চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামী ৬ জুন শুক্রবার পবিত্র ঈদুল আজহা উদ্যাপিত হওয়ার কথা। সেই হিসাবে আর হাতে বেশি সময় নেই। ইতিমধ্যে ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা নিজ নিজ সামর্থ্য অনুযায়ী দেশে কোরবানি করার আগাম প্রস্তুতি নিচ্ছেন। আবার অনেকে এখানেই কোরবানি করছেন।
এবার ঈদের সময় স্কুল খোলা থাকায় অনেকে চাইলেও দেশে যেতে পারছেন না। সেই সঙ্গে টিকিটের দামও আগের চেয়ে বেড়েছে। ফলে একটি পুরো পরিবার দেশে যাওয়ার জন্য যে পরিমাণ খরচ, তা অনেক বেশি। বিভিন্ন দিক বিবেচনা করেই এবার যে যার সামর্থ্য অনুযায়ী বাজেটের মধ্যে পশু কোরবানি দেবেন।
নিউইয়র্কে ঈদুল ফিতরের পর থেকেই অনেকে বিভিন্ন গ্রোসারিতে কোরবানির অর্ডার দিতে শুরু করেন। এবারও অনেকেই দিয়েছেন। যারা ঈদের দিনই কোরবানি দিতে চান এবং ঈদের দিনেই মাংস পেতে চান, তারা ইতিমধ্যে পশুর অর্ডার দিয়ে ফেলেছেন। বিভিন্ন গ্রোসারির মালিকরা সেভাবেই অর্ডার নেওয়া নিশ্চিত করেছেন।
একাধিক মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, অনেকেই ব্যক্তিগত পর্যায়ে কয়েকজন মিলে কোরবানি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। সে হিসেবে তারা বিভিন্ন ফার্মে গিয়ে গরু-ছাগল দেখে আসছেন ও পছন্দ করছেন। অনেকে পশু কিনেও ফেলছেন।
এবার কোরবানির সময় গরুর মাংসের পাউন্ড কত ডলার হবে, এটি এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে গ্রোসারি মালিকরা বলছেন প্রতি পাউন্ড গরুর মাংস ৭ থেকে ৮ ডলারের মধ্যে থাকবে। খাসির মাংস ১১ থেকে ১২ ডলার হতে পারে।
তারা জানান, সাধারণত বাজারের চেয়ে কোরবানির মাংসের দাম একটু বেশি হয়। কারণ ওই সময়ে বাজারে মাংসের চাহিদা বেশি থাকে। সেই সঙ্গে ওই সময় এত গরু জবাই করার জন্য লোকবলের সংকট থাকে। ফলে বেশি দাম দিয়ে গরুর ফার্মগুলোকে কাজ করাতে হয়। এ কারণে চাইলেও কম খরচে কোরবানি দেওয়া সম্ভব হয় না।
নিউইয়র্কের জ্যাকসন হাইটস, জ্যামাইকা, হলিস, বেলরোজ, সাটফিন বুলেবার্ড, ওজন পার্ক, ব্রুকলিন, ব্রঙ্কস, ম্যানহাটনের বিভিন্ন গ্রোসারিতে এখন কোরবানির অর্ডার নেওয়া হচ্ছে। মাছ বাজার, খামার বারী, আইল্যান্ড ফ্রেশ সুপার মার্কেট, মান্নান সুপার মার্কেট, ফাতেমা গ্রোসারি, কাওরান বাজার, প্রিমিয়াম সুপার মার্কেট, ইত্যাদি, হাটবাজার, মামাসসহ বিভিন্ন গ্রোসারিতে কোরবানির অর্ডার চলছে। ফোন করেও অনেকেই অর্ডার দিচ্ছেন। কেউ কেউ অনলাইনেও অর্ডার দিচ্ছেন। অনেকেই দোকানে গিয়ে অর্ডার দিচ্ছেন।
এ বিষয়ে মাছবাজারের কর্ণধার রুমি ভূঁইয়া বলেন, আমরা এখন কোরবানির অর্ডার নিচ্ছি। যারা ঈদের দিনে মাংস নিতে চান, তারা ইতিমধ্যে অর্ডার দিয়ে দিয়েছেন। এখন আমরা ঈদের পরের দিনগুলোর জন্য অর্ডার নিচ্ছি। আমরা সবাইকে বলছি, যারাই মাংস নিতে চান, তারা এখন একটি অ্যামাউন্ট বুকিং মানি দেবেন। পরে যখন আমরা মাংস দেব ওই সময়ে যে দাম আসে, তিনি বাকি অর্থ দিয়ে মাংস নিয়ে যাবেন। তিনি বলেন, আমাদের বিশেষ বৈশিষ্ট্য হচ্ছে আমরা ছাগল বললে ছাগলের মাংসই দেব। আমরা ছাগল বলে ভেড়ার মাংস দেই না। তাই কাস্টমাররা আমাদের ওপর আস্থা রাখতে পারেন নিশ্চিত মনে।
তিনি বলেন, একটি গরু সাত ভাগ করা হয়। এক ভাগের দাম ৭০০ থেকে ৭৫০ ডলারের মতো হতে পারে। তবে সঠিক নিশ্চিতভাবে দাম এখনো বলা যাচ্ছে না।
খামার বাড়ি ও আইল্যান্ড ফ্রেশ সুপার মার্কেটের অন্যতম কর্ণধার কামরুজ্জামান কামরুল বলেন, গত বছরের চেয়ে অর্ডার বেশী পেয়েছি। তবে দাম গতবারের চেয়ে সামান্য বেশী। বেশিরভাগ গরু ও খাসি কানাডা থেকে আমদানি করা।
কোরবানি উপলক্ষে গ্রোসারিগুলোতে মসলার কদর বেড়েছে। বাংলাদেশি মসলার পাশাপাশি ভারত ও পাকিস্তানের মসলাও কিনছেন প্রবাসীরা।
এদিকে ঈদে নতুন জামা-কাপড়ের দোকানে এখনো ভিড় বাড়েনি। কোরবানির ঈদে পুরুষেরা সাধারণত পাঞ্জাবি কিনে থাকেন। নারীদের পছন্দ শাড়ি ও সালোয়ার কামিজ। দোকানিরা বলছেন, ঈদের বাজার জমবে সাধারণ ৩-৪ দিন আগে থেকে। অনেকে চাঁদ রাতকে বেছে নেন কেনাকাটার জন্য। তবে আস্তে আস্তে জমতে শুরু করেছে ঈদের বাজার।
এদিকে নিউইয়র্কে ঈদের আগে চাঁদ রাত উদযাপনের প্রস্তুতি চলছে। আকাশে জিলহজ মাসের চাঁদ উঁকি দিলেও মনের আকাশে সেই চাঁদের ফল্গুধারা বয়ে যায় ঈদের আগের রাতে। আর এ কারণে চাঁদ রাত ঈদের অনুষঙ্গ হিসাবে উদযাপন করেন মুসলমান নারী-পুরুষেরা। এ রাতে মেহেদির রঙে হাত রাঙান নারীরা। গত কয়েক বছর থেকে পুরুষেরাও হাতে মেহেদি দিচ্ছেন।


ঠিকানা রিপোর্ট


