রাজধানী ঢাকার গুলশানের ৮০ নম্বর সড়কে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বাসভবন ‘ফিরোজায়’ কদিন ধরে চলছে গোছগাছ; বাড়ির সামনের সবুজ আঙিনা সাজানো হয়েছে ফুল গাছের টব দিয়ে। ভেতরেও কক্ষগুলোতে ঝাড়পোঁছ করে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার কাজ শেষ করে আনা হয়েছে।
চিকিৎসার জন্য চার মাস লন্ডনে কাটিয়ে মঙ্গলবার দেশে ফিরছেন খালেদা জিয়া, ঢাকায় ফিরে তিনি উঠবেন ‘ফিরোজাতে’।
বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান বলেন, খালেদা জিয়ার বসবাসের জন্য সম্পূর্ণভাবে প্রস্তুত করা হয়েছে ‘ফিরোজা’।
“ম্যাডামের বাসা কমপ্লিটলি রেডি। বিদ্যুৎ, গ্যাস, ওয়াসা, বাসার আঙিনা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, সাজসজ্জা কোনো কিছুই বাদ নেই। ম্যাডামের স্বজনরা সব কিছু তদারক করেছেন। এখন আমরা সবাই ম্যাডামের অপেক্ষায় আছি।”
দেয়াল দিয়ে ঘেরা ফিরোজার সামনের দিকে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের জন্য কক্ষ। পুলিশ ও চেয়ারপারসনের সিকিউরিটি ফোর্সের (সিএসএফ) সদস্যদের পালাক্রমে পাহারা দিতে দেখা গেছে।
আজ ৫ মে (সোমবার) লন্ডনের স্থানীয় সময় বিকাল ৪টা ১০ মিনিটে লন্ডনের হিথ্রো বিমানবন্দর থেকে কাতারের আমিরের বিশেষ এয়ার অ্যাম্বুলেন্স করে খালেদা জিয়া রওনা হবেন বলে জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি বলেন, “উনি (ম্যাডাম) আগামীকাল (মঙ্গলবার) কাতার রয়েল অ্যাম্বুলেন্সের এয়ার ক্রাফটে সকাল ১০টায় ঢাকা এয়ারপোর্টে পৌঁছাবেন। আমরা আশা করছি যে, সময়মতই উনি ঢাকায় পৌঁছাবেন।”
খালেদা জিয়ার ফেরার সঙ্গী হচ্ছেন দুই পূত্রবধু- তারেক রহমানের স্ত্রী জোবাইদা রহমান ও প্রয়াত আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী সৈয়দা শামিলা রহমান সিঁথি।
‘রাস্তায় কাউতে দাঁড়াতে দেবেন না’
খালেদা জিয়াকে অভ্যর্থনা জানাতে রাস্তায় ভিড় না করতে নেতাকর্মীদের প্রতি অনুরোধ করেছেন মির্জা ফখরুল।
তিনি বলেন “তবে আমাদের দলের তরফ থেকে একটা আবেদন আছে যে, দলের নেতাকর্মীদের, আপনারা জানেন, কালকে এসএসসির পরীক্ষা আছে একটা সাবজেক্টে, যেহেতু ঢাকা বিমানবন্দর থেকে কাকলী পথ দিয়ে ম্যাডাম গুলশানের বাসায় যাবেন।
“আমি সকলকে অনুরোধ করতে চাই, রাস্তার ওপরে যেন কেউ না দাঁড়ায়। যারা অভ্যর্থনা জানাবেন তারা ফুটপাতে দাঁড়িয়ে যেন ম্যাডামকে অভ্যর্থনা জানান। দলের নেতা-কর্মীরা যাতে জাতীয় ও বিএনপির পতাকা হাতে নিয়ে ম্যাডামকে অভ্যর্থনা জানাবেন এটা আমরা নির্দেশনা দিয়েছি।”
রাস্তায় যাতে কেউ দাঁড়াতে না পারে সেদিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখতে ট্রাফিক পুলিশের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন মির্জা ফখরুল।
তিনি বলেন, ‘‘আমি বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের কাছে আমি আবেদন রাখতে চাই, কেউ যেন রাস্তায় না দাঁড়ান, ট্রাফিক বিঘ্নিত না করেন, পরীক্ষার্থীদের কেন্দ্র যেতে যেন বাধার না পড়ে সেই ব্যাপারে সকলকে নজর রাখতে হবে। আমরা সবাই মিলে যথাসাধ্য চেষ্টা করব যাতে পরীক্ষার্থীদের কেন্দ্র যেতে কোনো অসুবিধা না হয়।”
খালেদা জিয়া আগের চেয়ে ভালো আছেন
লন্ডন অবস্থানরত খালেদা জিয়ার ব্যক্তি চিকিৎসক অধ্যাপক এজেডএম জাহিদ হোসেন বলেন, লন্ডন থেকে ঢাকার যাত্রাপথে দোহায় যাত্রাবিরতি আছে। শিডিউল অনুযায়ী লন্ডন থেকে যাত্রা করে এয়ার অ্যাম্বুলেন্স দোহা হামাদ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছাবে স্থানীয় সময় রাত আড়াইটায়।
খালেদা জিয়া কেমন আছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, “আলহামদুলিল্লাহ তিনি আগের চাইতে ভালো আছেন। আমরা আশা করছি, যথাসময়েই ম্যাডাম হিথ্রো বিমানবন্দরে গিয়ে উড়োজাহাজাজে উঠতে পারবেন। দেশবাসী দোয়া করবেন ম্যাডাম যেন ভালোভাবে দেশে পৌঁছাতে পারেন।
“দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সাহেব নিজে ড্রাইভ করে ম্যাডামকে নিয়ে হিথ্রো বিমানবন্দরে আসবেন।”
দোহায় যাত্রাবিরতি শেষে রওনা হয়ে উড়োজাহাজটি ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছাবে বাংলাদেশ সময় সকাল সাড়ে ১০টায়।
৭৯ বছর বয়সী সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন থেকে লিভার সিরোসিস, কিডনি, হার্ট, ডায়াবেটিস, আর্থ্রাইটিসসহ নানা শারীরিক অসুস্থতায় ভুগছেন। তিনি উন্নত চিকিৎসার জন্য কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানির পাঠানো রাজকীয় বহরের বিশেষ এয়ার অ্যাম্বুলেন্স করে গত ৭ জানুয়ারি লন্ডনে যান।
সেখানকার লন্ডন ক্লিনিকের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অধ্যাপক প্যাট্রিক কেনেডি ও অধ্যাপক জেনিফার ক্রসের তত্ত্বাবধায়নে চিকিৎসাধীন ছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসন। টানা ১৭ দিন ক্লিনিকে চিকিৎসাধীন থাকার পর তিনি ২৫ জানুয়ারি থেকে ছেলে তারেক রহমানের বাসায় রয়েছেন।
ঠিকানা/এসআর