ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানের ফসল হিসেবে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ আজ এক নতুন যুগের সন্ধিক্ষণে এসে দাঁড়িয়েছে। দেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর প্রশাসনিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে যেসব সংস্কার-প্রক্রিয়া চলছে, তার মূল লক্ষ্য হলো একটি সমতাপূর্ণ ও বৈষম্যহীন সমাজ গঠন, যেখানে দায় আর দরদ দিয়েই গড়ে উঠবে সম্প্রীতির এক মেলবন্ধন। বিশেষ ব্যক্তি, গোষ্ঠী, দল বা গোত্রের নয়; সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন জীবনের গুণগত মান উন্নয়নের জন্য সামষ্টিক কল্যাণই হবে সরকার ও রাষ্ট্রীয় প্রশাসনের সকল কর্মকাণ্ডের মূল লক্ষ্য। একটি বৈষম্যহীন রাষ্ট্র বিনির্মাণের জন্য দেশের সর্বস্তরে সমাজের সর্বক্ষেত্রে নানা বৈষম্যের উৎসগুলোকে নির্মূল করতে হবে। নয়তো বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় কাঠামো ও প্রশাসনকে ঢেলে সাজিয়ে একটি কল্যাণমুখী রাষ্ট্র হিসেবে বিনির্মাণের এই স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে যাবে। একটি কল্যাণমুখী রাষ্ট্র গঠনের ছাত্র-জনতার আকাক্সক্ষা পূরণে সকল নিয়ম-নীতি থেকে অন্যান্য বৈষম্য নিরোধের পাশাপাশি বয়স বৈষম্য দূর করা অত্যাবশ্যক।
আমরা যে রাষ্ট্রীয় আদর্শ ‘বৈচিত্র্যের মাঝে ঐক্য’-কে অন্তর্ভুক্তির রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় সন্নিবেশিত করে রাষ্ট্র সংস্কারের কথা বলছি, তা পুরোপুরি বাস্তবায়নের জন্য এখনই উত্তম সময় সরকারি চাকরিতে বয়সসীমার শর্তগুলো তুলে দেওয়া। রাষ্ট্রের কাজ যথাযথভাবে পরিচালনার জন্য যোগ্য লোকজনকে সঠিক জায়গায় বসাতে না পারলে রাষ্ট্রের অগ্রগতি ও সমৃদ্ধি নিশ্চিত করা যাবে না। আর যোগ্য মানুষগুলোকে সঠিক জায়গায় বসানোর পথে অন্যতম বাধা হলো চাকরিতে নিয়োগে বয়সসীমা বেঁধে দেওয়া। একদিকে শুধু বয়সের কারণে রাষ্ট্রের নাগরিকদের কোনো একটি চাকরিতে আবেদন করার সুযোগ থেকে বঞ্চিত করা সবাইকে সমান অধিকার দেওয়া রাষ্ট্রীয় অঙ্গীকারের পরিপন্থী। অপরদিকে যোগ্যতা ও দক্ষতা তথা প্রতিভা ও অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে বিচার না করা ব্যক্তিমানুষের সক্ষমতার একধরনের অবমূল্যায়ন। এ ধরনের নিয়োগ-পদ্ধতি শুধু ব্যক্তির সম্ভাবনাকেই দমিয়ে রাখে না, বরং পুরো রাষ্ট্রের উন্নয়ন-প্রক্রিয়াতেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।
চলমান সমাজ-বাস্তবতার প্রেক্ষাপটে বয়স বৈষম্যকে আমরা স্বাভাবিক ভাবছি। তাই বলে এটা যে একটা বৈষম্য এবং সম্পূর্ণরূপে সমতার ধারণার বিরোধী ও সর্বসাধারণের সমসুযোগের অধিকারের পরিপন্থী, সেটা অস্বীকার করার কোনো সুযোগ আমাদের নেই। কিন্তু আমাদের অনেকের মনেই কথাটা মানুষের মধ্যে সমতা ও ন্যায্য অধিকারের প্রেক্ষাপট থেকে আসে না। আর আমাদের চিন্তার সে সীমাবদ্ধতাটাই রাষ্ট্রীয় নীতিমালার মধ্য দিয়ে আমাদের সংস্কৃতির অংশ হিসেবে আমাদের বিশ্বাসে ও আচার-আচরণে প্রতিফলিত হচ্ছে। পরিবর্তনের প্রত্যাশায় তার বিপরীতে বৈষম্যকে বৈষম্য বলার সৎসাহসটুকু আমাদের অর্জন করতে হবে। নয়তো বৈষম্যহীন ও স্বৈরাচারমুক্ত সমাজকাঠামো তৈরির স্বপ্ন হবে বাতুলতা মাত্র। এ সত্যটা যত দ্রুত আমরা বুঝতে শিখব, তত দ্রুতই আমাদের কাক্সিক্ষত স্বপ্নের বাংলাদেশ বিনির্মাণ সহজ হবে।
বাংলাদেশে রাষ্ট্রীয় নিয়ম-নীতিতে বয়স বৈষম্য খুবই স্পষ্ট। চাকরিক্ষেত্র থেকে শুরু করে রাজনীতি, শিক্ষা এবং সামাজিক বিভিন্ন পর্যায়ে বয়সকে একটি প্রধান মানদণ্ড হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ‘তুমি এখনো ছোট, তোমার সময় হয়নি’ বা ‘তুমি তো এখন বৃদ্ধ, তোমার আর নতুন কিছু শেখার প্রয়োজন নেই’-এই কথাগুলো আমাদের সমাজে নিয়মিত শোনা যায়। এ ধরনের মনোভাব একদিকে যেমন ব্যক্তিমানুষের প্রতিভার অবমূল্যায়ন ও অপচয়, অপরদিকে তেমনি রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক অগ্রগতিতে নিত্য-নতুন উদ্ভাবনের পথে বাধা সৃষ্টি করে। এ কারণে বিশ্বের অনেক দেশ চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে ইতিমধ্যেই বয়সের পরিবর্তে যোগ্যতা, অভিজ্ঞতা ও দক্ষতাকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে। ফলে সেসব দেশে নতুন নেতৃত্ব এবং উদ্ভাবনী চিন্তাভাবনার উন্মেষ ঘটছে। বাংলাদেশকেও এই পথে এগিয়ে যেতে হবে জনগণের সমঅধিকার নিশ্চিত করতে এবং কল্যাণমুখী রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে সকল নাগরিককে কর্ম ও প্রতিভা বিকাশের সমান সুযোগ করে দিতে। তাই সরকারি প্রশাসনে ও প্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন পদ-পদবিতে জনবল নিয়োগে শিক্ষাগত যোগ্যতা, জীবন ও কর্মের অভিজ্ঞতা এবং কর্মদক্ষতাই হওয়া উচিত দেশ ও জাতির জন্য কাজ করার সুযোগ পাওয়ার মানদণ্ড।
আমাদেরকে মনে রাখতে হবে, বয়স নয়; জ্ঞান, অভিজ্ঞতা ও দক্ষতা হলো কোনো একটি বিশেষ পদে দায়-দায়িত্ব পালনের জন্য নিয়োগ পাওয়ার প্রকৃত মাপকাঠি। কথায় বলে, শেখার কোনো বয়স নেই। তাই বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, একদিকে বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মানুষের দক্ষতা বা সৃজনশীলতা কিংবা নতুন কিছু শেখার ক্ষমতা কমে যায় না। বরং বয়সের ধারাবাহিকতায় অভিজ্ঞতার আলোকে তারা আরও যোগ্য হয়ে ওঠে। অন্যদিকে কম বয়সী মানুষের মধ্যে থাকে প্রাণ-প্রাচুর্য, উদ্ভাবনী শক্তি ও নতুন চিন্তার ক্ষমতা। প্রকৃতপক্ষে বয়সের কোনো সীমা বা মাপকাঠিতে এই গুণগুলোকে বাধা যায় না। তাই সরকারি চাকরিতে নিয়োগদানের ক্ষেত্রে আমাদের প্রয়োজন বয়স নয়, বরং জ্ঞানীয় যোগ্যতা, কর্মের অভিজ্ঞতা এবং সমস্যা সমাধানের দক্ষতার ভিত্তিতে প্রত্যেক চাকরিপ্রার্থীকে মূল্যায়ন করা উচিত।
বিষয়টা বোঝার জন্য অন্যান্য দেশের নিয়ম-নীতি বিবেচনা করা যেতে পারে। সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে অনেক রাষ্ট্রের বয়স বৈষম্যহীন নিয়ম-নীতির বৈশ্বিক উদাহরণ দেওয়া যেতে পারে। অর্থনৈতিকভাবে উন্নত বিশ্বের বিভিন্ন দেশ এই বিষয়টিকে অনেক আগে থেকেই উপলব্ধি করেছে এবং বয়স বৈষম্য দূর করার জন্য সমতা, বৈচিত্র্য ও অন্তর্ভুক্তির (Equality, Diversity and Inclusion) নানা পদক্ষেপ নিয়েছে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, নরওয়ে ও ডেনমার্কের মতো দেশগুলোতে বয়সের ভিত্তিতে কোনো বিশেষ পদে চাকরি গ্রহণ বা প্রদানের বৈষম্য নেই। কর্মক্ষেত্রে এ ধরনের সংস্কৃতির কারণে, কোনো বিশেষ পদে অতি সহজেই যোগ্য লোকবল পেতে তারা কোনো অসুবিধায় পড়ে না। এই দেশগুলোতে নেতৃত্বদান এবং নিত্যনতুন উদ্ভাবনে তরুণ ও বয়স্ক নির্বিশেষে সবাইকে একইভাবে সুযোগ দেওয়া হয়, যার ফলে যথাসময়ে যথাযথভাবে কাজ শেষ এবং বয়স নির্বিশেষে প্রতিভা বিকাশে সুযোগ অবারিত হয়।
অর্থনৈতিকভাবে উন্নত বিশ্বের দেশগুলোতে বয়সের সীমা ভেঙে নেতৃত্ব দেওয়ার অসংখ্য উদাহরণ রয়েছে। বিশেষ করে, রাজনৈতিক, প্রশাসনিক, অর্থনৈতিক এমনকি একাডেমিক ক্ষেত্রেও দক্ষতা, অভিজ্ঞতা এবং যোগ্যতাকেই বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়, বয়সকে নয়। এই দেশগুলোতে নেতৃত্বের ক্ষেত্রে বয়স কোনো বাধা হিসেবে কাজ করে না, বরং বয়সের সীমা উপেক্ষা করা একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া হিসেবে দেখা হয়। তরুণদের মধ্যে উদ্ভাবনী ক্ষমতা ও শক্তি রয়েছে, যা নেতৃত্বের ক্ষেত্রে নতুন দৃষ্টিভঙ্গি আনতে পারে। অপরদিকে প্রবীণদের দীর্ঘ অভিজ্ঞতা এবং জ্ঞানের ভিত্তিতে প্রাজ্ঞ নেতৃত্বের সুযোগ থাকে। বিশ্বের নানা দেশে অর্থনৈতিক ও সামাজিক প্রতিষ্ঠান বা রাজনৈতিক দলের নেতারা তাদের কর্মজীবন শুরু করেছেন খুব কম বয়সে, আবার অনেকে অবসর বয়সের পরেও প্রভাবশালী ভূমিকা পালন করেছেন। প্রকৃতপক্ষে যোগ্যতা ও দক্ষতা কখনো বয়সের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে না। মানুষের কর্মক্ষমতা, উদ্ভাবনী শক্তি এবং নেতৃত্বের গুণাবলি বয়সের ওপর নির্ভরশীল নয়। আগ্রহ অনুযায়ী মানুষ তার নিজ নিজ দক্ষতার ক্ষেত্রে কম বা বেশি বয়সেও নেতৃত্ব প্রদান করতে সক্ষম, যদি রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে সুযোগ ও সমর্থন দেওয়া হয়। বাংলাদেশকেও এই উদাহরণগুলো থেকে শিক্ষা নিতে হবে এবং বয়সভিত্তিক বিভাজন বা বয়সের সীমা অতিক্রম করে কাজের ক্ষেত্রে যোগ্য নেতৃত্ব তৈরিতে প্রত্যেক নাগরিকের জন্য সমান সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে।
বাংলাদেশের বর্তমান পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটে বয়স বৈষম্য দূর করা অত্যাবশ্যক হয়ে পড়েছে। বিষয়টাকে খাটো করে দেখা বা অবহেলা করার আর কোনো সুযোগ নেই। এখনই পদক্ষেপ নিতে হবে সরকারি নিয়ম-নীতি সব জায়গা থেকে বয়স বৈষম্য দূর করার। বাংলাদেশে এখন যে রাষ্ট্রসংস্কার প্রক্রিয়া চলছে, তার অংশ হিসেবে বয়সভিত্তিক বৈষম্য দূর করা এখন জরুরি হয়ে পড়েছে। আশার কথা, সরকার সেটা অনুধাবন করে জনপ্রশাসন সংস্কারের কমিশনকে দায়িত্ব দিয়েছে বিষয়টি খতিয়ে দেখার জন্য। তরুণেরা তাদের উদ্ভাবনী চিন্তা ও শক্তি নিয়ে নতুন কিছু করতে চায়, আবার অভিজ্ঞ প্রবীণেরা তাদের জীবনের অভিজ্ঞতা ও প্রজ্ঞা দিয়ে রাষ্ট্রের উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে সক্ষম। কিন্তু তাদের সমান সুযোগ না দিলে আমাদের রাষ্ট্র এই মূল্যবান প্রতিভাগুলোর পূর্ণ সদ্ব্যবহার করতে পারবে না।
সরকার ব্যবস্থাপনায় এবং সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে বয়সভিত্তিক নিয়োগের নিয়ম সংস্কার করা জরুরি। বর্তমান সময়ে চাকরি বা পদোন্নতির ক্ষেত্রে বয়সকে একটি প্রধান যোগ্যতা হিসেবে বিবেচনা করা হয়, যা মূলত যোগ্য ও দক্ষ প্রার্থীদের প্রতিভা বিকাশের পথে বাধা সৃষ্টি করে। এ ধরনের প্রবণতা পরিবর্তন করা এখন সময়ের দাবি। নিয়োগ-প্রক্রিয়ায় বয়স নয়, বরং প্রার্থীর যোগ্যতা, অভিজ্ঞতা এবং দক্ষতাকে মূল মানদণ্ড হিসেবে বিবেচনা করা উচিত। মানুষের মেধা, কর্মক্ষমতা এবং নেতৃত্ব প্রদানের সক্ষমতা বয়সের ওপর নির্ভরশীল নয়। একজন তরুণ কর্মী তার উদ্ভাবনী শক্তি এবং প্রযুক্তিগত দক্ষতার মাধ্যমে একটি প্রতিষ্ঠানকে সামনে এগিয়ে নিতে পারে, অন্যদিকে একজন অভিজ্ঞ প্রবীণ কর্মী তার দীর্ঘ অভিজ্ঞতা ও প্রজ্ঞা দিয়ে জটিল সমস্যার সমাধানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। তাই উভয় বয়সের মানুষের জন্য সমান সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে, যাতে প্রতিটি ব্যক্তি তার পূর্ণ সম্ভাবনা অনুযায়ী কাজ করতে পারে।
সমতা ও সমঅধিকার নিশ্চিত করার জন্য এ ধরনের পরিবর্তন সমাজকে আরও অন্তর্ভুক্তিমূলক করবে, যেখানে প্রত্যেক ব্যক্তি তার বয়স নির্বিশেষে তার প্রকৃত দক্ষতা ও যোগ্যতা অনুযায়ী মূল্যায়িত হবে। এটি কেবল সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করবে না, বরং রাষ্ট্রের সার্বিক উন্নয়ন-প্রক্রিয়াকে আরও বেগবান, টেকসই এবং সফল করবে। কর্মক্ষেত্রে তরুণদের সৃজনশীলতা এবং প্রবীণদের প্রজ্ঞা একসঙ্গে কাজ করার সুযোগ পেলে দেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক অগ্রগতির গতিও বহুগুণে বাড়বে। অন্যদিকে বেসরকারি খাতেও বয়সভিত্তিক বৈষম্য দূর করলে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্মদক্ষতা বাড়বে। কারণ, যে প্রতিষ্ঠানগুলো কর্মীর মেধা ও দক্ষতাকে মূল্য দেয়, সেগুলো বেশি সফল হয়। এমন একটি কর্মপরিবেশ তৈরি করতে হবে, যেখানে নতুন প্রজন্মের উদ্ভাবনী শক্তি এবং প্রবীণদের অভিজ্ঞতা একসঙ্গে মিলেমিশে কাজ করবে। যোগাযোগ, সহযোগিতা ও মেধার সমন্বয় রাষ্ট্রকে কেবল উন্নত করবে না, বরং বিশ্বব্যাপী প্রতিযোগিতামূলক বাজারেও বাংলাদেশকে এগিয়ে রাখবে।
আমাদের মনে রাখতে হবে, বৈষম্যহীন রাষ্ট্র বিনির্মাণের স্বপ্ন ও বয়সভিত্তিক বৈষম্য একসঙ্গে যায় না। একটি সুষম ও শক্তিশালী রাষ্ট্র গড়তে হলে আমাদের বয়সের পরিবর্তে যোগ্যতা, অভিজ্ঞতা ও দক্ষতাকে প্রধান মানদণ্ড হিসেবে বিবেচনা করতে ও মেনে নিতে হবে। বাংলাদেশে এই পরিবর্তনের উত্তম সময় এখনই, যখন রাষ্ট্র তার সামগ্রিক উন্নয়ন এবং বৈষম্যহীন সমাজ গঠনের জন্য সংস্কারকাজ শুরু করেছে। এ জন্য বয়সের কোনো নির্দিষ্ট সীমারেখায় না ফেলে, সরকার ও রাষ্ট্রীয় প্রশাসনে সবাইকে সমান অংশগ্রহণের সুযোগ দিয়ে একটি প্রগতিশীল ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে এগিয়ে যাওয়ার অঙ্গীকার বাস্তবায়ন করতে হবে। তাই আমরা বর্তমান পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটে বয়স বৈষম্য দূর করার ও দক্ষতাভিত্তিক সমাজ গঠনের আহ্বান জানাই, যা ‘বৈষম্যহীন ও স্বৈরাচারমুক্ত’ নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণের জন্য বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের রাষ্ট্রসংস্কার-প্রক্রিয়াকে আরও সুসংগঠিত ও সংহত করবে।
লেখক : ভিজিটিং ফ্যাকাল্টি, ইউনিভার্সিটি অব রোহ্যাম্পটন, যুক্তরাজ্য।