Thikana News
২০ জুন ২০২৫
  1. ই-পেপার
  2. চলতি সংখ্যা
  3. বিশেষ সংখ্যা
  4. প্রধান সংবাদ
  5. আমেরিকার অন্দরে
  6. বিশ্বচরাচর
আমেরিকা শুক্রবার, ২০ জুন ২০২৫
দ্য কনভারসেশনের বিশ্লেষণ

ইরানের ভবিষ্যৎ কেন এত অনিশ্চিত

ইরানের ভবিষ্যৎ কেন এত অনিশ্চিত সংগৃহীত



 
ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি ধ্বংসের প্রাথমিক লক্ষ্য পেরিয়ে এবার দেশটির শাসন ব্যবস্থার ভিত্তি কাঁপিয়ে দিতে চাচ্ছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। তিনি সরাসরি ইরানি জনগণকে ইসলামী শাসন ব্যবস্থার বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামার আহ্বান জানিয়েছেন। এ পথে সম্ভাব্য সামরিক পদক্ষেপ বিবেচনা করছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও।

ইতিহাস বলছে, মধ্যপ্রাচ্যে সরকার পতনের জন্য সামরিক হস্তক্ষেপের নজির নতুন নয়। ২০০৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে ইরাক আক্রমণ এবং ২০১১ সালে লিবিয়ায় ন্যাটো অভিযানে সাদ্দাম হোসেন ও মুয়াম্মার গাদ্দাফির শাসনের অবসান ঘটে। তবে এসব ঘটনার দীর্ঘস্থায়ী ফলাফল ছিল অঞ্চলজুড়ে অস্থিতিশীলতা ও সহিংসতা। 

শাহের উৎখাত
ইরানে এর আগেও রাজতন্ত্রের পতন ঘটেছে। ১৯৭৮-৭৯ সালে গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে শেষ শাহ মোহাম্মদ রেজা পাহলভি ক্ষমতাচ্যুত হন। যদিও এরও আগে ১৯৫৩ সালে সিআইএ-সমর্থিত অভ্যুত্থানের মাধ্যমে শাহকে আবার ক্ষমতায় ফিরিয়ে আনা হয়েছিল। শাহের বিরুদ্ধে ব্যাপক গণবিক্ষোভের সুযোগে আয়াতুল্লাহ রুহুল্লাহ খোমেনি নির্বাসন থেকে ফিরে এসে বিপ্লবের নেতৃত্ব নেন এবং ইসলামী প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেন। এ বিপ্লব যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলবিরোধী অবস্থানের নতুন অধ্যায় রচনা করে।

ইসলামী প্রজাতন্ত্রের জন্ম
অভ্যুত্থানের পর খোমেনি এবং তাঁর সমর্থকরা রাজতন্ত্র বিলুপ্ত করেন এবং ইরানকে একটি ইসলামী প্রজাতন্ত্রে রূপান্তরিত করেন। সরকারে তীব্র যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলবিরোধী মনোভাব ছিল। খোমেনি কেবল ইরানকেই পরিবর্তন করেননি, বরং আঞ্চলিক শৃঙ্খলা গঠনে প্রভাবশালী শক্তি হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রকেও চ্যালেঞ্জ করেছিলেন। এতে তেলসমৃদ্ধ এবং কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ পারস্য উপসাগরীয় অঞ্চলে আমেরিকা তার প্রভাবের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ হারিয়ে ফেলে। এরপর ইসলামী প্রজাতন্ত্রের বিরুদ্ধে শত্রুতাপূর্ণ আমেরিকান বা ইসরায়েলি পদক্ষেপের আশঙ্কা ইরানের অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক নীতির কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়। 

নতুন সর্বোচ্চ নেতার ক্ষমতা গ্রহণ 
খোমেনির মৃত্যুর পর ১৯৮৯ সালে আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি দেশের সর্বোচ্চ নেতা হন। তিনিও শাসনব্যবস্থা টিকিয়ে রাখতে আত্মনির্ভরশীলতা, শক্তিশালী প্রতিরক্ষা এবং রাশিয়া-চীনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তোলার কৌশল গ্রহণ করেন। ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড কর্পস (আইআরজিসি) এবং শিয়া মিলিশিয়া নেটওয়ার্ক দেশ-বিদেশে ইরানের প্রভাব ধরে রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। ফলে ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের চাপের মুখে খামেনি সহজে পিছু হটবেন না বলেই বিশ্লেষকদের ধারণা।

তবে, সম্মিলিত অভ্যন্তরীণ বিদ্রোহ এবং বহিরাগত চাপের ভারে শাসন ব্যবস্থার পতন হলে বিকল্প কী হবে, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। ইরান ঐতিহাসিকভাবে ক্ষমতার বিস্তারের পরিবর্তে কেন্দ্রীকরণের মাধ্যমে একত্রিত হয়েছে। যদি ইসলামী শাসন ব্যবস্থা ভেঙে পড়ে, তাহলে ঐক্যবদ্ধ জাতীয় কাঠামোর মধ্যে ক্ষমতার মসৃণ হস্তান্তর আশা করা ভুল হবে। 

তাছাড়া ইরানি জনগণ অত্যন্ত সংস্কৃতিবান এবং সৃজনশীল। তাদের অর্জন ও সভ্যতার একটি অত্যন্ত সমৃদ্ধ এবং গর্বিত ইতিহাস রয়েছে। তারা তাদের নিজস্ব ভাগ্য নির্ধারণে পুরোপুরি সক্ষম, যতক্ষণ না এই প্রক্রিয়ায় স্বার্থান্বেষী বিদেশি হস্তক্ষেপ না থাকে।

ঠিকানা/এসআর

কমেন্ট বক্স