Thikana News
১৯ অক্টোবর ২০২৪
  1. ই-পেপার
  2. চলতি সংখ্যা
  3. বিশেষ সংখ্যা
  4. প্রধান সংবাদ
  5. আমেরিকার অন্দরে
  6. বিশ্বচরাচর
আমেরিকা শনিবার, ১৯ অক্টোবর ২০২৪


 

গোলকধাঁধায় চলছে  নির্বাচনী ডামাডোল

  বাংলাদেশকে দুটি বার্তা দিতে চায় ভারত
গোলকধাঁধায় চলছে  নির্বাচনী ডামাডোল


বাংলাদেশের আগামী জাতীয় নির্বাচন নিয়ে রাজনীতিতে এখন হইহই রইরই অবস্থা। বাঙালিপাড়া থেকে শুরু করে হোয়াইট হাউস, ক্রেমলিন, চীন, ভারত ও ইউরোপজুড়ে কূটনীতিক পাড়ায় চলছে ব্যাপক সলাপরামর্শ আর ক্ষণগণনা। জাতিসংঘ, বিশ্বব্যাংকও কিছুটা  নড়েচড়ে বসেছে। হঠাৎ বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে কেন এত শোরগোল? এরই মধ্যে নির্বাচনের বিষয়ে করণীয় নিয়ে ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র ঐকমত্যে পৌঁছেছে বলে জানিয়েছে ভারতের সংবাদমাধ্যম দ্য টেলিগ্রাফ ইন্ডিয়া।
ভৌগোলিক ও আঞ্চলিক অবস্থানগত কারণে বাংলাদেশ পরাশক্তিগুলোর কাছে গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে, যুক্তরাষ্ট্রের খুবই প্রয়োজন বাংলাদেশকে। ব্রিকসের প্রতি বাংলাদেশের ঝুঁকে পড়া এবং চীনের উত্থান বিষয়টিকে আরও তাৎপর্যমণ্ডিত করেছে। এরই মধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের বেশ কিছু উন্নয়ন কর্মকাণ্ড দাতাগোষ্ঠীর নজর কেড়েছে। এখন নির্বাচনই সবকিছু পাল্টে দেওয়ার মোক্ষম উপায়।
যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন গণতন্ত্রকে সমুন্নত রাখার দাবিতে অবাধ, নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের নানা ফর্মুলা ও শর্ত দিয়েছে ও দিচ্ছে। বাংলাদেশ সরকারও অবাধ, নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের অঙ্গীকারের কথা জানিয়েছে। কিন্তু আশ্বস্ত হতে পারছে না যুক্তরাষ্ট্র ও ইইউ। মার্কিন ভিসানীতি ঘোষণা এর একটি বহিঃপ্রকাশ।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, যুক্তরাষ্ট্র রেজিম (শাসন) পরিবর্তনের লক্ষ্যেই মূলত দৃঢ় অবস্থান নিয়েছে। ইইউ অনেকটা সমর্থন দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রকে। কিন্তু ভারত তা চায় না। চীন-রাশিয়াও অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করতে কিংবা পরিবর্তন চায় না। তবে চীন বাংলাদেশকে আরও কাছে পেতে চায়, যেটা ভারতের সবচেয়ে বড় অপছন্দ। এই গোলকধাঁধার মধ্যে চলছে এখন নির্বাচনী ডামাডোল।
গত ২১ আগস্ট ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দ্য টেলিগ্রাফ ইন্ডিয়া ও দ্য হিন্দুতে পৃথক প্রতিবেদনে বলা হয়, বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ আন্তর্জাতিক গোষ্ঠী জি-২০ জোটের সম্মেলনে যোগ দেওয়ার জন্য আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে সেপ্টেম্বরে ভারত সফরে যাবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এই সফরের সময় শেখ হাসিনাকে দুটি স্পষ্ট বার্তা দিতে পারে ভারত। যার প্রথম বার্তাটি হচ্ছে বাংলাদেশে আসন্ন সাধারণ নির্বাচন অবশ্যই অবাধ ও সুষ্ঠু হতে হবে। আর দ্বিতীয়টি হচ্ছে আওয়ামী লীগকে তার সকল চীনপন্থী ও ইসলামপন্থী নেতাদের ঝেড়ে ফেলতে হবে এবং নির্বাচনে অসাম্প্রদায়িক ও জনপ্রিয় প্রার্থীদের বেছে নিতে হবে।
অন্যদিকে দেশটির প্রভাবশালী দৈনিক আনন্দবাজার জানিয়েছে, আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে শেখ হাসিনার পাশে রয়েছে ভারত। আমেরিকাকে পাঠানো এক কূটনৈতিক বার্তায় নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করেছে দেশটি। বাংলাদেশকে নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থানের সঙ্গে একমত নয় ভারত। কূটনৈতিক নোটে ভারত জানিয়েছে, বাংলাদেশে শেখ হাসিনার সরকার দুর্বল হয়ে পড়লে ভূ-রাজনৈতিক দিক থেকে তা ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র কারও জন্যই সুখকর হবে না। কারণ হাসিনা সরকার দুর্বল হয়ে পড়লে জামায়াতের মতো সংগঠনের ক্ষমতা বাড়বে বলে মনে করে ভারত। যুক্তরাষ্ট্র জামায়াতকে একটি রাজনৈতিক সংগঠন হিসেবে দেখে। মুসলিম ব্রাদারহুডের সঙ্গে তুলনা করে। কিন্তু ভারত মনে করে, জামায়াত একটি উগ্র মৌলবাদী সংগঠন। ভারতের বার্তায় এ কথা স্পষ্ট করা হয়েছে।
এ বিষয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ বলছে, ভারতের বার্তায় বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে কোনো প্রভাব পড়বে না। বিএনপি বলছে, ভারতের হস্তক্ষেপে অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে খুব খারাপ প্রভাব পড়বে। দেশের অন্য রাজনৈতিক দলগুলো বলছে, ভারতের বার্তায় একটি নতুন উত্তেজনা তৈরি হবে। ভারতকে নিয়ে একটি ঝুঁকি তৈরি হবে।
বাংলাদেশের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে ভারতের বার্তা দেওয়াকে দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ নয় বলে দাবি করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, আঞ্চলিক রাজনীতির বিষয়ে এই ভূখণ্ডে ভারত ও আমেরিকার অভিন্ন স্বার্থ রয়েছে। তাই ভারত আমেরিকাকে কিছু বললে তারা তাদের স্বার্থে বলেছে।
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, বাংলাদেশের মানুষের ইচ্ছার বিরুদ্ধে যদি ভারত কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করে, সেটি হবে অত্যন্ত দুঃখজনক। ভারতের গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন যদি সত্যি হয়ে থাকে, তাহলে এটি খুবই দুর্ভাগ্যজনক। আমরা মনে করি, সেটি বাংলাদেশের মানুষের জন্য এবং এই অঞ্চলের মানুষের জন্য শুভ হবে না। আজকে বাংলাদেশে যে সংকট, সেই সংকটের মূলে হচ্ছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একদলীয় শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা। গত ১৫ বছরে রাষ্ট্রযন্ত্রকে দিয়ে বাংলাদেশের মানুষের ওপর যে অকথ্য নির্যাতন করা হয়েছে, বলা যেতে পারে রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস গড়ে তুলে ‘টোটালি একটি ডিপ স্টেট’ তৈরি করা হয়েছে; সেখানে ভারতের মতো একটি গণতান্ত্রিক দেশ, যারা সব সময় গণতন্ত্রের কথা বলে, তাদের কাছে এটি অপ্রত্যাশিত।
রাশিয়ার অবস্থান : গত ৬ জুলাই রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বাংলাদেশে ‘অবাধ ও সুষ্ঠু’ নির্বাচন নিয়ে ইউরোপ ও মার্কিন রাজনীতিবিদদের চিঠিকে ‘অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে নির্লজ্জ হস্তক্ষেপ’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছে। এক টুইটে রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভা বলেন, ‘কিছু ইউরোপীয় ও মার্কিন রাজনীতিবিদ বাংলাদেশে “অবাধ ও নিরপেক্ষ” নির্বাচনের আহ্বান জানিয়ে চিঠি প্রকাশ করেছেন বলে আমরা জেনেছি। এটা নব্য উপনিবেশবাদ এবং সার্বভৌম দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নির্লজ্জ হস্তক্ষেপের আরও একটি অপচেষ্টা।’
রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্রের টুইটের আগে একই দিনে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনে ভূমিকা রাখতে ইভান স্টিফেনেকসহ ইউরোপীয় পার্লামেন্টের ছয় সদস্য ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্রনীতি ও নিরাপত্তাবিষয়ক প্রধান জোসেপ বোরেলকে একটি চিঠি দেন। ওই চিঠিতে তারা বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংকট নিরসনে অর্থবহ সংলাপের তাগিদ দেন।
গত মে মাসে বাংলাদেশ সরকারের মানবাধিকার লঙ্ঘন বন্ধ, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের সুযোগ তৈরির লক্ষ্যে জরুরি পদক্ষেপ নিতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রতি আহ্বান জানিয়ে চিঠি লেখেন মার্কিন কংগ্রেসের ছয় সদস্য।
চীনের অবস্থান : গত জুন মাসে চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ওয়াং ওয়েনবিন নিয়মিত ব্রিফিংয়ে এক প্রশ্নের উত্তরে বলেন, বাংলাদেশের বিশেষায়িত নিরাপত্তা বাহিনী র‍্যাব ও এর কয়েকজন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অবস্থানকে সমর্থন করে চীন। একই সঙ্গে বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব, স্বাধীনতা ও অখণ্ডতা রক্ষায় চীন সব সময় সমর্থন দেবে।
উল্লেখ্য, ২০২১ সালের ডিসেম্বরে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে র‍্যাব এবং সংস্থাটির সাবেক ও বর্তমান সাত কর্মকর্তার ওপর যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা দেয়।
ওয়াং ওয়েনবিন বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাম্প্রতিক বক্তব্যের ব্যাপারে আমরা অবগত। আসলে একটি নির্দিষ্ট দেশ (যুক্তরাষ্ট্র) নিজের জাতিগত বৈষম্য, আগ্নেয়াস্ত্রের সহিংসতা ও মাদক বিস্তারের মতো সমস্যাগুলোর দিকে না তাকিয়ে গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের অজুহাত দিয়ে দীর্ঘ সময় ধরে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ ইস্যুতে নাক গলাচ্ছে এবং আরও অনেক উন্নয়নশীল দেশের অভ্যন্তরীণ ইস্যুতে হস্তক্ষেপ করছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই ইস্যুতে শক্তভাবে বাংলাদেশি জনগণের অবস্থান ব্যক্ত করার পাশাপাশি আন্তর্জাতিক বিশ্বের একটি বড় অংশের, বিশেষ করে উন্নয়নশীল দেশগুলোর মনের কথা ব্যক্ত করেছেন।’ গত ১৬ আগস্ট ঢাকায় নিযুক্ত চীনা রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন বলেছেন, ‘দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়। তারাই ঠিক করবে কীভাবে নির্বাচন হবে। এ ইস্যুতে চীন কোনো হস্তক্ষেপ করবে না।’ রাষ্ট্রদূত আরও বলেন, বাংলাদেশের দীর্ঘ সময়ের পরীক্ষিত বন্ধু হিসেবে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যিক সম্পর্ক উন্নয়নে সব ধরনের সহযোগিতা করবে চীন। স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে গেলে ২০২৬ সাল-পরবর্তী বিশ্ব বাণিজ্যে যেসব প্রতিবন্ধকতায় পড়তে পারে বাংলাদেশ; সেখানেও শুল্ক ও কোটামুক্ত বাণিজ্য সুবিধা দিয়ে পাশে থাকবে চীন। বাংলাদেশের বিদেশি ঋণ পরিশোধের বিষয়টি নিয়ে চীন চিন্তিত নয়।

কমেন্ট বক্স