Thikana News
২৪ এপ্রিল ২০২৫
  1. ই-পেপার
  2. চলতি সংখ্যা
  3. বিশেষ সংখ্যা
  4. প্রধান সংবাদ
  5. আমেরিকার অন্দরে
  6. বিশ্বচরাচর
আমেরিকা বৃহস্পতিবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৫

মাস্টারপ্ল্যান নিয়ে মাঠে নামছে আওয়ামী লীগ!

মাস্টারপ্ল্যান নিয়ে মাঠে নামছে আওয়ামী লীগ! সংগৃহীত
গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে পতন হয় আওয়ামী সরকারের। দেশ ছেড়ে ভারতে আশ্রয় নেন দলটির সভাপতি শেখ হাসিনা। দলের শীর্ষ নেতারাও পলাতক। কিছু নেতা আছেন কারাগারে। ৫ আগস্টের পর গত ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রকাশ্যে সেভাবে কার্যক্রম চালাতে দেখা যায়নি দলটির নেতাকর্মীদের। কর্মসূচি ঘোষণা দিয়েও তা পালন করতে ব্যর্থ হয়েছে আওয়ামী লীগ। তবে এ বছরের শুরু থেকে ধীরে ধীরে মিছিল শুরু করেছেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। হঠাৎ মিছিল করে আবার ‘নিরাপদ আশ্রয়’ খুঁজে নিচ্ছেন তারা। তবে সম্প্রতি বেড়েছে আওয়ামী লীগের ‘ঝটিকা মিছিল’।
গত এক সপ্তাহে রাজধানীর বিভিন্ন পয়েন্টে অর্ধশত ঝটিকা মিছিল হয়েছে। সারা দেশে জেলা, থানা ও ওয়ার্ড পর্যায়ে দলীয় নেতাকর্মীরা ঝটিকা মিছিল বের করছেন। এসব মিছিলে ফটোসেশন করা হচ্ছে। অনেক নেতাকর্মী সোশ্যাল মিডিয়ায় ছদ্মনামের আইডিতে সেগুলো পোস্ট করছেন। মিছিলের ভিডিও ফুটেজ পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে দেশের বাইরে পলাতক থাকা আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের কাছে।
এদিকে ছাত্র-জনতার নজিরবিহীন গণ-অভ্যুত্থানের মুখে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার মাত্র আট মাসের মাথায় আওয়ামী লীগের এই সক্রিয় হওয়া এবং ভয়-ভীতি উপেক্ষা করে রাজপথে প্রকাশ্যে ঝটিকা মিছিল করা নিয়ে নানান প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। কারা তাদের নেপথ্যে থেকে মদদ দিচ্ছে এবং কাদের আশ্রয়-প্রশ্রয়ে দলটির নেতাকর্মীরা মাঠে নামছেন। সন্দেহের তির পুলিশ ও সিভিল প্রশাসন ছাড়াও কয়েকটি রাজনৈতিক দলের দিকে। বিশ্লেষকেরা বলছেন, প্রশাসনের মধ্য থেকে সবুজ সংকেত না থাকলে এত বড় গণহত্যার পর দলটির মাঠে নামার কথা নয়। বিশেষ করে প্রশাসনের মধ্যে ঘাপটি মেরে থাকা আওয়ামী দোসররা কৌশলে সমর্থন ও উসকানি দিচ্ছে। এ ছাড়া কেউ কেউ মনে করেন, রাজনীতিতে তৃতীয় বিকল্প শক্তি ঠেকাতে যারা ইনক্লুসিভ নির্বাচন করার শর্ত দেওয়া ছাড়াও নানাভাবে বয়ান তৈরি করছে তাদের পর্দার আড়ালে সমর্থন দিচ্ছে রাজনৈতিক দলের কেউ কেউ। এমনকি আওয়ামী লীগকে সংসদে বিরোধী দল বানানোর গভীর চক্রান্তও চলছে। তারা মনে করেন, পর্দার আড়ালে দেশি-বিদেশি চক্রের এমন ষড়যন্ত্রের রোডম্যাপ সফল হলে ভবিষ্যতে জুলাই হত্যাকাণ্ডের বিচারও ‘রাজনৈতিক মামলার’ খাদে আটকা পড়তে পারে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আওয়ামী লীগকে মাঠে নামানোর পেছনে দেশি-বিদেশি চক্র মাস্টারপ্ল্যান তৈরি করছে। ভবিষ্যতে আওয়ামী লীগকে রাজনীতি ও সরকারে পুনর্বাসন করতে কতগুলো বিকল্প প্ল্যান নিয়েও তারা ব্যস্ত সময় পার করছে। যারা কাজে লাগাচ্ছে প্রতিটি মুহূর্ত। তাদের মতে, সময় থাকতে সতর্ক না হলে ক্ষমতাচ্যুত দলটির নেতাকর্মীদের এ ধরনের অপতৎপরতা বাড়তেই থাকবে। ফলে নির্বাচনী তফশিল ঘোষণা হলে আওয়ামী লীগ পুরোনো চেহারায় ফিরে আসবে। ফের অশান্ত হবে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি। পরবর্তী সময়ে যার খেসারত দিতে হবে পুরো জাতিকে।
এদিকে আওয়ামী লীগ ও নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের ঝটিকা মিছিল কন্ট্রোলে গাফিলতি হলে পুলিশের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে উল্লেখ করেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘ভবিষ্যতে যাতে মিছিল না হতে পারে, সে ব্যাপারে পুলিশকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এটা কন্ট্রোল না করতে পারলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার হুঁশিয়ারির পর থেকেই নিষিদ্ধ সংগঠনের মিছিলে অংশ নেওয়া নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তারে তৎপরতা বাড়িয়েছে পুলিশ। বাড়ানো হয়েছে গোয়েন্দা নজরদারিও। দেশকে অস্থিতিশীল করার ঝটিকা মিছিল রুখতে বর্তমানে মরিয়া পুলিশ। পুলিশ সদর দপ্তরের তথ্যমতে, গত তিন দিনে সারা দেশ থেকে ৪ হাজার ৭৬৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, যার তিন ভাগের দুই ভাগই আওয়ামী লীগের সদস্য। আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগকে প্রতিহত করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের পাশাপাশি মাঠে থাকছেন ছাত্ররাও। তবে নিষিদ্ধ সংগঠনের এমন ঝটিকা মিছিল নিয়ে আতঙ্কিত না হওয়ার অনুরোধ জানিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)।
ডিএমপির পক্ষ থেকে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে নিষিদ্ধঘোষিত ছাত্রলীগ ও তাদের সমভাবাপন্ন বিভিন্ন সংগঠনের ঝটিকা মিছিলের বিষয়ে কঠোর বার্তায় বলা হয়েছে, ‘মিছিলকারীদের তাৎক্ষণিক গ্রেপ্তার করা সম্ভব না হলেও পরে ছবি ও ভিডিও ফুটেজ বিশ্লেষণ করে অনেককে গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে। জনবিচ্ছিন্ন ও বেআইনি এসব সংগঠনের অপতৎপরতা রোধে পুলিশ তৎপর রয়েছে।’
গত ১৭ এপ্রিল বৃহস্পতিবার রাতে উসকানিমূলক বার্তা দিয়ে রাজধানীসহ সারা দেশের বিভিন্ন এলাকায় দফায় দফায় ঝটিকা মিছিল করেছেন আওয়ামী লীগ, নিষিদ্ধ ছাত্রলীগসহ অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা। ঝটিকা মিছিল দিয়ে শুরু করে লগি-বইঠা নিয়ে রাজধানীতে ব্লকেডের পরিকল্পনায় লিপ্ত ছিলেন পলাতক আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা। তবে ছাত্র-জনতা ও পুলিশের জোটবদ্ধতার কারণে ভেস্তে গেছে তাদের সেই পরিকল্পনা। প্রতিরোধ গড়ে তুলতে রাজধানীসহ সারা দেশে ছাত্র-জনতা ও জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেতাকর্মীরা সোচ্চার হয়ে দাঁড়ান।
গত ১৮ এপ্রিল শুক্রবার আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সম্পাদক ও মুন্সীগঞ্জ-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট মৃণাল কান্তি দাসের একটি অডিও রেকর্ড বার্তা ভাইরাল হয়। সেখানে নেতাকর্মীদের দিকনির্দেশনা দিয়ে এই নেতা বলেন, এখনই রাজপথে না নামতে। আপাতত সংগঠিত হয়ে এরপর পরিকল্পনা অনুযায়ী নির্দেশনা মেনে তিনি মাঠে নামার ঘোষণা দেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গত ১৯ এপ্রিল শনিবার রাতে চার ঘণ্টাব্যাপী ‘ধানমন্ডি বত্রিশ’ টেলিগ্রাম গ্রুপে গাজীপুরের সাবেক মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো. জাহাঙ্গীর আলম দেশের বিভিন্ন জেলা, উপজেলা ও থানার নেতাকর্মীদের সঙ্গে জুম মিটিং করেন। তিনি দলীয় কর্মীদের উদ্দেশে বলেন, ‘আপাতত ফান্ডের সমস্যা।’ বিদেশ থেকে কেউ টাকা পাঠাতে পারছে না। তাই প্রতি জেলায় ঝটিকা মিছিল দিয়ে শুরু করতে হবে। এই মিছিলে থাকবে স্থানীয় ওয়ার্ড বা ইউনিয়ন পর্যায়ের কর্মীরা। এ ছাড়া নির্দেশ রয়েছে রিকশা, অটোচালক এবং বাসের হেলপারের ছদ্মবেশে ঝটিকা মিছিলে অংশ নিতে। প্রয়োজনে আত্মরক্ষার্থে ইলেকট্রিক শক ডিভাইস ও ক্ষুদ্র জিনিসপত্র রাখতে হবে। নির্দেশনায় আরও বলা হয়, নিম্নপর্যায়ের নেতাকর্মীরা যারা বিদেশে আছেন, তাদের বাংলাদেশে পাঠানো হবে। যদি এক হাজার নেতাকর্মী আসেন, প্রয়োজনে ২০০ গ্রেপ্তার হলেও রিজার্ভে থাকবেন ৮০০। ৬৩ জেলায় অন্তত ১৫ লাখ লোককে জমায়েতের পরিকল্পনা রয়েছে দলটির। মে ও জুন মাসের মধ্যেই তারা বড় ধরনের নাশকতার পরিকল্পনা করেছে। যেখানে ব্যাপক রক্তক্ষয়ী সংঘাতের আশঙ্কাও রয়েছে। আওয়ামী লীগের এভাবে ফের সরব হওয়া নিয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে জাতীয় নাগরিক পার্টির মুখ্য সংগঠক (দক্ষিণাঞ্চল) হাসনাত আবদুল্লাহ ফেসবুকে নিজের ভেরিফায়েড প্রোফাইলে লেখা এক পোস্টে বলেন, ‘যেদিন থেকে আমাদের আওয়ামীবিরোধী অবস্থান এবং কম্প্রোমাইজের রাজনীতির বিরোধিতাকে ‘শিষ্টাচারবহির্ভূত’ বলা শুরু হয়েছে, সেদিন থেকেই আওয়ামী লীগের মিছিল বড় হতে শুরু করেছে।’
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের অনেকেই বলছেন, পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত পুরোমাত্রায় আওয়ামী লীগের পাশে আছে। দলটির নেতাকর্মীদের নানাভাবে সাহস এবং শক্তি জোগাচ্ছে দেশটি। এর বাইরে দেশি-বিদেশি শক্তির অনেকেই গোপনে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে এক ধরনের সখ্য গড়ে তুলেছেন। এ ছাড়া আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের দিয়ে দেশকে অস্থিতিশীল করে তুলতে তাদের পেছনে বিপুল পরিমাণ কালোটাকাসহ আর্থিক বিনিয়োগ করা হচ্ছে বিদেশের মাটি থেকে। এসব কারণেই নতুন করে রাজনীতির মাঠে ফেরার সাহস ও সুযোগ পাচ্ছে বিতাড়িত দলটি।

কমেন্ট বক্স