্রফেসর ইউনূস উল্লেখ করেন, তার জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা সম্প্রতি ওয়াশিংটনে ডেপুটি সেক্রেটারি অব স্টেট ল্যান্ডাউয়ের সঙ্গে একটি চমৎকার বৈঠক করেছেন এবং দ্বিপক্ষীয় বন্ধন জোরদারে তাদের প্রতিশ্রুতির কথা জোর দিয়েছেন। বাংলাদেশের ওপর পারস্পরিক শুল্ক ব্যবস্থা ৯০ দিনের জন্য স্থগিতের অনুরোধে ইতিবাচক সাড়া দেওয়ায় প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে ধন্যবাদ জানান ইউনূস। তিনি বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের বাণিজ্য অ্যাজেন্ডায় কার্যকরভাবে সাড়া দিতে আমরা একটি প্যাকেজ চূড়ান্ত করতে আপনার কর্মকর্তাদের সঙ্গে কাজ করছি।’
প্রধান উপদেষ্টা ইউনূস পুনর্ব্যক্ত করেন, আগামী বছরের প্রথম দিকে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে এবং তার সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে চলমান সংলাপের ফলে দেশের রাজনৈতিক ব্যবস্থার অতিপ্রয়োজনীয় সংস্কার ঘটবে। তিনি বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন নির্বাচনী ব্যবস্থা পুনর্গঠনে কঠোর পরিশ্রম করছে, যা বিগত সরকার ধ্বংস করে দিয়েছিল। আমাদের তরুণরা জীবনে প্রথমবারের মতো ভোট দেবে। প্রধান উপদেষ্টা রোহিঙ্গা শরণার্থীদের অব্যাহত উদার সহায়তার জন্য ওয়াশিংটনের প্রশংসা করেন।
সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, নির্বাচনের সময়কাল নিয়ে যে সংশয় দেখা দিয়েছিল, প্রধান উপদেষ্টার এ বক্তব্যের পর তা কেটে গেছে। ফলে রাজনৈতিক অঙ্গনে স্বস্তি ফিরেছে, জেগেছে ভোটের আশা।
এদিকে আগামী বছরের শুরুতেই বাংলাদেশে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে বলে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিওকে জানানোয় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে সাধুবাদ জানিয়েছেন ব্যবসায়ী মহল। তারা বলেন, নির্বাচন নিয়ে সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলোর ভিন্ন ভিন্ন বক্তব্যে সংকট আরও বাড়িয়ে দেওয়ার যে শঙ্কা তৈরি হয়েছিল, প্রধান উপদেষ্টা ও মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ফোনালাপে তার কিছুটা দূর হয়েছে। ব্যবসায়ীরা বলেন, নির্বাচিত সরকার এলে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীরা আস্থা পাবেন। তারা নতুন বিনিয়োগের বিষয়ে ইতিবাচক চিন্তাভাবনা শুরু করবেন। দেশে ব্যবসা-বাণিজ্য, বিনিয়োগের জন্য স্থিতিশীল পরিবেশ দরকার। রাজনৈতিক পরিস্থিতি স্থিতিশীল থাকলে ব্যবসা-বাণিজ্যের পরিবেশটাও ঠিক থাকে।
এ বিষয়ে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সভাপতি তাসকিন আহমেদ বলেন, বাংলাদেশ একটি দীর্ঘমেয়াদি অর্থনৈতিক রূপান্তরের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে। ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসারে স্থিতিশীল ও গণতান্ত্রিক পরিবেশ অপরিহার্য। আমরা আশা করি, একটি শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের মাধ্যমে জাতির এগিয়ে যাওয়ার পথ তৈরি হবে। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে আলাপকালে প্রধান উপদেষ্টার বার্তা ও ভবিষ্যতের জন্য অঙ্গীকারকে আমরা সাধুবাদ জানাই। ব্যবসায়ী সমাজ, বিশ্বাস করে টেকসই প্রবৃদ্ধি এবং বৈদেশিক বিনিয়োগ আকর্ষণে একটি গ্রহণযোগ্য ও স্বচ্ছ রাজনৈতিক প্রক্রিয়া অপরিহার্য। এর মাধ্যমে স্থিতিশীল ও অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী বাংলাদেশ আশা করা সম্ভব।
বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রির (বিসিআই) সভাপতি আনোয়ারুল আলম চৌধুরী পারভেজ বলেন, ব্যবসায়ী মহল চায় যাতে একটি সুন্দর নির্বাচন হোক। একটি প্রক্রিয়ায় যাওয়া উচিত। কেননা, কেউ কোনো কিছু বুঝতে পারছে না। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে শঙ্কা রয়েছে। জাতীয় নির্বাচনের ঘোষণায় ব্যবসায়ীদের মধ্যে আস্থা বাড়বে। এতে বিনিয়োগসহ সার্বিক অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।