ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সাম্প্রতিক যুদ্ধবিরতির পর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দাবি করেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের হস্তক্ষেপে দুটি পারমাণবিক শক্তিধর দেশের মধ্যে একটি ‘ভয়াবহ পারমাণবিক যুদ্ধ’ ঠেকানো সম্ভব হয়েছে। এদিকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া এক ভাষণে জানান, ভবিষ্যতে কোনো সংঘাত হলে নয়াদিল্লি ‘পারমাণবিক ব্ল্যাকমেইল’ মেনে নেবে না। খবর ডনের।
হোয়াইট হাউসে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, ‘আমরা একটি পারমাণবিক সংঘাত ঠেকিয়েছি। এটি একটি ভয়াবহ যুদ্ধ হতে পারত। লাখ লাখ মানুষ মারা যেতে পারত।’
ট্রাম্প আরও জানান, ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে শান্তি রক্ষার অংশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র উভয় দেশের সঙ্গে বাণিজ্য সম্প্রসারণে প্রস্তুত রয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমরা পাকিস্তানের সঙ্গে অনেক বাণিজ্য করব, ভারতের সঙ্গেও করব। আলোচনা চলছে।’
ট্রাম্প দাবি করেন, তাঁর প্রশাসন শনিবার একটি তাৎক্ষণিক যুদ্ধবিরতির মধ্যস্থতা করে, যা তিনি ‘সম্ভবত স্থায়ী’ বলেও উল্লেখ করেন।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট আরও বলেন, ‘আমরা বাণিজ্যের মাধ্যমে কূটনীতিকে কাজে লাগিয়েছি। আমি বলেছি, যদি সংঘাত থামাও — তাহলে আমরা বাণিজ্য করব। যদি না থামাও, তাহলে কিছুই হবে না। মানুষ বাণিজ্যকে এর আগে এভাবে ব্যবহার করেনি।’
ট্রাম্প জানান, ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও এই শান্তি প্রক্রিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন।
এদিকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সোমবার এক টেলিভিশন ভাষণে বলেছেন, ‘যদি ভবিষ্যতে ভারত আবার সন্ত্রাসী হামলার শিকার হয়, তাহলে জবাব আরও কঠোর হবে।’ তিনি বলেন, ‘সন্ত্রাস ও আলোচনা একসঙ্গে চলতে পারে না। সন্ত্রাস ও বাণিজ্য একসঙ্গে চলতে পারে না। পানি ও রক্ত একসঙ্গে বইতে পারে না।’
মোদি জানান, পাকিস্তানের ‘সন্ত্রাসবাদে মদদ’ গ্রহণযোগ্য নয় এবং ভারত তার জবাবে ‘নতুন স্বাভাবিকতা’ গড়ে তুলবে।
সাম্প্রতিক সংঘাতের পটভূমি
গত ২২ এপ্রিল ভারতের কাশ্মীরের পেহেলগামে পর্যটকদের ওপর হামলায় ২৬ জন নিহত হন। এর প্রতিক্রিয়ায় উভয় দেশের মধ্যে যুদ্ধের আশঙ্কা তৈরি হয়। এর পরের চার দিনে তীব্র লড়াই চলে, যা ১৯৯৯ সালের পর সবচেয়ে ভয়াবহ সংঘাত হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
পাকিস্তানের প্রতিক্রিয়া
পাকিস্তানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী খাজা আসিফ এক টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে বলেন, ভবিষ্যতের যেকোনো আলোচনায় তিনটি প্রধান বিষয় গুরুত্ব পাবে — কাশ্মীর, সন্ত্রাসবাদ এবং পানি।
তিনি ভারতের ‘অহংকার’ কে সমস্যা সমাধানের প্রধান অন্তরায় হিসেবে তুলে ধরেন এবং বলেন, “কাশ্মীর সমস্যার সমাধান জাতিসংঘের প্রস্তাব অনুযায়ী হতে পারে, কিন্তু ভারতের অটল অবস্থানই সবচেয়ে বড় বাধা।”
তিনি আরও বলেন, পাকিস্তান কখনোই সিন্ধু পানি চুক্তি লঙ্ঘন মেনে নেবে না এবং বিশ্বের কাছে পাকিস্তান তার দায়িত্বশীল সামরিক কৌশলের স্বীকৃতি পেয়েছে।
ঠিকানা/এসআর