যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক ও বর্তমান প্রেসিডেন্টদের ইতিহাসে সবচেয়ে মূল্যবান উপহার গ্রহণ করতে যাচ্ছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। কাতারের রাজপরিবার প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে একটি বোয়িং ৭৪৭-৮ ‘জাম্বো জেট’ উপহার দিতে প্রস্তুত, যা ট্রাম্পের চলতি মেয়াদে ‘এয়ার ফোর্স ওয়ান’ হিসেবে ব্যবহৃত হবে। মেয়াদ শেষে এই উড়োজাহাজটি হস্তান্তর করা হবে ট্রাম্পের প্রেসিডেনশিয়াল লাইব্রেরিতে।
গত ফেব্রুয়ারিতে ফ্লোরিডার ওয়েস্ট পাম বিচ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আসা এই বিলাসবহুল বিমানটি ট্রাম্প ব্যক্তিগতভাবে ঘুরে দেখেছেন। একে বলা হচ্ছে ‘ফ্লাইং প্যালেস’। কেউ কেউ বলেন, ‘প্যালেস ইন দ্য স্কাই’ বা ‘উড়ন্ত প্রাসাদ’।
এই বিতর্কিত উপহার গ্রহণের আইনি পর্যালোচনা করেছে হোয়াইট হাউজের কাউনসেল অফিস ও বিচার বিভাগ। প্রতিরক্ষা সচিব পিট হেগসেথ-এর কাছে প্রেরিত একটি বিশ্লেষণে উপসংহার টানা হয়েছে যে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা বিভাগ এই উপহার গ্রহণ করতে পারে এবং ট্রাম্পের প্রেসিডেনশিয়াল লাইব্রেরিতে তা হস্তান্তর করাও আইনি দৃষ্টিকোণ থেকে বৈধ। এই প্রক্রিয়ায় যুক্ত ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল পাম বন্ডি এবং ট্রাম্পের শীর্ষ আইনি উপদেষ্টা ডেভিড ওয়ারিংটন। তারা জানিয়েছেন, উড়োজাহাজটি উপহার হিসেবে গ্রহণ করে পরবর্তীতে ট্রাম্প লাইব্রেরির মালিকানায় হস্তান্তর করা হলে তা বৈধতা পায়।
যুক্তরাষ্ট্রের বিমানবাহিনী এই উড়োজাহাজটি প্রেসিডেন্টের প্রয়োজন অনুযায়ী নিরাপত্তা, যোগাযোগ ও অন্যান্য প্রযুক্তিগত পরিকাঠামোয় রূপান্তর করবে।
বিমান শিল্প বিশেষজ্ঞদের মতে, বিমানের আনুমানিক মূল্য প্রায় ৪০০ মিলিয়ন ডলার- এবং এই হিসেবে নিরাপত্তা ও অতিরিক্ত প্রযুক্তি যুক্ত করার খরচ অন্তর্ভুক্ত নয়।
এই বিলাসবহুল উপহারের খবর প্রকাশের পর রাজনৈতিক মহলে নানা প্রশ্ন উঠেছে প্রেসিডেন্ট ও রাষ্ট্রীয় সম্পদের ব্যবস্থাপনা, উপহারের গ্রহণযোগ্যতা এবং কূটনৈতিক প্রভাব নিয়ে।
অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন সূত্রের দাবি, আগামী সপ্তাহে ট্রাম্পের কাতার সফরের সময় অতি-বিলাসবহুল বিমানটি আনুষ্ঠানিক উপহার হিসেবে ঘোষণা করা হবে।
গ্রহণ করা হলে, ১৩ বছরের পুরনো বিমানটি প্রথমে মার্কিন বিমান বাহিনীতে স্থানান্তর করা হবে।
জেটটি ডোনাল্ড ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে এয়ার ফোর্স ওয়ান হিসেবে ব্যবহার করা হবে।
প্রেসিডেন্টের এই বিমানে ওঠার আগে এটিতে উচ্চ-স্তরের যোগাযোগ এবং নিরাপত্তা প্রযুক্তি সজ্জিত করা হবে।
বিমানটির মালিকানা ২০২৯ সালের ১ জানুয়ারির মধ্যে ট্রাম্প প্রেসিডেন্সিয়াল লাইব্রেরি ফাউন্ডেশনের কাছে হস্তান্তর করা হবে।
সংশ্লিষ্ট সব খরচসহ এই হস্তান্তর মার্কিন বিমান বাহিনী দ্বারা পরিচালিত হবে।
বর্তমান এয়ার ফোর্স ওয়ান বহরে ব্যবহৃত প্রধান বিমানগুলোর মধ্যে দুটি বোয়িং ৭৪৭-২০০ জাম্বো জেট রয়েছে।
এগুলো ১৯৯০ সাল থেকে চলছে এবং আধুনিক জেটের তুলনায় অতটা কার্যকর নয় বলে জানা গেছে।
কাতারের উপহার হিসেবে উড়োজাহাজ গ্রহণের পরিকল্পনা নিয়ে সৃষ্ট উদ্বেগের জবাবে গত সোমবার ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন ট্রাম্প। তিনি বলেন, এ ধরনের একটি উপহার গ্রহণ না করা হবে বোকামি।
হোয়াইট হাউসে সাংবাদিকেরা ট্রাম্পের কাছে জানতে চান, তেলসমৃদ্ধ উপসাগরীয় রাষ্ট্রটি বিনিময়ে কিছু চাইবে কি নাÑ উত্তরে ট্রাম্প বলেন, এটি তাদের সৌজন্যমূলক আচরণের বহিঃপ্রকাশ। তিনি আরও বলেন, ‘আমি এমন একটা প্রস্তাব ফিরিয়ে দেওয়ার মতো লোক নই। মানে, আমি বোকা হলে বলতাম, না; আমরা বিনা মূল্যে এত ব্যয়বহুল একটি উড়োজাহাজ চাই না।’
কাতার এমন সময় উড়োজাহাজটি দেওয়ার প্রস্তাব দিল, যখন ট্রাম্প বারবার অভিযোগ করছেন যে উড়োজাহাজ নির্মাতা প্রতিষ্ঠান বোয়িংয়ের সঙ্গে চুক্তির আওতায় নতুন দুটি এয়ারফোর্স ওয়ান (মার্কিন প্রেসিডেন্টের সরকারি উড়োজাহাজ) তৈরিতে দেরি হচ্ছে ও ব্যয় বাড়ছে।
প্রেসিডেন্ট পদ থেকে বিদায় নেওয়ার পর তিনি কি এই উড়োজাহাজ ব্যক্তিগতভাবে ব্যবহার করবেন- এ প্রশ্নের জবাবে ট্রাম্প রেগে যান।
ট্রাম্প এক সাংবাদিককে বলেন, ‘এ প্রশ্ন করার জন্য আপনার লজ্জিত হওয়া উচিত।’ তিনি আরও বলেন, ‘ওরা আমাদের বিনা মূল্যে একটি উড়োজাহাজ দিচ্ছে। হয় আমি তাদের বলতে পারি- না, না, না, দিও না; আমি তোমাদের ১০০ কোটি বা ৪০ কোটি ডলার দিতে চাই। অথবা আমি বলতে পারি, তোমাদের অনেক ধন্যবাদ।’
এর আগে মার্কিন সংবাদমাধ্যম এবিসি নিউজের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, কাতারের রাজপরিবারের কাছ থেকে একটি বিলাসবহুল উড়োজাহাজ (বোয়িং জেট) উপহার হিসেবে নেওয়ার কথা ভাবছেন ট্রাম্প। এটিকে তিনি এয়ারফোর্স ওয়ান হিসেবে ব্যবহার করবেন এবং প্রেসিডেন্টের মেয়াদ শেষে ব্যক্তিগতভাবে ব্যবহারের জন্য রেখে দিতে চান। যদিও মার্কিন প্রেসিডেন্টদের উপহার নেওয়ার ক্ষেত্রে কঠোর নিয়ম রয়েছে।