নিউইয়র্কে আর বসবাস না করলেও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তার পুরোনো শহরকে ভুলতে পারেননি। সাম্প্রতিক সময়ে তিনি নিউইয়র্কের রাজনীতিতে এক অস্বাভাবিক সক্রিয় ভূমিকা পালন করছেন-স্থানীয় নির্বাচনে প্রভাব বিস্তার, পরিবহন প্রকল্পে হস্তক্ষেপ এবং এমনকি রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাট উভয় দলের প্রার্থীদের পক্ষে অবস্থান নেওয়ার মধ্য দিয়ে এটি স্পষ্ট।
নিউইয়র্কের রাজনীতিতে সরাসরি প্রভাব : ট্রাম্পের বিচার বিভাগ সম্প্রতি নিউইয়র্ক সিটির মেয়র
দুর্নীতির অভিযোগ প্রত্যাহার করে নেয়, যা কিছু রক্ষণশীল ফেডারেল প্রসিকিউটরের প্রবল আপত্তির মুখে করা হয়। ট্রাম্প এরিক অ্যাডামসকে নিজের ‘mpritual ally’ বলেও উল্লেখ করেন, কারণ দুজনকেই একাধিকবার তদন্তের মুখোমুখি হতে হয়েছে।
কনজেশন প্রাইসিংয়ের বিরুদ্ধে ট্রাম্পের যুদ্ধ : নিউইয়র্কের নতুন ‘কনজেশন প্রাইসিং’ নীতি-যেখানে ম্যানহাটনের নির্দিষ্ট অঞ্চলে প্রবেশ করতে গাড়িচালকদের টোল দিতে হবে-তার প্রশাসনের অন্যতম বড় টার্গেট হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই টোল থেকে প্রাপ্ত অর্থে গণপরিবহন খাতকে চাঙা করার কথা থাকলেও ট্রাম্প এ নীতিকে ‘অপ্রয়োজনীয় ও জনবিরোধী’ বলে আখ্যা দিয়েছেন। গত মাসে ট্রাম্প প্রশাসন নিউইয়র্ক রাজ্যকে চূড়ান্ত আলটিমেটাম দেয় এই পরিকল্পনা বাতিল করতে। রাজ্য প্রত্যাখ্যান করলে ট্রান্সপোর্টেশন ডিপার্টমেন্ট আদালতের শরণাপন্ন হয়।
ট্রাম্প নিউইয়র্ক পোস্টকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘বাইক লেন ও রাস্তার মাঝখানে ফুটপাত রাখা বন্ধ করা উচিত। এসব বিপজ্জনক। ইলেকট্রিক বাইক ২০ মাইল গতিতে চলে মানুষকে আঘাত করছে।’
পেন স্টেশনের নিয়ন্ত্রণ নিজের হাতে : ট্রাম্প প্রশাসন নিউইয়র্কের ৭ বিলিয়ন ডলারের পেন স্টেশন সংস্কার প্রকল্পের নিয়ন্ত্রণ সম্প্রতি মেট্রোপলিটন ট্রানজিট অথরিটির (MTA) কাছ থেকে নিজের হাতে নিয়ে নেয়। নিউইয়র্কের গভর্নর ক্যাথি হোকুল এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানালেও বিশ্লেষকদের মতে, এটি ফেডারেল সরকার দ্বারা স্থানীয় প্রকল্পে সরাসরি হস্তক্ষেপের একটি দৃষ্টান্ত।
পরিবহন সচিব শন ডাফি বলেন, ‘ট্রাম্পের নেতৃত্বে খরচের বেহিসাবি যুগ শেষ হচ্ছে। এখন প্রতিটি ডলার হিসাব করে খরচ হবে।’
রিপাবলিকান রাজনীতির পুনর্গঠন : এলিস স্টেফানিক ও লং আইল্যান্ডে হস্তক্ষেপ
নিউইয়র্কের আগামী গভর্নর নির্বাচনে রিপাবলিকান প্রতিনিধি এলিস স্টেফানিক যেন প্রতিদ্বন্দ্বিতাহীনভাবে মনোনয়ন পান, সে চেষ্টাও করছেন ট্রাম্প। এই উদ্দেশ্যে তিনি নাসাউ কাউন্টির নির্বাহী পদে এক রিপাবলিকান প্রার্থীকে সমর্থন দেন এবং ওয়েস্টচেস্টার কাউন্টির বিশেষ নির্বাচনেও রিপাবলিকান প্রার্থীর জন্য ট্রুথ সোশ্যালে প্রকাশ্যে আহ্বান জানান। তার ভাষ্য, ‘ডেমোক্র্যাটরা নিউইয়র্কের অভিজাত শহরতলিকে অপরাধী বিদেশিদের আশ্রয়স্থলে পরিণত করতে চায়।’
নিউইয়র্কের সঙ্গে আবেগঘন সম্পর্ক : ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগমুহূর্তে, যখন অধিকাংশ প্রার্থী সুইং স্টেটে ব্যস্ত, তখন ট্রাম্প এক ব্যতিক্রমী সিদ্ধান্তে ম্যাডিসন স্কয়ার গার্ডেনে এক বিশাল জনসভা করেন। সেখানে তিনি বলেন, ‘আমি যখন নিউইয়র্ক ছেড়েছিলাম, তখন এটি ছিল আমেরিকার গর্ব। এখন লোকে আর একে সম্মান করে না। কিন্তু আমরা নিউইয়র্ককে ফিরিয়ে আনব এবং দৃঢ়ভাবে আনব।’ একই জনসভায় তিনি আরও বলেন, ‘এই শহরেই আমার জন্ম, এখানেই বড় হয়েছি। এই শহর আমাকে শিখিয়েছে আমেরিকানরা চাইলে যেকোনো কিছু অর্জন করতে পারে।’
ডোনাল্ড ট্রাম্প হয়তো এখন ফ্লোরিডার বাসিন্দা, কিন্তু নিউইয়র্ক তার হৃদয়ে এখনো গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে। তার কর্মকাণ্ড প্রমাণ করে, নিউইয়র্ক শহর শুধু তার শৈশবের শহরই নয়, বরং তার রাজনৈতিক নাট্যমঞ্চের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবেও এখনো বিদ্যমান। সিটি প্রশাসন, পরিবহন নীতি, নির্বাচনী সমীকরণ-সবকিছুতেই তার হস্তক্ষেপ দেশজুড়ে রাজনৈতিক আলোচনায় ঘূর্ণাবর্ত সৃষ্টি করছে। নিউইয়র্ক কি তবে আবার ট্রাম্পের মঞ্চে পরিণত হচ্ছে? উত্তর দেবে আগামী দিনের রাজনীতি।