সংযুক্ত আরব আমিরাত ও পাকিস্তান সিরিজ সামনে রেখে মিরপুরে পুরোদস্তর অনুশীলন চালিয়ে যাচ্ছেন লিটন দাসরা। দুই দলের বিপক্ষে সাত টি-টোয়েন্টি খেলবে বাংলাদেশ। তবে এরই মধ্যে ভারত-পাকিস্তান সংঘাত শুরু হওয়ায় শঙ্কায় পড়েছে লিটনদের পাকিস্তান সফর। দেশটিতে যে অবস্থা চলছে তাতে আগা সালমানদের বিপক্ষে পাঁচ ম্যাচের সিরিজটি স্থগিত হওয়ার দিকে যাচ্ছে।
বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) থেকে গতকাল পর্যন্ত সিদ্ধান্ত না এলেও চলমান অবস্থায় সেখানে ক্রিকেটারদের পাঠানো হচ্ছে না বলে জানা গেছে। এ দিকে পাকিস্তানে অবস্থান করা বাংলাদেশি দুই ক্রিকেটার রিশাদ হোসেন ও নাহিদ রানাকে ফেরানো নিয়ে পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের (পিসিবি) সঙ্গে নিয়মিত আলোচনা চলছে বিসিবির। বিশেষ ব্যবস্থায় তাদের পাকিস্তান থেকে বের করার চেষ্টা চলছে।
জিম্বাবুয়ে সিরিজ শেষ করে পিএসএল খেলতে পাকিস্তানে গিয়েছিলেন নাহিদ রানা। তার আগে রিশাদ গিয়ে পাঁচটি ম্যাচও খেলেছেন। নাহিদ এখনো কোনো ম্যাচ খেলার সুযোগ পাননি গতকাল ভারতের ড্রোন হামলার পরে পিএসএলের ম্যাচ স্থগিত করা হয়। এরপরে পিএসএল খেলতে যাওয়া বিদেশি ক্রিকেটারদের মধ্যে অস্থিরতা বিরাজ করে। অন্য বিদেশিদের মতো নিরাপত্তা শঙ্কায় ভুগছেন রিশাদ ও নাহিদ। আপাতত খেলা বাদ দিয়ে তাদের পাকিস্তান থেকে বের করার পরিকল্পনা চলছে বলে বিসিবির একটি সূত্র জানিয়েছে।
গতকাল পাকিস্তানের রাওয়ালপিন্ডিতে পিএসএলের করাচি-পেশোয়ার ম্যাচ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ম্যাচ শুরুর আগে ভারতের ড্রোন হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত হয় রাওয়ালপিন্ডি স্টেডিয়াম লাগোয়া ফুড স্ট্রিটের একটি ভবন এ ঘটনার পর ম্যাচ স্থগিত করা হয়। আজ এই মাঠেই মুখোমুখি হওয়ার কথা রিশাদের দল লাহোর কালান্দার্স ও নাহিদ রানার দল পেশোয়ার জালমির। কিন্তু সেসব পাশে রেখে পাকিস্তান ত্যাগের কথা ভাবছেন বিদেশি ক্রিকেটাররা। পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে, চাইলেই তারা এখন পাকিস্তান ত্যাগ করতে পারছেন না।
গতকাল পিসিবির মুখপাত্র আমির মীর পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যম দ্য ডনকে জানিয়েছেন, সংঘাতের পর থেকে আকাশসীমা-সংক্রান্ত জটিলতা শুরু হয়েছে। অর্থাৎ নিয়মিত আন্তর্জাতিক ফ্লাইটগুলো বন্ধ হয়ে গেছে। ক্রিকেটাররা পাকিস্তান সেনাবাহিনীর কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে রয়েছেন বলে আমির মীর জানিয়েছেন। এই মুহূর্তে বিশেষ ব্যবস্থাপনা ছাড়া ক্রিকেটারদের পাকিস্তান থেকে বের করা কঠিন। সেই ব্যবস্থাপনার দিকেই আগানো হচ্ছে।
বিসিবির একটি সূত্র জানিয়েছে, চার্টার্ড ফ্লাইটের মাধ্যমে বিদেশি ক্রিকেটারদের আগে সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ে নেওয়ার কথা চলছে। এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হলে রিশাদ ও নাহিদ দুবাই হয়ে ঢাকায় ফিরবেন। এ দিকে যেখানে বিদেশি ক্রিকেটাররা নিরাপত্তা শঙ্কায় ভুগছেন, সেখানে গিয়ে সিরিজ খেলবে কি না বাংলাদেশ, এমন প্রশ্নও তৈরি হয়েছে। গতকাল বিসিবি পরিচালক ও ক্রিকেট অপারেশন্স কমিটির প্রধান নাজমুল আবেদীন ফাহিম বলেছেন, 'এখনো পাকিস্তান সিরিজ নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। আমরা পরিস্থিতি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছি। দুই দেশের বোর্ডের মধ্যে আলোচনার মাধ্যমে এই সিরিজের গতিপথ জানানো হবে।'
ফাহিমের কথায় স্পষ্ট বার্তা পাওয়া না গেলেও বিসিবির দায়িত্বশীল সূত্র থেকে জানা গেছে, ভারত-পাকিস্তানের সংঘাত এভাবে চলতে থাকলে লিটনদের সফর স্থগিত করা হবে। এ দিকে ঐ সূত্র আরো জানিয়েছে, পাকিস্তানে এই সিরিজ না হলে তৃতীয় কোনো দেশে আয়োজনের প্রস্তাবও রাখা হবে। সেক্ষেত্রে দুবাইয়ে লিটনরা একটি সিরিজ খেলবেন। সেখানেই বাংলাদেশ-পাকিস্তান সিরিজ হতে পারে, যদি বিসিবি ও পিসিবি ঐকমত্যে পৌঁছায়।
প্রসঙ্গত, গেল ২২ এপ্রিল ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পহেলগামে পর্যটকদের ওপর বন্দুকধারীদের গুলিতে ২৬ জন নিহত হন। এর জের ধরে ভারত ও পাকিস্তান একে অন্যের বিরুদ্ধে বেশ কিছু পালটাপালটি পদক্ষেপ নেয়। গেল মঙ্গলবার দিবাগত রাতে পাকিস্তানের কয়েকটি জায়গায় ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চালায় ভারত। পরে পাকিস্তান থেকেও ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন নিক্ষেপের কথা জানানো হয়েছে। তাতে দুই দেশের মধ্যকার সংঘাত চরমে পৌঁছেছে।
ঠিকানা/এএস