ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার পতনের প্রায় সাত মাস পর গত ২৮ ফেব্রুয়ারি আত্মপ্রকাশ করে জুলাই আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া তরুণদের দল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। দেশের রাজনীতিতে আলোচনায় আসা দলটি আত্মপ্রকাশের দুই মাস পেরিয়ে গেলেও পূর্ণাঙ্গ গঠনতন্ত্র প্রস্তুত করতে পারেনি। দলীয় সূত্রে জানা গেছে, দলীয় গঠনতন্ত্রের খসড়া নিয়ে কয়েক দফা বৈঠক করলেও গঠনতন্ত্র চূড়ান্ত করতে পারছে না এনসিপি। ফলে আটকে রয়েছে আনুষ্ঠানিকভাবে জেলা-উপজেলায় সংগঠন বিস্তারের কাজ। গঠনতন্ত্র চূড়ান্ত করতে না পারায় আটকে আছে দলের নিবন্ধনের আবেদনও। এ ছাড়া স্থানীয় পর্যায়ে কমিটি গঠনে ব্যর্থতা, জাতীয় নাগরিক কমিটি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে স্থবিরতা, কেন্দ্রীয় নেতা ও সাবেক সমন্বয়কদের কারও কারও বিরুদ্ধে নানাবিধ অভিযোগ ওঠায় রাজনীতির মাঠে অনেকটাই কোণঠাসা এনসিপি। এমন পরিস্থিতিতে রাজনীতির মাঠে বড় দুই দল বিএনপি-জামায়াতকে টেক্কা দেওয়ার পথ খুঁজছে এনসিপি। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর রাজনীতির মাঠে শুরু হয়েছে নতুন মেরুকরণ। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের অনুপস্থিতিতে রাজনীতির মাঠ দখলে নিয়েছেন বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর নেতাকর্মীরা। দ্রুত নির্বাচনের দাবি নিয়ে মাঠে সরব বিএনপি। জামায়াতে ইসলামীও গত আট মাসে ভোটের মাঠ অনেকটাই গুছিয়ে ফেলেছে। অন্যদিকে জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও সংবিধান প্রণয়নের জন্য একটি গণপরিষদ নির্বাচন; আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ, গণহত্যার বিচার এবং নির্বাচনের আগে পরিপূর্ণ সংস্কারের মাধ্যমে জুলাই সনদ বাস্তবায়নের মাধ্যমে একটি ‘সেকেন্ড রিপাবলিক’ প্রতিষ্ঠার দাবি জানিয়েছে এনসিপি। এমন বিপরীত অবস্থান রাজনীতির মাঠে বিএনপি ও এনসিপিকে মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। তবে সকল প্রতিকূলতা ও স্থবিরতা কাটিয়ে মে মাস থেকেই রাজপথে থাকার প্রত্যয়ের কথা জানিয়েছেন এনসিপির দায়িত্বশীল নেতারা।
এনসিপির একাধিক শীর্ষ নেতা জানিয়েছেন, বিএনপি-জামায়াতের সঙ্গে রাজনীতির মাঠে ‘টেক্কা’ দিতে দ্রুত সময়ের মধ্যে কেন্দ্র থেকে স্থানীয় পর্যায় পর্যন্ত কমিটি গঠনের উদ্যোগ নিয়েছে দলটি। নানাবিধ ব্যস্ততায় দল গঠনের পর কমিটিগুলো গঠন করতে না পারায় সাংগঠনিক কার্যক্রমে স্থবিরতা তৈরি হয়েছে। শীর্ষ নেতারা বলছেন, মৌলিক ও গুণগত পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে রাজনীতির মাঠে ‘বড়’ দল হিসেবেই প্রতিষ্ঠিত হতে চায় এনসিপি। ইতিমধ্যে রাজধানীর বিভিন্ন জোনে বিক্ষোভ সমাবেশ করছে দলটি। আগামী ২ মে রাজধানীতে বিক্ষোভ সমাবেশেরও ঘোষণা দিয়েছে তারা। এ ছাড়া মে মাসে কমিটি গঠনের মধ্য দিয়ে সারা দেশের রাজপথে নামার পরিকল্পনা করছে দলটি। এনসিপির নেতারা জানান, ইতিমধ্যে স্থানীয় পর্যায়ে সাংগঠনিক কাঠামো গঠনের লক্ষ্যে প্রক্রিয়া চলমান আছে। স্থানীয় পর্যায়ের নেতৃত্বে আসতে পারেন, এমন নেতা ও সংগঠকদের যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। আগ্রহী অনেকের সঙ্গে বিস্তারিত আলোচনাও চলছে। মে মাস থেকেই স্থানীয় পর্যায়ে কমিটি গঠনের আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়া শুরু হবে। দলকে বিভিন্ন সেক্টরে ছড়িয়ে দিতে এবং ব্যাপক জনসম্পৃক্ততা তৈরির লক্ষ্যে দলের একাধিক ‘উইং’ তৈরির পরিকল্পনাও বাস্তবায়নের পথে। ইতিমধ্যে দলটি ‘যুব’, ‘নারী’ ও ‘শ্রমিক’ উইং তৈরির কাজ শেষ করেছে। ‘আইনজীবী’, ‘প্রকৌশলী’, ‘এনসিপি ডায়াস্পোরা অ্যালায়েন্স’ গঠনের লক্ষ্যে প্রস্তুতি কমিটি গঠিত হয়েছে। মে মাসের শুরু থেকে ‘সদস্য সংগ্রহ সপ্তাহ’ ঘোষণার পরিকল্পনা রয়েছে এনসিপির। এনসিপির যুগ্ম সদস্যসচিব সালেহ উদ্দিন সিফাত বলেন, স্থানীয় কমিটি করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। কমিটি কীভাবে হবে, বয়স ও সদস্যসংখ্যা কেমন হবে, সে ব্যাপারে ইতিমধ্যে সিদ্ধান্ত হয়েছে। গঠনতান্ত্রিক কোনো জটিলতা আপাতত আর নেই। তিনি আরও বলেন, ‘আমরা নবীন-প্রবীণ সবার সমন্বয়ে স্থানীয় কমিটিগুলো করতে চাই। আমাদের অঞ্চল ভাগ করে দিয়েছি, কেন্দ্রীয় নেতারা সাংগঠনিক সফর করে স্থানীয় কমিটিগুলো করার প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করবেন।’