Thikana News
০৭ অক্টোবর ২০২৫
  1. ই-পেপার
  2. চলতি সংখ্যা
  3. বিশেষ সংখ্যা
  4. প্রধান সংবাদ
  5. আমেরিকার অন্দরে
  6. বিশ্বচরাচর
আমেরিকা মঙ্গলবার, ০৭ অক্টোবর ২০২৫

জামায়াত-এনসিপি বিরোধ চরমে

জামায়াত-এনসিপি বিরোধ চরমে ছবি: সংগৃহীত



 
টানা তিন দিনের আন্দোলনের পর ১০ মে শনিবার অন্তর্বর্তী সরকার আওয়ামী লীগের  কার্যক্রম নিষিদ্ধ করে। জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহর আহ্বানে এই আন্দোলন শুরু হলেও এটি ফ্যাসিবাদবিরোধী ঐক্যের ব্যানারে অনুষ্ঠিত হয়। যেখানে এনসিপিসহ জুলাই অভ্যুত্থানের পক্ষের সব শক্তি অংশ নেয়। কিন্তু আন্দোলন সফলের পরপরই উপদেষ্টা মাহফুজ আলমের দুটি ফেসবুক স্ট্যাটাস ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনার জন্ম দেয়। আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের দাবিতে শাহবাগে চলা আন্দোলনের সময়ের কয়েকটি বিক্ষিপ্ত ঘটনা এবং মাহফুজের ফেসবুক স্ট্যাটাসকে কেন্দ্র করে বিভাজনের রাজনীতি শুরু হয়। এসব ঘটনায় জুলাই অভ্যুত্থানের অন্যতম অংশীদার জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে এনসিপি ও এর ছাত্রসংগঠনের মধ্যে চরম বিরোধ তৈরি হয়েছে। দল দুটির নেতাকর্মীদের মাঝেও দেখা দিয়েছে পাল্টাপাল্টি প্রতিক্রিয়া।
আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার আন্দোলন শেষ হতে না হতেই ভার্চুয়ালি তুমুল বিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়তে দেখা যায় এনসিপি ও জামায়াত-শিবির নেতাকর্মীদের। জুলাই গণঅভ্যুত্থান ও আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার আন্দোলনে একসঙ্গে মাঠে কর্মসূচি পালন করা দল দুটির এ বিরোধে রাজনীতিতেও তৈরি হয়েছে নানা কৌতূহল। এর আগে অভ্যুত্থানের পরও আন্দোলনের ক্রেডিট নিয়ে সমন্বয়কদের বড় একটি অংশ বর্তমান এনসিপি ও তাদের ছাত্রসংগঠন গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের শীর্ষ নেতৃবৃন্দের সঙ্গে বিরোধ ও পাল্টাপাল্টি স্ট্যাটাস দেওয়া নিয়ে সম্পর্কের অবনতি ঘটে। সম্প্রতি আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের আন্দোলনে এক কাতারে ফের মাঠে নামেন উভয় দলের নেতাকর্মীরা। কিন্তু আন্দোলন শেষ হতেই আবারও স্পষ্ট হয় মতবিরোধ।
এ অবস্থায় নয়া রাজনীতির বন্দোবস্তের স্বপ্ন দেখিয়ে আত্মপ্রকাশ ঘটলেও স্বস্তিতে নেই এনসিপি। রাজনীতিতে আলোচিত-সমালোচিত সব ইস্যুতে জড়িয়ে যাচ্ছে দলটির নাম। অভ্যুত্থানের শক্তিগুলোর সঙ্গেও বাড়ছে দূরত্ব। এ ক্ষেত্রে নিজেদের ভূমিকা কী হবে, সেটিও স্পষ্ট নয়। সব মিলিয়ে তর্ক-বিতর্কের বৃত্তে আবদ্ধ এনসিপি। বিষয়গুলো নিয়ে আত্মসমালোচনা আছে দলটির অন্দরেও। কার্যকর কৌশল নিয়ে এগোতে না পারলে এনসিপির ভবিষ্যৎ রাজনীতি শঙ্কায় পড়বে বলে মনে করেন দলটির কোনো কোনো নেতা।
আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের আন্দোলনে শাহবাগে জামায়াতের সাবেক আমির গোলাম আযমসহ বেশ কয়েকজন নেতার নাম ধরে বিতর্কিত কিছু স্লোগান ও জাতীয় সংগীত গাওয়ার সময় বাধা দেওয়া হয়েছে- এ রকম কিছু ফুটেজ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়। এ নিয়ে আন্দোলনের সামনে থাকা এনসিপি নেতাদেরও দায় দিয়ে মন্তব্য করছিলেন নেটিজেনরা। এরই মধ্যে ১০ মে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের পর তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলম তার ফেসবুক অ্যাকাউন্টে একাত্তর ও মুজিববাদী বাম ইস্যুতে একটি স্ট্যাটাস দেন। সেখানে তিনি লিখেন, ‘একাত্তরের প্রশ্ন মীমাংসা করতেই হবে। যুদ্ধাপরাধের সহযোগীদের ক্ষমা চাইতে হবে। বাংলাদেশে রাজনীতি করতে হলে পাকিস্তানপন্থা বাদ দিতে হবে। পাকিস্তান এ দেশে গণহত্যা চালিয়েছে। সহযোগীদের ইনিয়ে-বিনিয়ে গণহত্যার পক্ষে বয়ান উৎপাদন বন্ধ করতে হবে। জুলাইয়ের শক্তির মধ্যে ঢুকে স্যাবোটাজ করা বন্ধ করতে হবে। সাফ দিলে আসতে হবে। তিনি আরও বলেন, ‘মুজিববাদী বামদের ক্ষমা নেই। লীগের গুম-খুন আর শাপলায় মোদিবিরোধী আন্দোলনে হত্যাযজ্ঞের মস্তিষ্ক এরা। এরা থার্টিসিক্সথ ডিভিশন। জুলাইয়ের সময়ে এরা নিকৃষ্ট দালালি করেও এখন বহাল তবিয়তে আছে। আজ পর্যন্ত মুজিববাদী বামেরা কালচারালি ও ইন্টেলেকচুয়ালি জুলাইয়ের সঙ্গে গাদ্দারি করে যাচ্ছে। দেশে বসে জুলাইয়ের পক্ষের শক্তির বিরুদ্ধে এরা চক্রান্ত করেই যাচ্ছে। লীগের এসব বি-টিমও শিগগিরই পরাজিত হবে। অন্য কারও কাঁধে ভর করে লাভ নেই।’
এর পরই ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখা যায় জামায়াত-শিবির নেতাকর্মীদের কাছ থেকে। মাহফুজ আলমকে সমর্থন জানিয়ে পাল্টা প্রতিক্রিয়া জানান নাগরিক পার্টির নেতাকর্মীরাও। শুরু হয় পাল্টাপাল্টি পোস্ট। তুমুল এই প্রতিক্রিয়ার মধ্যে ফের আক্রমণাত্মক স্ট্যাটাস দেন মাহফুজ আলম। সেখানে আগের চেয়েও কড়া ভাষায় জামায়াতকে ইঙ্গিত করে মন্তব্য করেন তিনি। যদিও কিছুক্ষণের মধ্যে স্ট্যাটাসটি তার ওয়াল থেকে সরিয়ে নেন তথ্য উপদেষ্টা। তবে স্ট্যাটাসের স্ক্রিন শটটি দ্রুতই ছড়িয়ে পড়ে সোশ্যাল মিডিয়ায়। সেখানে মাহফুজ আলম লেখেন, আমাকে নিয়ে নোংরামি করতেসো, ঝামেলা নাই। ফ্যামিলি টাইনো না, যুদ্ধাপরাধের সহযোগী রাজাকারেরা। এটা লাস্ট ওয়ার্নিং। আর যে চুপা শিবিররা এ সরকারে পদ বাগাইসো আর বিভিন্ন সুশীল ব্যানার খুলে পাকিস্তানপন্থা জারি রাখসো, তোমরা তোমাদের পূর্বপুরুষ রাজাকার আর দালালদের তুলনায় আরো অধিক ভুগবা। যারা বিতর্কের এবং গালাগালির লিমিট জানে না, তাদের আমি সহনাগরিক মনে করি না। পাকিস্তানপন্থীরা যেখানেই থাকবে, সেখানেই আঘাত করা হবে। আমৃত্যু! ঢাবিতে এ রাজাকারদের আগে ঠেকানো হবে, যারা এদের স্পেস দিসে তাদের জন্য গত পঞ্চাশ বছরের তুলনায় অধিক জিল্লতি অপেক্ষা করসে!’ মাহফুজ আলমের দ্বিতীয় স্ট্যাটাসে উত্তাপ আরও বাড়ে। বিতর্ক পৌঁছায় তির্যক মন্তব্যে। ছাত্রশিবিরের প্রচার সম্পাদক জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতা সাদিক কাইয়ুম ফেসবুকে মাহফুজ আলমকে মানসিক অসুস্থ বলে উল্লেখ করেন। একই সঙ্গে একই ধরনের অজস্র স্ট্যাটাস দেন জামায়াত ও শিবিরের কর্মী-সমর্থকেরাও।
অন্যদিকে এনসিপি থেকেও কড়া প্রতিক্রিয়া দেখান শীর্ষস্থানীয় নেতারা। দলটির মুখ্য সমন্বয়কারী নাসীরুদ্দীন পাটোয়ারী চলমান বিতর্কে শরিক হয়ে লেখেন, পাকিস্তান ও একাত্তরে গণহত্যার সহযোগীদের রাজনীতি কঠিন করে দেওয়া হবে। দলটির ছাত্রসংগঠন গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের আহ্বায়ক আবু বাকের মজুমদার বলেন, ‘একাত্তর প্রশ্নে আপসহীন থাকতে হবে। দেশে রাজনীতি করতে হলে একাত্তর ও চব্বিশকে ধারণ করেই রাজনীতি করতে হবে। তোরা যারা রাজাকার, সময় থাকতে বাংলা ছাড়! লাখো শহিদের রক্তে কেনা, দেশটা কারও বাপের না! গোলাম আযম তুই রাজাকার, বাংলা কি তোর বাপ-দাদার?’ এর আগে এক পোস্টে তিনি বলেন, হাসিনাকে সরায়ে গোলাম আযমের জন্য আমরা জুলাইয়ে রক্ত দিইনি।
ইসলামী ছাত্রশিবিরের সেক্রেটারি নুরুল ইসলাম সাদ্দাম বলেছেন, উদ্দেশ্যমূলক মন্তব্য করে শপথ ভঙ্গ করেছেন উপদেষ্টা মাহফুজ। কোনো রাগ বা বিরাগের বশবর্তী হয়ে কাউকে হুমকি দেওয়া বা কোনো বিষয়ে তার দায়িত্ব থাকাকালীন এটি তার জন্য মানায় না।
মাহফুজ আলমের বক্তব্যে ক্ষুব্ধ হয়েছে জামায়াতে ইসলামী। এ নিয়ে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে রাজনৈতিক নীতি-নির্ধারণী ফোরামের জরুরি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এতে ছাত্র-জনতার রক্তে গড়া অন্তর্বর্তী সরকারের একজন দায়িত্বশীল উপদেষ্টার এ ধরনের বক্তব্যকে দুঃখজনক আখ্যায়িত করে তা প্রত্যাখ্যান করা হয়।
অন্যদিকে এক বিবৃতিতে এনসিপি বলেছে, যেসব আপত্তিকর স্লোগান নিয়ে জনমনে প্রশ্ন উঠেছে, তার দায়দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট পক্ষটিকেই বহন করতে হবে। এ ছাড়া যারা ১৯৭১ সালে এ জনপদের মানুষের জনযুদ্ধের বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহণ করেছিল এবং যাদের বিরুদ্ধে গণহত্যায় সহযোগিতার অভিযোগ রয়েছে, তাদের রাজনৈতিক অবস্থান ব্যাখ্যা করার আহ্বান জানিয়েছে দলটি।

কমেন্ট বক্স