ভারতের চন্দ্রযান-৩ এর ল্যান্ডার বিক্রম বুধবার সফলভাবে চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে অবতরণ করেছে। যেখানে এর আগে কোনো দেশ পৌঁছাতে পারেনি। চার বছর ধরে প্রায় এক হাজার প্রকৌশলী ও বিজ্ঞানীর অক্লান্ত পরিশ্রমের ফসল ভারতের চন্দ্রযান-৩। কোভিড-১৯ মহামারীর কারণে শুধু ভারত নয় বরং পুরো বিশ্ব যখন অচল তখনও এ মানুষগুলো দিনরাত এক করে কাজ করে গেছেন।
এ মিশনে প্রায় ৬১০ কোটি রুপি খরচ হয়েছে বলে জানিয়েছেন ভারতের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ইসরো।
চন্দ্রযান-৩ এর পেছনে মূলত যাদের মস্তিষ্ক কাজ করেছে তাদের কয়েকজনকে নিজেদের প্রতিবেদনে তুলে ধরেছে এনডিটিভি।
শ্রীধর পানিকার সোমনাথ, প্রধান, ভারতের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা (ইসরো)
সোমনাথ মানে চাঁদের দেবতা। ভারতের সফল চন্দ্রাভিযানে নেতৃত্ব দিয়ে নিজের নামের প্রতি সুবিচার করেছেন ইসরো প্রধান।
গত ১৪ জুলাই এলভিএম-৩ বা বাহুবলী নামের যে রকেটটির মাথায় চেপে চন্দ্রযান-৩ মহাকাশে যাত্রা করেছিল সেই রকেটটির নকশায় সহায়তা করেছেন সোমনাথ।
যাকে একজন যোগ্য নেতা বলে মানেন ইসরোর বিজ্ঞানী ও প্রকৌশলীরা। ভারতের মহাকাশ সংস্থার (ইসরো) প্রধান হিসেবে তার দায়িত্ব ছিল উৎক্ষেপণের আগে চন্দ্রযান-৩ এর সবকিছু পরীক্ষা করে দেখা। ব্যাঙ্গালুরুর বিখ্যাত ইন্ডিয়ান ইন্সটিটিউট অব সাইন্স এর সাবেক শিক্ষার্থী তিনি।
উন্নিকৃষ্ণান নায়ার এস, পরিচালক, বিক্রম সারাভাই স্পেস সেন্টার, থিরুভানান্থাপুরাম
রকেট নিয়ে ভারতের প্রধান গবেষণা প্রতিষ্ঠানের পরিচালক উন্নিকৃষ্ণান নায়ারও একজন অ্যারোস্পেস ইঞ্জিনিয়ার এবং ব্যাঙ্গালুরুর ইন্ডিয়ান ইন্সটিটিউট অব সাইন্স এর সাবেক শিক্ষার্থী।
তিনি হিউম্যান স্পেস ফ্লাইট সেন্টার এর প্রথম পরিচালক এবং ভারতের গগনযান প্রকল্পের বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ মিশনে নেতৃত্ব দিয়েছেন। তার নেতৃত্বে ভারতের স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ রকেট এলভিএম-৩ এর সাফল্যের হার শতভাগ।
ভীরামুথুভেল পি, প্রকল্প পরিচালক, চন্দ্রযান-৩ অভিযান, ইউআর রাও স্যাটেলাইট সেন্টার, বেঙ্গালুরু
চন্দ্রযান-৩ অভিযানের প্রকল্প পরিচালক প্রযুক্তিতে স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী ভীরামুথুভেল গত চার বছর ধরে চন্দ্রযান-৩ কে ঘিরেই জীবন অতিবাহিত করেছেন। তিনি ভারতের দ্বিতীয় চন্দ্রাভিযান চন্দ্রযান-২ এবং মঙ্গলযান মিশনের সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন।
২০১৯ সালে ভারতের চন্দ্রযান-২ এর ল্যান্ডারটি চাঁদের মাটিতে অবতরণে আগে দিয়ে বিধ্বস্ত হয়ে যায়। ওই ল্যান্ডারটি সম্পর্কে ভীরামুথুভেলের বিস্তৃত জ্ঞান আরো অনেক বেশি শক্তিশালী চন্দ্রযান-৩ তৈরিতে নেতৃত্ব দিয়েছে।
কল্পনা কে, উপ প্রকল্প পরিচালক, চন্দ্রযান-৩ অভিযান, ইউআর রাও স্যাটেলাইট সেন্টার, বেঙ্গালুরু
কোভিড-১৯ মহামারীর কঠিন সময়ে চন্দ্রযান-৩ অভিযান পরিচালনার দায়িত্বে থাকা দলটিকে কাজে ধরে রেখেছেন কল্পনা কে। প্রকৌশলী কল্পনা তার পুরো জীবন উৎসর্গ করেছেন ভারতের স্যাটেলাইট প্রকল্পে। তিনি চন্দ্রযান-২ এবং মঙ্গলযান মিশনের সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন।
এম ভিনিতা, উপ পরিচালক, ইউআর রাও স্যাটেলাইট সেন্টার, বেঙ্গালুরু
চন্দ্রযান-২ এর প্রকল্প পরিচালক ছিলেন এম ভিনিতা। ইলেক্ট্রোনিক্স সিস্টেমস ইঞ্জিনিয়ার ভিনিতা প্রথম নারী যিনি ভারতের একটি চন্দ্রাভিযানের নেতৃত্ব দিয়েছেন। চন্দ্রযান-২ সম্পর্কে তার জ্ঞান নিশ্চিতভাবেই চন্দ্রযান-৩ এর বেলার দারুণ কার্যকর হয়েছে।
এম শংকারান, পরিচালক, ইউআর রাও স্যাটেলাইল সেন্টার, বেঙ্গালুরু
নতুন পাওয়ার সিস্টেম এবং সৌর প্যানেল তৈরিতে দারুণ দক্ষতার কারণে এম শংকারানকে ইসরোর ‘পাওয়ার হাউজ’ বলা হয়। সৌর প্যানেল থেকেই স্যাটেলাইট চলার শক্তি পায়।
স্যাটেলাইট তৈরিতে তিন দশকের বেশি সময়ের অভিজ্ঞতা সম্পন্ন শংকারানের সই চন্দ্রযান-১, মঙ্গলযান এবং চন্দ্রযান-২ এর শোভা বাড়িয়েছে।
প্রচণ্ড গরম ও তীব্র ঠান্ডায় চন্দ্রযান-৩ স্যাটেলাইটের টিকে থাকার সক্ষমতা পরীক্ষা করার দায়িত্ব তার উপর ছিল। এছাড়াও, ল্যান্ডার বিক্রমের সক্ষমতা পরীক্ষার জন্য তিনি চন্দ্রপৃষ্ঠের প্রতিরূপ তৈরিতে সহায়তা করেছেন।
ভি নারায়ানান, পরিচালক, লিকুইড প্রপালশন সিস্টেম সেন্টার, থিরুভানান্থাপুরাম
ভি নারায়ানান লিকুইড প্রপালশন সিস্টেম ইঞ্জিন বিষয়ে একজন বিশেষজ্ঞ। তার নেতৃত্বেই ল্যান্ডার বিক্রমের আধুনিকায়ন হয়েছে। খড়গপুর আইআইটি এর সাবেক শিক্ষার্থী ক্রায়োজেনিক ইঞ্জিনের বিষয়েও একজন বিশেষজ্ঞ। ইসরোর তৈরি বেশির ভাগ রকেটে তার ব্যক্তিগত স্ট্যাম্প শোভা পায়। যার মধ্যে চন্দ্রযান-৩ কে মাথায় করে মহাকাশে নিয়ে যাওয়া এলভিএম-৩ রকেটটিও রয়েছে।
বিএন রামাকৃষ্ণা, পরিচালক, ইসরো টেলিমেটরি ট্রাকিং অ্যান্ড কমান্ড নেটওয়ার্ক (আইএসটিআরএসি), বেঙ্গালুরু
চন্দ্রযান-৩ স্যাটেলাইটটি সত্যিকার অর্থেই চাঁদের চারপাশে নেচে বেড়িয়েছে। পৃথিবীতে বসে সেটিকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারার জন্য বিএন রামাকৃষ্ণার দলের ধন্যবাদ প্রাপ্য।
বেঙ্গালুরুর ঠিক বাইরেই বসানে ভারতের সর্ববৃহৎ ডিশ অ্যান্টেনা ব্যবহার করে রামাকৃষ্ণার দল ল্যান্ডার বিক্রমকে নির্দেশ পাঠিয়েছে।