Thikana News
০৩ মে ২০২৫
  1. ই-পেপার
  2. চলতি সংখ্যা
  3. বিশেষ সংখ্যা
  4. প্রধান সংবাদ
  5. আমেরিকার অন্দরে
  6. বিশ্বচরাচর
আমেরিকা শনিবার, ০৩ মে ২০২৫

৮ মাসে ২৪ দলের আত্মপ্রকাশের উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন

৮ মাসে ২৪ দলের আত্মপ্রকাশের উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন সংগৃহীত
৫ আগস্টের পটপরিবর্তনের পর গত আট মাসে এনসিপিসহ বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে যুক্ত হয়েছে মোট ২৪টি দল। এর সঙ্গে আছে চারটি রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম। এ হিসাবে প্রতি মাসে গড়ে তিনটি রাজনৈতিক দল ও সংগঠন আত্মপ্রকাশ করেছে এ সময়কালে। ২৬ এপ্রিল এই তালিকায় যুক্ত হওয়া সর্বশেষ রাজনৈতিক দলটি হচ্ছে ‘বাংলাদেশ নতুনধারা জনতার পার্টি’। প্রশ্ন উঠেছে, এত রাজনৈতিক দল কেন আসছে? কাদের ইশারায় আসছে? তাদের কাজই-বা কী? শেষ পর্যন্ত অস্তিত্ব থাকবে তো এসব দলের? রাজনৈতিক মহলে প্রশ্ন-এত অল্প সময়ে এতগুলো দলের জন্ম কী উদ্দেশ্যে?  
এটা কি কেবল আগের ইতিহাসেরই ধারাবাহিকতা, নাকি গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী ‘নতুন আকাক্সক্ষার’ বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক পরিসর বাড়ার ইঙ্গিত?
রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা বলছেন, পরিবর্তিত পরিস্থিতির সুযোগে নিজেকে প্রচার করার মনোবাসনা রয়েছে অনেকেরই। ব্যক্তিস্বার্থ ও ব্যবসায়িক স্বার্থরক্ষা করার জন্যই এত এত রাজনৈতিক দলের আত্মপ্রকাশ ঘটছে। তাদের অভিমত, ছোট দল দিয়ে বড় দলের ভোটে ভাগ বসানোও একটি কৌশল হয়ে থাকতে পারে। বেশি রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন করার সরকারি লক্ষ্যও এর কারণ হতে পারে। এ ক্ষেত্রে নানা শক্তির ইন্ধন থাকতে পারে।
গণমাধ্যমের তথ্য অনুসারে, গত বছরের আগস্ট থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত পাঁচ মাসে আত্মপ্রকাশ করে ১১টি দল। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি দল এসেছে সেপ্টেম্বরে। ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের পর প্রথম আত্মপ্রকাশ ঘটে নিউক্লিয়াস পার্টি অব বাংলাদেশের (এনপিবি)। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে গত বছরের ২৩ আগস্ট দলটির ঘোষণা দেওয়া হয়। এরপর ৮ সেপ্টেম্বর জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক পার্টি, ১৯ সেপ্টেম্বর ওয়ার্ল্ড মুসলিম কমিউনিটি, ২০ সেপ্টেম্বর সমতা পার্টি, ২৩ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ জনপ্রিয় পার্টি (বিপিপি), ২৭ সেপ্টেম্বর সার্বভৌমত্ব আন্দোলন, ১৫ নভেম্বর বাংলাদেশ সংস্কারবাদী পার্টি (বিআরপি), ১৬ নভেম্বর বাংলাদেশ মুক্তির ডাক ৭১, ২৮ নভেম্বর বাংলাদেশ জাগ্রত পার্টি, ৩০ নভেম্বর বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক পার্টি (বিজিপি) ও ১৬ ডিসেম্বর জাতীয় বিপ্লবী পরিষদের আত্মপ্রকাশ ঘটে।
চলতি বছরের ২৬ এপ্রিল পর্যন্ত আরও ১৩টি নতুন রাজনৈতিক দল এসেছে। এর মধ্যে গত ২৮ জানুয়ারি এক দিনেই দুটি দলের আবির্ভাব ঘটে-আমজনতার দল ও বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক শক্তি। এর আগে ৪ জানুয়ারি আত্মপ্রকাশ করে দেশ জনতা পার্টি। ফেব্রুয়ারিতে আত্মপ্রকাশ করে তিনটি দল-বাংলাদেশ সোশ্যাল ডেমোক্রেটিক পার্টি (বিএসডিপি), বাংলাদেশ জন-অধিকার পার্টি ও জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। এপ্রিল মাসে আত্মপ্রকাশ করে পাঁচটি দল-১১ এপ্রিল গণতান্ত্রিক নাগরিক শক্তি, ১৩ এপ্রিল ভাসানী জনশক্তি পার্টি, ১৭ এপ্রিল বাংলাদেশ আ-আম জনতা পার্টি (বিএজেপি), ২৫ এপ্রিল জনতা পার্টি বাংলাদেশ এবং ২৬ এপ্রিল বাংলাদেশ নতুনধারা জনতার পার্টি।
নতুন দলগুলোর মধ্যে কেবল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) মূলধারার রাজনীতিতে আলোচিত দল। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের নেতৃত্বদানকারী তরুণদের গড়া এই দলের আত্মপ্রকাশ দেশের রাজনীতিতে একটা গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা।
এদিকে ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে নতুন রাজনৈতিক দল নিবন্ধনের জন্য আবেদনের সময় ২২ জুন পর্যন্ত বাড়িয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ইসির তথ্য অনুযায়ী, নবগঠিত জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপিসহ ৪৬টি দল সময় বাড়ানোর জন্য আবেদন করেছে। আর এখন পর্যন্ত রাজনৈতিক দল নিবন্ধনের জন্য নতুন আবেদন পড়েছে অন্তত ৬৫টি। ইসি কর্মকর্তারা বলছেন, এ সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।
এ ব্যাপারে রাজনৈতিক বিশ্লেষক মহিউদ্দিন আহমদ বলেন, ভোট আর জোটের রাজনীতিতে নতুন দল ‘গজিয়ে ওঠার’ জন্য মুক্ত পরিবেশের দরকার হয় না। সব পরিবেশেই এ ধরনের দলের জন্ম হতে দেখেছে বাংলাদেশ। আমাদের দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর বেশির ভাগই ব্যক্তিকেন্দ্রিক। এখানে সুযোগ থাকলে বা ইচ্ছে হলে ১৭ কোটি মানুষ ১৭ কোটি দল বানাতে পারে। অবস্থাটা এরকমই।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘তিন-চারটি কারণে ছোট ছোট রাজনৈতিক দলের আত্মপ্রকাশ ঘটছে। কেউ নিজের পরিচয় জাহির করতে চায়। কেউ ব্যক্তিগত ও ব্যবসায়িক স্বার্থ বিবেচনায় দল গঠন করছে। কেউ মনে করে, রাজনৈতিক দল করতে পারলে বড় দলের সঙ্গে আঁতাতের সুযোগ সৃষ্টি হবে। সে সুবাদে সরকারের অংশ হয়ে যাওয়ার সুযোগ চলে আসতে পারে। কেউবা জনসেবার মানসিকতায় রাজনৈতিক দল গঠন করছেন।’
কবি, রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও বিশিষ্ট চিন্তক ফরহাদ মজহার বলেন, ‘মানুষের একসময় কথা বলার অধিকারটা ছিল না। তারা তাদের কথাটা বলতে পারেনি। ফলে বিভিন্ন গ্রুপ তাদের কথাটা বলার চেষ্টা করছে এবং রাজনৈতিক পরিসরে তারা সক্রিয় হওয়ার চেষ্টা করছে। এদের মধ্যে শেষ পর্যন্ত কতজন টিকে যাবে, সেটা পরের কথা। কিন্তু আমি মনে করি, রাজনৈতিক দল গঠন করার যে ইচ্ছা ও আকাক্সক্ষা তৈরি হয়েছে এবং নিজেদের কথা তারা বলতে চাইছে, এটা খুবই ভালো। অনেকগুলো রাজনৈতিক দল যখন আসছে, তার মানে বিদ্যমান দলগুলোকে তারা তাদের প্রতিনিধি মনে করে না। যদি মনে করত, তাহলে এতগুলো দল গঠন করা হতো না।’

কমেন্ট বক্স