Thikana News
১৯ জুন ২০২৫
  1. ই-পেপার
  2. চলতি সংখ্যা
  3. বিশেষ সংখ্যা
  4. প্রধান সংবাদ
  5. আমেরিকার অন্দরে
  6. বিশ্বচরাচর
আমেরিকা বৃহস্পতিবার, ১৯ জুন ২০২৫

সমসাময়িক : প্রসঙ্গ আওয়ামী লীগ এবং ইরান

সমসাময়িক : প্রসঙ্গ আওয়ামী লীগ এবং ইরান



 
আওয়ামী লীগ : ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর আওয়ামী লীগ দেশের অভ্যন্তরে কার্যত অচল হয়ে যায়, তবে সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রবাসী সমর্থকদের সরব উপস্থিতি ছাড়া। দীর্ঘ নয় মাস প্রথম সারির কোনো নেতা-নেত্রী লাখ লাখ কর্মীদের অবর্ণনীয় দুর্দশা ও মানবেতর জীবনে তাদের পাশে এসে দাঁড়াননি, যদিও সাবেক প্রধানমন্ত্রীর কিছু অডিও বার্তা সোশ্যাল মিডিয়ায় দেওয়া হয়েছে, যা ছিল রাজনৈতিক ও প্রতিশোধ নেওয়ার প্রতিজ্ঞা। তবে ইদানীং দলের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ইউটিউবে সরব হয়ে অডিও সাক্ষাৎকার দিচ্ছেন, কোনো ভিডিও নয়। বহুল আলোচিত এই সাধারণ সম্পাদকের হঠাৎ সরব হওয়া কি কাকতালীয়, ব‍্যক্তিগত না দলীয় সিদ্ধান্ত, তা নিয়ে মতান্তর থাকলেও তিনি যে দলের সভানেত্রী শেখ হাসিনার আশীর্বাদ বা নির্দেশে তার কার্যক্রম শুরু করেছেন, তা মনে করার যথেষ্ট কারণ আছে।

জনাব ওবায়দুল কাদের শুরু করেছেন তার দেশে তিন মাস পালিয়ে থাকা এবং তারপর দেশ ছেড়ে পালিয়ে আসার কাহিনি দিয়ে। তার এই গল্প কাঁঠালের আমসত্ত্ব, কারণ খোদ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরাই তা বিশ্বাস করেনি বা করছে না। তার গল্পের পরপরই আরেকজন আওয়ামী মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিমও একই গল্প ফেঁদেছেন। তাদের গল্পগুলো মূলত ভিত্তিহীন, কারণ ওই সময়ে প্রতিহিংসার আগুনে রক্ত টগবগ করা ছাত্র-জনতা আওয়ামী লীগের দুজন নেতাকে হাতের কাছে পেয়েও জামাই আদর করে ছেড়ে দেবে, একটা বিশ্বাস করা কঠিন। দ্বিতীয়ত, ওই সময় ছাত্রলীগের কর্মীরা নিজেদের জীবন নিয়েই আতঙ্কগ্রস্ত, তারা কাদের সাহেবদের উদ্ধার করতে আসতে পারার কথা নয়। তৃতীয়ত, কাদের সাহেব বলেছেন, ওইসব লোক বাড়িঘর থেকে বিভিন্ন জিনিস, বিশেষ করে বাথরুমের বেসিন লুট করতে গিয়েছে, কাদের সাহেবকে দেখে তাদেরই নাকি মন গলে গিয়েছে। যারা একটা পুরোনো বেসিন লুট করে ৪০০-৫০০ টাকার আশায়, তারা কাদের সাহেবকে আটকে রেখে বা জনতার হাতে তুলে দেওয়ার হুমকি দিয়ে ন্যূন্যতম লাখ টাকা আদায় করতে পারত না? কিন্তু তারা তা না করে লুণ্ঠনকারী থেকে হঠাৎ মহানুভব হয়ে গেল, এটা বিশ্বাস করা যায়? আসল কাহিনি হচ্ছে, কাদের সাহেবরা কোনো সামরিক বাহিনীর উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা বা গোয়েন্দা কর্মকর্তার আশ্রয়ে থেকেছেন এবং সময়-সুযোগমতো পালিয়ে আসতে সক্ষমও হয়েছেন। এখন ওই উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের অনুরোধে বা নির্দেশে তাদের নাম জনসমক্ষে আসতে না দেওয়ার জন‍্যই এই আষাঢ়ে গল্প।

এখন ওবায়দুল কাদের যেসব বক্তব্য দিচ্ছেন, তা কি আওয়ামী লীগের ফিরে আসার সাংগঠনিক কৌশল, নাকি আওয়ামী লীগের অন্য নেতারা যেসব বিচ্ছিন্ন বক্তব্য দিতেন, সে রকম একটা কিছু? যেহেতু ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে সাবেক প্রধানমন্ত্রীর কথাবার্তা বা মিটিং হয়েছে, সেহেতু এটি অবশ‍্যই সাংগঠনিক কৌশল। গত ১৫ বছরে বর্তমান সভানেত্রী ও সাধারণ সম্পাদকের যৌথ নেতৃত্বে দলটি যখন জনসমর্থন হারিয়ে গণবিস্ফোরণের কারণে দলের নেতাদের দেশ থেকে পালাতে হয়, তখন বুঝতে হবে এই দুর্গন্ধযুক্ত পচা নেতৃত্বে দল আর ফিরে দাঁড়াতে পারবে না, যদিও দলের নেতাকর্মীরা এখনো হাসিনার প্রতিই আস্থাশীল। কিন্তু শুধু দলীয় নেতাকর্মীদের নিয়েই একটি রাজনৈতিক দল টিকতে পারে না, জনসমর্থনেরও প্রয়োজন হয়। বিগত তিনটি বিতর্কিত নির্বাচনে গড়ে ৫-১০% ভোট পড়ায় প্রমাণ করে, শুধু কর্মীরাই ভোট দিয়েছিল, জনগণ দেয়নি। ওবায়দুল কাদের শুধু হুজুরে আজমের দায়িত্ব পালন করেছেন, মূল সিদ্ধান্ত নিতেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী স্বয়ং। তিনি তখন জনগণকে প্রয়োজন মনে করেননি। ভেবেছিলেন ভারত, র‍্যাব, পুলিশ, ডিজিএফআই, এনএসআই, ছাত্রলীগ ও যুবলীগ দিয়েই যত দিন ইচ্ছা তত দিন ক্ষমতায় থাকবেন এবং এখনো সেই একই মানসিকতা থেকেই জনগণের আনুকূল্য পাওয়ার জন‍্য কোনো পদক্ষেপ নেওয়ার তাগিদ অনুভব করছেন না।

গত ১৫ বছরে কাদের সাহেবসহ সকল নেতারা দেশ বা সামাজিক বিষয়ে বক্তৃতা দেওয়ার সময় ১০ মিনিট সময় পেলে ৬ মিনিট ব‍্যয় করতেন শেখ হাসিনার স্তুতিতে, ২ মিনিট বঙ্গবন্ধুর, ২ মিনিট বিষয়বস্তুর। ঠিক এখনো একই কায়দায় তৈলমর্দন চলছে, জনগণের ৪০-৫০% নাকি এখনো হাসিনাকে চায়! জনরোষের তাড়া খেয়ে বিদেশে বসে কীভাবে তারা ওই জরিপ করলেন, তা কিন্তু বলছেন না। আর শেখ হাসিনা এই ৪০-৫০% জনপ্রিয়তার কথা শুনে অনুশোচনা করবেন কেন? আসলে সভানেত্রী ও সাধারণ সম্পাদক সবই বোঝেন, তারা এটাও বোঝেন, তাদের জীবদ্দশায় তারা ক্ষমতা তো দূরের কথা, দেশেই ফিরতে পারবেন না। তাই জনগণের কাছে ক্ষমার অর্থই হলো নিজেদের অন‍্যায় স্বীকার করা এবং ইতিহাসের আস্তাকুঁড়ে চলে যাওয়া।

কিন্তু বাংলাদেশে সুস্থ দ্বিদলীয় গণতন্ত্র-চর্চার জন‍্য পরিশোধিত একটি আওয়ামী লীগের দরকার রয়েছে এবং সে আওয়ামী লীগ পেতে হলে সর্বপ্রথম প্রয়োজন জাতির কাছে ক্ষমা চাওয়া, যেমনটি শেখ হাসিনা করেছিলেন ১৯৯৬ সালের নির্বাচনের প্রাক্কালে। ১৯৯১ সালের নিরপেক্ষ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রত‍্যাখ‍্যাত হলে শেখ হাসিনা সঠিকভাবেই বুঝেছিলেন, বঙ্গবন্ধুর সাড়ে তিন বছরের শাসনকালের ভুলভ্রান্তি জনগল তখনো ভুলে যায়নি, তাই তিনি জাতির কাছে ক্ষমা চেয়েছিলেন। ঠিক সে রকম একটি ক্ষমা চাওয়া হলে স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা প্রকাশ্যে বের হওয়ার সুযোগ পাবেন, স্থানীয় নির্বাচনগুলোতে অংশ নিতে পারবেন এবং একটা পর্যায়ে আওয়ামী লীগ স্বাভাবিক রাজনীতিতে পুনঃপ্রতিষ্ঠা পেয়ে যাবে। শেখ হাসিনা যদি এই কাজটি করতে পারেন, তাহলে দলের জন‍্য তো বটেই, জাতির জন‍্যও মঙ্গল।

ইরান : অনেক জল্পনা-কল্পনা ও ডিপ্লোম্যাটিক খেলার মাঝে ইসরায়েল আকস্মিকভাবে ইরানের পারমাণবিক প্রকল্প, পারমাণবিক বিজ্ঞানীদের বাসস্থান, সামরিক ঘাঁটি ও উচ্চপদস্থ সামরিক কর্মকর্তাদের ওপর হামলা করে ব‍্যাপক ক্ষতি সাধন করতে সমর্থ হয়। ইরানও কয়েকশ ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা করে পাল্টা জবাব দিয়ে যাচ্ছে। জাতিসংঘসহ কয়েকটি ইউরোপীয় দেশের উভয় দেশকে সংযত হওয়ার আহ্বান; রাশিয়া, চীনসহ আরব দেশগুলোর ইসরায়েলের প্রতি নিন্দা, কিন্তু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা নিয়ে রহস‍্য শুরু হলেও ক্রমশ খোলস খুলে যাচ্ছে। তাদের প্রাথমিক অফিশিয়াল বক্তব্য হচ্ছে, তারা এ হামলায় জড়িত নয়, সুতরাং সেখানে আমেরিকার ঘাঁটি বা স্থাপনাসমূহে যেন আক্রমণ করা না হয়। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে, আমেরিকার পুরো সম্মতিতে, যৌথ পরিকল্পনায় এ হামলা পরিচালনা করা হয় এবং হোয়াইট হাউসের সিচুয়েশন রুমে বসে জাতীয় নিরাপত্তা বিভাগের কর্মকর্তারা সব অবলোকন করেন। ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল রিপোর্ট করে, আমেরিকা আলোচনার নামে সময়ক্ষেপণ করে ইরানকে অপ্রস্তুত করে রাখে। ইরান ইসরায়েলের এত দূরত্ব হওয়া সত্ত্বেও কেমন করে ইসরায়েল এমন সফল হামলায় সমর্থ হয়। সেই একই কৌশল, যেভাবে ইউক্রেনের পক্ষে ব্রিটিশ গোয়েন্দারা প্রচণ্ড ক্ষমতাশালী ড্রোনগুলোকে সিভিলিয়ান ও ব‍্যবসায়িক মোড়কে রাশিয়ার অভ্যন্তরে নিয়ে রাখা হয়েছিল, তেমনি ইরানের অভ‍্যন্তরে ইসরায়েলি গোয়েন্দারা অন্তত তিন মাস আগে ওই শক্তিশালী ড্রোনগুলোকে মজুদ করে রাখা হয়েছিল, এ বিষয়ে ওয়াশিংটন পোস্ট একটি বিস্তারিত রিপোর্ট ছাপে।

রাশিয়ার সঙ্গে ইরানের সামরিক সহযোগিতার একটি ধারা রয়েছে, যেখানে বলা হয়েছে, যদি ইরান অন‍্যায়ভাবে আক্রান্ত হয়, তাহলে রাশিয়া পাশে এসে দাঁড়াবে। এখন দেখার বিষয় রাশিয়া কতটুকু করে।
ইরান যদি মধ‍্যপ্রাচ্যের আমেরিকার ঘাঁটিসমূহে হামলা না করে, তাহলে হয়তো এ যুদ্ধ বেশি দূর যাবে না। আর যদি ইরান হামলা করে, তাহলে আমেরিকা রেজিম চেঞ্জে এগিয়ে যাবে। মধ্যপ্রাচ্যের আরব ধনী রাজাদের কোনো কিছু যায় আসে না, তারা বসে বসে আঙুল চুষছে।
-নিউইয়র্ক
 

কমেন্ট বক্স