মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প মহাসাগরের উন্মুক্ত জলসীমায় গভীর সমুদ্র খনন দ্রুততর করার আদেশ দেওয়ার পর ফ্রান্স ২৮ এপ্রিল (সোমবার) অভিযোগ করেছে, যুক্তরাষ্ট্র আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করছে। প্যারিস থেকে সংবাদ সংস্থা এএফপির প্রতিবেদক জানান, ওয়াশিংটন নিয়ন্ত্রণব্যবস্থাকে পাশ কাটিয়ে বিশ্বের গভীরতম মহাসাগরের তলদেশে খনিজসমৃদ্ধ পিণ্ড উত্তোলনের জন্য খনন চালাতে চায়, যা পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।
ফ্রান্স গভীর সমুদ্র খননের ওপর বৈশ্বিক স্থগিতাদেশ আরোপের জন্য কূটনৈতিক উদ্যোগের নেতৃত্ব দিয়ে আসছে। দেশটির সমুদ্রবিষয়ক রাষ্ট্রদূত অলিভিয়ে পুভ্র দ’আর্ভর সাংবাদিকদের বলেন, ‘গভীর সমুদ্র অঞ্চলের অধিকার অগ্রাহ্য করে খননের অনুমতি দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র অগ্রহণযোগ্য দখলনীতি অনুসরণ করছে।’
রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘কেউই মহাসাগর ধ্বংস করার অধিকার দাবি করতে পারে না, বিশেষ করে যেখানে তাদের কোনো সার্বভৌম অধিকার নেই। এটি আন্তর্জাতিক আইনের মারাত্মক লঙ্ঘন। গভীর সমুদ্র বিক্রির জন্য নয়।’
মহাসাগরের তলদেশে রয়েছে প্রযুক্তির জন্য গুরুত্বপূর্ণ নানা মূল্যবান খনিজ। তবে এই অজ্ঞাত জগতের পরিবেশগত বাস্তবতা এখনও স্পষ্টভাবে জানা যায়নি। যখন গভীর সমুদ্র খননে বাণিজ্যিক আগ্রহ বাড়ছে, তখন বিশ্বব্যাপী নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলো এই নতুন শিল্পের জন্য পরিবেশ সুরক্ষা ও ন্যায্যতার নীতি নির্ধারণে চেষ্টা চালাচ্ছে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র জাতিসংঘ-সম্পর্কিত আন্তর্জাতিক সমুদ্র তলদেশ কর্তৃপক্ষের (আইএসএ) চুক্তিতে কখনোই স্বাক্ষর করেনি এবং এই সংস্থার সদস্যও নয়।
পুভ্র দ’আর্ভর জানান, আগামী জুনে ফ্রান্স জাতিসংঘের মহাসাগর সম্মেলনের আয়োজন করবে। তারা ৩২টি দেশের সমর্থনে গভীর সমুদ্র খননের বিরোধিতায় একটি জোট গঠন করেছে।
গত মাসে ২০ জন বিশেষজ্ঞ একটি বৈজ্ঞানিক প্রতিবেদন প্রকাশ করে অন্তত ১০ থেকে ১৫ বছর পর্যন্ত গভীর সমুদ্র খননের ওপর বৈশ্বিক স্থগিতাদেশের আহ্বান জানিয়েছেন, যতক্ষণ না যথেষ্ট গবেষণা সম্পন্ন হয়।
ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ নিযুক্ত বিশিষ্ট বিজ্ঞানী ব্রুনো ডেভিড সাংবাদিকদের বলেন, ‘এখন প্রয়োজন অপেক্ষা করা, এটি দ্রুত এগিয়ে যাওয়ার সময় নয়।’
প্রতিবেদনে সতর্ক করা হয়, খনিজ উত্তোলনের জন্য সমুদ্রের তলদেশ খনন করলে শত শত বর্গকিলোমিটার এলাকায় বিশাল পরিমাণ কাদা ছড়িয়ে পড়তে পারে এবং খাদ্য শৃঙ্খলে ভারী ধাতুর প্রভাব পড়তে পারে।
ডেভিড বলেন, বৈজ্ঞানিক দিকনির্দেশনায় আমাদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে। তিনি ট্রাম্প প্রশাসনের পদক্ষেপকে ‘অবাস্তব কল্পনা’ বলে অভিহিত করেন।
চীনের সবচেয়ে বেশি গভীর সমুদ্র অনুসন্ধানের লাইসেন্স রয়েছে, তবে তারা এখনও খনন শুরু করেনি এবং আইএসএর চূড়ান্ত নিয়মের অপেক্ষায় আছে। দেশটি গত সপ্তাহে বলেছে, যুক্তরাষ্ট্রের সিদ্ধান্ত বৈশ্বিক স্বার্থের ক্ষতি করেছে এবং আন্তর্জাতিক নিয়ম লঙ্ঘন করেছে।
ঠিকানা/এসআর