Thikana News
১৮ অক্টোবর ২০২৪
  1. ই-পেপার
  2. চলতি সংখ্যা
  3. বিশেষ সংখ্যা
  4. প্রধান সংবাদ
  5. আমেরিকার অন্দরে
  6. বিশ্বচরাচর
আমেরিকা শুক্রবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৪


 

দলে দলে চলছে নানা সমীকরণ

দলে দলে চলছে নানা সমীকরণ


একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে দেশের প্রধান দুই শক্তিমান রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপিকে ঘিরে ছোট দলগুলো নানা তৎপরতা চালায়। বড় দলগুলোও নিজেদের সুবিধা-অসুবিধা মাথায় রেখে কাউকে কাছে টেনে নেয় আবার কাউকে দূরে ঠেলে দেয়। একাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে বছরজুড়েই চলে এমন নানা সমীকরণ।
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন সামনে রেখেও দলগুলো ঠিক একই তৎপরতা চালাচ্ছে। চলতি বছরের প্রথম দিক থেকেই দলে দলে নানা সমীকরণ শুরু হয়েছে। আওয়ামী লীগের সঙ্গে কেন্দ্রীয় ১৪ দলের নির্বাচনী জোট রয়েছে। কিন্তু একাদশ সংসদ নির্বাচনের পর যথাযথ মূল্যায়ন করা হয়নি বলে ১৪ দলের শরিকরা গোপনে ও প্রকাশ্যে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে। তাতেও ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ খুব একটা পাত্তা দেয়নি, জোট নেতাদের ক্ষোভকে আমলে নেয়নি। ওই জোটের সঙ্গে তিন বছরেরও বেশি সময় পর গত বছরের মার্চে বৈঠক হয় আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার। এরপর কেটে যায় আরও ১৬ মাস। কিন্তু নির্বাচন যখন ঘনিয়ে এসেছে, তখন সেই অবস্থানে থাকেনি আওয়ামী লীগ। গত ১৯ জুলাই ১৪ দলীয় জোটের শরিকদের সঙ্গে বৈঠকে বসে তাদের অভিমান ভুলিয়ে দেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওই বৈঠকের পর ইতিমধ্যে রাজপথে একাধিক কর্মসূচি পালন করে সরব উপস্থিতি জানান দিয়েছে দীর্ঘদিন ঘুমন্ত থাকা ক্ষমতাসীন জোটটি।
জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে থেমে নেই বিরোধী দলগুলোও। বিরোধী শিবিরেও চলছে দৃশ্যমান এবং অদৃশ্য নানা সমীকরণ। একাদশ নির্বাচনে যে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ব্যানারে এবং ফ্রন্টের নেতা ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে বিরোধী দলগুলো নির্বাচনে অংশ নেয়, সেই জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ভোটের পর আর সক্রিয় হয়নি। ফ্রন্টের নেতৃত্বে বিএনপি ইতিহাসের ভয়াবহ ফল দেখেছে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সিনিয়র সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন তো প্রকাশ্যেই বলে দিয়েছেন, ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে ভোটে যাওয়া তাদের ঠিক হয়নি। ফলে ভোটও শেষ, ফ্রন্টও শেষ। এরপর বাকি থাকে ২০ দলীয় জোট। চলতি বছরের শুরুতেই রাজনৈতিক অঙ্গনে স্পষ্ট হয়ে যায়, ২০ দলীয় জোট কার্যত অচল। জোটের প্রধান দুই শরিক বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে দূরত্ব স্পষ্ট হয়ে যায়। ২০ দলে থাকা ছোট দলগুলোও নিজেদের মতো করে নানা জোট করে। কেউ ১২ দলীয় জোট, আবার কেউ জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট গঠন করে মাঠে সক্রিয় রয়েছে।
এ ছাড়া নির্বাচনকে সামনে রেখে গঠিত হয় আরও অনেক জোট। ইতিমধ্যে ১১টি দলের সমন্বয়ে গঠিত হয় ‘নাগরিক মঞ্চ’। গত বছরের আগস্টে গঠিত হয় ‘গণতন্ত্র মঞ্চ’। সাতটি দলের সমন্বয়ে গণতন্ত্র মঞ্চ যাত্রা শুরু করলেও এ বছরের মে মাসের শুরুতে গণঅধিকার পরিষদ মঞ্চ ত্যাগ করে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পরের বছর ২০১৯ সালে এলডিপির সভাপতি কর্নেল (অব.) অলি আহমদের নেতৃত্বে আত্মপ্রকাশ করে ‘জাতীয় মুক্তি মঞ্চ’।
এর বাইরে চরমোনাই পীরের দল ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশকে সবাই মনে করত, তারা আওয়ামী লীগের সঙ্গে আঁতাত করে চলছে। আওয়ামী লীগের অধীনে চলতি বছরের মে-জুনে অনুষ্ঠিত সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অংশ নেওয়ার পর বিষয়টি আরও স্পষ্টভাবে ধারণা করে মানুষ। কিন্তু ভোটের মাঠে হামলার শিকার হওয়ার পর ফল বর্জন ও অন্য সিটিতে ভোট বর্জনের পর ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশকে নিয়ে মানুষ নতুন কথা বলতে শুরু করেছে। এদিকে মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মৃত্যুর পর দলটির নায়েবে আমিরের প্রকাশ্যে সাঈদীর জন্য দোয়া চাওয়া এবং দলের পক্ষ থেকে বিবৃতি দেওয়ার পর দলটি আসলে এখন কোন দিকে যাচ্ছে, তা নিয়ে নানা কথা হচ্ছে। একইভাবে বিএনপি-জমায়াতের সম্পর্ক নিয়েও নানা কথা হচ্ছে। বিশেষ করে, মাওলানা সাঈদীর মৃত্যুর পর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের পৃথক বিবৃতি দেওয়ার পর রাজনীতিতে নানা কথা হচ্ছে। বলা হচ্ছে, ভোটের সমীকরণের অংশ এটি। কারণ, জামায়াতের আমির ও সেক্রেটারি জেনারেলের ফাঁসি কার্যকর করার পরও বিএনপি কোনো কথা বলেনি, এখন বিবৃতি দিচ্ছে। ফলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা এটিকে বিরোধী জোটের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে নয়া সমীকরণ বলে মনে করছেন।
১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর থেকে বলা যায়, প্রায় সব সংসদ নির্বাচনেই অধিকাংশ ছোট দল বড় দলের সঙ্গে দৃশ্য অথবা অদৃশ্য সমঝোতা করে নির্বাচনে অংশ নিয়েছে। ১৯৯৯ সালের পর এসে রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচনের আগে জোট-মহাজোট গঠন করে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে। সর্বশেষ একাদশ জাতীয় নির্বাচনের আগেও এমন নানা সমীকরণ হয়েছে। তখন বিএনপি ২০ দলীয় জোটের ওপর ভরসা কমিয়ে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ব্যানারে বিকল্প প্ল্যাটফর্ম তৈরি করে। আবার ২০ দলীয় জোট থেকে সরে দাঁড়ায় বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ) ও ন্যাশনাল ডেমোক্র্যাটিক পার্টি (এনডিপি)। ২০১৮ সালের ১৬ অক্টোবর ঘোষণা দিয়ে তারা জোট ছাড়ে। পরে তারা অধ্যাপক ডা. একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন একটি জোটে যোগ দেয়। এ ছাড়া ২০১৮ সালের অক্টোবরের শেষ দিকে এসে ডা. চৌধুরীর হাতে ফুল দিয়ে তার দল বিকল্পধারা বাংলাদেশে যোগ দেন বিএনপির সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান ও খালেদা জিয়ার পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা শমসের মবিন চৌধুরী, ছাত্রদলের প্রথম নির্বাচিত সভাপতি ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী গোলাম সারোয়ার মিলন এবং এরশাদ সরকারের সাবেক মন্ত্রী নাজিম উদ্দিন আল আজাদ।
মূলত নির্বাচনে বিজয়ী হতে বড় দলগুলো নানা কৌশল করে থাকে। ছোট দলগুলোও কৌশলী ভূমিকায় থাকে। মাঠে লড়াই করার মতো সামর্থ্য না থাকায় ছোট দলগুলো বড় দলের ছায়ায় আশ্রয় নেয়।

কমেন্ট বক্স