বিরতিতে গড়ালো ইরান-ইসরায়েল মহাযুদ্ধ। ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের মতোই নেতিয়ে পড়লো উত্তেজনা। সারা পৃথিবীকে যেন থমকে দিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। বিশ্বের নতুন পরাশক্তি ইরানের উত্থান ঠেকিয়ে দিলেন। অন্যদিকে বাঁচিয়ে দিলেন পরাজিত-প্রায় মিত্র ইসরায়েলকে। তবে বিশেষ সূত্রে প্রকাশ- নেপথ্যে অন্য ঘটনা। যে কোন মূল্যে ‘শান্তিতে নোবেল পুরস্কার’ পেতে হবে। সাবেক প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টার, বারাক ওবামা পেয়েছেন। কিন্তু দু’বারের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প কেনো নয়? পাকিস্তান ইতোমধ্যে আনুষ্ঠানিকভাবে তার নাম প্রস্তাব করেছে। আর ট্রাম্প বলেছেন- আমাকে ৪/৫ বার নোবেল দেয়া উচিত।
বাংলাদেশের একমাত্র নোবেলজয়ী প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস। অন্তর্বর্তী সরকারের এই প্রধান উপদেষ্টা এখনও বিপদে। আবারও ওনাকে আক্রমণ করেছেন নোবেল-ব্যর্থ নেত্রী শেখ হাসিনা। নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের ৭৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠান ছিলো লন্ডনে। দিল্লি থেকে ভার্চুয়ালি যোগ দিয়ে ‘অশান্তির রাজা’ বলেন ড. ইউনূসকে। তিনি শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পাওয়ার অযোগ্য বলেন। সেটি প্রত্যাহারে পদক্ষেপ গ্রহণেরও আহ্বান জানান।
যদিও, দলনেত্রীর মুখ থেকে নতুন ঘোষণা প্রত্যাশিত ছিলো। লন্ডনের রয়েল রিজেন্সি হলের সমাবেশ ছিলো টইটম্বুর। প্রচারণা ছিলো ‘প্রবাসী সরকারে’র ঘোষণা আসবে। অথবা মামলামুক্ত তরুণদের নিয়ে ঘোষিত হবে নতুন কমিটি। প্রস্তুতির জন্যে ঘোষিত হবে ‘ভার্চুয়ালি কাউন্সিল।’ কিন্তু সরকার, বিএনপি ও জামায়াতকে গালাগালি ছাড়া নতুন কিছুই আসেনি।
ট্রাম্প ‘শান্তির কারিগর’
বনাম ‘ঐতিহাসিক বর্রর
ইসরায়েলকে অনেকটা ধরাশায়ী করেছিলো ইরানের অস্ত্রাঘাত। ১২ দিনের পারস্পরিক যুদ্ধে ক্ষয়ক্ষতির অনুপাত ৬৫:৩৫। ইরানকে দমাতে নতুন কৌশল নেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। ইরানের ৩টি পারমাণবিক স্থাপনায় আঘাত হানেন। ইরানও কাতারস্থ সামরিক ঘাঁটিতে হানে পাল্টা আঘাত। আমেরিকার চোখে চোখ রেখে চলে এই প্রত্যাঘাত।
কাতারে ১৯৯৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় মার্কিন ঘাঁটিটি। ১০ হাজার মার্কিন সৈন্যের অবস্থান সেখানে। মধ্যপ্রাচ্যে এই ‘আল উদেই দে’ হলো সর্ববৃহৎ ঘাঁটি। ২৪ হেক্টর ভূমিজুড়ে অবস্থান। সেখানেই ১৯টি ব্যালেস্টিক মিসাইল ছোঁড়ে ইরান। যদিও সৈন্যবাহিনী পূর্বেই সরিয়ে নেয়া হয়। তবে মার্কিন ঘাঁটি ও রাডার সিস্টেম চরম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
ইরানের অগ্নিচক্ষুময় আক্রমণে সারাবিশ্ব অবাক হয়। অভ্যন্তরীণভাবে চরম সমালোচনার মুখে পড়েন ডোনাল্ড ট্রাম্প। তবে পূর্ব পরিকল্পনা মতে ঘোষণা করেন যুদ্ধবিরতির। কাতারের আমির আল থানিকে দিয়ে মধ্যস্থতা করান। ইরানকে বিশেষ শর্তে থামাতে সমর্থ হন আল থানি।
অন্যদিকে ‘হোয়াইট হাউজ’ তৎপর হয় নোবেল প্রাপ্তিতে। জর্জিয়া রাজ্যের কংগ্রেসম্যান বাডি কার্টার ‘ইনডোর্স’ করেছেন। যুদ্ধ বন্ধে ‘শান্তির কারিগর’ আখ্যা দিয়েছেন ট্রাম্পকে। বিশ্বশান্তিতে ২০২৫-এর নোবেল পুরস্কার ওনার প্রাপ্য বলেছেন। বিশ্বের যুদ্ধ-উত্তেজনা প্রশমনে ট্রাম্পের কূটনৈতিক সাফল্য মূল্যায়নযোগ্যও বলেছেন। প্রতিপক্ষ অবশ্য ট্রাম্পের স্বতঃস্ফূর্ত উদ্যোগের সমালোচনা করেন। বলেছেন, ইসরায়েল তার হত্যাযজ্ঞ থামাবে না। ইরানও পারমাণবিক গবেষণা স্থগিত করবে না। ট্রাম্প নেতানিয়াহুকে বলবে না ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দাও।
শান্তিতে নোবেল প্রাপ্তির প্রত্যাশায় মুখ খুলেছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। বলেছেন, আমি ৪/৫ বার ‘নোবেল’ পাওয়ার যোগ্য। পাইনি, কারণ আমি ‘লিবারেল’ নই। রুয়ান্ডা, কঙ্গো, কসোভোতে শান্তি ফিরিয়েছি। এমন কি ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনা কমাতে ভূমিকা রেখেছি। আশা করি আমার যুদ্ধবিরতি বিষয়ক অবদান মূল্যায়িত হবে।
উল্লেখ্য, অক্টোবরে ‘নোবেল কমিটি’ পুরস্কার ঘোষণা করবে। পাকিস্তান ইতোমধ্যে নোবেল কমিটিকে ট্রাম্পের পক্ষে সুপারিশ করেছে।
যুদ্ধবিরতিতে অখুশি বাংলাদেশ
শান্তিকামী পৃথিবীও
আকস্মিক যুদ্ধবিরতিতে হতাশ হয়েছে অধিকাংশ বাংলাদেশি। ফিলিস্তিনে ইসরায়েলের শেষ দেখতে চেয়েছিলো মুসলিম-ভ্রাতৃত্ব। পৃথিবীর শান্তিকামীরাও গাজা হত্যাকান্ডের সমাপ্তি দেখতে চায়। ইতোপূর্বেও ফিলিস্তিনে যুদ্ধবিরতি ঘটেছে। তবে শক্তিমত্তার ইসরায়েল তা লঙ্ঘন করেছে। এবার ইরান ইস্পাতদৃঢ় প্রতিশ্রুতিতে আক্রমণ করেছিলো। ফলে, ইসরায়েলের রাজধানী তেল-আবিবসহ কিছু কিছু শহর অনেকটাই ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়। গত ১৩ জুন ইসরায়েলের প্রথম আঘাতের পরই ইরানের জিঘাংসা। পৃথিবীর বৃহৎ শক্তিগুলো ইরানকে সমর্থন যুগিয়েছিলো।
কাতারে মার্কিন সামরিক ঘাঁটিতে আক্রমণ চালায় ইরান। ঐ সময়ে সংশ্লিষ্ট এলাকার কাতারীয়রা লুকিয়ে পড়ে। কিন্তু প্রবাসী বাংলাদেশিরা ঘাঁটির কাছাকাছি অবস্থান নেয়। প্রচুর পরিমাণে ছবি ও সেলফি তোলে। উচ্চ ধ্বনিতে আক্রমণকারী ইরানকে উৎসাহ যোগায়।
৭৬ বছরের আ’লীগে ৪৪ বছরই সভাপতি, ৭৮ বছর
বয়সেও ক্ষমতা ছাড়বেন না শেখ হাসিনা
বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার জন্ম ১৯৪৭-এর ২৮ সেপ্টেম্বর। আর আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠা ১৯৪৯-এর ২৩ জুন। ৭৬ বছরের দলটিতে ৪৪ বছর ধরে সভাপতি তিনি। ২০২৪-এর ছাত্র-গণঅভ্যুত্থানে সরকারি ক্ষমতা হারান। প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রিসভা, সাংসদÑ সবাই পলাতক। নৃশংস হত্যাকান্ডের অপরাধে দলটির কার্যক্রম দেশে স্থগিত। ছাত্রশক্তির আন্দোলনের মুখে ১০ মে ২০২৫ এই ঘোষণা আসে। ফলে ২৩ জুন-এর প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপিত হয়নি দেশে।
প্রবাসে প্রধান উদ্যোগটি ছিলো পূর্ব লন্ডনে। প্রচারণা ছিলো যে নতুন কিছু বিষয় ঘোষিত হবে। এজন্যে বৃহত্তর বৃটেনের লীগ-প্রেমিকরা যোগ দেন। অধিকাংশের প্রত্যাশা ছিলো ‘নতুনবার্তা পাবেন। বিশেষ করে আওয়ামী লীগের ‘প্রবাসী সরকার’ গঠনের ঘোষণা। কিংবা নতুন কমিটি গঠনে ‘ভাচুর্য়াল কাউন্সিল’। বিষয়গুলো চূড়ান্ত করতে প্রবাসের নেতৃবর্গ উদ্যোগ নিয়েছিলো। কিন্তু সভাপতি শেখ হাসিনাকে টেলিফোনে পাওয়া যায়নি। রহস্যজনকভাবে ওনার টেলিসংযোগ বন্ধ রাখা ছিলো।
একটি সূত্র মতে, তিনি বিষয়টি এড়িয়ে গেছেন। এমনিতেই প্রধানমন্ত্রীত্ব, শাসনক্ষমতা হাতে নেই। আবার দলের সভাপতিত্ব হারালে তিনি নিঃসঙ্গ হয়ে পড়বেন। আশ্রয়দাতা ভারতের কাছেও হয়ে উঠবেন মূল্যহীন। তাই দেশে দলের সক্রিয়তা থাক বা না থাক, প্রবাসবাগানের মালিরূপেই তিনি রাজনীতির ফুল ফোটাতে চান। যদিও স্বদেশ-প্রবাসের অধিকাংশ নেতা-কর্মীই এতে হতাশ। তাদের মতে, হাসিনা-নেতৃত্ব এখনও ভুল ফুলের চাষ-বাসে নিবেদিত। জুলাই আন্দোলনের পরাজয় থেকে শিক্ষা নেয়নি প্রবীণেরা।